জিডিপিতে এসএমইর অবদান ৩৫ শতাংশে নেওয়ার লক্ষ্য
Published: 24th, January 2025 GMT
আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের অবদান ৩৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে। এমন লক্ষ্য ঘোষণা করে সম্প্রতি ‘জাতীয় এসএমই নীতি-২০২৫’-এর খসড়া প্রকাশ করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। খসড়া এসএমই নীতিতে মোটাদাগে রয়েছে ছয়টি উদ্দেশ্য ও ১০টি বাস্তবায়ন কৌশল। খসড়া নীতির বিষয়ে অংশীজনের মতামত চাওয়া হয়েছে। মতামতের ভিত্তিতে শিগগিরই এটি চূড়ান্ত করবে সরকার।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুসারে, দেশে কুটিরশিল্পসহ প্রায় ৭৮ লাখ মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এমএসএমই) রয়েছে। এ খাতে দুই কোটির বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মরত। বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে শিল্প খাতের অবদান ৩৭ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে এসএমই খাতের অবদান প্রায় ২৮ শতাংশ। উল্লেখ্য, অর্থনীতিতে শিল্প খাতের অবদান ৪০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২-এ।
নতুন জাতীয় এসএমই নীতির খসড়ায় বলা হয়েছে, অধিক জনসংখ্যা ও সীমিত সম্পদের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এসএমই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান অঙ্গীকার সর্বস্তরে বৈষম্য দূরীকরণ। এ লক্ষ্যে জনগণের আয়বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে এসএমই খাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
খসড়া এসএমই নীতির ছয়টি উদ্দেশ্যের মধ্যে একটি হচ্ছে– টেকসই পরিবেশবান্ধব এসএমই খাতের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর ভূমিকা এবং এসএমই-সংশ্লিষ্ট নীতি বাস্তবায়নের কৌশলগুলো চিহ্নিত করা। আরেকটি উদ্দেশ্য হলো এসএমই খাতের বিকাশ ও সম্প্রসারণে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও ক্লাস্টার উন্নয়ন, নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং আর্থিক ও অ-আর্থিক সেবা প্রদানে সহায়ক নীতি প্রণয়ন করা। খসড়া নীতির তৃতীয় উদ্দেশ্যটি হচ্ছে এসএমই খাতে প্রাতিষ্ঠানিক অর্থায়ন পাওয়ার সুযোগ বাড়ানো, আইসিটিভিত্তিক প্রযুক্তি গ্রহণ ও ব্যবহার, উৎপাদনশীলতার কৌশল উন্নয়ন, পণ্যের বাজারজাতকরণে সহায়তা, বৃহৎ শিল্পের সঙ্গে এসএমইদের সংযোগ স্থাপন এবং আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্তিশালী করার মাধ্যমে এসএমইবান্ধব পরিবেশের উন্নয়ন করা।
এছাড়া অন্য উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে– এসএমই খাতের উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) প্রতিষ্ঠা ও নতুন এসএমই উদ্যোগ সৃষ্টি (স্টার্টআপ), ব্যবসা পরিচালনা ও বিকাশে অন্তরায় হতে পারে এমন সরকারি নীতি ও বিধিবিধান যুগোপযোগী করা, এসএমই খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ও উদ্ভাবনীমূলক সামর্থ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) কার্যক্রম বাড়ানো এবং এসএমই খাতের বিরাজমান ও উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও বাণিজ্য সংগঠনকে একক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসতে কার্যকর সমন্বিত ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি মুখ্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা।
খসড়া অনুসারে মোটাদাগে জাতীয় এসএমই নীতির বাস্তবায়ন কৌশল হবে ১০টি। এগুলো হচ্ছে–অন্তর্ভুক্তিমূলক এসএমই প্রবৃদ্ধির জন্য নীতি কাঠামো, দক্ষতা ও উদ্ভাবন সক্ষমতা বাড়ানো, বাজার সম্প্রসারণ ও প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, বিনিয়োগ প্রস্তুতি ও স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের উন্নয়ন। এ ছাড়াও রয়েছে নগর ও গ্রামের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে সেক্টর ও ক্লাস্টারভিত্তিক এসএমই উন্নয়ন, এসএমই উন্নয়নে ডিজিটাল রূপান্তর ও ইন্ডাস্ট্রি ৪.
এ ১০টি বাস্তবায়ন কৌশলের আওতায় বিভিন্ন কর্মকৌশলও নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন– এসএমই ব্যবসা পরিচালনায় আইনি ও প্রশাসনিক শর্ত সহজ করা, কর ব্যবস্থা সহজ ও যৌক্তিক করা, রপ্তানিমুখী এসএমই খাতকে বিনিয়োগ, রাজস্ব ও অন্যান্য প্রণোদনা দেওয়া, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে সমন্বয় জোরদার করা, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক) এবং এসএমই ফাউন্ডেশনকে শক্তিশালী করা, জাতীয় অর্থনীতিতে এসএমইর হালনাগাদ পরিসংখ্যান তৈরি, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, সেবা খাতের এসএমইকে শক্তিশালী করা, প্রয়োজনীয় অগ্রসংযোগ ও পশ্চাদসংযোগ শিল্প স্থাপনের লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেওয়া, এসএমই পণ্যের ব্র্যান্ডিং, এ খাতের উদ্যোক্তাদের পুরস্কার প্রদান, পুনঃঅর্থায়ন স্কিম শক্তিশালী করা, এসএমইতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানো, গ্রামীণ অবকাঠামো ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদি।
খসড়ায় বলা হয়েছে, শিল্পনীতিতে সংজ্ঞায়িত কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প জাতীয় এসএমই নীতিমালার আওতাভুক্ত হবে। কৌশলগত লক্ষ্য ও কর্মপরিকল্পনা সার্বিক বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকবে বিসিক ও এসএমই ফাউন্ডেশন। তারা বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষসহ সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গেও সহযোগিতামূলক কার্যক্রম নিশ্চিত করা হবে। জাতীয় এসএমই উন্নয়ন পরিষদ ও জাতীয় এসএমই টাস্কফোর্সের গঠন ও কর্মপরিধি সম্পর্কেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: খ ত র অবদ ন ব যবস থ ন ত কর ক ষমত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দেবীগঞ্জে দেয়ালে দেয়ালে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে লেখা হয়েছে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল থেকে পৌরসভার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে এই লেখা সাধারণ মানুষের নজরে আসে। তবে, কারা এই স্লোগান লিখেছেন, তা কেউ দেখেননি।
পৌরসভার শহীদ আব্দুল মান্নান সড়ক সংলগ্ন উপজেলা পরিষদ চত্বর, নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের দেয়ালে লাল, কালো ও নীল রঙের কালি দিয়ে ‘জয় বাংলা’, ‘জয় শেখ হাসিনা’ এবং ‘শেখ হাসিনা তুমি আস্থা’- এমন স্লোগান লেখা হয়েছে।
এদিকে, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অফিসিয়াল পেজ থেকে আজ দুপুর ১টায় দেবীগঞ্জের বিভিন্ন দেয়ালে লেখা স্লোগানের ছবি ও ভিডিও শেয়ার করা হয়। এ বিষয়ে জানতে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
দেবীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান সুমন বলেন, ‘নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রশাসনকে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রাতের আঁধারে দেয়ালে দেয়ালে ‘জয় বাংলা’ লিখছে তারা। উপজেলা ছাত্রদলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সজাগ রয়েছে।"
প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পঞ্চগড় জেলা সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী বলেন, “গত ৫ আগস্টের পর শুধু দেবীগঞ্জ নয়, পুরো পঞ্চগড়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। দেবীগঞ্জ, বোদা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে এসব দেওয়াল লিখন লক্ষ্য করা গেলেও প্রশাসনের তেমন কোনো তৎপরতা নেই। এসব লেখা ’২৪ বিপ্লবের চেতনাকে ম্লান করার চেষ্টা করছে। যা রুখতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। প্রশাসনের প্রতি আহ্বান- তাদের (ছাত্রলীগ নেতাকর্মী) দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। তাদের অপতৎপরতা রুখে দিতে পঞ্চগড় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।”
দেবীগঞ্জ থানার ওসি সোয়েল রানা মোবাইলে বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে আসছে। এখনি কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। বিষয়টি দেখছি আমরা।”
ঢাকা/নাঈম/মাসুদ