হাওরবাসীর কাজে আসছে না অপরিকল্পিত স্লুইসগেট
Published: 24th, January 2025 GMT
সুনামগঞ্জের ভান্ডাবিল হাওরের পানি যাতে সহজে নেমে যেতে পারে, সে জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল বাহাড়া স্লুইসগেট। কিন্তু এই স্লুইসগেটটি গত ১০ বছর হয় কাজ করছে না। এরই মধ্যে স্লুইসগেটমুখী খাল ভরাট হয়ে গেছে। এখন হরিনগর খাল ও কান্দোকলার বাঁধ কেটে দিলেই শুধু বর্ষা মৌসুমে ভান্ডাবিল হাওরের পানি নামে। প্রতি বছর এই দুই বাঁধ কাটায় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়। অথচ বাহাড়া স্লুইসগেট থেকে হাওরমুখী প্রায় এক কিলোমিটার খাল খনন করলে প্রতি বছর বাঁধ কাটতে হতো না।
এসব কথা বলছিলেন শাল্লা উপজেলার ভান্ডাবিল হাওরপারের বাহাড়া গ্রামের বাসিন্দা কালীকৃষ্ণ দাস, শিবপুর গ্রামের শৈলেন তালুকদার, হরিনগরের শিমুল দাস ও কান্দোকলা গ্রামের মনোরঞ্জন দাস।
জলাবদ্ধতায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট পান জামালগঞ্জের পাগনার হাওরপারের লক্ষ্মীপুর গ্রামের মানুষ। সেখানকার জামায়াত নেতা সিরাজুল হক অলি বলেন, গজারিয়া গ্রামের মাঝামাঝি এলাকায় স্লুইসগেট করা হয়েছিল। সাত-আট বছর আগেও এই স্লুইসগেট দিয়ে পাগনার হাওরের পানি সুরমা নদীতে নামত। এখন স্লুইসগেট থেকে হাওরের পাঠামারা বাঁধ পর্যন্ত দুই কিলোমিটার ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে এদিকে আর পানি নামে না। হাওরের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের পানি এখন নামে ডালিয়া স্লুইসগেট দিয়ে। হাওরে চাষাবাদের মৌসুম শুরু হয়েছে আরও আগে। অথচ ডালিয়া স্লুইসগেট খোলা হয়েছে গত বুধবার। হাওরে বাঁধের নামে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা খরচ হয়, কিন্তু পানি কীভাবে নামবে, চাষাবাদ কীভাবে হবে, স্লুইসগেটগুলো কীভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে– এমন চিন্তা করে না কোনো কর্তৃপক্ষ।
এই উপজেলার গণমাধ্যমকর্মী বিশ্বজিত রায় হালির হাওর ঘুরে এসে জানান, সেখানের সুন্দরপুরের পাশের স্লুইসগেটটিও স্থানীয়দের কাজে আসছে না। কারণ স্লুইসগেটটির হাওরমুখী খাল ভরাট হয়ে গেছে। এটি দিয়ে সামান্য পরিমাণে যা পানি নামে, তা না নামার মতোই। স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, স্লুইসগেট থেকে হালির হাওরমুখী খাল খনন না করায় প্রতি বছর কয়েকটি স্থানের বাঁধ কেটে পানি নামানো হয়। তাতে বছরে বছরে হয় বাঁধের ব্যবসা।
তাহিরপুর উপজেলার মেঘালয় সীমান্তঘেঁষা সমসার হাওরে ২০১৩ সালে একটি স্লুইসগেট নির্মাণ করে এলজিইডি। পাটলাই নদীর উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামসংলগ্ন স্থানে কোটি টাকা ব্যয়ে এ স্লুইসগেটটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নির্মাণ ত্রুটির কারণে এটি চালু হওয়ার পর উল্টো দুর্ভোগে পড়েন হাওরপারের কৃষক। নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে এ স্লুইসগেটের কপাট বন্ধ করা যায় না। তাছাড়া সংস্কার না হওয়ায় এর লোহার কপাট ক্ষয় হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। তাই নদীতে পানি বৃদ্ধি হলে হাওরে পানি ঢোকে। ২০১৫ ও ২০১৭ সালে এই স্লুইসগেট দিয়ে পানি প্রবেশ করে হাওরের বোরো ধান তলিয়েছিল।
জানা গেছে, শুধু এই চারটিই নয় বরং জেলার বেশির ভাগ হাওরের স্লুইসগেট কাজ করছে না। প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) সমসার হাওর আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি কলাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মোর্শেদ আলম সাদ্দাম বলেন, নির্মাণের সময়ই এখানকার স্লুইসগেটে ত্রুটি ছিল। তাই কৃষকবান্ধব এ প্রকল্পটি এখন সমসার হাওরের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদীতে পানি বাড়লে কৃষকরা বস্তায় মাটি ভরে বাঁশের ঠেকা দিয়ে কপাটের মুখ বন্ধ করে। কিন্তু কপাট ঠিকমতো বন্ধ হয় না, তাই হাওরে পানি প্রবেশ করে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) একজন কর্মকর্তা জানান, পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো ভেন্ট রেগুলেটর, রেগুলেটর, স্লুইসগেট, পাইপ স্লুইসগেট আছে এই জেলায় ৩৩টি। এর মধ্যে সচল ২৩টি এবং অচল ৯টি। এসব অবকাঠামোর মধ্যে অপসারণযোগ্য তিনটি। তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের বৈজ্ঞানিক-১ ভেন্ট রেগুলেটর, আহম্মকখালী রেগুলেটর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের বিশ্বম্ভরপুর পাইপ স্লুইসগেট, কৃষ্ণতলা পাইপ স্লুইসগেট, জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা ইউনিয়নের রাইঙ্গা রেগুলেটর, বুরিডক্কা রেগুলেটর, জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারবাক ইউনিয়নের ডালিয়া রেগুলেটর, বেহেলী ইউনিয়নের বেহেলী রেগুলেটর, ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইর রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের ধানকুনিয়া রেগুলেটর বর্তমানে অচল অবস্থায় আছে। এ ছাড়া অপসারণযোগ্য হলো ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইর রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের ধানকুনিয়া রেগুলেটর, জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা ইউনিয়নের রাইঙ্গা রেগুলেটর ও বুরিডক্কা রেগুলেটর।
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, খাল ভরাট হয়ে পানি না নামতে পারা একটি স্লুইসগেটের তথ্য আমাদের কাছে আছে। সেটি জামালগঞ্জের পাগনার হাওরের গজারিয়া স্লুইসগেট। খাল ভরাট হওয়ায় পানি না নামার আর কোনো তথ্য নেই। গজারিয়া স্লুইসগেট থেকে পাগনার হাওরমুখী খাল খনন করার পরিকল্পনা পাউবোর রয়েছে। এ ছাড়া হাওরের ১০টি স্লুইসগেট এ বছর মেরামত করে সচল করা হবে। অন্যগুলোও কার্যকর করা হবে পর্যায়ক্রমে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপজ ল র স জ ম লগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
সামারিক শক্তিতে মিয়ানমারের চেয়ে ২ ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ
চলতি বছর সামরিক শক্তির দিক থেকে মিয়ানমারের চেয়ে দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। চলতি সপ্তাহে সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার প্রকাশিত সূচকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই র্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সামরিক বাজেট। সেনাবাহিনীর আকার, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর শক্তিকেও বিবেচনা করা হয়েছে সমীক্ষায়।
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের সূচক অনুযায়ী, বিশ্বে সামরিক শক্তির ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, এরপরে পরে রয়েছে রাশিয়া, চীন, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া। পরমাণু শক্তিধর হলেও পাকিস্তানের অবস্থান ১২ নম্বরে। তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে ৩৫তম অবস্থানে। বাংলাদেশের আগে রয়েছে উত্তর কোরিয়া ও আর্জেন্টিনা। আর বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমার রয়েছে ৩৭তম অবস্থানে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটির বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৬ কোটি ৬১ লাখ মানুষ সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার যোগ্য। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে মোট সেনা সংখ্যা ১ লাখ ৬৩ হাজার। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে রয়েছে ১৭ হাজার ৪০০ সদস্য এবং নৌবাহিনীতে রয়েছে ২৫ হাজার ১০০ সেনা।
অন্যদিকে, মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যা ৫ কোটি ৭৫ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার যোগ্য। মিয়ানমারের সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার। মিয়ানমারের রিজার্ভ সৈন্য রয়েছে ২০ হাজার। দেশটির বিমানবাহিনীতে রয়েছে ১৫ হাজার সদস্য এবং নৌবাহিনীতে রয়েছে ১৬ হাজার সেনা।
ঢাকা/শাহেদ