সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সভা এবং অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের পার্শ্ব অনুষ্ঠানের সময় কমপক্ষে ৪৭টি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা ডব্লিউইএফ চলাকালে খুব ব্যস্ত দিন কাটিয়েছেন এবং তিনি বেশ কয়েকজন সরকার প্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিয়েছেন।
 
অধ্যাপক ড.

মুহাম্মদ ইউনূস ডব্লিউইএফ শীর্ষ সম্মেলনের সময় তিনি চারজন সরকার প্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধান, চারজন মন্ত্রী পর্যায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তি, জাতিসংঘ বা এমন সংস্থার ১০ জন প্রধান বা শীর্ষ নির্বাহী, ১০ জন সিইও/উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্বের সঙ্গে বৈঠক বা সাক্ষাৎ করেন। 

এছাড়া নয়টি আয়োজিত অনুষ্ঠান (আনুষ্ঠানিক নৈশভোজ এবং মধ্যাহ্নভোজ), মিডিয়ার সঙ্গে আটটি আলাপচারিতা এবং আরও দুটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।

২১ জানুয়ারি দাভোসে পৌঁছানোর পর থেকে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বার্ষিক সভায় বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে ব্যস্ত দিনগুলো কাটিয়েছেন।

সফরের প্রথমদিন প্রধান উপদেষ্টা সাতটি কর্মসূচিতে যোগ দেন এবং শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সঙ্গে বৈঠক করেন।

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পূর্ব তিমুরের রাষ্ট্রপতি জোসে রামোস-হোর্তা, মিউনিখ সুরক্ষা সম্মেলনের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টোফ হিউসজেন, থাই প্রধানমন্ত্রী পায়োংটার্ন সিনাওয়াত্রা, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্যান্ডি এবং ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার স্টাবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

দ্বিতীয় দিনে (২২ জানুয়ারি) তিনি প্রায় ১৪টি কর্মসূচি এবং অনেক পার্শ্ব ইভেন্টে যোগ দেন।

প্রধান উপদেষ্টা জার্মানির ফেডারেল চ্যান্সেলারির প্রধান এবং বিশেষ কার্যনির্বাহী মন্ত্রী উলফগ্যাং শ্মিট; বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ; সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল পররাষ্ট্র বিভাগের ফেডারেল কাউন্সিলর ইগনাজিও ক্যাসিস; সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই সংস্কৃতি ও শিল্প কর্তৃপক্ষের চেয়ারপারসন শেখ লতিফা বিনতে মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম; জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস; কঙ্গোর রাষ্ট্রপতি ফেলিক্স শিসেকেদি; জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রাক্তন মার্কিন বিশেষ দূত জন কেরি; প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টার্কসহ অন্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শীর্ষ সম্মেলনের সময় ‘জলবায়ু ও প্রকৃতির অবস্থা’ শীর্ষক একটি পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন এবং দাভোসের একটি হোটেলে সামাজিক উদ্যোক্তাদের জন্য শোয়াব ফাউন্ডেশনের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

তৃতীয় দিনে (২৩ জানুয়ারি) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৪টি নির্ধারিত অনুষ্ঠান এবং অনেক পার্শ্ব কর্মসূচিতে যোগ দেন।

তিনি মেটা প্ল্যাটফর্মস ইনকরপোরেটেডের গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের প্রেসিডেন্ট স্যার নিক ক্লেগ; সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক গ্লোবাল লজিস্টিকস প্রোভাইডার ডিপি ওয়ার্ল্ডের গ্রুপ চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ বিন সুলায়েম; অধিকার গোষ্ঠী অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড; ডেনিশ শিপিং এবং লজিস্টিক কোম্পানি এ.পি. মোলার-মারস্কের চেয়ারম্যান রবার্ট মারস্ক উগলা এবং বিশ্ব ব্যাংকের অপারেশনস বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আনা বিজের্ডের সঙ্গে বৈঠক করেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ডব্লিউইএফ শীর্ষ সম্মেলনে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াব আয়োজিত একান্ত বৈঠকে যোগ দেন এবং বৈঠকের ফাঁকে দাভোসের ক্লাইমেট হাবে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সুইজারল্যান্ডে তার শেষ দিন শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সাতটিরও বেশি অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

শীর্ষ সম্মেলনের সময় আমেরিকান বিনিয়োগকারী রে ডালিও সাক্ষাৎ করেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে।

এছাড়াও জেনেল গ্রুপের (রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল কোম্পানি) নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আমের আলীরেজা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন।

এর আগে ২১ জানুয়ারি ডব্লিউইএফের বার্ষিক সভায় যোগদানের জন্য জুরিখে পৌঁছান ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার চারদিনের ব্যস্ত সফর শেষ করে শুক্রবার রাতে (সুইজারল্যান্ড সময়) জুরিখ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছেন।

আজ শনিবার (২৫ জানুয়ারি) তিনি দেশে ফিরে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকা/হাসান/টিপু

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি–জামায়াতের বাইরে অভ্যুত্থানের পক্ষের দলগুলোর নির্বাচনী জোট করা ছাড়া পথ কী

অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে সব পর্যায়ে রাষ্ট্র সংস্কারের দমকা হওয়া উঠেছিল। কিন্তু নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সংস্কারের পালে হঠাৎ করে হাওয়া কমে গেছে বলেই মনে হচ্ছে।

দ্বিদলীয় গণতন্ত্রে এক দল পলাতক হলে অন্য দল যে খোলা মাঠে গোল দিতে নির্বাচন চাইবে, সেটা স্বাভাবিক। অন্যদিকে নির্বাচন গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রাণভোমরা। তাই নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করাতে গণতন্ত্রকামী অন্য দলগুলোও তাদের নির্বাচনী হিসাব মেলাতে বাধ্য হওয়ার কথা। এমনকি নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করা দলও তাদের বৈধতা প্রমাণ করতে নির্বাচনের রাজনীতির দিকেই ঝুঁকবে।

কিন্তু একদলীয় নির্বাচনী ভাগ্যচক্রে অন্য দলগুলো কী পরিণতি আশা করতে পারে?

ভোটের হিসাবে বিএনপির পর দ্বিতীয় শক্তিশালী দল জামায়াত কোনো নির্বাচনেই পাঁচ শতাংশের বেশি ভোট পায়নি। তাই তাদের পক্ষে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫টি আসন পেতেই হিমশিম খাওয়ার কথা। দ্বিতীয়-তৃতীয় সারির দলগুলো এক নেতা, এক দল; তাই তারা সম্মিলিতভাবে ১০টির বেশি আসনে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে হয় না। কিন্তু তাদের আসনে বিএনপি যদি প্রার্থী দেয়? তাহলে বোধ হয় তারা নিজেরাই বিশ্বাস করে না যে তারা ১০ ভাগ ভোট পেতে পারে। জিতে আসা তো অনেক দূর।

বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে এই জোটই সংসদের সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায়ও আওয়াজ তুলতে পারবে। সেটা একদিকে আওয়ামীতন্ত্রে ফেরার ঝুঁকি কমাবে, আবার অন্যদিকে গণতন্ত্রের আওয়াজ জারি রাখলে পাঁচ বছর পরের যে সংসদ, সেখানে ক্ষমতা নির্ধারণ তাদের হাতেই থাকবে।

ছাত্রদের নতুন দলে হাতে গোনা কয়েকজনের জাতীয় পরিচিতি থাকলেও এলাকার রাজনীতি তাঁরা করেননি। তাই রাষ্ট্রীয় সমর্থনবিহীন নির্বাচনী পাশা খেলায় তাঁরা নিজ নিজ আসনে কতটা কী করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এদিকে বিএনপি বুঝতে পারছে যে একদলীয় নির্বাচনে ২৯০ সিট জিতে আসা তাদের জন্য বিপজ্জনক। বিরোধী দল না রাখার শেখ সাহেবের ’৭৩ সালের ভুল তাদের স্মরণে আছে নিশ্চয়ই। সে জন্য তারা তাদের মিত্রদের কাছে ১০০ সিট ছেড়ে দিতেও প্রস্তুত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এই সুযোগে মিত্র দলগুলো এখনই সংসদের সবুজ চেয়ারে বসার স্বপ্নের ডানায় উড়াল দিয়ে ফেলেছে।

এই স্বপ্নের যাত্রায় গণতন্ত্রের পক্ষের যে দলগুলো আওয়ামী জুলুমের সময় রাস্তায় ছিল, তারাও কি বুঝতে পারছে যে একবার বিএনপির আশীর্বাদের চাদরে ঢুকে গেলে তাদের ইনু-মেনন হওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না? আর ইনু-মেননরা যেহেতু রাস্তার রাজনীতি বিসর্জন দিয়েই যেহেতু সংসদে বসার দাসখত দেন, সামনের বিএনপির সময়েও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো এই কায়দায় রাস্তায় নামতে না পারার ঝুঁকিতে পরতে পারে।

আর রাস্তা ফাঁকা থাকলে মানুষ তো আর বসে থাকবে না। তখন হয়তো তারা তাদের স্বার্থেই আওয়ামী লীগকে ডেকে আনবে!

এমন একই পটভূমিতে ইতিহাস যাতে গুম-খুনের আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার বাঁক নিতে বাধ্য না হয়, সে জন্য বিএনপির বাইরে অভ্যুত্থানের পক্ষের নতুন-পুরোনো সব দল মিলে একটা নির্বাচনী জোট গড়ে তোলা ছাড়া কোনো সমাধান নেই।

বাংলাদেশের মানুষের অভিজ্ঞতা বলে যে বিএনপি আসলে আওয়ামী লীগেরই অন্য পিঠ। তাই মানুষের পক্ষের নির্বাচনী জোট সামনে এলে আগামী নির্বাচনে চমক দেখানোর সম্ভাবনা উজ্জ্বল। সেই নির্বাচনে যদি তারা পঞ্চাশের কম আসনও পায়, তারাই হবে প্রধান বিরোধী জোট। সেই সংসদে বিএনপি জোর জুলুম করতে চাইলে হয়ে সংসদে তারা জোরালো কণ্ঠে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারবে।

বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে এই জোটই সংসদের সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায়ও আওয়াজ তুলতে পারবে। সেটা একদিকে আওয়ামীতন্ত্রে ফেরার ঝুঁকি কমাবে, আবার অন্যদিকে গণতন্ত্রের আওয়াজ জারি রাখলে পাঁচ বছর পরের যে সংসদ, সেখানে ক্ষমতা নির্ধারণ তাদের হাতেই থাকবে।

সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের রাজনৈতিক কর্মী

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ