আসছে ছাত্র নেতৃত্বের দল, নানা কৌতূহল
Published: 25th, January 2025 GMT
শেখ হাসিনার পতন ঘটানো গণঅভ্যুত্থানের সূত্রপাত করা ছাত্র নেতৃত্বের রাজনৈতিক দল আগামী মাসের মধ্য থেকে শেষ ভাগে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। সংসদীয় আসন, উপজেলা ও ইউনিয়নে বিএনপির দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের দলে টানার চেষ্টা করবে তারা। আওয়ামী লীগ বাদে অন্যান্য দলের নেতাদের জন্যও দুয়ার উন্মুক্ত রাখবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে বাহাস শুরু হলেও, তিন ছাত্র উপদেষ্টার মধ্যে অন্তত একজন দলের নেতৃত্বে আসতে পারেন। সরাসরি বিএনপি বিরোধিতা না করে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, সিন্ডিকেট ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে ছাত্র নেতৃত্বের দল। মূলনীতি এবং কর্মসূচি যাই হোক, চাঁদাবাজি-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ বিরক্ত থাকায়, এ ইস্যুতে আত্মপ্রকাশের আগে লংমার্চ কর্মসূচি দিতে পারে তারা। তবে তা নির্ভর করছে মধ্য ফেব্রুয়ারির আগে কতগুলো উপজেলা ও থানায় কমিটি করা যায়, তার ওপর।
ছাত্র নেতৃত্বের রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে। এসব সংগঠনের নেতাদের ভাষ্য, দল গঠনের পরও নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সক্রিয় থাকবে। আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক না থাকলেও নতুন রাজনৈতিক দলের সহযোগী হিসেবে কাজ করবে।
গত বৃহস্পতিবার নাগরিক কমিটির সদস্য আখতার হোসেন জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারিতেই আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা আসবে। শতাধিক নামের প্রস্তাব এলেও, এখনও নাম ঠিক হয়নি।
নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন সমকালকে বলেন, ফেব্রুয়ারিতে সম্ভাব্য কয়েকটি সময় রয়েছে দলের আত্মপ্রকাশে। তবে কোনোটিই চূড়ান্ত হয়নি।
সাড়া ফেলার চেষ্টা
গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ ও একাত্তরের চেয়ে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে গৌরবান্বিত দেখানোর অভিযোগ করা হচ্ছে। তা মোচনে প্রাথমিকভাবে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে দলের আত্মপ্রকাশের চিন্তা ছিল। কিন্তু রমজান এবং ওই দিন থেকে ঈদুল ফিতরের ছুটি শুরু হওয়ায় আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে বড় জমায়েত সম্ভব হবে না– চিন্তা থেকে ফেব্রুয়ারি বেছে নেওয়ার কথা জানিয়েছে নাগরিক কমিটির সূত্র।
গত ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ২৩০ উপজেলা ও থানায় প্রতিরোধ কমিটি করেছে নাগরিক কমিটি। সামান্তা শারমিন বলেন, ঢাকায় থানার পর ওয়ার্ড কমিটি গঠন শুরু হয়েছে। ৪০০ উপজেলা ও থানায় কমিটি শেষে দল আত্মপ্রকাশ করবে।
গত ১৮ জানুয়ারি নাগরিক কমিটির সাধারণ সভায় লংমার্চের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশের প্রস্তাব আসে। চাঁদা, দখল, ঘুষ, দুর্নীতি, সিন্ডিকেট নির্মূলের দাবিতে গণঅভ্যুত্থানে রংপুরে শহীদ আবু সাঈদ থেকে শুরু করে চট্টগ্রামে শহীদ ওয়াসিম আকরামের কবর পর্যন্ত লংমার্চের আলোচনা হয়। জনদৃষ্টি আকর্ষণে হেঁটে এ কর্মসূচি করার প্রস্তাবও রয়েছে।
চাঁদা, দখল, দুর্নীতিবিরোধী বয়ান
নাগরিক কমিটির মূল্যায়ন, ৫ আগস্ট রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন হলেও চাঁদাবাজি, দখলদারি বন্ধ হয়নি। এতে গণঅসন্তোষ রয়েছে। জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল বিএনপি নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি-দখলের জন্য দায়ী করছে। তারা আওয়ামী লীগের পরিবর্তে এখন বিএনপির দখলদারিত্ব এসেছে– এমন একটি রাজনৈতিক বয়ান তৈরির চেষ্টা করছে। নাগরিক কমিটি এ বয়ানকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করে, আওয়ামী লীগহীন ভোটের মাঠে বিএনপির প্রতিপক্ষ হতে চাচ্ছে।
সরকারি অফিসে ঘুষ, দুর্নীতি, সেবা পেতে ভোগান্তি নিয়েও নিজের পক্ষে বয়ান তৈরি করতে চায় নাগরিক কমিটি। কিন্তু ক্ষমতায় তাদের সমর্থিত ড.
নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সমকালকে বলেন, জুলাই বিপ্লবে মানুষ শুধু কোটা সংস্কারে জীবন দেয়নি। চাঁদাবাজি, দখল, দুর্নীতি, সিন্ডিকেটের নির্মূল চেয়েছিল। তা কি হয়েছে? ৫ আগস্টের পর কি চাঁদাবাজি, দখল হচ্ছে না? কারা করছে, তাও তো দেশের মানুষ দেখছে। তাদের পরিচয় জনগণের সামনে স্পষ্ট। মানুষ সত্যিই অতিষ্ট চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও দুর্নীতিতে। এগুলো আর চলতে দেওয়া যাবে না। এটাই নাগরিক কমিটির অবস্থান।
জুলাই গণহত্যা, শেখ হাসিনার শাসনামলের অপকর্মের বিচারের দাবিতে বিএনপির চেয়ে বেশি সোচ্চার এবং ভারতবিরোধী সুরও অন্যদের চেয়ে চড়া রাখবে নাগরিক কমিটি। তারা বিএনপিকে চাপে রেখে নির্বাচনের আগে সংস্কার নিশ্চিতে গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি রাখবে মাঠে। গতকালও সমাবেশের বক্তৃতায় নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এসব দাবির কথা তুলেছেন।
লক্ষ্য বিএনপির নেতাকর্মী
৫ আগস্টের পর বিএনপি, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে কোন্দল বেড়েছে। হচ্ছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, খুনাখুনি। এতে ক্ষুব্ধ, নবগঠিত কমিটির পদবঞ্চিত এবং আসন্ন নির্বাচনগুলোতে যারা বিএনপির মনোনয়ন ও সমর্থন প্রাপ্তিতে পিছিয়ে; তাদের নতুন দলে টানার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের কমিটিতে ভেড়ানো হয়েছে।
নাগরিক কমিটির সূত্র এ তথ্য সমকালকে জানালেও সামান্তা শারমিন তা স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটিই করেননি। তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করেন– এমন সব নাগরিকের জন্য নতুন রাজনৈতিক দলের দুয়ার উন্মুক্ত। শুধু বিএনপি নয়, অন্য যে কোনো দলের যে কেউ জুলাই চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে এলে স্বাগত জানানো হবে। তবে যারা অতীতে ফ্যাসিবাদী রাজনীতি তথা আওয়ামী লীগে যুক্ত ছিলেন, তাদের নেওয়া হবে না। বিভিন্ন কমিটিতে কয়েকজন অতীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততার তথ্য গোপন করে ঢুকে পড়েছিলেন। তা জানামাত্র বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানান সামান্তা।
উপদেষ্টারা কি দলে থাকবেন
সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ছাত্রদের সরকারের সহযোগিতা নিয়ে দল গঠন বা কিংস পার্টি হওয়া উচিত হবে না। উপদেষ্টারা ছাত্রদের দলে থাকলে অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতা হারাবে। সে ক্ষেত্রে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রয়োজন হবে।
ছাত্র নেতৃত্ব এ বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যকে আরেকটি ১/১১-এর ইঙ্গিত আখ্যা দেন। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া স্পষ্ট করেন, উপদেষ্টা রাজনীতি করলে সরকার ছেড়েই করবে। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি ফেসবুকে লেখেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সরকারি এবং সাংবিধানিক পদের নিয়োগে চাপ-তদবিরও অনুচিত। উপদেষ্টারা খোলাখুলি বলেন, সরকারের সব স্তরে বিএনপিপন্থিরাই রয়েছেন।
এমন বাহাস চললেও শোনা যাচ্ছে, নাহিদ ইসলাম আসতে পারেন নতুন দলের নেতৃত্বে। এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য জানতে পারেনি সমকাল। সামান্তা শারমিন সমকালকে বলেন, এ-সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট আলাপ-আলোচনা হয়নি। নাগরিক কমিটি মনে করে, উপদেষ্টাদের কেউ রাজনীতি করতে চাইলে সরকারের পদ ছাড়তে হবে। নইলে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। শুধু নাগরিক কমিটি নয়, একই নীতি অন্য দলের জন্যও প্রযোজ্য হতে হবে। সরকারের কোনো স্তর যেন কোনো দলের প্রতি অনুগত থাকতে না পারে।
সরকারি চাকরিতে আদালতের রায়ে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে সংগঠন গড়ে শিক্ষার্থীরা গত ১ জুলাই আন্দোলনে নামেন। এতে ছাত্রলীগের হামলার পর সাধারণ মানুষ যোগ দেন। পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ হত্যাযজ্ঞ চালালে আন্দোলন রূপ নেয় অভ্যুত্থানে। বিএনপি, জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলগুলো আগের ১১ বছরে সরকার পতনের আন্দোলন ডেকে ব্যর্থ হলেও শিক্ষার্থীদের সূত্রপাত করা অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যান।
বিএনপি ও রাজনৈতিক দলগুলো অভ্যুত্থানে তাদের অবদান স্মরণ করিয়ে সংকট নিরসনে দ্রুত নির্বাচন চাইলেও ছাত্র নেতৃত্ব সংস্কারে জোর দিচ্ছে। সংবিধানসহ বিভিন্ন ইস্যুতেও রয়েছে বিপরীতমুখী অবস্থানে। আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায় ছাত্ররাই বিএনপির নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে– এমন সম্ভাবনা ও গুঞ্জন রয়েছে, যা নিয়ে নতুন রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত গণঅভ য ত থ ন উপদ ষ ট র ৫ আগস ট সরক র র ব এনপ র র জন য গঠন র উপজ ল আওয় ম স গঠন সমক ল
এছাড়াও পড়ুন:
অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে রাজনীতিকদের কী লাভ?
অবাক হওয়ার ব্যাপার– রাজনীতিকরা কেউ কেউ অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে শুরু করেছেন! এমনকি কোনো কোনো রাজনৈতিক দল গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারকে এখন ‘অনির্বাচিত’ আখ্যা দিচ্ছে। যদিও নাগরিকদের বড় অংশ এই সরকারের ওপরেই আস্থা রাখছে। নাগরিকদের ধারণা জন্মেছে, সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে যে রাজনৈতিক দল রাষ্ট্র পরিচালনায় আসবে, রাষ্ট্র সংস্কারে তাদের ইচ্ছা বা সক্ষমতার ঘাটতি আছে। রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরেও গণতান্ত্রিক চর্চার অভাব প্রকট। যদিও রাজনৈতিক দলগুলো এর কারণ খোঁজায় খুব আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে না।
আওয়ামী লীগবিহীন রাজনৈতিক পরিবেশে বর্তমানে বিএনপির ভালো অবস্থানে থাকার কথা। কিন্তু তারা দৃশ্যত চাপের মধ্যে। এমনকি নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপিও মানুষের একচেটিয়া সমর্থন পাচ্ছে, বলা যাবে না। তার মানে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্দিষ্ট সমর্থক গোষ্ঠী ছাড়া সাধারণ নাগরিকরা রাজনীতিবিদদের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। বিপরীতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি নাগরিকদের আস্থা ক্রমে বাড়ছে। এটা স্পষ্ট, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর মানুষের আস্থা আরও বাড়তে থাকবে। অন্যদিকে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতিতে গুণগত সংস্কার আনতে না পারলে দলীয় কর্মী-সমর্থকের বাইরে সাধারণ নাগরিকদের সমর্থন কমতে থাকবে। রাজনৈতিক দলগুলোতে এখনও সেকেলে ধাঁচের ব্যক্তি-তোষণ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসনির্ভর রাজনীতি চালু আছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো অভ্যন্তরীণ সংস্কার। দলের ভেতরে গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করতে হবে। নেতাকর্মীর বক্তব্যে সুস্থ ধারার রাজনীতির ছাপ থাকতে হবে। তারা ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে কীভাবে ‘কল্যাণ রাষ্ট্র’ হিসেবে গড়ে তুলতে চান, তা পরিষ্কার করে বলতে হবে। রাজনীতির প্যাটার্নই বদলাতে হবে।
বস্তুত পুরোনো রাজনৈতিক দলের নেতারা এখনও নব্বই দশকের রাজনীতি করছেন। তাদের বয়ানের মধ্যে কোনো নতুনত্ব নেই। তাদের বক্তব্য সচেতন নাগরিকরাও সেভাবে শুনছেন না। বিএনপি বা জামায়াতের প্রথম সারির নেতাদের রাষ্ট্র গঠন নিয়ে সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক ভাবনা শোনা যায় না। এমনকি বিএনপির ৩১ দফাও নিজ দলের মধ্যে আলোচনায় আসছে না সেভাবে। আবার সরকারের বিভিন্ন কমিশনের প্রস্তাবিত সংস্কার প্রশ্নে অনেক জরুরি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হতে পারছে না। এটি রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতাই বটে। তরুণ প্রজন্মের কাছে এই রাজনীতি কোনো আকর্ষণ তৈরি করছে না।
গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে সবাই আশা করেছিল, রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে। সেটি আসেনি। সাধারণ মানুষ যে কারণে হতাশ। তারা এক রাজনৈতিক দলের বদলে আরেক রাজনৈতিক দলের চাঁদাবাজি ও লুটপাট দেখতে চায় না। মানুষের মধ্যে নতুন চাওয়া তৈরি হয়েছে। তারা আর রাজনৈতিক হানাহানি, মারামারি দেখতে চায় না। তাই নাগরিকদের অনেকেই এখন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে গঠিত সরকার বনাম অরাজনৈতিক অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে তুলনা করছে। এই তুলনা অবশ্যই রাজনৈতিক নেতৃত্বের ধারাবাহিক ব্যর্থতারই ফল!
বিপরীত দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ, কথা, শরীরী-ভাষা, বিবৃতি, অফুরন্ত কর্মস্পৃহা মানুষের মধ্যে, শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে ব্যাপক আশার সঞ্চার করেছে। বিশেষত বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা ক্রমে বাড়ছে। কারণ, তারা এ রকম উজ্জ্বল নেতৃত্ব গত কয়েক দশকে দেখেনি। তাই তারা এখন তুলনা করতে পারছে।
আমি প্রায় প্রতিদিন শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলি। জনসাধারণের সঙ্গে কথা বললে বোঝা যায়, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে এত প্রাণহানির পর মানুষ আর পেশিশক্তিনির্ভর, সন্ত্রাসনির্ভর, চাঁদাবাজিনির্ভর রাজনীতি দেখতে চায় না। তারা সন্ত্রাসী, চাটুকার পরিবেষ্টিত রাজনীতিবিদদের গলাবাজি শুনতে চায় না। তারা দেখতে চায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি, অর্থনীতিতে গতি, বাজারের স্থিতিশীল অবস্থা, ব্যাংকে লুটপাট বন্ধ, ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিশীলতা।
প্রথমদিকে স্থবিরতা থাকলেও অর্থনীতি আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে; বিদেশি বিনিয়োগ ইতিবাচকভাবে বৃদ্ধির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমান সরকার ভারত, পাকিস্তান, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়ার সঙ্গে যে কৌশলী কূটনীতি চালিয়ে যাচ্ছে, সেটাও গণমানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন পরিস্থিতিতে রাজনীতিবিদদের উচিত ছিল পুরোনো রাজনীতি ঝেড়ে ফেলে নতুন রাজনীতির ক্যারিশমা দেখানো। কিন্তু সেই প্রজ্ঞা, সদিচ্ছা, প্রচেষ্টা দেখা যায়নি; টেকসই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করার ব্যাপারে কর্মস্পৃহা দেখা যায় না।
প্রশ্ন হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার কি অনন্তকাল থাকবে? সেটা কেউ চাইবে না; জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই হবে। তার আগে রাষ্ট্র কাঠামোর ভেতরে এবং শাসন ব্যবস্থায় জরুরি মৌলিক সংস্কার করতেই হবে। গণঅভ্যুত্থান সেই ম্যান্ডেট এই সরকারকে দিয়েছে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনীতিকদের নিজের কোয়ালিটি বাড়াতে হবে, যদি তারা টিকে থাকতে চান। দলের মধ্যে ইতিবাচক সংস্কার করতেই হবে। এখনও সেকেলে ধাঁচের রাজনীতি থেকে বের হতে না পারলে এবং জবাবদিহিমূলক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় একনিষ্ঠ হয়ে কাজ না করলে সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করা যাবে না। আর অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে বসে থেকে বিশেষ কোনো ফায়দা নেই।
শেখ নাহিদ নিয়াজী: সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
nahidneazy@yahoo.com