দিনাজপুরের বিরল সীমান্তে মাঠে কাজ করার সময় বাংলাদেশি এক তরুণকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) মারধর করে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। এর প্রতিবাদে ভারতীয় এক কৃষককে ধরে এনে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদস্যদের হাতে তুলে দেন স্থানীয় কয়েকজন বাংলাদেশি।

শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার সীমান্তে ধর্মপুর ইউনিয়নের এনায়েতপুর বিওপি ক্যাম্পের দ্বীপনগর গ্রামের ৩২৩ মেইন পিলারসংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

পরে এ নিয়ে উভয় দেশের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর (বিজিবি ও বিএসএফ) সদস্যদের পতাকা বৈঠকে বসে। বৈঠকের পর বিকেলে বাংলাদেশি তরুণ ও ভারতীয় কৃষককে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

বিএসএফ সদস্য কর্তৃক ধরে নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশি তরুণের নাম মো.

আলামিন। সে ধর্মপুর ইউনিয়নের কৈকুড়ি গ্রামের বর্গাচাষি রিয়াজউদ্দিনের ছেলে। অপর দিকে বিজিবির হেফাজতে থাকা ভারতীয় নাগরিক হলেন পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুসুমন্ডি থানার পূর্ব মোল্লাপাড়া গ্রামের নারায়ণ চন্দ্র রায় (৪৫)।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু সুফিয়ান জানান, আজ সকালে আলামিন ৩২৩ নম্বর পিলার থেকে ৩৫০ গজ বাংলাদেশ সীমান্তের অভ্যন্তরে নিজ জমিতে কৃষিকাজ করছিল। এসময় ছয়জন বিএসএফ সদস্য তাকে মারধর করার পর টেনেহিঁচড়ে তুলে নিয়ে যায়। বিষয়টি জানতে পেরে দ্বীপনগর গ্রামের কয়েকজন মিলে ভারতীয় এক কৃষককে তার জমি থেকে তুলে এনে এনায়েতপুর বিওপি ক্যাম্প সদস্যদের হাতে তুলে দেন।

দিনাজপুর ৪২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আহসানুল ইসলাম বলেন, “পাঁচজন বাংলাদেশি কোনো প্রকার বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। বিএসএফ ধারণা করেছিল, সীমান্তের আশপাশে থাকা কেউ তাদের সহযোগিতা করেছেন। সেসময় আলামিন নামের এক বাংলাদেশি তরুণ সীমান্তের খুব কাছাকাছি ছিল। তারা আলামিনকে সহযোগী ভেবে ধরে নিয়ে যায়। বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি ছিল। আমাদের পতাকা বৈঠকে বিষয়টির মীমাংসা হয়েছে। বিকেলে আলামিনকে তারা ফেরত দিয়েছেন। ভারতীয় নাগরিককেও বিএসএফের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে।”

ঢাকা/মোসলেম/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এসএফ আল ম ন সদস য ক ষকক

এছাড়াও পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে বাংলাদেশি যুবককে পিটিয়ে হত্যা, অভিযোগ বিএসএফের বিরুদ্ধে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর সীমান্তে ভারতের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বিএসএফের সদস্যদের পিটুনিতে এক যুবক নিহত হয়েছেন বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে আহত অবস্থায় ওই যুবককে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত মুরাদুল ইসলাম ওরফে মুন্না (৪০) বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের সেজামুড়া সীমান্তের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে। সেজামুড়া গ্রামটি ভারতের সীমান্তঘেঁষা। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, ভারতের বিএসএফ সদস্যরা মুরাদুলকে ডেকে ভারতের সীমান্তের ভেতরে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে মারধরসহ নির্যাতন করা হয়। পরে তাঁকে ফেরত পাঠানো হয়।

তবে নিহত মুরাদুলের পরিবারের অভিযোগ সঠিক নয় বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এ সম্পর্কে গতকাল রাতে ২৫ বিজিবির সরাইল ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারাহ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিহতের পরিবার ও স্বজনেরা নানা কথা বলতেই পারেন। আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে, সেটি হলো ওই ব্যক্তি (মুরাদুল) দুই দেশের সীমান্তের কাঁটাতার অতিক্রম করে অবৈধভাবে ভারতের সীমানায় প্রবেশ করেন এবং সুস্থভাবেই বাংলাদেশে ফেরত আসেন। সীমান্তের বিজিবির টহল দলের সদস্যরা তাঁকে দেখতে পান। জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেন। তবে ভারতের অভ্যন্তরে গিয়েছেন বলে স্বীকার করেননি। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। তিনি আহত হয়েছিলেন কি না বা কোনো চোরাকারবারির সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে কি না জানা যায়নি।’

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীমান্তের কাঁটাতার থেকে ১৫০ থেকে ৩০০ গজের ভেতরে বিজয়নগর উপজেলার সেজামুড়ায় মুরাদুলের পরিবারের ফসলি জমি রয়েছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মুরাদুল সেখানেই বসবাস করেন। গতকাল দিনভর মুরাদুল নিজের লিচুগাছে পানি দেন। দুপুরে ঘরে ভাত খেয়ে জমি দেখতে যান মুরাদুল। বিকেল পাঁচটা পরও তিনি বাড়িতে ফেরেননি। স্ত্রী রত্না আক্তার বাড়ি থেকে বের হয়ে সীমান্তে খোঁজাখুঁজি করেও স্বামীর সন্ধান পাননি। একজন ফোন দিয়ে তাঁকে জানিয়েছিলেন, মুরাদুলকে বিএসএফের সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছেন। সন্ধ্যার দিকে ফসলি জমিতে মুরাদুল পড়ে ছিলেন। তাঁকে উদ্ধার করে চম্পকনগর এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনেরা। অবস্থার অবনতি হলে রাতে তাঁকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখন জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

রত্না বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসপাতালে নেওয়ার সময় আমার স্বামী জানিয়েছেন, তাঁকে বিএসএফের সদস্যরা ডেকে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে ক্যাম্পে নিয়ে মারধর করা হয়। বিএসএফ তাঁকে ফেরত দেওয়ার পর বিজিবির সদস্যরা তাঁকে ধানের জমিতে ফেলে রেখে চলে যান। আমার স্বামী কোনো দিন কোনো খারাপ কাজ করেনি। আমি হত্যার বিচার চাই।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক সফিউল্লাহ আরাফাত বলেন, গতকাল রাতে অজ্ঞান অবস্থায় তাঁকে (মুরাদুল) হাসপাতালে আনা হয়েছিল। ১০টা ২১ মিনিট সময়ে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হবে। ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর তাঁর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা যাবে।

২৫ বিজিবির সরাইল ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারাহ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, ‘নিহত মুরাদুল ভারতের অভ্যন্তরে কীভাবে গিয়েছেন, কেন গিয়েছেন বা কী উদ্দেশ্যে গিয়েছেন, তাঁকে কে মারধর করেছে কিংবা চোরাকারবারির সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এসব আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত করে বিস্তারিত জানানো হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সীমান্তে বিএসএফের মারধরে বাংলাদেশি যুবক নিহতের অভিযোগ
  • বিএসএফের বিরুদ্ধে বাংলাদেশিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে বাংলাদেশি যুবককে পিটিয়ে হত্যা, অভিযোগ বিএসএফের বিরুদ্ধে