ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি এক নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। ২৪ বছর বয়সী ওই নারী স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে ছয় বছর ধরে ভারতে বসবাস করছিলেন। 

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রামমূর্তি নগরের কেলকেরে লেকের কাছ থেকে পুলিশ ওই নারীর লাশ উদ্ধার করে। 

পুলিশ জানিয়েছে, ওই নারী একটি অ্যাপার্টমেন্টে গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন। গত বৃহস্পতিবার বাড়ি ফেরার পথে এই ঘটনা ঘটে। শুক্রবার সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা তার মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়।

ওই নারীর স্বামী বেঙ্গালুরু মহানগর পালিকার পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কাজ করেন। তারা তিন সন্তানসহ শহরে বসবাস করতেন বলে পুলিশ জানায়। 

একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, “ওই নারী বাংলাদেশি নাগরিক। তার স্বামীর বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। তিন সন্তানসহ ছয় বছর ধরে তারা এই এলাকায় বসবাস করছেন। গত বৃহস্পতিবার বাড়ি  ফেরার সময় সহকর্মীকে ওই নারী জানান, তার অন্য একটি কাজ আছে, ফিরতে দেরি হবে। পরে বাড়ি না ফেরায় তার স্বামী রামমূর্তি নগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।” 

ওই পুলিশ কর্মকর্তা হিন্দুস্তান টাইমসকে আরও বলেন, “ ধারণা করা হচ্ছে, পূর্ব পরিচিত কারও সঙ্গে দেখা করতে এমন নির্জন এলাকায় আসেন ওই নারী। মাথায় ভারী কিছু দিয়ে থেতলানো অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়। সম্ভবত তর্কতর্কি বা ধস্তাধস্তির পর হত্যা করা হয়েছে। আমরা বিএনএস ধারা ৬৩ (ধর্ষণ) এবং ১০৩ (হত্যা)-এর অধীনে মামলা দায়ের করেছি এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি ।” 

এ ঘটনার খবর পাওয়ার পর পূর্ব বিভাগের ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ (ডিসিপি) দেবরাজ ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ও ডগ স্কোয়াড নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

তিনি বলেন, “সকালে ইমারজেন্সি হেল্পলাইন ১১২ তে কল পাই। নগরের কেলকেরে লেকের কাছে ওই নারীর মরদেহ পাওয়ার তথ্য পাই। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এটা একটা জঘন্য অপরাধ। এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।।”

তবে বাংলাদেশের কোন জেলায় ওই নারীর বাড়ি তার তথ্য পাওয়া যায়নি।

ঢাকা/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

বাজেট বাস্তবায়নের গতি কিছুটা বেড়েছে

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় মোট ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। পাঁচ মাসে সার্বিকভাবে বাজেট বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মোট বরাদ্দের ২৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে বাজেট বাস্তবায়ন হার ছিল ২০ দশমিক ৭৩। এর ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ছিল ২২ দশমিক ২২ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

চলতি অর্থবছরে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট দেয় ক্ষমতাচ্যুত আওমায়ী লীগ সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও সেই বাজেট অব্যাহত রয়েছে। বাজেটের বড় দুটি অংশ হচ্ছে উন্নয়ন বাজেট এবং অনুন্নয়ন বা পরিচালন বাজেট। অর্থ বিভাগের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে বাজেট বাস্তবায়নের হার ৩৩ দশমিক ৬ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যা ১ লাখ ৭০ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে ব্যয় হয় ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। তবে এ সময়ে উন্নয়ন ব্যয় কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৮৩ শতাংশে। টাকার অঙ্কে যা ২৪ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে ব্যয় হয়েছিল ৩৩ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি রোধে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে সরকারি ব্যয়েও সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরই সঙ্গে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কাটছাঁট হচ্ছে। অর্থবছরের শুরু থেকে আন্দোলন ও পরে আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পাশাপাশি প্রশাসনে রদবদলের ধাক্কায় সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ধীরগতি বিরাজ করছে। 
এমন পরিস্থিতিতে সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয়ে সাশ্রয়ী পদক্ষেপ থাকলেও গত সরকারের নেওয়া অনিয়ন্ত্রিত ঋণের সুদ পরিশোধ ব্যয় ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। তা ছাড়া পরিচালন বাজেটে কাটছাঁটের খুব একটা সুযোগ থাকে না। আবার অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ব্যয় বাড়ায় পরিচালন বাজেটে ব্যয় কমানো সম্ভব হয়নি। তাই সার্বিক বাজেট বাস্তবায়ন কিছুটা বেড়েছে। 

সুদ পরিশোধেই সরকারি ব্যয়ের ৩৬ শতাংশ 
বাজেটের একক খাত হিসেবে সর্বোচ্চ ব্যয়ের খাত দাঁড়িয়েছে সুদ পরিশোধ। অর্থ বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সরকারি ব্যয়ের ৩৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ অর্থাৎ ৭১ হাজার ২১৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে। এর মধ্যে দেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ৬৩ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা ও বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ৭ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছিল ৪০ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। 
সুদ পরিশোধের এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছর শেষে শুধু সুদ পরিশোধেই প্রয়োজন হবে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে আগের অর্থবছরের চেয়ে সরকারের ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় বাড়ে ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং প্রথমবারের মতো ঋণের সুদ পরিশোধ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকায় উন্নীত হয়; যা সরকারের মোট ব্যয়ের ২৮ শতাংশ। 
পাঁচ মাসে পরিচালন বাজেটের আওতায় অন্যতম বড় খরচের খাত হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা। এ খাতে ব্যয় হয়েছে ২৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ২৫ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন বাবদ ব্যয় হয়েছে ৯ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা। এদিকে পাঁচ মাসে জ্বালানি, সারসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি বাবদ ব্যয় হয়েছে ২৭ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। 
একই সময়ে পরিচালন বাজেটের আওতায় অন্য খাতগুলোর মধ্যে পাবলিক অর্ডার ও সেফটি খাতে ৩০ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ১৯ হাজার ৩৩৫ কোটি, প্রতিরক্ষা ১০ হাজার ৫৩৮ কোটি, কৃষিতে ১২ হাজার ৭৫৩ কোটি, স্বাস্থ্যে ৪ হাজার ৯৪৬‍ কোটি এবং স্থানীয় সরকার খাতে ১ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ