বাংলাদেশের নাগরিকেরা যেন কোনো বাধা বা হুমকি ছাড়াই অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন, সেই প্রক্রিয়া তৈরি করার ওপর জোর দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াবের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ডব্লিউইএফের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন ক্লাউস শোয়াব। খবর বাসসের।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে বৈষম্য নিরসনের দাবি নিয়ে রাজপথে নেমেছিলেন। তিনি উল্লেখ করেন, আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা ঢাকার দেয়ালগুলোতে গ্রাফিতি এঁকে তাদের আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন প্রকাশ করেছেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, গত ১৬ বছরে বাংলাদেশে যারা নতুন ভোটার হয়েছেন, তাদের ভোট দেওয়ার সুযোগই হয়নি, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার এজেন্ডা তুলে ধরে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ৮৪ বছর বয়সী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশের মানুষ কোন ধরনের নির্বাচন চায়, সেটি না জেনে সরকার নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না। 

তিনি বলেন, সরকার নির্বাচন আয়োজনের অপেক্ষায় রয়েছে, তবে এখন দেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রক্রিয়াটি কেমন হবে। তারা কি ছোট পরিসরের সংস্কার কর্মসূচিতে যাবে, নাকি দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার চাইবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যদি মানুষ দ্রুত সংস্কার চায়, তাহলে আমরা এ বছরের শেষ নাগাদ নির্বাচন করার লক্ষ্য নিয়েছি। আর যদি বলে, না, আমাদের দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার দরকার, তাহলে আমাদের আরও ছয় মাস সময় লাগবে।

বর্তমান প্রজন্মকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম আখ্যায়িত করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই প্রজন্মের অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। 

তিনি বলেন, প্রযুক্তি বর্তমান প্রজন্মকে বদলে দেওয়ার কারণে তারা এখন শুধু বাংলাদেশি আর তরুণ নয়; বরং সারা বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের অংশ হয়ে গেছে। 

এই প্রজন্ম পুরোনো বাংলাদেশে ফিরে যেতে চায় না, তাই একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তরুণদের কাজের প্রতিটি অংশে ঐকমত্য গড়ে তোলার জন্য একটি ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হচ্ছে। সব রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের সংগঠনের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুত করা হবে। তিনি আরও জানান, তাঁর সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে। ইতিমধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থায় গতি ফিরে এসেছে।

অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে আধা ঘণ্টার আলাপচারিতায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন ক্লাউস শোয়াব।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রজন ম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আইন পর্যালোচনায় আজ বসছে ইসি, ঐকমত্য কমিশনের দিকে নজর

ভোটার তালিকা আইন, সীমানা নির্ধারণ আইন, পর্যবেক্ষণ নীতিমালাসহ একগুচ্ছ আলোচ্যসূচি নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার এএমএম নাসির উদ্দিন কমিশনের তৃতীয় কমিশন সভা বসছে। 

আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশ নিয়ে ‘দ্বান্দ্বিক’ প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ইতোমধ্যে। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ থাকলেও ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট করতে নিজেদের প্রয়োজনে ‘জরুরি’ সংস্কার নিয়ে নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটি সরকার ও সংস্কার কমিশনের কাছে প্রস্তাব রাখবে। এক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টা নেতৃত্বাধীন ঐকমত্য কমিশনের দিকে তাকিয়ে সংশ্লিষ্টরা। 

তৃতীয় সভায় যেসব বিষয় আলোচনায়
আজ বৃহস্পতিবার সীমানা নির্ধারণ আইনসহ বেশ কয়েকটি আইন পর্যালোচনা করবে ইসি। আইন পর্যালোচনাসহ ১১টি বিষয় রয়েছে আলোচ্যসূচিতে। সিইসির সভাপতিত্বে এ সভায় চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব থাকবেন।

ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ জানান, কমিশনের তৃতীয় সভায় ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ পর্যালোচনা; জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন, ২০২১ পর্যালোচনা; নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা-২০২৩ এবং গাইডলাইনস ফর ইন্টারন্যাশনাল ইলেকশন অবজারভার অ্যান্ড ফরেন মিডিয়া পর্যালোচনা; নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রশিক্ষণ ভাতার হার নির্ধারণ এবং প্রশিক্ষণার্থী ও প্রশিক্ষক নির্বাচন বিষয়ে পর্যালোচনাসহ বেশ কিছু বিষয় রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘সভার কার্যপত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। এজেন্ডার বাইরে কোনো বিবিধ কি আলোচনা হতে পারে তা বলা যাচ্ছে না। তবে সংস্কার বিষয়ক তথ্য এজেন্ডায় নেই।

আলোচ্যসূচিতে আরও রয়েছে- বিভিন্ন দেশে দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রমের শর্ত/পদ্ধতি/সীমাবদ্ধতা পর্যালোচনা, নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবাদিক/গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য নীতিমালা, ডিআরএস সম্পর্কিত বিষয়াদি, ব্ল্যাঙ্ক কার্ড সরবরাহ সংক্রান্ত বিষয়াদি, প্রস্তাবিত জাতীয় নির্বাচনি পদক নীতিমালা, ২০২৫ এর উপর আলোচনা, আইডিইএ দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পের মেয়াদ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, নির্বাচন কমিশনে বিদ্যমান প্যানেল আইনজীবী তালিকা হালনাগাদকরণ এবং বিদ্যমান সম্মানী/ফি কাঠামো পর্যালোচন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আইন পর্যালোচনায় আজ বসছে ইসি, ঐকমত্য কমিশনের দিকে নজর