জুলাই অভ্যুত্থানের পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পো‌রেশনের (ডিএসসিসি) ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর যুবলীগ নেতা শেখ মোহাম্মদ আলমগীরের চাঁদাবাজি থেকে মুক্ত হয়েছিলেন মৌলভীবাজারের কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীরা। কয়েক মাস না যেতেই এবার চকবাজার যুবদলের আহ্বায়ক শাহ আলম লাকির চাঁদাবাজির খপ্পরে পড়ার শঙ্কা করছেন তারা।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, কাঁচাবাজারটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমিতে হলেও বিগত সরকারের আমলে শেখ আলমগীর দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ডিএসসিসির কাছ থেকে ইজারার নামে পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলতেন। প্রতিদিন অন্তত ৫ লাখ টাকা তুলতেন আলমগীরের লোকজন। ঠিক একইভাবে চকবাজার যুবদল নেতাও ইজারার নামে চাঁদা নেওয়ার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।

এর প্রতিবাদে গত বুধবার থেকে মার্কেটের দোকানিরা মার্কেট বন্ধ রেখেছেন। করেছেন মানববন্ধন। বিভিন্ন স্থানে বিষয়টি অবহিত করেছেন। কিন্তু কোনও সুরাহা পাননি। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এর প্রতিকার চেয়েছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চকবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন। মৌলভীবাজার মৎস্য দোকানদার সমবায় সমিতির ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন চকবাজার কাঁচাবাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হাসান, দোকানি ইমরান হোসেন রনি, অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম।

বক্তারা বলেন, প্রায় দুই বিঘা আয়তনের কাঁচাবাজারটি শত বছরেরও বেশি আগে ব্যক্তিগত জমিতে গড়ে ওঠে। জমির মালিকের কাছ থেকে দোকান নিয়ে ভাড়া দিয়ে তারা ব্যবসা করে আসছেন। মার্কেটের জমিটিও সিএস, এসএ, আরএস ও সিটি জরিপে ব্যক্তি মালিকানাধীন হিসেবে উল্লেখ আছে। কিন্তু গত তিন বছর আগে শেখ আলমগীর সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে ইজারা এনেছেন মর্মে চাঁদাবাজি শুরু করেন। তখন যারাই প্রতিবাদ করেছে তাদের দোকানে তালা মেরে দেওয়া হয়েছে। এরপর প্রতিদিন দোকান ভেদে ৩০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলা হয়েছে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে।

তারা জানান, ৫ আগস্টের পর আলমগীর পালিয়ে গেলে চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে যায়। কিছু দিন আগে চকবাজার থানা যুবদলের আহ্বায়ক শাহ আলম লাকি লোকজন নিয়ে মার্কেটে গিয়ে জানিয়ে দেন তিনি সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে এবার কাঁচাবাজারের ইজারা পেয়েছেন। আলমগীরের মতো এখন থেকে তাকে সালামি দিতে হবে জানিয়ে যান। কিন্তু ব্যবসায়ীরা দিতে রাজি না হয়ে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কায়জার মোহাম্মদ ফারাবির কাছে গিয়ে ইজারা দেওয়ার যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চান। কিন্তু ফারাবি তাদের কোনও কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। কোনও সদুত্তরও দিতে পারেননি। শুধু জানিয়ে দেন বিগত মেয়রের আমলের মতোই সব কিছু চলবে। পরে ব্যবসায়ীরা জেলা প্রশাসক, ডিএমপি পুলিশ কমিশনারসহ বিভিন্ন স্থানে চিঠি দিয়েও কোনও সুরাহা–সদুত্তর পাননি।

সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা বলেন, এমনিতেই জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়েছে। তারওপর এভাবে চাঁদা দিয়ে তাদের ব্যবসা করা আর সম্ভব না। এ জন্য গত কদিন যাবৎ তারা মার্কেট বন্ধ রেখেছেন। বিষয়টির সমাধান চেয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

এ বিষয়ে চকাবাজার যুবদল নেতা শাহ আলম লাকি সমকালকে জানান, সিটি কর্পোরেশন ওই কাঁচাবাজারের ইজারা দেওয়ার জন্য দরপত্র আহ্বান করেছিল। নিয়ম মেনে তিনি দরপত্রে অংশ নিয়ে ইজারা পেয়েছেন। গত ৮ জানুয়ারি থেকেই তার সালামি আদায়ের কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত সালামি আদায় শুরু করেননি। সিটি কর্পো‌রেশন কেন ইজারা দিল সেটা সিটি কর্পো‌রেশন বলতে পারবে।

এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কায়জার মোহাম্মদ ফারাবির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড এসস স য বদল ব যবস য় র ড এসস স র য বদল আলমগ র

এছাড়াও পড়ুন:

মনিরামপুরের মৌমাছি বাড়ি!

বাড়িটি ঘিরে রেখেছে মৌমাছির ছোট বড় অনেকগুলো মৌচাক। বারান্দাসহ বিভিন্ন স্থানে ঝুলছে ২৩টি মৌমাছির বড়বড় চাক। এসব মৌমাছি বছরের আটমাস ধরে থাকে বাড়িটিতে। বাড়িটি এখন এলাকায় মৌমাছি বাড়ি হিসেবে পরিচিত।

কেউ মৌমাছি দেখতে, আবার কেউবা ছবি তুলতে যান বাড়িটিতে। পরিবারের সদস্যদের মতোই মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করছে মৌমাছি। প্রাকৃতিকভাবে বনের মৌমাছি আর পরিবারটির সদস্যদের মাঝে এই ভালোবাসার বন্ধন গড়ে উঠেছে ছয় বছর আগে।

যশোরের মনিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের শেখ পাড়া খানপুর গ্রামের ইসাহক আলীর ছেলে আলমগীর হোসেন নিজ বাড়িতে সন্তানের মতো লালন-পালন করছেন মৌমাছির ২৩টি দলকে। পরিবারটির সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে কয়েক লাখ মৌমাছি। 

আলমগীর হোসেন বলেন, “ছয় বছর আগে হঠাৎ বাড়ির বিভিন্ন স্থানে সাত-আটটি চাক তৈরি করে মৌমাছির দল। এরপর থেকে প্রতি বছরই নির্দিষ্ট সময়ে মৌমাছির দলগুলো বাড়িতে চলে আসে এবং চাক তৈরি করে।” 

তিনি আরও বলেন, “দোতলা বাড়ির বারান্দা, দেওয়ালসহ বিভিন্ন স্থানে চাক তৈরি করে মৌমাছিরা। বছরান্তে চাকের সংখ্যা বাড়ছে। এবার ২৩টি চাক বেঁধেছে মৌমাছির দল। আমাদের পরিবারেরই অংশ তারা। মৌমাছির সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা মিশে গেছে। আমার বাবা বেশিরভাগ সময় তাদের দেখাশোনা করে। তাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে কিনা দেখে, আমিও দেখি। মৌমাছিরাও কাউকে হুল ফোটায় না।”

তিনি বলেন, “প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ে চলে আসে মৌমাছি গুলো। এভাবে চলছে গত ছয় বছর ধরে। আট মাসে দুইবার মৌমাছির চাক থেকে মধু সংগ্রহ করি। বছরে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মধু বিক্রি হয়।”

আলমগীরের ফুফু আছিয়া খাতুন বলেন, “প্রথম দিকে ভয় পেলেও এখন আর ভয় লাগে না। কেননা মৌমাছি আমাদের কাউকে আক্রমণ করে না।” 

মনিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বলেন, “এটি মেইলিসিরা প্রজাতির মৌমাছি। এই মৌমাছি প্রকৃতি ও পরিবেশ বোঝে। যেখানে নিরাপত্তা, বাঁচার পরিবেশ ও খাবারের ভালো সুব্যবস্থা থাকে সেখানেই মূলত তারা বাসাবাঁধে। এগুলো সুন্দরবনের মৌমাছি। এক বছর যেখানে বাসা বাঁধে নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর চলে যাওয়ার সময় সেখানে কিছু আলামত রেখে যায়। পরের বছর সেখানেই ফিরে আসে।”

ঢাকা/প্রিয়ব্রত/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মনিরামপুরের মৌমাছি বাড়ি!