সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে সরকারের এ সিদ্ধান্ত ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। এ অবস্থায় কয়েক দিন পর ওষুধ, মোবাইল ফোনে কথা বলাসহ কিছু পণ্য ও সেবায় বাড়তি ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পের বেশ কিছু পণ্যে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার হয়নি। এ খাতের আচার, বিস্কুট, কেক, চাটনি, টমেটো পেস্ট, টমেটো কেচাপ, টমেটো সস, আম, আনারস, পেয়ারা ও কলার পাল্প ইত্যাদি পণ্যের ওপর ভ্যাট ৫ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। দাম বাড়লে ক্রেতারা এসব পণ্য কম কিনবেন অথবা কিনবেন না। এতে করে কৃষিপণ্যের চাহিদা কমার শঙ্কা রয়েছে। চাহিদা কমলে কৃষকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।  
খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের চাহিদা বাড়ছে। ইতোমধ্যে এ খাতের রপ্তানি ১  বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। তারা মনে করেন, কৃষককে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে বর্ধিত ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহার করতে হবে। তা না হলে এদেশের সাধারণ কৃষকদের পাশাপাশি বর্ধনশীল কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্প ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে যথাযথ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ সুবিধার অভাবে প্রতিবছর ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ফল ও সবজি নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে কৃষক পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। বাংলাদেশে বহুল উৎপাদিত একটি ফসল টমেটো। প্রাণ গ্রুপ ২০০২ সাল থেকে টমেটো থেকে নানা ধরনের খাদ্যপণ্য তৈরি করে আসছে। প্রাণ সবসময় পণ্যের গুণগত মানের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। পণ্যের গুণগত মান অনেকাংশে নির্ভর করে মানসম্মত কাঁচামালের ওপর। বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে ২০১০ সালে  টমেটোর চুক্তিভিত্তিক চাষ শুরু করে প্রাণ।
প্রাণ গ্রুপের প্রায় এক লাখ চুক্তিভিত্তিক কৃষক রয়েছে যাদের কাছ থেকে টমেটো, আম, বাদাম, দুধ, ডাল, কাসাভাসহ বিভিন্ন কাঁচামাল সংগ্রহ করে কোম্পানিটি। রাজশাহী, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, খুলনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, পঞ্চগড় এবং ঠাকুরগাঁও জেলায় প্রাণের চুক্তিভিত্তিক কৃষকরা টমেটো উৎপাদন করে থাকেন। এবার সারাদেশে প্রাণের সাড়ে ১০ হাজার কৃষক প্রায় ২ হাজার ৮০০ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। চলতি বছর টমেটো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ২২ হাজার  টন। গত বছর ১০ হাজার কৃষক প্রায় ২ হাজার ৫০০ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করে এবং টমেটো সংগ্রহের পরিমাণ ছিল ২০ হাজার টন। 
প্রাণের টমেটো চাষে কৃষকের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। গত কয়েক বছরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর কোম্পানিটির চুক্তিভিত্তিক কৃষক বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ হারে। এর পেছনের বড় কারণ হলো উপযুক্ত সময়ে ন্যায্যমূল্যে টমেটো সংগ্রহ এবং অধিক ফলনের জন্য কৃষকদের সহায়তা। এ ক্ষেত্রে প্রাণ কৃষকদের উন্নত জাতের বীজ প্রদান, জমি চাষে প্রশিক্ষণ ও সঠিক সময়ে কীটনাশক প্রয়োগসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে আসছে। এ ছাড়া ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সহযোগিতায় ‘প্রাণ অ্যাসিউরড স্কিমের আওতায়’ প্রাণ পাঁচ হাজার টমেটো চাষিকে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করেছে। 
অনেক সময় ন্যায্য দামে টমেটো বিক্রি করতে না পেরে কৃষকরা তা ফেলে দিতে বাধ্য হতেন অথবা পচে যেত। বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকার কৃষকদের এমন পরিস্থিতিতে প্রতিবছরই পড়তে হয়। প্রাণের চাষিদের এখন উৎপন্ন টমেটো বাজারজাত করার ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না। এ কারণে রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকরা প্রাণের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে টমেটো চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এবং এই এলাকার পণ্যটি উৎপাদন আগের তুলনায় বেড়েছে। ফলে এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থারও পরিবর্তন ঘটেছে। চুক্তিভিত্তিক চাষিরা প্রতি বিঘায় ৫ থেকে ৬ টন ফলন পেয়ে থাকেন। এসব টমেটো তারা চলমান বাজার মূল্যে কয়েক ধাপে বিক্রি করেন। এতে বিঘাপ্রতি তাদের টমেটো বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। বিঘাপ্রতি মুনাফা আসে অন্তত ৩০ হাজার টাকা।         
কৃষকদের কাছ থেকে টমেটো কেনার পর প্রাণের কারখানায় প্রথমে সেগুলো বাছাই করা হয়। এরপর স্বয়ংক্রিয় মেশিনে এগুলোকে নেওয়া হয় ওয়াশিং প্লান্টে। সেখানে কয়েক দফায় ওয়াশ করার পর টমেটো চলে যায় ক্রাশিং প্লান্টে। সেখানে টমেটো পেস্ট তৈরি হওয়ার পর সেগুলো অ্যাসেপটিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়। 
এরপর প্রয়োজন অনুযায়ী পেস্ট থেকে টমেটো সস ও কেচাপ তৈরি করা হয়। অ্যাসেপটিক পদ্ধতিতে সংরক্ষিত পেস্ট দুই বছর পর্যন্ত ভালো থাকে। টমেটো থেকে উৎপাদিত সস-কেচাপ বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাপক জনপ্রিয় ও প্রচুর চাহিদা রয়েছে। দেশে বর্তমানে সস, কেচাপ ও টমেটো পেস্টের বাজার বার্ষিক ৬০০ কোটি টাকা। এ বাজার বছরে ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। সম্প্রতি ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানোর ফলে এসব পণ্যের দাম বেড়ে গেলে এসব পণ্যের চাহিদা কমতে পারে। এ ছাড়া এর প্রভাবে কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে প্রচুর শ্রমিকের জীবনে অনিশ্চয়তা নেমে আসবে।
রাজশাহীর বরেন্দ্র ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক (বিআইপি) ও নাটোরের প্রাণ এগ্রো কারখানাতে টমেটো সংগ্রহ ও পাল্পিং করে থাকে প্রাণ গ্রুপ। এ দুটি কারখানায় ১৫ জানুয়ারি থেকে টমেটো সংগ্রহ ও পাল্পিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এটি চলবে টমেটোর সরবরাহ থাকা পর্যন্ত। প্রাণের দুটি কারখানায় সরাসরি নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় ৫০০ শ্রমিক। এ ছাড়া টমেটোর সরবরাহসহ বিভিন্ন ধাপে নিয়োজিত– এমন পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে আড়াই হাজারের বেশি লোকের। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ষকদ র ক ষকর উৎপ দ র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

সামারিক শক্তিতে মিয়ানমারের চেয়ে ২ ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ

চলতি বছর সামরিক শক্তির দিক থেকে মিয়ানমারের চেয়ে দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। চলতি সপ্তাহে সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার প্রকাশিত সূচকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই র‌্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সামরিক বাজেট। সেনাবাহিনীর আকার, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর শক্তিকেও বিবেচনা করা হয়েছে সমীক্ষায়।

গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের সূচক অনুযায়ী, বিশ্বে সামরিক শক্তির ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, এরপরে পরে রয়েছে রাশিয়া, চীন, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া। পরমাণু শক্তিধর হলেও পাকিস্তানের অবস্থান ১২ নম্বরে। তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে ৩৫তম অবস্থানে। বাংলাদেশের আগে রয়েছে উত্তর কোরিয়া ও আর্জেন্টিনা। আর বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমার রয়েছে ৩৭তম অবস্থানে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটির বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৬ কোটি ৬১ লাখ মানুষ সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার যোগ্য। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে মোট সেনা সংখ্যা ১ লাখ ৬৩ হাজার। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে রয়েছে ১৭ হাজার ৪০০ সদস্য এবং নৌবাহিনীতে রয়েছে ২৫ হাজার ১০০ সেনা। 

অন্যদিকে, মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যা ৫ কোটি ৭৫ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার যোগ্য। মিয়ানমারের সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার। মিয়ানমারের রিজার্ভ সৈন্য রয়েছে ২০ হাজার। দেশটির বিমানবাহিনীতে রয়েছে ১৫ হাজার সদস্য এবং নৌবাহিনীতে রয়েছে ১৬ হাজার সেনা। 

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ