Samakal:
2025-03-03@20:06:26 GMT

এখনও গেল না আঁধার

Published: 24th, January 2025 GMT

এখনও গেল না আঁধার

বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রীয়ভাবে নারী ও পুরুষের সমান অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। তবে সামাজিক ও পারিবারিক কাঠামোতে নারী ও কন্যাশিশুরা এখনও বৈষম্য ও অবহেলার শিকার। সামাজিক কুসংস্কার পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাকে জিইয়ে রেখেছে, যা নারীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় বড় অন্তরায়। জন্মের পর থেকেই কন্যাশিশুদের বৈষম্যের শিকার হতে হয়। খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং নিরাপত্তার অনেক ক্ষেত্রেই তারা বঞ্চিত। বয়ঃসন্ধিকালে কিশোরী অনেকের ওপরে যৌন হয়রানির অঘটন ঘটে। রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এমনকি অনেক সময় পারিবারিক পরিবেশেও মেয়েরা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়।

সমাজে বাল্যবিয়ে ও যৌতুকের কালো ছায়া এখনও বিস্তৃত। বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যাগুলোর মধ্যে বাল্যবিয়ে ও যৌতুক প্রথা ভয়াবহ আকারে বিদ্যমান। দেশে ১৮ বছরের নিচের বয়সী মেয়েদের বিয়ে হলে তা বাল্যবিয়ে হিসেবে ধরা হয়। বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন অনুযায়ী, ১৮ বছরের নিচে কোনো মেয়ে এবং ২১ বছরের নিচে কোনো ছেলের বিয়ে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে এ আইনের ১৯ ধারায় ‘বিশেষ ক্ষেত্রে’, ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ বা ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো মেয়ের ‘সর্বোত্তম স্বার্থ’ বিবেচনায় আদালতের নির্দেশে বিয়ে হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় না। গত বছরের এক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, দেশে অর্ধেকের বেশি সংখ্যক মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় ১৮ বছরের আগে। বাল্যবিয়ের শিকার হওয়ার কারণে মেয়েরা অনেক সময় আনুষ্ঠানিক শিক্ষা থেকেও ঝরে যায়।

অনেক ক্ষেত্রে মাদকাসক্তি, অনৈতিক সম্পর্ক ও পারিবারিক কলহ নারীর জীবন দুর্বিষহ করে তুলছে। কর্মক্ষেত্রেও নারী নির্যাতন থেমে নেই। নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হলেও বাস্তবে বিচারিক প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীর। এ কারণে নারী নির্যাতন এমনকি ধর্ষণের বিচারও ঠিকভাবে হয় না।
নুসরাত, তনু কিংবা শিশু মুন্তাহার নির্মম হত্যাকাণ্ড চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলেও সেগুলোর বিচারের অগ্রগতি হতাশাজনক।
গত পাঁচ বছরে ধর্ষণের পরিসংখ্যান ভয়াবহ। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে ৩,৫৮৭ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুসারে ধর্ষণসহ নানা অপরাধের কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের অভাবে এই আইন কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা, প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা এবং সামাজিক চাপ ধর্ষণকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে বড় বাধা।

অপরাধীদের জন্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ যেমন জরুরি, তেমনি সামাজিক আন্দোলনও এ ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। সামাজিকভাবে যুবসমাজকে নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। অপরাধী যেই হোক, তার বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ একত্রে কাজ করলে ইতিবাচক ফল পাওয়া সম্ভব। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সমতার ভিত্তিতে সুস্থ, সুন্দর সমাজ গড়তে নারী ও পুরুষ উভয়েরই সমান ভূমিকা প্রয়োজন।
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি মানসিকতা পরিবর্তনও জরুরি। নারীদের মা-বোন বা দয়াময়ীর চেয়ে একজন স্বতন্ত্র মানুষ হিসেবে দেখার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষা ও গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে কুসংস্কার দূর করা জরুরি। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণেই নারীর প্রতি সব ধরনের নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে। 

নুসরাত নাঈম সাজিয়া: শিক্ষার্থী, রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

বিজিএমইএ নির্বাচনে ৬৯০ ভুয়া ভোটার

তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ আগামী ১ জুন। এ জন্য নির্বাচন পরিচালনা ও আপিল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। চলছে ভোটার তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ। ইতোমধ্যে ৬৯০ ভুয়া ভোটার শনাক্ত করে তাদের ভোটাধিকার বাতিল করা হয়েছে। সূত্র জানায়, বিজিএমইএর মেম্বারশিপ ফাইল অডিট এবং ভেরিফিকেশনে ভুয়া ভোটার শনাক্ত হয়। ভুয়া শনাক্ত সদস্যদের মধ্যে ঢাকা অঞ্চলে ৫৮২ এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১০৮ জন। এখন প্রকৃত ভোটারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮০৬।
গত নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৪৯৬। পর্যালোচনার কাজ এখনও শেষ হয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে। অবশ্য গত ২৯ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেছেন বিজিএমইএর ১০ সদস্য। এতে ১৪ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রশাসকের নিয়োগ করা হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং অডিট ফার্মের বিজিএমইএর মেম্বারশিপ ফাইল অডিট ও ভেরিফিকেশন কার্যক্রম স্থগিত করা এবং বিজিএমইএর সদস্যপদ নবায়নের নতুন নিয়মের স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়। রিটটি শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যেই ভুয়া ভোটার শনাক্ত করার কাজটি হয়েছে।

দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া বিজিএমইএ নির্বাচনে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে থাকে। একটি সম্মিলিত পরিষদ এবং অপরটি ফোরাম। দল নিরপেক্ষ বলা হলেও গত ১৬ বছর সম্মিলিত পরিষদে আওয়ামী লীগের প্রাধান্য ছিল। কিছুটা আওয়ামীবিরোধী শিবির  হিসেবে বিবেচনা করা হয় ফোরামকে। গত নির্বাচনের আগে ৭৯২ ভুয়া ভোটার থাকার অভিযোগ করা হয় ফোরামের পক্ষ থেকে। শর্ত অনুযায়ী, ভোটার হতে নিয়মিত আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে দেখা যায়, অভিযুক্তদের রিটার্ন হালনাগাদ নয়। অভিযোগের ভিত্তিতে সে সময়কার নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড ৬৭ জনের ভোটাধিকার বাতিল করে। বাকিদের ভোটাধিকার বহাল ছিল।   নির্বাচনে সম্মিলিত পরিষদ নিরঙ্কুশ বিজয় পায়। প্যানেল লিডার এস এম মান্নান কচি সভাপতি নির্বাচিত হন।
অবশ্য গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সমঝোতার ভিত্তিতে সিনিয়র সহসভাপতি রফিকুল ইসলামকে সভাপতি করা হয়। এতেও ফোরাম আপত্তি থাকায় পর্ষদ ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। বিজিএমইএর নির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পর ১২০ দিনের মধ্যে  নির্বাচন  অনুষ্ঠান এবং নির্বাচিতদের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তরে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনকে প্রশাসক নিয়োগ করে সরকার। নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হওয়ায় গত ১১ ফেব্রুয়ারি আরও চার মাস প্রশাসকের মেয়াদ বাড়ানো হয়। আগামী ১৬ জুন তাঁর বর্ধিত মেয়াদ শেষ হবে।
সংগঠনের প্রতিদিনকার কার্যক্রম পরিচালনা এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশাসককে সহায়তার উদ্দেশ্যে একটি সহায়ক কমিটি রয়েছে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এ কমিটির বৈঠকে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড এবং আপিল বোর্ড গঠন করা হয়। জানা গেছে, নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়েছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবালকে। ল ফার্ম সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের ব্যবস্থাপনা অংশীদার ব্যারিস্টার সৈয়দ আফজাল হাসান উদ্দিন এবং ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ এ বোর্ডের সদস্য করা হয়েছে। 

অন্যদিকে নির্বাচন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়েছে এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুরকে। এ বোর্ডের দুই সদস্য হয়েছেন বার্জার পেইন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী হক চৌধুরী এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এ এন এম কুদরত-ই-খু্দা। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিজিএমইএর সহায়ক কমিটির বৈঠকে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড এবং আপিল বোর্ড গঠন করা হয়। 

নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল গতকাল সমকালকে বলেন, দায়িত্ব নিয়েছেন তারা। আজ সোমবার বোর্ডের প্রথম বৈঠক হবে। একটা সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ সম্পর্কে বৈঠকে  বিস্তারিত আলোচনা হবে। ভুয়া ভোটারের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি শুনেছেন। তবে বিস্তারিত এখনও জানেন না। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রেমিকার সাবেক স্বামীর ফাঁদে প্রাণ গেছে তাজকীরের
  • সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি: রিজভী
  • ছিলেন স্থপতি, বানাতে চেয়েছিলেন সিনেমা, এখন ক্রিকেটে ভারতের জয়ের নায়ক
  • কাজ না করে আবহাওয়ার দিকে তাকিয়ে কর্মকর্তারা
  • বিজিএমইএ নির্বাচনে ৬৯০ ভুয়া ভোটার
  • ভারতের কারণে অস্ট্রেলিয়ার পর দ. আফ্রিকাও গেল দুবাইতে
  • আমেরিকার জন্য ভয়ংকর এক শুক্রবার
  • মাইক্রোসফটের এআই–সেবায় হ্যাকিং
  • কখনও বলিনি আমি আর অভিনয় করব না: নাঈম
  • রোজার চাঁদ দেখলে কী দোয়া পড়বেন