দীর্ঘদিনেও নির্মাণ হয়নি ভেঙে পড়া সেতু
Published: 24th, January 2025 GMT
পিরোজপুরের ইন্দুরকানীর ঘোষেরহাট বাজারসংলগ্ন খালে ভেঙে পড়া লোহার সেতুটি পুনর্নির্মাণ না করায় ইন্দুরকানী ও বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দুই উপজেলার মানুষকে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
জানা যায়, ইন্দুরকানী ও বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার মধ্যে সড়কপথে যোগাযোগের একমাত্র পথে ঘোষেরহাট বাজারসংলগ্ন ভবানীপুর খালে একটি লোহার সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন দুই উপজেলার শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার মানুষের চলাচল এবং মালপত্র পরিবহন করে। জরাজীর্ণ হয়ে পড়া সেতুটির একটি অংশ ২০২৩ সালের ১৬ নভেম্বর ভেঙে খালে পড়ে যায়। এরপর এলাকাবাসী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সেতুর ভেঙে পড়া অংশে সাঁকো তৈরি করায় পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন। দীর্ঘদিনেও সেতুটি পুনর্নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। এতে ভ্যান, ইজিবাইক, মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকায় দুই উপজেলার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পাশাপাশি কৃষক ও ব্যবসায়ীরা তাদের ফসল ও পণ্য আনা-নেওয়া করতে বেকায়দায় পড়েছেন। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি ব্যয় বেড়ে গেছে সাধারণ মানুষের।
ওই সড়কের ভাড়ায় চালিত ইজিবাইক চালক ইলিয়াস হোসেন জানান, ঘোষেরহাট সেতু ভেঙে যাওয়ায় ইজিবাইক নিয়ে সরাসরি ইন্দুরকানী উপজেলা সদরে যাতায়াত করা যায় না। এতে যাত্রী সংখ্যা কমে যাওয়ায় আগের চেয়ে তাঁর আয় কমে গেছে।
ষোষেরহাট বাজারের ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম বলেন, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ভেঙে যাওয়া সেতুটি পুনর্নির্মাণে কোনো উদ্যোগ নেই। এতে দুই উপজেলার মানুষের চলাচলে কষ্ট হচ্ছে।
ইন্দুরকানী সদর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, জনস্বার্থে সেতুটি পুনর্নির্মাণ জরুরি। সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় সব শ্রেণির মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
উপজেলা প্রকৌশলী লায়লা মিথুন জানান, ঘোষেরহাট সেতুটি জনগুরুত্বপূর্ণ। সেখানে নতুন সেতু নির্মাণের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। স্থানীয়রা দ্রুত সেতুটির নির্মাণকাজ শুরুর দাবি জানিয়েছেন। এটি বড় সড়কের তালিকাভুক্ত না হওয়ায় বরাদ্দ পেতে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ স্থগিত থাকায় আপাতত কোনো কিছু করা যাচ্ছে না।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ ই উপজ ল র
এছাড়াও পড়ুন:
বাজেট বাস্তবায়নের গতি কিছুটা বেড়েছে
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় মোট ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। পাঁচ মাসে সার্বিকভাবে বাজেট বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মোট বরাদ্দের ২৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে বাজেট বাস্তবায়ন হার ছিল ২০ দশমিক ৭৩। এর ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ছিল ২২ দশমিক ২২ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
চলতি অর্থবছরে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট দেয় ক্ষমতাচ্যুত আওমায়ী লীগ সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও সেই বাজেট অব্যাহত রয়েছে। বাজেটের বড় দুটি অংশ হচ্ছে উন্নয়ন বাজেট এবং অনুন্নয়ন বা পরিচালন বাজেট। অর্থ বিভাগের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে বাজেট বাস্তবায়নের হার ৩৩ দশমিক ৬ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যা ১ লাখ ৭০ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে ব্যয় হয় ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। তবে এ সময়ে উন্নয়ন ব্যয় কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৮৩ শতাংশে। টাকার অঙ্কে যা ২৪ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে ব্যয় হয়েছিল ৩৩ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি রোধে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে সরকারি ব্যয়েও সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরই সঙ্গে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কাটছাঁট হচ্ছে। অর্থবছরের শুরু থেকে আন্দোলন ও পরে আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পাশাপাশি প্রশাসনে রদবদলের ধাক্কায় সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ধীরগতি বিরাজ করছে।
এমন পরিস্থিতিতে সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয়ে সাশ্রয়ী পদক্ষেপ থাকলেও গত সরকারের নেওয়া অনিয়ন্ত্রিত ঋণের সুদ পরিশোধ ব্যয় ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। তা ছাড়া পরিচালন বাজেটে কাটছাঁটের খুব একটা সুযোগ থাকে না। আবার অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ব্যয় বাড়ায় পরিচালন বাজেটে ব্যয় কমানো সম্ভব হয়নি। তাই সার্বিক বাজেট বাস্তবায়ন কিছুটা বেড়েছে।
সুদ পরিশোধেই সরকারি ব্যয়ের ৩৬ শতাংশ
বাজেটের একক খাত হিসেবে সর্বোচ্চ ব্যয়ের খাত দাঁড়িয়েছে সুদ পরিশোধ। অর্থ বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সরকারি ব্যয়ের ৩৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ অর্থাৎ ৭১ হাজার ২১৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে। এর মধ্যে দেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ৬৩ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা ও বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ৭ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছিল ৪০ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা।
সুদ পরিশোধের এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছর শেষে শুধু সুদ পরিশোধেই প্রয়োজন হবে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে আগের অর্থবছরের চেয়ে সরকারের ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় বাড়ে ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং প্রথমবারের মতো ঋণের সুদ পরিশোধ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকায় উন্নীত হয়; যা সরকারের মোট ব্যয়ের ২৮ শতাংশ।
পাঁচ মাসে পরিচালন বাজেটের আওতায় অন্যতম বড় খরচের খাত হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা। এ খাতে ব্যয় হয়েছে ২৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ২৫ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন বাবদ ব্যয় হয়েছে ৯ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা। এদিকে পাঁচ মাসে জ্বালানি, সারসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি বাবদ ব্যয় হয়েছে ২৭ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা।
একই সময়ে পরিচালন বাজেটের আওতায় অন্য খাতগুলোর মধ্যে পাবলিক অর্ডার ও সেফটি খাতে ৩০ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ১৯ হাজার ৩৩৫ কোটি, প্রতিরক্ষা ১০ হাজার ৫৩৮ কোটি, কৃষিতে ১২ হাজার ৭৫৩ কোটি, স্বাস্থ্যে ৪ হাজার ৯৪৬ কোটি এবং স্থানীয় সরকার খাতে ১ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।