কেমন হচ্ছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রস্তুতি?
Published: 25th, January 2025 GMT
বাংলাদেশ সবশেষ ওয়ানডে খেলেছে গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজে। যেখানে তিন ম্যাচের সিরিজে স্রেফ উড়িয়ে গিয়েছিল। নাজমুল হোসেন শান্তর পরিবর্তে সিরিজে নেতৃত্ব দেওয়া মেহেদী হাসান মিরাজ পেয়েছিলেন হোয়াইটওয়াশের তিক্ত স্বাদ।
সামনে বাংলাদেশ অংশ নেবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। আইসিসি এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার আগে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা নিজেদের প্রস্তুতি সারছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে অংশ নিয়ে।
গত ১২ জানুয়ারি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির জন্য স্কোয়াড ঘোষণা করে বাংলাদেশ। ঘোষিত হলে নির্বাচকরা চমক দেখিয়েছেন কেবল পারভেজ হোসেন ইমনকে নিয়ে। সবশেষ স্কোয়াডে ছিলেন। ১ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে ৩৯ রান করেছিলেন। কিন্তু বিপিএলে তেমন আলো ছড়াতে পারছেন না বাঁহাতি হার্ডহিটার ওপেনার। ৭ ম্যাচে মাত্র ১০৩ রান করেছেন ১৪.
পারভেজ দু্যতি ছড়াতে না পারলেও সব আলো নিজের ওপর কেড়ে নিয়েছেন আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। সঙ্গে লিটন দাসও। তবে লিটন দাস চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে নেই। তানজিদ ১০ ম্যাচে ৪২০ রান করে রয়েছেন সবার উপর। পারভেজ ইমন সুযোগ পেয়েছেন লিটনকে টপকে। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ে লিটন রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে দেন। বাদ পড়ার দিনই সন্ধ্যায় মাঠে নেমে পান নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। এরপর তার ব্যাটে রানের স্রোত। ৯ ম্যাচে করেছেন ৩৪৮ রান।
টপ অর্ডারে তানজিদ যখন রানের ধারাবাহিকতায় তখন উল্টো পথে নাজমুল হোসেন শান্ত। অধিনায়ক শান্ত ফরচুন বরিশালের একাদশেই জায়গা হারিয়েছেন। শেষ দুই ম্যাচে ছিলেন না একাদশে। মাঝে দুই ম্যাচে তাকে বরিশাল খেলিয়েছিল উইকেট কিপার হিসেবে। জাতীয় দলের অধিনায়ক ৫ ম্যাচে রান করেছেন ৫৬। সর্বোচ্চ ৪১। বাকি চারটিতেই দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছতে পারেননি। তার ফর্ম নিয়ে রীতিমত হচ্ছে প্রবল সমালোচনা।
টপ অর্ডারের বাকি দুই ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার ও তাওহীদ হৃদয়। সৌম্য এখনও ইনজুরি থেকে পুরোপুরি সেরে উঠেনি। তাকে পেতে আরেকটু সময় লাগতে পারে। বলার মতো ফর্মে নেই তাওহীদ হৃদয়। টপ অর্ডারে নিয়মিত সুযোগ পেলেও তাওহীদ রান করেছেন ১৫৭, ৭ ইনিংসে। নেই একটিও ফিফটি। সর্বোচ্চ রান ৪৮।
মিডল অর্ডারে মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, জাকের ও মিরাজ দলের ভরসা। মুশফিক বাদে বাদে তিনজনই নিজেদের কাজটা করে যাচ্ছেন ঠিকঠাক ভাবে। মুশফিক ৫ ইনিংসে ৭৮ রান করেছেন। দুয়েকটি ইনিংসে শেষ সময়ে মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু বাকিগুলোতে সুযোগ ছিল ইনিংস বড় করার। ইনজুরি থেকে ফিরে এসে ছন্দে ফিরতে সময় নিচ্ছেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
মাহমুদউল্লাহ ৮ ম্যাচে ৫ ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ১৩৪ রান কেরছেন। গড় ৩৩.৫০, স্ট্রাইক রেট ১৪২.৫৫। ওয়েস্ট ইন্ডিজে তিন ওয়ানডেতেই তার ব্যাটে এসেছিল ফিফটি পেরিয়ে যাওয়া ইনিংস। বিপিএলেও রানে থেকে তার প্রস্তুতি ভালো হচ্ছে। ভালো করছেন মিরাজও। তবে মিরাজ মিডল অর্ডারে না খেলে ব্যাটিং করছেন টপ অর্ডারে। ৯ ইনিংসে মিরাজের রান ২২৯। সবশেষ ম্যাচে ৭০ রান করে দলকে জিতিয়েছেন। ১৩২.৩৬ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করছেন খুলনার অধিনায়ক। জাকের আলী সিলেটের দাবি মেটাতে পারছেন। ৯ ইনিংসে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৮৩ রান। ১৪১.৮৬ স্ট্রাইক রেটে এই রান করেছেন। শেষ দিকে নেমে ঝুঁকি নিয়ে রান করার কাজটা সিদ্ধহস্তেই করছেন মারমুখী এই ব্যাটসম্যান।
বোলিং বিভাগে পেসাররা দারুণ করছেন। মোস্তাফিজুর রহমান, নাহিদ রানা ও তাসকিন আহমেদ ধারাবাহিক দু্যতি ছড়িয়ে যাচ্ছেন। ২২ উইকেট পাওয়া নিশ্চিতভাবেই তাসকিন তাদের সেরা। বোলিংয়ে ডানহাতি পেসার শেষ কয়েক বছরে যে ধারাবাহিকতায় ছিলেন এবারও তা ধরে রেখেছেন।
মোস্তাফিজ আঁটসাঁট পারফরম্যান্সে নিজের কাজটা করে যাচ্ছেন। ১০ ম্যাচে ৯ উইকেট পেলেও নিজের প্রস্তুতির জায়গাটা ঠিকঠাক রেখেছেন। এছাড়া বাংলাদেশের দ্রুততম পেসার নাহিদ রানা ৮ ম্যাচে ১০ উইকেট পেয়েছেন। নিয়মিত ম্যাচ খেলায় তার বোলিংয়ে মাঝে কিছুটা ধার কমেছিল। বিশ্রামের পর আবার পুরোনো ছন্দে ফিরে আসছেন তিনিও।
চতুর্থ পেসার হিসেবে স্কোয়াডে থাকা তানজিদ হাসান সাকিবও দু্যতি ছড়িয়ে যাচ্ছেন। ঘাড়ের রগ ফুলে যাওয়ায় সিলেটের জার্সিতে শেষ দুই ম্যাচ খেলা হয়নি তার। ৬ ম্যাচে তার শিকার ১১ উইকেট। স্পিনে মিরাজ, নাসুম ও রিশাদ নিজেদের নামের সুবিচার করছেন। তাদের মধ্যে মিরাজ ও রিশাদই একটু এগিয়ে। নাসুমকে একটু পিছিয়ে রাখতে হচ্ছে।
মিরাজ পাওয়ার ৯ ম্যাচে ৯ উইকেট পেয়ে নিজের মান রেখেছেন। নাসুমের ৭ ম্যাচে শিকার ৬ উইকেট। শুরুতে সুযোগ না পাওয়ার রিশাদ এখন মেলে ধরছেন নিজেকে। ৫ ম্যাচে তার শিকার ৫ উইকেট।
সব মিলিয়ে ব্যাটিং-বোলিংয়ে প্রস্তুতি ভালোই হচ্ছে ক্রিকেটারদের। টুর্নামেন্টের শেষটা তারা কিভাবে করেন সেটাই দেখার।
নির্বাচকরা খুশি
জাতীয় দলের নিয়মিত ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সে খুশি নির্বাচক হান্নান সরকার। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রস্তুতি নিয়েও সন্তুষ্ট তিনি।
‘‘ওয়ানডের প্রস্তুতি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দিয়ে বিচার করা কঠিন। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা যখন রান করেন। বোলাররা যখন উইকেট নেন তখন তাদের আত্মবিশ্বাস ভালো থাকে। তানজিদের কথাই ধরুন। যেভাবে রান করছেন, যেভাবে বোলারদের অ্যাটাক করছেন এটা তো তাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে অবশ্যই। এটাই ক্রিকেট। আবার তাসকিন যেই পরিশ্রম করে উইকেট নিচ্ছে এটা তাকে অবশ্যই বড় কিছুর আশা দেখাবে।’’
‘‘আমি কোনো নির্দিষ্ট ক্রিকেটারকে নিয়ে আলাদা করে বলতে চাচ্ছি না। ওভারঅল সবার পারফরম্যান্সই সন্তোষজনক। ভালো করার তো শেষ নেই। তারা আসলে শেষটা কেমন করে, টুর্নামেন্ট শুরুর আগে নিজেরা কতটা চাঙ্গা থাকে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রস্তুতি ভালো হচ্ছে। আমার বিশ্বাস ভালো কিছুই হবে।’’
ঢাকা/ইয়াসিন
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ন কর ছ ন উইক ট প য টসম করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
বিপিএল প্লে-অফে রংপুর-বরিশালের সঙ্গী হচ্ছে কারা
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) প্রথম পর্ব শেষের পথে, প্লে-অফের লড়াই জমে উঠেছে। রংপুর রাইডার্স ও ফরচুন বরিশাল ইতোমধ্যে শেষ চার নিশ্চিত করলেও, বাকি দুটি দল এখনো নির্ধারিত হয়নি। দুর্বার রাজশাহী শেষ মুহূর্তে দারুণ ফর্ম দেখিয়ে সমীকরণ জটিল করে তুলেছে, বিপাকে পড়েছে খুলনা টাইগার্স ও চিটাগং কিংস।
প্রথম পর্বের বাকি ছয় ম্যাচের পারফরম্যান্সই ঠিক করবে প্লে-অফে কারা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সিলেট স্ট্রাইকার্স ছিটকে গেলেও, বাকি চার দল এখনো দৌড়ে টিকে আছে।
প্লে-অফ নিশ্চিত হলেও শীর্ষ দুইয়ে থাকতে চাইবে রংপুর রাইডার্স ও ফরচুন বরিশাল। কারণ কোয়ালিফায়ার খেলতে পারলে আরও একটি সুযোগ পাবে তারা। এক্ষেত্রে চিটাগং কিংস অন্তত একটি ম্যাচ হারলেই শীর্ষ দুই নিশ্চিত হয়ে যাবে তাদের।
দুর্বার রাজশাহীর সব ম্যাচ শেষ। খুলনা টাইগার্স দুটি ম্যাচের একটি হারলে রাজশাহী নিশ্চিতভাবেই প্লে-অফে যাবে। যদি খুলনা দুটি ম্যাচ জিতে, তাহলে নেট রান রেটের হিসাব চলে আসবে। এছাড়া চিটাগং কিংস তাদের তিন ম্যাচ হারলে প্লে-অফ নিশ্চিত হবে রাজশাহীর। তবে যদি চিটাগং একটি ও খুলনা দুটি ম্যাচ জেতে, তাহলে তিন দলের মধ্যে নেট রান রেটের হিসাব আসবে।
চিটাগং কিংসের বাকি খেলাগুলো হবে রংপুর রাইডার্স, সিলেট স্ট্রাইকার্স, ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে। তিন ম্যাচের সবকটি জিতলে সরাসরি প্লে-অফ নিশ্চিত হবে। দুই ম্যাচ জিতলে তৃতীয় হয়ে শেষ চারে যাবে। একটি জয় পেলেও প্লে-অফে যাওয়ার সুযোগ থাকতে পারে, তবে রাজশাহী ও খুলনার সঙ্গে নেট রান রেটের লড়াইয়ে পড়তে হবে। তিন ম্যাচ হারলেও খুলনা টাইগার্সের পারফরম্যান্সের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে।
রংপুর রাইডার্স, ঢাকা ক্যাপিটালসের বিপক্ষে শেষ দুই ম্যাচ খেলবে খুলনা টাইগার্স। দুই ম্যাচের একটিতে জয় পেলেও প্লে-অফের সম্ভাবনা থাকবে, তবে চিটাগং কিংসের ফলাফলের ওপর নির্ভর করতে হবে। চিটাগং তিন ম্যাচ হারলে এক জয়েও খুলনা প্লে-অফে যেতে পারে, তবে নেট রান রেটে এগিয়ে থাকতে হবে। দুই ম্যাচ জিতলেও রাজশাহীর সঙ্গে নেট রান রেটের সমীকরণে যেতে হবে।
প্লে-অফে খেলতে সবচেয়ে কঠিন সমীকরণ মেলাতে হবে ঢাকা ক্যাপিটালসকে। তারা এখন পর্যন্ত ১০ ম্যাচ খেলে ৬ পয়েন্ট নিয়ে রয়েছে টেবিলের ষষ্ঠ স্থানে। তাদের শেষ দুই ম্যাচের প্রতিপক্ষ ফরচুন বরিশাল ও খুলনা টাইগার্স। এই দুই ম্যাচ জিতলেও তাকিয়ে থাকতে হবে অন্যদের দিকে। চিটাগং আর একটি কিংবা খুলনা দুটি ম্যাচ জিতলেই বাদ ঢাকা।
শেষ মুহূর্তের লড়াইয়ে কোন দুই দল জায়গা পাবে প্লে-অফে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে শেষ ছয় ম্যাচের ফলাফলের জন্য।