আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের অবদান ৩৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে। এমন লক্ষ্য ঘোষণা করে সম্প্রতি ‘জাতীয় এসএমই নীতি-২০২৫’-এর খসড়া প্রকাশ করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। খসড়া এসএমই নীতিতে মোটাদাগে রয়েছে ছয়টি উদ্দেশ্য ও ১০টি বাস্তবায়ন কৌশল। খসড়া নীতির বিষয়ে অংশীজনের মতামত চাওয়া হয়েছে। মতামতের ভিত্তিতে শিগগিরই এটি চূড়ান্ত করবে সরকার।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুসারে, দেশে কুটিরশিল্পসহ প্রায় ৭৮ লাখ মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এমএসএমই) রয়েছে। এ খাতে দুই কোটির বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মরত। বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে শিল্প খাতের অবদান ৩৭ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে এসএমই খাতের অবদান প্রায় ২৮ শতাংশ। উল্লেখ্য, অর্থনীতিতে শিল্প খাতের অবদান ৪০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২-এ। 
নতুন জাতীয় এসএমই নীতির খসড়ায় বলা হয়েছে, অধিক জনসংখ্যা ও সীমিত সম্পদের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এসএমই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান অঙ্গীকার সর্বস্তরে বৈষম্য দূরীকরণ। এ লক্ষ্যে জনগণের আয়বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে এসএমই খাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। 
খসড়া এসএমই নীতির ছয়টি উদ্দেশ্যের মধ্যে একটি হচ্ছে– টেকসই পরিবেশবান্ধব এসএমই খাতের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর ভূমিকা এবং এসএমই-সংশ্লিষ্ট নীতি বাস্তবায়নের কৌশলগুলো চিহ্নিত করা। আরেকটি উদ্দেশ্য হলো এসএমই খাতের বিকাশ ও সম্প্রসারণে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও ক্লাস্টার উন্নয়ন, নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং আর্থিক ও অ-আর্থিক সেবা প্রদানে সহায়ক নীতি প্রণয়ন করা। খসড়া নীতির তৃতীয় উদ্দেশ্যটি হচ্ছে এসএমই খাতে প্রাতিষ্ঠানিক অর্থায়ন পাওয়ার সুযোগ বাড়ানো, আইসিটিভিত্তিক প্রযুক্তি গ্রহণ ও ব্যবহার, উৎপাদনশীলতার কৌশল উন্নয়ন, পণ্যের বাজারজাতকরণে সহায়তা, বৃহৎ শিল্পের সঙ্গে এসএমইদের সংযোগ স্থাপন এবং আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্তিশালী করার মাধ্যমে এসএমইবান্ধব পরিবেশের উন্নয়ন করা।
এছাড়া অন্য উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে– এসএমই খাতের উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) প্রতিষ্ঠা ও নতুন এসএমই উদ্যোগ সৃষ্টি (স্টার্টআপ), ব্যবসা পরিচালনা ও বিকাশে অন্তরায় হতে পারে এমন সরকারি নীতি ও বিধিবিধান যুগোপযোগী করা, এসএমই খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ও উদ্ভাবনীমূলক সামর্থ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) কার্যক্রম বাড়ানো এবং এসএমই খাতের বিরাজমান ও উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও বাণিজ্য সংগঠনকে একক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসতে কার্যকর সমন্বিত ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি মুখ্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা।
খসড়া অনুসারে মোটাদাগে জাতীয় এসএমই নীতির বাস্তবায়ন কৌশল হবে ১০টি। এগুলো হচ্ছে–অন্তর্ভুক্তিমূলক এসএমই প্রবৃদ্ধির জন্য নীতি কাঠামো, দক্ষতা ও উদ্ভাবন সক্ষমতা বাড়ানো, বাজার সম্প্রসারণ ও প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, বিনিয়োগ প্রস্তুতি ও স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের উন্নয়ন। এ ছাড়াও রয়েছে নগর ও গ্রামের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে সেক্টর ও ক্লাস্টারভিত্তিক এসএমই উন্নয়ন, এসএমই উন্নয়নে ডিজিটাল রূপান্তর ও ইন্ডাস্ট্রি ৪.

০, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি ব্যবহারে শিল্পের উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন ও সমতা নিশ্চিতকরণ, টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু সহনশীলতা ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাওয়া এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক এমএসএমই খাতের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ও মূলধারায় অন্তর্ভুক্তি। 
এ ১০টি বাস্তবায়ন কৌশলের আওতায় বিভিন্ন কর্মকৌশলও নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন– এসএমই ব্যবসা পরিচালনায় আইনি ও প্রশাসনিক শর্ত সহজ করা, কর ব্যবস্থা সহজ ও যৌক্তিক করা, রপ্তানিমুখী এসএমই খাতকে বিনিয়োগ, রাজস্ব ও অন্যান্য প্রণোদনা দেওয়া, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে সমন্বয় জোরদার করা, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক) এবং এসএমই ফাউন্ডেশনকে শক্তিশালী করা, জাতীয় অর্থনীতিতে এসএমইর হালনাগাদ পরিসংখ্যান তৈরি, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, সেবা খাতের এসএমইকে শক্তিশালী করা, প্রয়োজনীয় অগ্রসংযোগ ও পশ্চাদসংযোগ শিল্প স্থাপনের লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেওয়া, এসএমই পণ্যের ব্র্যান্ডিং, এ খাতের উদ্যোক্তাদের পুরস্কার প্রদান, পুনঃঅর্থায়ন স্কিম শক্তিশালী করা, এসএমইতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানো, গ্রামীণ অবকাঠামো ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদি। 
খসড়ায় বলা হয়েছে, শিল্পনীতিতে সংজ্ঞায়িত কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প জাতীয় এসএমই নীতিমালার আওতাভুক্ত হবে। কৌশলগত লক্ষ্য ও কর্মপরিকল্পনা সার্বিক বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকবে বিসিক ও এসএমই ফাউন্ডেশন। তারা বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষসহ সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গেও সহযোগিতামূলক কার্যক্রম নিশ্চিত করা হবে। জাতীয় এসএমই উন্নয়ন পরিষদ ও জাতীয় এসএমই টাস্কফোর্সের গঠন ও কর্মপরিধি সম্পর্কেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: খ ত র অবদ ন ব যবস থ ন ত কর ক ষমত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বিদায়ী সপ্তাহে পুঁজিবাজারে সূচক-লেনদেন বেড়েছে

দেশের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (২৩ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি) সূচকের উত্থানের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এ সময়ে ডিএসই ও সিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন বেড়েছে। তবে বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মূলধন বাড়লেও সিএসইতে কমেছে।

শনিবার (১ মার্চ) ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনা সূত্রে এতথ্য জানা গেছে।

তথ্য মতে, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৬.৯৩ পয়েন্ট বা ০.৯০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৪৭ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৪.৩৪ পয়েন্ট বা ০.২৩ শতাংশ কমে ১ হাজার ৯০৫ পয়েন্টে, ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৪.০৮ পয়েন্ট বা ০.৬২ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ১৬৭ পয়েন্টে এবং ডিএসএমইএক্স সূচক (এসএমই ইনডেক্স) ১৮.৪৪ পয়েন্ট বা ১.৭৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৭ পয়েন্টে।

আরো পড়ুন:

ডিএসইতে সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষে ওরিয়ন ইনফিউশন

ডিএসইতে পিই রেশিও কমেছে ০.৫১ শতাংশ

বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯৫ হাজার ৩৬৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৯১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ১ হাজার ৭২৬ কোটি ২০ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৫৯০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৩৫১ কোটি ৭৩ লাখ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ২৩৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৮টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ২৬১টির, দর কমেছে ১৮০টির ও দর অপরিবর্তিত ২৯ রয়েছে টির। তবে লেনদেন হয়নি ১৫টির।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৩৪.৪০ পয়েন্ট বা ০.৯৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৬৩৩ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে সিএসই-৩০ সূচক ০.১৬ শতাংশ বেড়ে ১১ হাজার ৯২৫ পয়েন্টে, সিএসসিএক্স সূচক ০.৮৪ শতাংশ বেড়ে ৮ হাজার ৮৬৮ পয়েন্টে, সিএসআই সূচক ০.৫৩ শতাংশ বেড়ে ৯৪৬ পয়েন্টে এবং এসইএসএমইএক্স (এসএমই ইনডেক্স) শূন্য শতাংশ কমে ২ হাজার ১০৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৫ হাজার ২১৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৫ হাজার ৪৩৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ২২৩ কোটি ৭ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ১৭০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩৩ কোটি ৪৭ লাখ  টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ১৩৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইতে মোট ৩১২টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৮১টির, দর কমেছে ১০০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩১টির শেয়ার ও ইউনিট দর।

ঢাকা/এনটি/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্র্যাক ব্যাংকের গ্রাহকদেরকে এক্সিকিউটিভ হেলথ প্যাকেজ দেবে ইবনে সিনা ট্রাস্ট
  • বিদায়ী সপ্তাহে পুঁজিবাজারে সূচক-লেনদেন বেড়েছে