রাজধানীর গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনের সামনে রাত ৯টার দিকে রাস্তায় যানচলাচল আটকে দিয়ে হামলা ও দুর্ধর্ষ লুটপাটের ঘটনা ঘটে। ওই সময় রাস্তায় মানুষজন থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেনি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ‘সিটি মানিটারি এক্সচেঞ্জের’ মালিক আব্দুল কাদের শিকদার।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নড়াইলের নড়াগাতি উপজেলার খাশিয়াল গ্রামের প্রতিবেশী ইয়াসিন শিকদার।’

গত বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) এজাহারভুক্ত আসামিদের গুলশান ও আশপাশ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। পরে শুক্রবার তাদের গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

গ্রেপ্তাররা হলেন— ইয়াছিন সিকদার, অন্তর রহমান, মো.

রাকিবুল, বিল্লাল মোল্লা, মেহেদী হাসান, শেখ মোহাম্মদ, রাজু আহম্মেদ ও নৌবাহিনীর সদস্য রবিউল ইসলাম।

আসামিদের মধ্যে ইয়াছিন ও অন্তর দুই দিনের রিমান্ডে রয়েছে। রবিউলকে নৌবাহিনীতে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি আসামিদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।

আব্দুল কাদের বলেন, ‘গত বছরের ১৪ অক্টোবর ছোট ভাই মিন্টু শিকদারকে অপহরণ করে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে ইয়াসিন। ওই ঘটনায় পরের দিন ঢাকার বাড্ডা থানায় একটি অপহরণ মামলা করি। সেখানে আসামি ইয়াসিনসহ তার সহযোগী আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপহরণের ঘটনায় ভাই মিন্টুকে উদ্ধারসহ তাকে গ্রেপ্তার করে। এরপর মাসখানেক কারাগারে থাকার পর জামিনে বের হয়ে বিভিন্নভাবে হুমকি–ধামকি দিতে থাকে। এমনকি তিন ভাইয়ের মধ্যে একজনকে মেরে ফেলবে বলেও হুমকি দেয়। তার কদিনের মধ্যে রাস্তায় প্রকাশ্যে হামলা চালিয়ে টাকা ছিনতাই করে তারা।’

তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে গুলশান-২ বরুণ ভবনে ‘সিটি মানিটারি এক্সচেঞ্জ’ অফিস বন্ধ করে একটি মোটরসাইকেলে আমি (কাদের), মামাতো ভাই আমির হামজা ও বেয়াই দুলাল হক বাসায় রওনা হই। হোটেল ওয়েস্টিনের সামনে পৌঁছানো মাত্রই ২০–২৫ জন দেশীয় অস্ত্র হাতে রাস্তা বন্ধ করে হামলা করে। সবাই পাশে দাঁড়িয়ে ঘটনা দেখলেও এগিয়ে আসতে সাহস পায়নি।’

ভুক্তভোগী আমির হামজা বলেন, ‘লোকজনের মধ্যে প্রকাশ্যে এভাবে হামলার ঘটনায় হতভম্ভ হয়ে যাই। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ হয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা করে। পরে সঙ্গে থাকা টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এদিকে ভাই আব্দুল কাদের গুরুতর জখম হয়েছে। বর্তমানে বাসায় বিশ্রামে রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসী হামলা করে চলে যাওয়ার পর আশপাশের কয়েকজন উদ্ধার করে আমাকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল নেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাসায় রয়েছি।’

ভুক্তভোগী আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমরা তিনভাই ঢাকায় মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসা করি। কারোর সঙ্গে কোনো শত্রুতা নেই। কিন্ত প্রতিবেশী ইয়াসিন বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছে। গত ৪ মাস আগে ইয়াসিন তার লোকজন দিয়ে ছোট ভাই মিন্টুকে অপহরণ করে। ওই ঘটনায় মামলা করি। মামলার তদন্ত করলেও কোনো আসামি গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। পরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গুলশানে বিভাগে মামলা হস্তান্তর করার আবেদন করি। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে ডিবি।

ঢাকার গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘গুলশানে পূর্ব শত্রুতার জেরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর সঙ্গে জড়িত আটজনকে র‍্যাব গ্রেপ্তার করে থানায় হস্তান্তর করেছে। তাদের শুক্রবার আদালতে তুলে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। পরে শুনানি শেষে রিমান্ড ও জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন আদালত।’

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, ‘গুলশানে প্রকাশ্যে ডাকাতির ঘটনায় অভিযুক্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ঘটন য় র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের গোপন আস্তানার সন্ধান

খাগড়াছড়িতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী অপহরণের ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও তাদের কোনো সন্ধান মেলেনি। তবে অপহৃতদের উদ্ধারে দিনরাত অভিযান পরিচালনা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে টানা অভিযানের ফলে ইউপিডিএফের একটি গোপন আস্তানার সন্ধান পেয়েছে যৌথবাহিনী।

সোমবার ভোরে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের ভাই-বোনছড়ার পূর্ণ চন্দ্র কারবারিপাড়া এলাকার একটি তালাবন্ধ টিনসেটের ঘরে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এসময় কাউকে আটক করতে না পারলেও চাঁদা আদায়ের রশিদ, ল্যাপটপ, মোবাইল, সামরিক ইউনিফর্মসহ বিপুল পরিমাণ প্রশিক্ষণ সরঞ্জামাদি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

পুলিশ জানায়, সোমবার ভোর ৫টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে যৌথবাহিনী খাগড়াছড়ি জেলা সদরের ভাই-বোনছড়ার পূর্ণ চন্দ্র কারবারিপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইউপিডিএফের একটি গোপন আস্তানার সন্ধান পায়। পরে তালাবন্ধ টিনেসেটের ঘরের তালা ভেঙে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে তল্লাশি চালায় যৌথবাহিনী। এসময় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত তিন জোড়া পোশাক, ১৯টি ইউনিফর্মের প্যান্ট, পিস্তলের গুলি, ক্যাপ, ১টি ল্যাপটপ, কয়েকটি ওয়াকি-টকি সেট, ২টি মোবাইল ফোন, ১টি মাইক্রোফোন, নেট, ১টি ক্যামেরা, ১টি প্রিন্টার, সেলাই মেশিন, তাঁবু, জিম্মি করে রাখার লোহার চেইন, খাবারের তৈজসপত্র ও খাবারের কাঁচামাল, প্রোপাগান্ডা সামগ্রী, সন্ত্রাসীদের চাঁদা আদায়ের রশিদসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। 

দুর্গম এলাকার এই গোপন আস্তানা থেকেই ইউপিডিএফ তাদের চাঁদাবাজি, অপহরণসহ তাদের সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এসময় যৌথবাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, অপহৃত শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে দরকার হলে প্রতিটি এলাকায় ইঞ্চি ইঞ্চি করে তল্লাশি করা হবে এবং অপহৃতরা উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি। 

এরই মধ্যে চবির পাঁচ শিক্ষার্থী অপহরণের ছয় দিন অতিবাহিত হলেও সোমবার বিকেল পর্যন্ত অপহৃতদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

তবে অপহৃতদের উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৫ দিন পর মুক্তি পেলেন বান্দরবানে অপহৃত নির্মাণশ্রমিক
  • মালয়েশিয়া পাচারের উদ্দেশ্যে অপহরণ, টেকনাফের পাহাড় থেকে উদ্ধার সেই ৬ শ্রমিক
  • অপহৃত শিশুকে ভিক্ষা করাতে নির্যাতন, শরীরজুড়ে দেওয়া হয় সিগারেটের ছ্যাঁকা
  • শরীরে ছ্যাঁকা দিয়ে হাতের নখ উপড়ে প্রতিবন্ধী বানিয়ে করানো হতো ভিক্ষা
  • উদ্ধার অভিযানে মিলল ‘ইউপিডিএফের আস্তানা’
  • কুমিল্লায় গভীর রাতে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলের পর অভিযানে গ্রেপ্তার ৮
  • খাগড়াছড়িতে সন্ত্রাসীদের আস্তানায় মিলল ইউনিফর্ম-ওয়াকিটকি 
  • উদ্ধার অভিযানে ‘ইউপিডিএফের আস্তানার’ সন্ধান
  • খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের গোপন আস্তানার সন্ধান
  • খাগড়াছড়িতে এবার দুই টেকনিশিয়ানকে অপহরণ