বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ কোটি টাকা বিজয় টিভির নামে সরানোর অভিযোগ উঠেছে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান থাকাকালে তিনি এ অনিয়ম করেন। ওই সময় নওফেল বিজয় টিভির এমডি ছিলেন।

প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর এ অনিয়ম ধরা পড়ে। একই সঙ্গে নওফেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব থেকে অগ্রিম ৩ কোটি টাকা তুলে নেন। প্রায় ছয় মাস পর তা একটি তামাক কোম্পানির মাধ্যমে সমন্বয় করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা বিজয় টিভিতে কীভাবে গেল, তা জানাতে পারেনি চসিক কর্তৃপক্ষ। তবে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন কর্মকর্তারা জানান, শিক্ষামন্ত্রী বিজয় টিভির জন্য প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টাকাগুলো এক বছর মেয়াদে ঋণ নিয়েছিলেন। বিনিময়ে ১৫ শতাংশ সুদ দিতে সম্মত হয়েছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ও চসিক মেয়র ডা.

শাহাদাত হোসেন বলেন, সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিষ্ঠান ‘বিজয় টিভি’ ১০ কোটি ও ‘স্বাধীন’ নামে আরেকটি সংস্থা ৪ কোটি টাকা নিয়েছে বলে তথ্য পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা শিক্ষার উন্নয়নে ব্যবহার হয়। এখানে ব্যবসা কিংবা অন্য খাতে বিনিয়োগের কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে আত্মগোপনে নওফেল। চেষ্টা করেও সমকাল তাঁর বক্তব্য জানতে পারেনি। বিজয় টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাজ্জাদ মাহমুদ রুবেলকে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ হয়নি।

২০০১ সালে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ২০১৫ সালে আ জ ম নাছির উদ্দীন সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃত্ব নিয়ে সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। কর্মকর্তাদের অভিযোগ, আইনিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃত্ব নিতে ব্যর্থ হন মহিউদ্দিন চৌধুরী ও তাঁর পরিবার। পরে তাঁর ছেলে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শিক্ষা উপমন্ত্রী হওয়ার পর নিজে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান হয়ে অন্যায়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টির দখল নেন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে সাত অনুষদে শিক্ষার্থী ৪ হাজার ৭৩৯ জন। ২৪৪ শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন ৮৪ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক আয় প্রায় ৪৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা। শিক্ষা খাত, বেতন-ভাতা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় হয় প্রায় ৩১ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৪৪(৩) ধারা অনুযায়ী, ‘সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে অবহিতক্রমে সাধারণ তহবিলের অর্থ বোর্ড অব ট্রাস্টিজ কর্তৃক নির্ধারিত খাতে বিনিয়োগ করা যাবে।’ অন্যদিকে ৪৪(৭) ধারা অনুযায়ী, ‘কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিলের অর্থ উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় ব্যয় ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাবে না।’ বিজয় টিভিতে টাকা সরানোর ক্ষেত্রে নওফেল এসব আইনের ধার ধারেননি।

সমকালের হাতে আসা নথি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৩ মে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শাখার একটি চেকে ১০ কোটি টাকা নওফেলের প্রতিষ্ঠান বিজয় টিভি লিমিটেডে সরানো হয়েছে। চেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুপম সেন ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক তৌফিক সাঈদের স্বাক্ষর রয়েছে। দু’জনই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন।

এ ছাড়া ২০২৩ সালের ২৭ মার্চ প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব থেকে ৩ কোটি টাকা নেন নওফেল। একই বছরের ১ অক্টোবর তামাক কোম্পানি ‘তারা ট্রেডার্স লিংক’ থেকে ওই পরিমাণ টাকা প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে জমা হয়। তামাক কারখানাটি বিদেশি ব্র্যান্ডের নকল সিগারেট বিক্রির দায়ে অভিযুক্ত। এর মালিক সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন, যিনি নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নওফেলের অনুসারী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, নওফেল প্রভাব খাটিয়ে ১৫ শতাংশ সুদে ১০ কোটি টাকা এক বছরের জন্য বিজয় টিভিকে ঋণ দেন। কিন্তু সাত মাস পার হলেও ঋণের কোনো কিস্তি জমা দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। আর অগ্রিম ৩ কোটি টাকা তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের নামে নিয়েছিলেন। ছয় মাস পর তামাক কোম্পানি থেকে তা সমন্বয় করা হয়।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক তৌফিক সাঈদ বলেন, ‘ঋণের বিষয় ইউজিসিকে জানানো হয়নি। অর্থবছর শেষে যে প্রতিষ্ঠান অডিট করে, তাদের প্রতিবেদনে বিশদ উল্লেখ থাকে। নিরীক্ষা প্রতিবেদনের মাধ্যমে সরকার ও ইউজিসি অবহিত হয়।’

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৫ সেপ্টেম্বর চসিক আবেদন করে। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ১৬ জানুয়ারি বোর্ড অব ট্রাস্টি পুনর্গঠন করে। এতে মেয়রকে চেয়ারম্যান করা হয়। গত ২০ জানুয়ারি পুনর্গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের প্রথম সভায় নানা অনিয়ম ধরা পড়ে।

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব র ড অব ট র স ট জ ব জয় ট ভ র নওফ ল র মন ত র ১০ ক ট

এছাড়াও পড়ুন:

শুক্র-শনিবার খোলা ডিএসসিসির আঞ্চলিক কার্যালয়

ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের প্রয়োজনে সরকারি ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) আঞ্চলিক ও ওয়ার্ড সচিবের কার্যালয় খোলা রাখা হয়েছে।

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ডিএসসিসি থেকে জানানো হয়েছে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার কার্যক্রম চলমান থাকায় নাগরিকত্ব সনদ এবং জন্ম-মৃত্যু সনদ সংক্রান্ত সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার ও শনিবার) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওয়ার্ড সচিবের কার্যালয় খোলা থাকবে। 

ঢাকা/এএএম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ