অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে বিএনপির ‘কথার টোন’ আওয়ামী লীগের সাথে মিলে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। একইসঙ্গে তিনি রাজনৈতিক দলে যোগ দিলে সরকার থেকে বের হয়ে যাবেন বলেও এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানান বিবিসিকে।

শুক্রবার নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টানাপড়েন নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

এর আগে বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করলে সরকার থেকে বেরিয়ে এসে সেটা করা উচিত। তার এমন মন্তব্যের পর রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনার সূত্রপাত হয়।

ওই সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার নিরপেক্ষ থাকতে না পারলে নির্বাচন করতে নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে। শিক্ষার্থীরা ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করলে সরকার থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।

এমন বক্তব্যের পর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ, ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ প্রতিক্রিয়া দেখালে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা সৃষ্টি হয়।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিরপেক্ষ সরকারের দাবিকে আরেকটা এক এগারো সরকার গঠনের ইঙ্গিত হিসেবে ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, এক এগারো এবং মাইনাস টু-এর আলাপটা কিন্তু সর্বপ্রথম বিএনপিই রাজনীতির মাঠে এনেছে কিছুদিন আগে।

অভ্যুত্থান ও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি ও অংশীজনদের সমর্থনেই সরকার গঠন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বিএনপি মহাসচিবের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।

এই সরকারকে অস্থিতিশীল করতে বা সরাতে তিনি দেশি-বিদেশি চক্রান্তের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক অবস্থানের সঙ্গেও সাদৃশ্য দেখছেন বলে উল্লেখ করেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত ‘সে কিন্তু স্ট্যাটাস দিয়েছে যে এটা অবৈধ ও অনির্বাচিত সরকার, একটা নিরপেক্ষ সরকার লাগবে, এর আন্ডারে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব না। সো একই টোনে আমরা যখন কথা বলতে দেখছি, এটা কিন্তু একটা সন্দেহ তৈরি করে।

আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে শুক্রবার দেওয়া একটি পোস্টে মোহাম্মদ আলী আরাফাতকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার ‘অনির্বাচিত ও অসাংবিধানিক সরকার’। এই সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হবে না এবং পরবর্তী নির্বাচন একটি নতুন (তত্ত্বাবধায়ক) সরকারের অধীন হতে হবে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, আমি মনে করি না যে এটা তারা (বিএনপি) ওই উদ্দেশ্য থেকে বলেছে; কিন্তু তাদের কথার টোনটা কিন্তু আওয়ামী লীগের সেই টোনের সাথে মিলে যাচ্ছে।

অন্যদিকে শুক্রবার দলীয় একটি অনুষ্ঠানে বিএনপিকে ওয়ান–ইলেভেনের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হিসেবে উল্লেখ করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। বিএনপি ওয়ান–ইলেভেন আনার পাঁয়তারা করছে—এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘এক-এগারোর যে ভয়াবহ পরিণতি, তা বিএনপির চেয়ে বেশি কেউ ভোগ করে নাই।’ বিএনপির নেতা-কর্মী, সাধারণ কর্মী থেকে খালেদা জিয়া পর্যন্ত সবাই এতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বিবিসি বাংলাকে উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, বিচার কার্যক্রম, সংস্কার, ও নির্বাচন এসবই বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকার হলেও বিএনপি কেন জানি মনে করে এই সরকারটা হয়েছে কেবল একটি নির্বাচন দেওয়ার জন্য। অন্তর্বর্তী সরকারকে তো আমরা নিরপেক্ষই মনে করছি। বিএনপি কেন মনে করছে না নিরপেক্ষ আচরণ, বিএনপির এটা স্পষ্ট করা উচিত। নির্বাচনের সময় এগিয়ে এলে এসব বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে বলা সম্ভব বা কোনো অভিযোগ থাকলে নিরপেক্ষতার স্বার্থে কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে সেটা তখন সরকার বিবেচনায় নিতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে বা সাংবিধানিক পদে যদি বিএনপিপন্থি লোকজন থাকে, সেটাও নিরপেক্ষতা লাগবে কি না, তাহলে সেটাও বিবেচনা করতে হবে। কিন্তু এখন তো এটার সময় আসেনি।

নির্বাচন নিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, এবছরের শেষ থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচনের যে সম্ভাব্য সময়সীমা প্রধান উপদেষ্টা দিয়েছেন তাতে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকাল এবং নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময়সীমা দেওয়া হয়েছে, সে পর্যন্ত ধৈর্য রেখে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সামনে এগোনো প্রয়োজন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম ব এনপ ম র জ ফখর ল ইসল ম আলমগ র আওয় ম ল গ ন হ দ ইসল ম র জন ত ক উপদ ষ ট ই সরক র সরক র র ব এনপ র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

সাতকানিয়ায় ‘ডাকাত সন্দেহে’ গণপিটুনিতে নিহত ২, গুলিবিদ্ধ ৪ বাসিন্দা

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ‘ডাকাত সন্দেহে’ গণপিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এর আগে ওই যুবকদের গুলিতে স্থানীয় চার বাসিন্দা আহত হন। সোমবার রাতে সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত যুবকদের পরিচয় তাৎক্ষণিক নিশ্চিত করতে পারেননি পুলিশ। গুলিবিদ্দ স্থানীয় চার বাসিন্দা হলেন ওবায়দুল হক (২২), মামুনুর রশিদ (৪৫), নাসির উদ্দিন (৩৮) ও আব্বাস উদ্দিন (৩৮)। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, আটটি গুলির খোসা এবং একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা জব্দ করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার রাত সাড়ে নয়টা থেকে দশটার মধ্যে চারটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে একদল যুবক ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় গিয়ে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকেন। এ সময় স্থানীয় মসজিদে ডাকাত পড়েছে এমন প্রচারের পর লোকজন জড়ো হয়ে অটোরিকশায় করে আসা দুই যুবককে আটক করে পিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই যুবক নিহত হন।

এক যুবকের লাশের পাশ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করেছে পুলিশ। দুই যুবককে আটকের আগে গুলির ঘটনায় আহত চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম, সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দলসহ সাতকানিয়া থানা পুলিশের সদস্যরা।

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ডাকাত সন্দেহে মসজিদের মাইকে প্রচারের পর স্থানীয় বাসিন্দাদের পিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এখনো ওই দুই যুবকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ