যুবলীগের পর যুবদল নেতার চাঁদাবাজির খপ্পরে দোকানিরা
Published: 24th, January 2025 GMT
জুলাই অভ্যুত্থানের পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর যুবলীগ নেতা শেখ মোহাম্মদ আলমগীরের চাঁদাবাজি থেকে মুক্ত হয়েছিলেন মৌলভীবাজারের কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীরা। কয়েক মাস না যেতেই এবার চকবাজার যুবদলের আহ্বায়ক শাহ আলম লাকির চাঁদাবাজির খপ্পরে পড়ার শঙ্কা করছেন তারা।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, কাঁচাবাজারটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমিতে হলেও বিগত সরকারের আমলে শেখ আলমগীর দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ডিএসসিসির কাছ থেকে ইজারার নামে পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলতেন। প্রতিদিন অন্তত ৫ লাখ টাকা তুলতেন আলমগীরের লোকজন। ঠিক একইভাবে চকবাজার যুবদল নেতাও ইজারার নামে চাঁদা নেওয়ার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।
এর প্রতিবাদে গত বুধবার থেকে মার্কেটের দোকানিরা মার্কেট বন্ধ রেখেছেন। করেছেন মানববন্ধন। বিভিন্ন স্থানে বিষয়টি অবহিত করেছেন। কিন্তু কোনও সুরাহা পাননি। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এর প্রতিকার চেয়েছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চকবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন। মৌলভীবাজার মৎস্য দোকানদার সমবায় সমিতির ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন চকবাজার কাঁচাবাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হাসান, দোকানি ইমরান হোসেন রনি, অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম।
বক্তারা বলেন, প্রায় দুই বিঘা আয়তনের কাঁচাবাজারটি শত বছরেরও বেশি আগে ব্যক্তিগত জমিতে গড়ে ওঠে। জমির মালিকের কাছ থেকে দোকান নিয়ে ভাড়া দিয়ে তারা ব্যবসা করে আসছেন। মার্কেটের জমিটিও সিএস, এসএ, আরএস ও সিটি জরিপে ব্যক্তি মালিকানাধীন হিসেবে উল্লেখ আছে। কিন্তু গত তিন বছর আগে শেখ আলমগীর সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে ইজারা এনেছেন মর্মে চাঁদাবাজি শুরু করেন। তখন যারাই প্রতিবাদ করেছে তাদের দোকানে তালা মেরে দেওয়া হয়েছে। এরপর প্রতিদিন দোকান ভেদে ৩০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলা হয়েছে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে।
তারা জানান, ৫ আগস্টের পর আলমগীর পালিয়ে গেলে চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে যায়। কিছু দিন আগে চকবাজার থানা যুবদলের আহ্বায়ক শাহ আলম লাকি লোকজন নিয়ে মার্কেটে গিয়ে জানিয়ে দেন তিনি সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে এবার কাঁচাবাজারের ইজারা পেয়েছেন। আলমগীরের মতো এখন থেকে তাকে সালামি দিতে হবে জানিয়ে যান। কিন্তু ব্যবসায়ীরা দিতে রাজি না হয়ে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কায়জার মোহাম্মদ ফারাবির কাছে গিয়ে ইজারা দেওয়ার যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চান। কিন্তু ফারাবি তাদের কোনও কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। কোনও সদুত্তরও দিতে পারেননি। শুধু জানিয়ে দেন বিগত মেয়রের আমলের মতোই সব কিছু চলবে। পরে ব্যবসায়ীরা জেলা প্রশাসক, ডিএমপি পুলিশ কমিশনারসহ বিভিন্ন স্থানে চিঠি দিয়েও কোনও সুরাহা–সদুত্তর পাননি।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা বলেন, এমনিতেই জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়েছে। তারওপর এভাবে চাঁদা দিয়ে তাদের ব্যবসা করা আর সম্ভব না। এ জন্য গত কদিন যাবৎ তারা মার্কেট বন্ধ রেখেছেন। বিষয়টির সমাধান চেয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
এ বিষয়ে চকাবাজার যুবদল নেতা শাহ আলম লাকি সমকালকে জানান, সিটি কর্পোরেশন ওই কাঁচাবাজারের ইজারা দেওয়ার জন্য দরপত্র আহ্বান করেছিল। নিয়ম মেনে তিনি দরপত্রে অংশ নিয়ে ইজারা পেয়েছেন। গত ৮ জানুয়ারি থেকেই তার সালামি আদায়ের কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত সালামি আদায় শুরু করেননি। সিটি কর্পোরেশন কেন ইজারা দিল সেটা সিটি কর্পোরেশন বলতে পারবে।
এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কায়জার মোহাম্মদ ফারাবির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড এসস স য বদল ব যবস য় র ড এসস স র য বদল আলমগ র
এছাড়াও পড়ুন:
বন্দরে গভীর রাতে বুড়া-বুড়ির বাড়িতে হামলা
বন্দরের জাঙ্গাল এলাকায় ইট ভাটার মাটি কাটতে না দেয়ায় নিরিহ নিরপরাধ বৃদ্ধ দম্পত্তির (বুড়া-বুড়ি) নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী ও বাড়ি ঘরে ব্যাপক হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পুলিশের উপস্থিতিতে একটি ইট ভাটা মালিকের সন্ত্রাসী বাহিনী এই হামলা ও ভাংচুরের নেতৃত্ব দিয়েছে বলে ভূক্তভোগীরা জানিয়েছেন। এরপর উল্টো তাদের ধরে নিয়ে তাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটিয়েছেন। পরে জামিনে বের হয়ে ভুক্তভোগী এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে পুলিশ মামলা না নেয়ায় আতংকে রয়েছেন তারা।
জানা গেছে, বন্দরের জাঙ্গালের বাকদোবাড়িয়া এলাকায় অবস্থিত ৩টি ব্রিক ফিল্ডের মালিক মোঃ আলমগীর হোসেন। সে সাধারন মানুষের জমি জোর পূর্বক দখল করে মাটি কেটে ইট ভাটা পরিচালনা করে আসছে বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের আদালতে বেশ কয়েকটি দেওয়ানী মামলা চলমান রয়েছে।
ভূক্ত ভোগী বন্দরের জাঙ্গাল এলাকায় বৃদ্ধা মহিলা মিনারা বেগম মিনু জানান, আমার জমি জমার বিভিন্ন ভূয়া কাগজপত্র সৃজন করে ইট ভাটার মালিক আলমগীর জোর পূর্বক দখল করে মাটি কাটার চেষ্টা চালায়।
আমি ও আমার পরিবার এতে জোরালো আপত্তি করি এবং আমার স্বামী তার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ আদালতে একাধিক দেওয়ানী মামলা দায়ের করেন। এতে ইট ভাটার মালিক আমাদের উপর ক্ষীপ্ত হয়ে আমাদের প্রানে মেরে ফেলার জন্য আলমগীর নানা ষড়যন্ত্রের ফাদ পাততে থাকে।
আর এ কাজে থানা পুলিশকে সে ম্যানেজ করে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাদের জীবন শেষ করে দেয়ার অপচেষ্টা চালায়। গত ২০ এপ্রিল রবিবার রাত সাড়ে ১২টা থেকে গভীর রাত ৩টা পর্যন্ত বন্দর থানার দারোগা জলিল, শরীফ ও বন্দর কামতাল ফাড়ির দারোগা মনির সহ প্রায় ২৫ জন পুলিশ আমার বাড়ীর চারদিকে ঘেরাও করে রাখে।
এসময় ব্রিক ফিল্ডের মালিক আলমগীরের প্রায় ২০/২৫ জনের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী দা, সাবল, বটি, খুন্তি, কুড়াল সহ দেশীয় অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে বাড়ীর গেট ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে ব্যাপক হামলা ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। পরবর্তীতে বন্দর থানা পুলিশ বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করে আমাকে ও আমার বৃদ্ধ স্বামীকে জোর পূর্বক থানার পুলিশ ভ্যানে তুলতে চায়।
বন্দর থানা পুলিশ কোন মামলা ছাড়াই বিনা ওয়ারেন্টে টানা হেচড়া করে আমাদেরকে থানায় নিয়া যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় আমি মামলা ছাড়া বিনা ওয়ারেন্ট আমাদের কেন থানায় নিয়া যাবেন জানেত চাইলে আমাকে ও আমার স্বামী আঃ বাতেন (৬০) কে বেধম প্রহার করেন। আমি একজন বৃদ্ধা মহিলা হওয়া স্বত্তেও পুলিশ আমাকে উপর্যপুরি ৪টি বেত্রাঘাত করে।
তখন আমি পুলিশের হাতে পায়ে ধরে কোন মতে পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পেলেও গভীর রাত ৩টায় আমার স্বামী আঃ বাতেন (৬০)কে জোরপূর্বক বন্দর থানায় নিয়া যায়।
থানায় নিয়ে ব্রিক ফিল্ডের মালিক আলমগীরের ম্যানেজার মজিবরকে বাদী বানাইয়া আমাদের বিরুদ্ধে বন্দর থানায় ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩ এর ১০/১৩/১৬ ধারায় একটি মিথ্যা মামলা নং-২৪৪২৫ দায়ের করেন।
বন্দর থানার পুলিশ আমার স্বামীকে ২০ এপ্রিল ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন সহ নারায়ণগঞ্জ আদালতে প্রেরন করলে বিজ্ঞ আদালত শুনানী অন্তে রিমান্ডের আবেদন না-মঞ্জুর পূর্বক জামিন প্রদান করেন এবং পরবর্তীতে গত ২২ এপ্রিল আমি বিজ্ঞ আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পন করলে মহামান্য আদালত আমাকেও জামিন প্রদান করেন।
বর্তমানে আমরা আদালত থেকে জামিন নেয়র পর এ ঘটনায় বন্দর থানায় মামলা করতে গেলে ব্রিক ফিল্ডের মালিক আলমগীরের দাপটের কারনে পুলিশ কোন মামলা নিচ্ছে না।
এখন আমি আদালতে প্রতিকার চেয়ে ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছি। আমি এই ঘটনার সুুষ্ট তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয়ে কথা বলতে বন্দর থানার ওসির মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।