দুই মাস ধরে অচল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগ কবে হবে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না কেউ। কমিশনে চার শতাধিক অভিযোগ জমা আছে। এর মধ্যে রয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যা, ধর্ষণ, সংখ্যালঘু নির্যাতনসহ নানা ধরনের অভিযোগ। এসব নিষ্পত্তি না করায় অভিযোগকারীদের হতাশা বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে সরকার জনগুরুত্বপূর্ণ  মনে করছে কিনা। 

কমিশনের চেয়ারম্যান ড.

কামাল উদ্দিন আহমেদ এবং পাঁচ সদস্য গত ৭ নভেম্বর পদত্যাগ করেন। এর পর আর কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, জাতিসংঘের বিধান অনুযায়ী এই কমিশন সব সময় সচল থাকতে হবে। পদ কখনোই শূন্য রাখা যাবে না। অবিলম্বে কমিশনে শূন্য পদে নিয়োগের দাবি জানাচ্ছেন তারা। 
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, আইন কমিশনসহ বিভিন্ন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা পদত্যাগ করেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন কমিশন পুনর্গঠন করা হলেও মানবাধিকার কমিশন রয়েছে শূন্য। 

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাষ্ট্র সংস্কারে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। তবে সংস্কারের তালিকায় নেই মানবাধিকার কমিশন। এ প্রসঙ্গে সংবিধান সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজ সমকালকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে জরুরিভাবে কমিশন পুনর্গঠন করা সরকারের দায়িত্ব। দীর্ঘমেয়াদে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী করার পক্ষে আমরা সুপারিশ করব। আমরা মনে করি, মানবাধিকার কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়া উচিত। অতীতে আমরা দেখেছি, মানবাধিকার কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি। সাংবিধানিকভাবে এই ব্যবস্থা করা উচিত।’  
বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহ্‌দীন মালিক সমকালকে বলেন, দুই মাস ধরে চেয়ারম্যান-মেম্বার না থাকায় কমিশন কার্যত অচল। বস্তুত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে সরকার জনগুরুত্বপূর্ণ মনে করছে না। জনগুরুত্বপূর্ণ মনে করলে এটাকে অনেক আগেই সক্রিয় করা যেত। এ ধরনের পরিস্থিতি মোটেও কাম্য নয়।  

অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য রাজধানীর কারওয়ান বাজারে কমিশন কার্যালয়ে রয়েছে পৃথক দুটি বেঞ্চ। ক্ষতিগ্রস্ত কোনো ব্যক্তি অভিযোগ করলে কমিশনের বাছাই সেল অভিযোগটির আইনগত দিক পরীক্ষা করে। কমিশনের এখতিয়ারের মধ্যে হলে অভিযোগ তদন্ত করা হয়। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় প্রমাণিত হলে কমিশন অভিযোগকারী এবং অভিযুক্তের মধ্যে বিরোধ মধ্যস্থতা ও সমঝোতার মাধ্যমে নিষ্পত্তির চেষ্টা করে। মধ্যস্থতা সফল না হলে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা বা অন্য কোনো কার্যধারা নেওয়ার জন্য কমিশন যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করে। 
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগের জন্য স্পিকারের নেতৃত্বে বাছাই (সার্চ) কমিটির সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠানোর বিধান রয়েছে। এর পর রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলে আইন মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার থাকায় সে ব্যবস্থা কার্যত নেই। ইতোমধ্যে সরকার এ-সংক্রান্ত সংশোধিত অধ্যাদেশের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া খোলা রেখেছে। এর আগে কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান এবং নাছিমা বেগম চলে যাওয়ার পর কমিশন দু’বার ফাঁকা ছিল। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সদস য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জিনদের আবাস

হাদিসে আছে, মহানবী (সা.) ‘কার’-বিশিষ্ট ভূমিতে প্রবেশ করতে নিষেধ করছেন। কারণ সেটা জিনদের আবাসস্থল। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘কার’ কি? তিনি বলেন, ঘন ঝাড়-জঙ্গল, গাছপালা ঘেরা নিম্নাঞ্চল। এ ছাড়া জনবসতির শৌচাগার, গোসলখানা, নোংরা ও অপবিত্র স্থান, আবর্জনার স্তূপ এবং কবরস্থানে দুষ্ট জিন-শয়তান বিচরণ করে। তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চয় শৌচাগারে দুষ্ট জিন-শয়তান উপস্থিত থাকে। তাই তোমরা যখন সেখানে প্রবেশ করবে তখন বলবে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিলান খুবুসি ওয়াল খবাইস।’ অর্থাৎ, আমি আল্লাহর কাছে যাবতীয় দুষ্ট পুরুষ ও নারী জিন ও শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৬)

হাদিস অনুযায়ী শৌচাগার হলো, যেখানে নাপাক থাকে বা শরীর বস্ত্রহীন করতে হয়, সেসব জায়গায় শয়তানের আনাগোনা থাকে। মানুষকে বিবস্ত্র করা শয়তানের অন্যতম একটি কাজ। কারণ আল্লাহর এবং বান্দার মধ্য আবরণ হলো লজ্জা। আদম ও হাওয়া (আ.) যখন আল্লাহর আদেশ অমান্য করেছিলেন, প্রথমেই তাদের শরীর থেকে জান্নাতের পোশাক খুলে গিয়েছিল।

আরও পড়ুনইবলিস কি জিন নাকি ফেরেশতা১৬ মার্চ ২০২৫

নবীজি (সা.) মাটির গর্তে প্রস্রাব করতে নিষেধ করেছেন। এতে জিনদের বসবাসের স্থান।’ (আবুদাউদ, হাদিস: ২৯)

কবরস্থানে জিনেরা সাধারণত মানুষের মতোই যাতায়াত করে। আবার কখনো অবস্থান করে দীর্ঘদিন। ভালো-মন্দ সব ধরনের—এমনকি সেখানে দুষ্ট প্রকৃতির জিন-শয়তানরাও অবস্থান করে।

একটা ভুল ধারণা লোকসমাজে প্রসিদ্ধ আছে, ‘বদকারদের কবরের আজাবের ভয়ে জিনেরা কবরস্থানে থাকে না।’ অথচ নবীজি বলেছেন, ‘অতঃপর তার জন্য লোহার বিশাল হাতুড়িধারী একজন অন্ধ ও বধির ফেরেশতা নিযুক্ত করা হয়। সেই ফেরেশতা ওই হাতুড়ি দিয়ে অবিশ্বাসীকে এমন জোরে আঘাত করে; যার আওয়াজ মানুষ ও জিন ছাড়া পূর্ব-পশ্চিমের সব সৃষ্টি শুনতে পায়।’ (আবু দাউদ, ৪,৭৫৩)

এ ছাড়া বাজার ও দোকানপাটে দুষ্ট জিন-শয়তানের আনাগোনা বেশি থাকে। আল্লাহর রাসুল (সা.) জানিয়েছেন, ‘বাজারে শয়তান তার যুদ্ধের পতাকা উত্তোলন করে।’ (মুসলিম, হাদিস: ২,৪৫১)

আরও পড়ুনএকদল জিন পবিত্র কোরআন শুনে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন২০ নভেম্বর ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ