ঢাকার ধামরাইয়ে মাইকিং করে লোক জড়ো করার পর একটি মাজার ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে গাংগুটিয়া ইউনিয়নের অর্জুনালাই গ্রামে অবস্থিত প্রয়াত শুকুর আলী ফকিরের মাজারে ঘটে এ ঘটনা। এ বিষয়ে গতকাল শুক্রবার বিকেলে ওই ফকিরের ছেলে আক্কাস আলী বাদী হয়ে ধামরাই থানায় মামলা করেছেন। এতে ১২ জনের নাম উল্লেখসহ ৭০০-৮০০ ব্যক্তিকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার মাজারটিতে শুকুর আলী ফকিরের ৬৬তম ওরসের আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় মিলাদ মাহফিল ও তবারক বিতরণ শেষে রাতে বাউলগান হওয়ার কথা ছিল। তবে বিকেলের দিকেই ধামরাই ওলামা পরিষদ ও ইমাম পরিষদের ব্যানারে একদল মুসল্লি মাজারের কয়েক গজ দূরে অবস্থিত অর্জুনালাই জামে মসজিদে সমবেত হন।
মুসল্লিরা ওই মাজারে ওরস ও গানের আয়োজন বন্ধের দাবি তোলে স্লোগান দিতে থাকেন। কিছুক্ষণ পরই ধামরাই থানা থেকে পুলিশ সদস্যরা সেখানে আসেন। তারা রাত ৮টার দিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের ওরসের আয়োজন বন্ধ করতে বলেন। মাজারের লোকজন তখন ওরস বন্ধ করে দেন। এর পরও মুসল্লিরা ওরস আয়োজনে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও মুচলেকা রাখার দাবি জানাতে থাকেন। এতে সায় দেননি পুলিশ সদস্যরা। এক পর্যায়ে তারা ঘটনাস্থল ছেড়ে যান। এ সময় মুসল্লিদের নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিরা মাজারটি চিরতরে বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করার কথা জানান। পরে তারা মসজিদ ছেড়ে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মুসল্লিদের একটি অংশ চলে গেলেও রাত ১০টার দিকে অন্য একটি অংশের ৫০-৬০ জন দল বেঁধে মাজারটিতে ঢুকে পড়ে। তারা ভেঙে মাজারটি গুঁড়িয়ে দেয়। হামলাকারীরা সেখানে থাকা দুটি কবরসহ একটি টিনের ঘর পুরোপুরি ভেঙে দেয়। অপর একটি ঘরের বেড়ার টিনে ভাঙচুর চালানো হয়। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক দেখা দেয়। শুকুর আলী ফকিরের বাড়ির বাসিন্দারা প্রাণভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।
ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকেই মসজিদে সমবেত হতে থাকেন মুসল্লিরা। এদের মধ্যে শতাধিক ব্যক্তি বহিরাগত। তারাই মাজারে গান-বাজনা বন্ধের দাবিতে বেশি সোচ্চার ছিলেন। স্থানীয় কিছু লোকও ছিলেন সেখানে। তারা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিতে থাকেন, ‘ওই মাজারে সেজদা দেওয়া, মানত করা, পীরকে সেজদা করা চলবে না।’ রাত ১০টার দিকে ৫০-৬০ মুসল্লি মাজারে হামলা করেন। তাদের বেশির ভাগই স্থানীয় লোক।
প্রয়াত শুকুর আলী ফকিরের স্ত্রী আমেনা বেগম এ বিষয়ে বলেন, বহু বছর ধরেই তারা ওরস পালন করেন। মাজারে মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালিয়ে আসছেন তারা। বৃহস্পতিবার বিকেলে মুসল্লিরা নিষেধ করার পর তারা ওরস বন্ধ করে দেন। তিনি বলেন, ‘এর পরও রাইতে ৫০-৬০ জন লোক আইসা মাজার, ঘরবাড়ি ভাইঙ্গা দিছে। ভয়ে পোলারা বউ-পোলাপান নিয়া চইলা গেছে। পুলিশ আইছিল। কইছে মামলা করতে।’
তাঁর ছেলে আক্কাস আলী জানান, পুলিশের সহায়তায় শুক্রবার বিকেলে তিনি ১২ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেছেন। এতে আরও ৭০০-৮০০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করেছেন। এ ঘটনার বিচার দাবি করেন তিনি।
ধামরাই উপজেলা ওলামা পরিষদের সভাপতি মুফতি সানাউল্লাহর দাবি, ওই মাজারে মাদকের কারবার ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এসেছে। এসবের সত্যতা নিশ্চিত হতে বৃহস্পতিবার উপজেলা ইমাম পরিষদ ও তাদের কয়েকজন নেতা মাজারের পাশের একটি মসজিদে যান।
মুফতি সানাউল্লাহর ভাষ্য, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল গান-বাজনা বন্ধ করা। ভাঙচুর কোনো সমাধান নয়। যখন পুলিশের কাছে তারা ওরস বন্ধের কথা জানান, তখন এশার নামাজ শেষে আমরা চলে আসি।’ এর পর তারা শুনেছেন, স্থানীয় কিছু ব্যক্তি তাদের ক্ষোভ থেকে মাজার ভেঙেছে। তাঁর ভাষ্য, তাদের লক্ষ্য ছিল শান্তিপূর্ণ সমাধান, ভাঙচুর নয়।
ধামরাই থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে মামলা করা হয়েছে। এতে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ক র আল র একট মসজ দ
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদের নামাজে মাইকের শব্দ নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ১২
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় ঈদের নামাজ আদায়ের সময় মাইকের শব্দ বাড়ানো-কমানো নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ১২ জন আহত হয়েছে। এ সময় বেশ কয়েকটি বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করা হয়েছে।
সোমবার (৩১ মার্চ) দুপুরে উপজেলার দহকোলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ওই গ্রামে স্থানীয় মাতব্বর আবুল হোসেন কাবুল ও নওয়াব আলীর সমর্থকদের মধ্যে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। সকালে গ্রামের ঈদগাহে নামাজ আদায়ের সময় মাইকের শব্দ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়। পরে উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে অন্তত ১২ জন আহত হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি বাড়ি-ঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আরো পড়ুন:
বরিশালে প্রধান জামাতে বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের নামাজ আদায়
সাইপ্রাসে প্রবাসীদের ঈদ উদযাপন
শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুম খান জানান, এলাকায় উত্তেজনা থাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আহতদের উদ্ধার করে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হয়নি। কাউকে আটকও করা যায়নি।
ঢাকা/সোহাগ/বকুল