নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে: গোলাম পরওয়ার
Published: 24th, January 2025 GMT
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে। সেই সরকারের মাধ্যমে কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে তোলা হবে। যার ভিত্তি হবে আল-কোরআন।”
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে শরীয়তপুরের ডামুড্যা হামিদিয়া কামিল মাদরাসা মাঠে জামায়াত আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “জামায়াত একটি ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।” ২০২৫ সালকে দেশের সমাজ, রাজনীতি এবং দ্বীন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সময় হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি।
আরো পড়ুন:
৯ বছর আগের ঘটনায় ২৮ জনের নামে মামলা
শত প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও জাতীয় প্রশ্নে ঐক্যবন্ধ থাকব: আসিফ
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির কেএম মকবুল হোসাইন। বিশেষ অতিথি ছিলেন- জেলা আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রব হাশেমী। পথসভায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের জামায়াতের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/সাইফুল/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নতুন দলকে নতুন যে রাজনীতি দিতে হবে
জনগণের শক্তিকে ভয় পাওয়া অশুভ শক্তি নিজেদের অপকর্ম এবং অন্যায় অবস্থানের জন্য অপরাধবোধ প্রকাশের সৎ সাহস রাখে না। তারাই ইদানীং সমাজের চোরাগলিতে বলাবলি করছে, ক্ষমতার পরিবর্তনের পর গত ছয় মাসে দেশের অবস্থা কী যে হয়ে গেল!
আজকের অর্থনৈতিক দৈন্যদশা, প্রতিষ্ঠানগুলোর ভগ্নদশা, রাজনৈতিক অবসাদ এবং সামাজিক অবক্ষয় যে পতিত সরকারের সৃষ্ট এবং রেখে যাওয়া, তা স্বীকার করা দূরে থাক, বিবেকহীনরা তা বুঝতে নারাজ।
যেন হত্যাকাণ্ড, মেগা দুর্নীতি, বৈষম্য বৃদ্ধি, রাষ্ট্রীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি বা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের মতো ঘটনা ঘটেইনি বিগত আমলে! অজ্ঞাত স্থান থেকে কুকর্মকারীদের প্রতিশোধ ও নাশকতার ভার্চ্যুয়াল হুমকি বলে দেয় ক্ষমতার রাজনীতিতে কতটা ভয়ংকর এই ফ্যাসিবাদী শক্তি।
তবু ‘অন্ধকার যুগ বনাম নতুন সম্ভাবনার অনিশ্চিত সময়’ নিয়ে কোনো বিতর্কে আওয়ামী চেতনার ধ্বজাধারীদের যুক্তি অকাট্য হলে তা এত ইনিয়ে-বিনিয়ে বলার চেষ্টা কেন বন্ধুরা?
কারণ, ওটাই পুরোনো রাজনীতির নমুনা: নিজের মিথ্যা আড়াল করো এবং আরেকজনের সত্যকে অস্বীকার করতে থাকো; ফলে মানুষকে বিভ্রান্ত করে স্বীয় স্বার্থ উদ্ধার করা সহজ হবে, প্রতিপক্ষও ভিলেন বনে যাবে। কী সহজ সমীকরণ নির্ণয় করে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ! বিএনপি-জামায়াতকে গালাগাল দাও, ক্ষমতায় টেকার নাটক সাজাও।
তিন তিনটি জোচ্চুরির জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করার পর ২০২৪-এর ১০ জানুয়ারি ঢাকার এক সমাবেশে জবরদখলকারী প্রধানমন্ত্রী হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমরা জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটে অংশ নিয়েছে।
বিএনপির জ্বালাও-পোড়াওয়ের মাঝেও তারা নিজের ভোট নিজে দিয়েছে।’ তাঁর নির্লজ্জ মিথ্যার রাজনীতি ও রাজত্ব শেষ হয় সংক্ষুব্ধ জনতার চূড়ান্ত প্রতিরোধে। ৫ আগস্টের ক্ষমতার পরিবর্তন শুধু এক দিনের ঘটনা নয়, সেটি ছিল নতুন রাজনীতির সূচনালগ্ন।
হাসিনার বিদায়ের অন্যতম সুফল হলো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি এবং সংস্কারের মাধ্যমে তার উপযোগী পরিবেশ তৈরির তাগিদ।
ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সুযোগ অবশ্যই আরেকটি ধাপ। এসব বিষয়ে আমরা যে নানা তর্ক-বিতর্ক করছি, সেটি পর্যন্ত অসম্ভব ছিল ফ্যাসিবাদী যুগে। সুতরাং ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত’। ওই কবিতার মতোই বাংলাদেশ এখন নতুন যুগের সন্ধিক্ষণে, তা সবাই দেখুক না দেখুক। ‘আলোর চোখে কালো ঠুলি পরিয়ে/ তারপর খুলে-/ মৃত্যুর কোলে মানুষকে শুইয়ে দিয়ে/ তারপর তুলে-/ যে দিনগুলো রাস্তা দিয়ে চলে গেছে/ যেন না ফেরে।’
যাহোক আমরা যদি ইচ্ছাশক্তি ও যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারি, তাহলে নতুন রাজনীতি সমাজ ও জাতিকে আগামীর পথ দেখাবে, রাজনীতিকেরা সেই যাত্রায় নেতৃত্ব দেবেন। এর অন্যথা জনগণের কাছে খুব একটা গ্রহণযোগ্য হবে না।কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় চাননি পুরোনোয় ফিরে যেতে। আমরা ২০২৪-এর আগস্ট-পূর্ববর্তী আমলের রাজনৈতিক ধারায় ফেরার ওকালতি করব কোন মুখে? যে রাজনীতি ছিল মিথ্যুকের বন্দনা, দুর্নীতিবাজের আরাধনা, অন্যায়কারীকে প্রশ্রয় দান, ভণ্ডের অশ্রুবিসর্জনের সার্কাস প্রদর্শন, গণশত্রুর শাসন নির্বিঘ্ন এবং চিরস্থায়ী করার অপচেষ্টা, নিষ্ঠুরের জয়গান গাওয়া আর শোনা, বর্বরের কাছে আত্মসমর্পণের আহ্বান; সে রাজনীতিতে আমরা কেন ফিরব?
আসলে এই শতাব্দীর শুরুতে একশ্রেণির রাজনীতিকদের নীতিহীন কর্মকাণ্ড ও বিরাজনীতিকীকরণে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র এবং পরবর্তী সময়ে ফ্যাসিবাদী শাসনের মধ্যেই চালাকি, বজ্জাতি আর ভয় দেখানোর রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে মানুষ ভেতরে-ভেতরে প্রত্যাখ্যান করে পুরোনো রাজনীতি অচল হয়ে পড়েছিল অনেক আগেই।
কিছুটা বুঝে, কিছুটা না বুঝে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা ঝোড়ো হাওয়ার মতো বিপ্লব ঘটায়, রক্তের অক্ষরে লিখে তুলে ধরে নতুন রাজনীতির আকাঙ্ক্ষা। তারপরও সেকেলে মানসিকতার রাজনীতিকদের অপ্রাসঙ্গিকতা আরও পরিষ্কার হয় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জমানায়। কী বয়ান নিয়ে রাজনীতি করবেন যেখানে দলীয় সরকার নেই, নেই রাজনৈতিক মাঠের সংজ্ঞায়িত শত্রু? তাই কিছু আওয়ামী প্রলাপ এখনো প্রতিধ্বনিত হয় এখানে-সেখানে।
সে ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত নতুন রাজনীতির ধারণাটা কী হতে পারে? ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে মানুষের সমমর্যাদা, সম্ভাবনার বিকাশ, সত্য, শান্তি, সৌহার্দ্য, ন্যায়নিষ্ঠতা, নিয়মকানুন বা সভ্য মূল্যবোধ অনুসরণের জন্য কাজ করবে যে রাজনীতি, তা-ই হয়তো আজকের প্রজন্মের প্রত্যাশা।
২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নাগরিক পার্টি নামে যে দলটির আত্মপ্রকাশ ঘটল জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের ছাত্র নেতৃত্বের হাত ধরে, তার চ্যালেঞ্জ হবে জনগণকে বিকল্প রাজনীতির মডেল উপহার দেওয়া। পরিবর্তিত সংস্কৃতির দলটি প্রতিক্রিয়ার রাজনীতি করবে না, কাজ করবে দেশ ও জনগণের চলমান ও ভবিষ্যৎমুখী নানা ইস্যু নিয়ে। সে দলের সব কর্মকাণ্ড হবে স্বচ্ছ এবং নেতৃত্ব সর্বদা অনুসরণ করবে গণতান্ত্রিক পথ। এই আমাদের প্রত্যাশা।
এই দলকে আমরা সেই জায়গায় দেখতে চাই না, যে দল নতুন রাজনীতির ‘সোল এজেন্ট’ হিসেবে নিজেকে দাবি করে বসবে না বরং রাজনৈতিক বিতর্কে ন্যায্য দাবি বা যুক্তি মেনে নিতে নমনীয়তা দেখাবে।
অন্যদিকে আমাদের সেই রাজনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছা দরকার, যেখানে যে বা যারা বারবার গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও ভোটাধিকার প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত করেছে এবং জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই দলের নাম যা-ই হোক, তার ভাবী গণতন্ত্রে রাজনীতি করার অধিকার থাকবে না।
বিগত গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রাখা বিএনপি, জামায়াতসহ অন্য দলেরও নতুন রাজনীতি নিয়ে কথা বলা এবং জাতীয় সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়ার সুযোগ না থাকার কারণ নেই। ভোটাধিকার প্রয়োগ ছাড়াও আধুনিক মানুষ পরিবার, প্রজন্ম, প্রতিবেশ, পরিবেশ, শিক্ষা, চিকিৎসা, চাকরি, ব্যবসা, নিরাপত্তা, গোপনীয়তা, নৈতিকতা, জনকল্যাণের সামাজিক বন্দোবস্ত ইত্যাদি অনেক বিষয়ে চিন্তিত। প্রতিপক্ষকে আক্রমণ ও বাগাড়ম্বর বাদ দিলেও রাজনীতিকদের ইস্যুর কোনো অভাব হওয়ার কথা নয়।
দেশবাসী আশা করে, রাজনীতি হবে তাদের কল্যাণে এবং রাজনীতিকেরা জনগণের সমস্যা ও মনের ভাব দ্রুতই বুঝতে পারবেন। দুঃখজনকভাবে সাম্প্রতিক বাংলাদেশে এমনটা ছিল না।
যাহোক আমরা যদি ইচ্ছাশক্তি ও যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারি, তাহলে নতুন রাজনীতি সমাজ ও জাতিকে আগামীর পথ দেখাবে, রাজনীতিকেরা সেই যাত্রায় নেতৃত্ব দেবেন। এর অন্যথা জনগণের কাছে খুব একটা গ্রহণযোগ্য হবে না।
খাজা মাঈন উদ্দিন সাংবাদিক।