জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর অর্ধেকই সরবরাহ করে এসএমসি
Published: 24th, January 2025 GMT
‘ফ্যামিলি প্ল্যানিং সোশ্যাল মার্কেটিং প্রজেক্ট’ হিসেবে এসএমসির যাত্রা শুরু। পথচলার আজ ৫০ বছর পূর্ণ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এ উপলক্ষে সমকালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসএমসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তসলিম উদ্দিন খান জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সফলতার নানা দিক। উঠে এসেছে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সমকালের স্টাফ রিপোর্টার তবিবুর রহমান।
সমকাল: দেশে প্রথম জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী নিয়ে আসে এসএমসি। এখন এই পণ্যের বাজার কতটুকু এসএমসির দখলে?
তসলিম উদ্দিন খান: দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এসএমসির জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর বড় ভূমিকা আছে। দেশে জনসংখ্যার ৬৪ শতাংশ কোনো না কোনো জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহার করে। তাদের মধ্যে ৯ শতাংশ ব্যবহার করে সনাতন পদ্ধতি। বাকি ৫৫ শতাংশ আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী বিশেষ করে খাওয়ার বড়ি, কনডম, ইনজেকশন ও ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহার করে থাকে। এর অর্ধেকই সরবরাহ করে সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানি (এসএমসি)। বাংলাদেশে দম্পতি আছে তিন কোটি। দেড় কোটির বেশি দম্পতি আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহার করে। এর মধ্যে ৯০ লাখ দম্পতি এসএমসি সরবরাহ করা সামগ্রী ব্যবহার করে থাকে। ১৯৭৫ সালে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী নিয়ে আমাদের যখন যাত্রা শুরু হয় তখন সরকারি কর্মসূচির মাধ্যমে বিনামূল্যে এসব সামগ্রী বিতরণ করা হতো। বেসরকারিভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। বাংলাদেশে জনসংখ্যা বাড়তে থাকলে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বড় পরিসরে কাজ শুরু হয়।
সমকাল: শুরুর দিকে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহারে মানুষের সাড়া কেমন ছিল?
তসলিম উদ্দিন খান: শুরুর দিকে মানুষ এসব সামগ্রী ব্যবহার করত না। মোট জনসংখ্যার মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহার করত। কারণ, সেই সময় মানুষের মধ্যে ট্যাবু ও নেগেটিভ ধারণা ছিল। ধীরে ধীরে পরিবর্তন হয়েছে। গত ৫০ বছরে এসব সামগ্রী ব্যবহার বেড়েছে ৫৪ শতাংশ। বর্তমানে ৬৪ শতাংশ দম্পতি এ পদ্ধতি ব্যবহার করে। এটি সম্ভব হয়েছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে এগিয়ে আসার কারণে। জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যবহার হচ্ছে কনডম।
সমকাল: এসএমসির শীর্ষ পণ্য কোনটি?
তসলিম উদ্দিন খান: এসএমসির খাওয়ার স্যালাইন সবচেয়ে জনপ্রিয় পণ্য। বছরে দেশে ১৬০ কোটি প্যাকেট স্যালাইনের চাহিদা রয়েছে। এর প্রায় ৯০ শতাংশ সরবরাহ করে থাকে এসএমসি। বছরে প্রায় ১৫০ কোটি খাওয়ার স্যালাইনের প্যাকেট বিক্রি করি। ৫০ বছরে এসএমসির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পণ্য খাওয়ার স্যালাইন। খাওয়ার স্যালাইন ও পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রী ছাড়াও এসএমসির অনেক পণ্য বাজারে আছে। এর মধ্যে রয়েছে অপুষ্টি পাউডার, ইলেকট্রোলাইট ড্রিংকস, কৃমিনাশক বড়ি, স্যানিটারি ন্যাপকিন, বেবি ডায়াপার, ফর্টিফায়েড বিস্কুট।
সমকাল: আগামী দিনে আর কী নিয়ে কাজ করতে চান?
তসলিম উদ্দিন খান: আগামী দিনে মাতৃস্বাস্থ্য, কিশোরী স্বাস্থ্য, বাল্যবিয়ে কমানো এসব বিষয়ে জোর দিয়ে কাজ করবে এসএমসি। কারণ, এখনও ১০০ জন মায়ের মধ্যে ১৬ জন অপুষ্টিতে ভোগেন। এটি কমিয়ে আনা আমাদের লক্ষ্য। এর বাইরেও শিশুর পুষ্টির বিষয়ও আছে। দেশে বছরে জন্ম নেয় ১০ লাখের বেশি শিশু। তাদের মধ্যে বড় একটি অংশ অপুষ্টি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এটি দূর করতেও আমরা কাজ করছি।
এখন ১২০টি উপজেলায় এসব নিয়ে কাজ চলমান রয়েছে। দেশের প্রায় প্রতিটি
পরিবারে এসএমসির কোনো না কোনো পণ্য পৌঁছেছে। সারাদেশে আট লাখ স্থান
(আউটলেট) থেকে এসএমসির পণ্য বিক্রির জন্য বিতরণ করা হয়।
সমকাল: ব্যবসা পরিচালনায় কোনো চ্যালেঞ্জ দেখছেন কিনা?
তসলিম উদ্দিন খান: এসএমসি অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান। ২০১৪ সালে এসএমসি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড নামে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়। সেখান থেকে যে লাভ আসে, তা জনস্বাস্থ্য কর্মসূচিতে বিনিয়োগ করা হয়। তাই আমরা আগামীতে কোনো চ্যালেঞ্জ দেখছি না। নতুন ব্যবসায়ীরা এলে স্বাস্থ্যখাত উন্নতি হবে। এটি আমাদের প্রত্যাশা।
সমকাল: দেশে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ বাড়ছে– এটি এড়াতে করণীয় কী?
তসলিম উদ্দিন খান: দেশে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ বেড়েছে। এটি পরিত্রাণে আমাদের নোরিক্স নামে একটি পিল রয়েছে। এটি ঝুঁকিহীনভাবে কাজ করে। এটি এরইমধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কারণ, মানুষ এসএমসিকে আস্থার সঙ্গে গ্রহণ করেছে। অন্য কোম্পানির পণ্যের চেয়ে আমাদের পণ্যের দামও অনেক কম।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জনস খ য ক জ কর সমক ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদাবাজি ও মজুতদারি বন্ধ করতে না পারায় নিত্যপণ্যের দাম কমাতে ব্যর্থ সরকার
নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে চাঁদাবাজি বন্ধ ও মজুতদারি বা অযৈাক্তি মূল্য নির্ধারণের মতো অনিয়ম মোকাবিলা করতে পারেনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাই নিত্যপণ্যের দাম কমাতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকার খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ শৃঙ্খলে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে সাহসী ও জরুরি পদক্ষেপ না নিলে মূল্যস্ফীতির হার কমানো কঠিন হবে।
আজ বুধবার ধানমন্ডিতে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৪-২৫: সংকটময় সময়ে প্রত্যাশা পূরণের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান, সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ফাহমিদা বলেন, সিপিডির পর্যবেক্ষণে পেঁয়াজ, আলু, বেগুন, ডিম, রুই মাছ, হলুদ, গম, মসুর ডাল, চিনি, গরুর মাংস, রসুন, আদা, সয়াবিন তেল এবং পাম তেলসহ ১৪টি বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের সরবরাহ শৃঙ্খল বিশ্লেষণে দামের ওঠানামা এবং অদক্ষতার জন্য বেশ কিছু বাধা দেখা দিয়েছে। বেশিরভাগ কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে, প্রাথমিক বাধাগুলোর মধ্যে রয়েছে মজুতদারি, কমিশন এজেন্ট বা গুদাম পরিচালনাকারীদের আধিপত্য, অপর্যাপ্ত কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনা এবং কৃষি পদ্ধতি, উচ্চ উপকরণ খরচ, নিম্নমানের সংরক্ষণ এবং পরিবহন সুবিধা এবং সামগ্রিক সরবরাহকে প্রভাবিত করে এমন অপ্রত্যাশিত আবহাওয়া।
উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, চালের বাজার ব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত জটিল। সে কারণে সিপিডি চালের সরবরাহ শৃঙ্খলে বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা নিরূপণের জন্য মাঠ পর্যায়ে একটি অনুসন্ধানমূলক জরিপ পরিচালনা করে, বিশেষ করে মাঝারি-পাইজাম চাল। যার লক্ষ্য ছিল প্রধানত দামের যে অস্থিরতা তার মূল কারণগুলো সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি করা।
অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, চাল সরবরাহ ব্যবস্থায় অসংখ্য বাজার এজেন্ট রয়েছে। বাজার মূল্যের ওপর গুদাম মালিকদের বা অটো রাইস মিলারদের উল্লেখযোগ্য আধিপত্য লক্ষ্য করা যায়। ফলস্বরূপ ধান চাষীরা প্রায়শই সঠিক দাম পান না। কিন্তু ভোক্তারা অযৌক্তিকভাবে উচ্চ মূল্যের সম্মুখীন হন, যার ফলে ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়।
খাদ্য মূল্যস্ফীতির প্রসঙ্গে সিপিডি বলছে, বাংলাদেশে পূর্ববর্তী কর্তৃত্ববাদী সরকার উচ্চ মূল্যস্ফীতির মাধ্যমে একটি অকার্যকর অর্থনীতি রেখে গেছে, যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ঠিক করতে হবে। বেশ কিছু খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ শৃঙ্খলের বিশ্লেষণে মধ্যস্থতাকারীদের একটি জটিল নেটওয়ার্কের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
সিপিডি বলছে, অর্থনীতিতে মুল্যস্ফীতির চাপ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের সুদহার বৃদ্ধির অনুমতি দিয়েছে এবং নীতি সুদহারও বৃদ্ধি করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের উপর উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির বোঝা কমাতে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সরবরাহ-পক্ষীয় ব্যবস্থাও বাস্তবায়ন করেছে, যেমন ট্রেডিং কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশের মাধ্যমে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি করা এবং ঢাকার ভেতরে ও বাইরে ন্যায্য মূল্যের বাজার প্রতিষ্ঠা করা। তবে দুঃখের বিষয় হলো, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহ শৃঙ্খলে চাঁদাবাজি, মজুদদারি বা অযৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের মতো অনিয়ম মোকাবেলায় উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিতে পারেনি। তাই মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলি এখনও পর্যন্ত বাজারে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম কমাতে ব্যর্থ হয়েছে।
সংস্থাটি আরও বলছে, অন্তর্বর্তী সরকার যদি প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ শৃঙ্খলে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে সাহসী এবং জরুরি পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে মূল্যস্ফীতির হার কমানো কঠিন হবে।
রাজস্ব প্রসঙ্গে সিপিডি বলছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে ২০২৫ অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত মোট রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৩.৭ শতাংশ যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময় ছিল ১৭.৭ শতাংশ অর্থাৎ এখানে উল্লেখযোগ্য অবনতি দেখা গেছে।
২০২৫ অর্থবছরের মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে অর্থবছরের বাকি সময় ৪৫.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে যা মোটেই বাস্তবসম্মত নয়। সামগ্রিকভাবে কর রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক। কর রাজস্বের দুটি উৎসেই (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত ও বহির্ভূত) একই চিত্র দেখা গেছে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ওই সময়ে মূসক এবং সম্পূরক শুল্ক আহরণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। জুলাই-আগস্টের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে শ্লথগতি এর বড় কারণ। কর রাজস্ব আহরণের পরিস্থিতি বহুলাংশেই সরকারকে মূসক এবং সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধিতে ধাবিত করেছে। তবে আইএমএফের শর্তপূরণের চাপও এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। বর্তমান উচ্চ-মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতিতে এ ধরনের উদ্যোগ মোটেই কাম্য নয়। কারণ পরোক্ষ কর সকল ধরনের আয়ের মানুষের জীবনেই প্রভাব ফেলে।