বাগেরহাটে ট্রান্সফরমার চুরি আশঙ্কাজনকভাবে বাড়লেও ধরা পড়ছে না চোর। এতে আতঙ্কে রয়েছেন গ্রাহকরা। অনেক এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে লোহার শিকল দিয়ে ট্রান্সফরমার বেঁধে রাখতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ায় তিন দিন ধরে বিদ্যুৎহীন বাগেরহাট সদর উপজেলার ফতেপুর এলাকার বাসিন্দা খামারি মিনা নাজমুস সাকিব। একদিকে তাদের পরিবারের দিনরাত কাটছে অন্ধকারে, অপরদিকে হাঁসের খামার গরম রাখতে পারছেন না তিনি। ফলে দুইশ হাঁসের অর্ধেকের বেশি ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত।
নাজমুস সাকিব বলেন, গত শনিবার রাতে তাদের ট্রান্সফরমারটি চুরি হয়ে যায়। তিন দিনেও তারা বিদ্যুৎ পাননি। কারণ ট্রান্সফরমারের মূল দামের অর্ধেক ২২ হাজার টাকা তাদের দিতে হবে। এত টাকা একবারে জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। ধারদেনা করতে হবে। হাঁসগুলোও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। প্রতিবেশী অনেকে ক্ষেতে পানি দিতে পারছেন না। অসহায় অবস্থায় রয়েছেন সবাই।
বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকায় আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, গত সাড়ে ৩ মাসে ২৪টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। যার বেশির ভাগই সদর উপজেলায়। এতে বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েন কয়েক হাজার গ্রাহক। চুরি যাওয়া ২৪টি ট্রান্সফরমারের আর্থিক মূল্য ২০ লক্ষাধিক টাকা। প্রতিটি ঘটনায় পল্লী বিদ্যুতের পক্ষ থেকে থানায় এজাহার দেওয়া হলেও কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
সর্বশেষ গত ১৭ জানুয়ারি ফকিরহাট উপজেলার পাগলা-শ্যামনগর তৈয়ব আলীর বটতলাসংলগ্ন বৈদ্যুতিক খুঁটিতে থাকা ট্রান্সফরমার চুরি করে নিয়ে যায় চোররা। এর আগে ১২ জানুয়ারি সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামে কাজী মহিদুল ইসলামের বাড়ির সামনের বৈদ্যুতিক খুঁটিতে থাকা ট্রান্সফরমার চুরি হয়। একই রাতে পার্শ্ববর্তী বিষ্ণুপুর গ্রামেও একটি খুঁটি থেকে ট্রান্সফরমার চুরির চেষ্টা করা হয়। চুরি করতে না পেরে খুঁটির নিচে রেখে পালিয়ে যায় চোররা। এতে দু’দিন বিদ্যুৎহীন থাকতে হয় ওই এলাকার বাসিন্দাদের। পরে নতুন ট্রান্সফরমার লাগিয়ে দিলে সচল হয় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা।
সদর উপজেলার সৈয়দপুর, দড়িতালুক, মেগনিতলা, চাপাতলা, বাগমারা, বাদোখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। চুরি ঠেকাতে অনেক এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে লোহার শিকল দিয়ে ট্রান্সফরমার বেঁধে রেখেছেন স্থানীয়রা।
বিষ্ণুপুর এলাকার বাসিন্দা জুলফিকার হায়দার বলেন, মাঝে মধ্যেই ট্রান্সফরমার চুরি হচ্ছে। চুরি হলেই কয়েকদিন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। আবার টাকাও গুনতে হয়। এর চেয়ে ভোগান্তি আর কিছু নেই।
বাদোখালী বিল এলাকার কৃষক নেতা রফিজ উদ্দিন বলেন, চুরি হওয়ার পর এলাকার ট্রান্সফরমারটি লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন। এর পরও চুরি হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন। ট্রান্সফরমার থাকে বৈদ্যুতিক খুঁটির ওপরে, এটা পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়। চুরি ঠেকাতে কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিয়ম অনুযায়ী, প্রথমবার চুরি হলে এলাকায় নতুন ট্রান্সফরমার লাগানোর জন্য ট্রান্সফরমারের দামের অর্ধেক পরিশোধ করতে হয় গ্রাহকদের। দ্বিতীয়বার চুরি হলে ট্রান্সফরমারের মূল্যের সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতে হয় গ্রাহকদের, যা দরিদ্র গ্রাহকদের জন্য খুবই কষ্টের। যে কোনো মূল্যে চোর সিন্ডিকেটকে শনাক্ত করতে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছেন গ্রাহকরা।
ট্রান্সফরমার চুরি এড়াতে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সুশান্ত রায়। তিনি বলেন, চুরির খবর পাওয়ার পরই তারা সংশ্লিষ্ট থানায় এজাহার করেছেন। এখনও কোনো চোরকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। চুরি ঠেকাতে গ্রাহক ও সাধারণ মানুষের সচেতনতা জরুরি।
সুশান্ত আরও বলেন, প্রতিটি চুরির ঘটনা একই রকম। চোরেরা ট্রান্সফরমারের ভেতরে থাকা মূল্যবান তামার তার নিয়ে ধাতব গোল বাক্স ও তেল ফেলে দিয়ে চলে যায়। পরে তামার তারগুলো ভাঙাড়ির দোকানে বিক্রি করে খুবই কম টাকায়। ভাঙাড়ির দোকানগুলোতে নজরদারি বাড়াতে পারলে চোর ধরা সম্ভব বলে মনে করেন পল্লী বিদ্যুতের এ কর্মকর্তা।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার তৌহিদুল আরিফ বলেন, ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। চোরদের ধরতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। খুব শিগগিরই চোর সিন্ডিকেটকে শনাক্ত ও আটক করা
সম্ভব হবে।
বাগেরহাটের ৯টি উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের ৫ লক্ষাধিক গ্রাহক রয়েছেন। সদর উপজেলায় রয়েছেন ৬৯ হাজার গ্রাহক।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সদর উপজ ল র উপজ ল উপজ ল র এল ক র এল ক য় গ র হক
এছাড়াও পড়ুন:
কাশিয়ানীতে ৫ মাসে ২৩ ট্রান্সফরমার চুরি, সেচ ব্যাহত
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে একের পর এক পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হচ্ছে। বিশেষ করে সেচ কাজে ব্যবহৃত ট্রান্সফরমার চুরি হচ্ছে। রাতের আঁধারে কে বা করা এ সব ট্রান্সফরমার চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। গত পাঁচ মাসে প্রায় ১৬ লাখ টাকা মূল্যের ২৩টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ায় বিদ্যতিহীন থাকার শঙ্কায় রয়েছেন পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরা। সেইসঙ্গে সেচ কাজে ব্যবহৃত ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা।
পল্লী বিদ্যুতের কাশিয়ানী জোনাল অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ২৩টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ১৫ কিলো ভোল্ট অ্যাম্পিয়ার (কেভিএ) ১০টি, ১০ কেভিএ ৯টি ও ৫ কেভিএ ৪টি। যার আনুমানিক মূল্য ১৬ লাখ টাকা। সর্বশেষ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি উপজেলার পোনা গ্রামের সাহেব বাড়ি এলাকার বৈদ্যুতিক খুঁটির ট্রান্সফরমার চুরি করে নিয়ে গেছে চোরেরা। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষ থানায় এজাহার দিলেও চোর ধরা পড়েনি।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিয়মানুযায়ী, প্রথম দফা ট্রান্সফরমার চুরি হলে নতুন ট্রান্সফরমার লাগাতে গ্রাহককে অর্ধেক মূল্য সমিতিকে ভর্তুকি দিতে হয়। আর দ্বিতীয় দফা চুরি হলে ট্রান্সফরমারের মূল্যের সম্পূর্ণ টাকা সমিতিকে দিয়ে গ্রাহককে ট্রান্সফরমার কিনতে হবে। যা দরিদ্র গ্রাহকদের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য।
আরো পড়ুন:
বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিট চালু
মুন্সীগঞ্জে ফসলি জমির ওপর দিয়ে বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ বন্ধের দাবি
উপজেলার সাজাইল ইউনিয়নের ডাঙ্গা মাজড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. নাজমুল হুদা জানান, গত বছর তার ১০ কেভিএ ট্রান্সফরমার চুরি হয়। সমিতিকে ৩৬ হাজার টাকা ভর্তুকি দিয়ে ট্রান্সফরমার লাগান। পুনরায় এবার সেই ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। সম্পূর্ণ টাকা দিয়ে ট্রান্সফরমার কিনে লাগিয়েছেন। এভাবে বারবার চুরি হচ্ছে। আর সাধারণ মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সমিতি থেকে থানায় মামলা করলেও জড়িতদের পুলিশ ধরতে পারেনি।
গোপালগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কাশিয়ানী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. গোলাম ফারুক ট্রান্সফরমার চুরির বিষয় নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, প্রতিটি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় থানায় এজাহার দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও কোনো চোরকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। ট্রান্সফরমার চুরি রোধে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
কাশিয়ানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিউদ্দিন খান জানান, ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। চোরদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা/বাদল/বকুল