দেশে শতকোটি টাকার কোকেন জব্দের মামলায় আন্তর্জাতিক মাদক কারবারি চক্রের সাত সদস্যের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। দুই বাংলাদেশি, চার নাইজেরীয় ও মালাউয়ির এক নাগরিককে আসামি করে আদালতে গত বুধবার অভিযোগপত্র দিয়েছে সংস্থাটি। তাদের মধ্যে ছয়জন গ্রেপ্তারের পর কারাগারে রয়েছেন। তবে চক্রের হোতা জ্যাকব ফ্রাঙ্ক ওরফে ডন ফ্রানকি এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। 

কারাগারে থাকা ছয়জন হলেন– নমথান্দাজো টাওয়েরা সোকো, সাইফুল ইসলাম রনি, আসাদুজ্জামান আপেল, ননসো ইজেমা পিটার ওরফে অসকার, নুলুয়ি ইবুকা স্ট্যানলি ওরফে পোডস্কি ও ইজেহ ইমানুয়েল চিদেরা। তাদের মধ্যে চিদেরা ঢাকার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। 
ডিএনসির পরিচালক (অভিযান ও গোয়েন্দা) তানভীর মমতাজ সমকালকে বলেন, বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে কোকেন পাচারের চেষ্টা চালায় চক্রটি। মালাউয়ি থেকে আসা চালানের প্রাথমিক গন্তব্য ছিল ভারতের দিল্লি। নিষিদ্ধ এই মাদকের কারবারে জড়িত দেশি-বিদেশি চক্রের সাতজনকে তদন্তে শনাক্ত করা গেছে। অপরাধ সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। 

গত বছরের ২৪ জানুয়ারি রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেনসহ মালাউয়ির নাগরিক নমথান্দাজো টাওয়েরা সোকোকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ওই দেশের একটি হাসপাতালের নার্স। তবে বিমানবন্দরে নিজেকে কাপড় ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেন। তল্লাশি করে তার লাগেজে বিশেষ কায়দায় লুকানো কোকেন পাওয়া যায়। ডিএনসির কর্মকর্তারা জানান, দেশে ধরা পড়া কোকেনের বৃহত্তম এ চালানের আনুমানিক মূল্য ১০০ কোটি টাকার বেশি। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন ডিএনসির পরিদর্শক দেওয়ান মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান। তদন্তে নেমে চক্রের আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে ডিএনসি।

তদন্ত সূত্র জানায়, চক্রের হোতা ডন ফ্রানকি সহযোগীদের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোকেনসহ অন্যান্য মাদকের কারবার চালান। বাংলাদেশে তার যাতায়াত ছিল। এই চালান জব্দের কয়েক মাস আগে তিনি ঢাকা ছাড়েন। সেই সময় এখানে তার কারবার পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে যান ডন ওয়েসলিকে। তবে নাইজেরিয়ায় বসে ফ্রানকিই সব নির্দেশনা দেন। সোকোর মাধ্যমে তিনিই কোকেনের চালান ঢাকায় পাঠান। গ্রেপ্তারদের বেশির ভাগের সঙ্গে তার হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের প্রমাণ মিলেছে।

চক্রে কার কী ভূমিকা
সোকো মূলত চালানটি বাংলাদেশ পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার বাহক ছিলেন। তার নামে ভুয়া আমন্ত্রণপত্র তৈরি করে পাঠান সাইফুল ইসলাম রনি। সেই সঙ্গে তিনি ফ্রানকির নির্দেশনায় সোকোর জন্য হোটেলের কক্ষ ভাড়া নেওয়া, তার যাবতীয় খরচ জোগানো ও ভিসার ব্যবস্থা করেন। এ জন্য তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকের উত্তরা জনপথ শাখার হিসাব নম্বরের মাধ্যমে একাধিকবার পেমেন্ট নিয়েছেন। ঢাকার বারিধারা এলাকার ১১ নম্বর সড়কে ফ্রানকির জন্য ফ্ল্যাট ভাড়া করে দেন আসাদুজ্জামান আপেল। তিনি ফ্রানকির সঙ্গে এম অ্যান্ড জে কালেকশন নামক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু, ট্রেড লাইসেন্স তৈরি ও ব্যাংক হিসাব খুলে সিগনেটরি হন। এ ছাড়া কোকেনের চালান ফ্রানকির ফ্ল্যাটে আসার পর নতুন করে প্যাকেজিং করার জন্য অর্ধশত লাগেজ সরবরাহ করেন। পিটার ওরফে অসকার ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়াই এ দেশে অবস্থান করে কোকেনের চালান ঢাকায় আনা এবং পরে নয়াদিল্লি পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ চক্রের সদস্যদের দিতেন। সমন্বয়ের জন্য ফ্রানকি, পোডস্কি ও চিদেরার সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। 
এদিকে পোডস্কিও ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়াই বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন। তিনি ডন ওয়েসলির কাছ থেকে মাদকের চালান নিয়ে অন্তত তিনবার কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে দিল্লিতে পৌঁছে দেন। প্রতিটি চালান দিল্লি পৌঁছানোর জন্য ফ্রানকির কাছ থেকে ২ হাজার মার্কিন ডলার নিয়েছেন। চিদেরা কোকেন চালান পাচারের কাজে দরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি নাইজেরিয়ায় থাকা তার মা ও স্ত্রীর বাইন্যান্স ওয়ালেট ব্যবহার করে ফ্রানকির কাছ থেকে নাইজেরিয়ান মুদ্রা ‘নায়রা’ গ্রহণ করেন। পরে বাইন্যান্স ওয়ালেটের মাধ্যমে তা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে পরিবর্তন করেন। সেই অর্থ বাংলাদেশে এনে ফ্রানকির তালিকা অনুযায়ী অসকারের মাধ্যমে চক্রের সদস্যদের কাছে পৌঁছে দিতেন। চিদেরা তার জবানবন্দিতে তারেক মনোয়ার নামে একজনের কথা বললেও ঠিকানা না পাওয়ায় তাকে অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য ব যবস নবন দ ড এনস

এছাড়াও পড়ুন:

আহ্সান উল্লাহ্ মাস্টার হত্যা মামলায় আপিল শুনানি ২৬ ফেব্রুয়ারি

আওয়ামী লীগ নেতা ও গাজীপুরের সাবেক সংসদ সদস্য আহ্সান উল্লাহ্ মাস্টার হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের করা আপিল শুনানির জন্য আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ গতকাল বুধবার এই দিন ধার্য করেন।

আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দস কাজল। এর আগে গত ১৪ জানুয়ারি আহ্সান উল্লাহ্ মাস্টার হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল দ্রুত শুনানি করতে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শুনানির দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ৭ মে গাজীপুরের নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সমাবেশে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় আহ্সান উল্লাহ্ মাস্টারকে। এ ঘটনায় করা হত্যা মামলার রায় ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল ঘোষণা করেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।

রায়ে মামলার আসামি বিএনপি নেতা নূরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। পরে বিচারিক আদালতের রায় অনুমোদনের জন্য মামলার নথি হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়। পাশাপাশি ওই রায়ের বিরুদ্ধে জেল আপিল করে আসামিরা। এর পর উভয় আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০১৬ সালের ১৫ জুন রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে ছয়জনের ফাঁসি বহাল রাখা হয়।

এ মামলায় ৩০ আসামির মধ্যে নিম্ন আদালতে ২৮ জনের দণ্ড হয়। এর মধ্যে ২২ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। এসব আসামির মধ্যে ১৭ জন কারাগারে ও ৯ জন পলাতক। দু’জন মারা গেছেন। পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে পৃথক আপিল আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিরা। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আহ্সান উল্লাহ্ মাস্টার হত্যা মামলায় আপিল শুনানি ২৬ ফেব্রুয়ারি