সম্প্রতি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। শিশুসাহিত্যে পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন  ফারুক নওয়াজ। দেশ, মাটি, মানুষ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু তার সাহিত্যে উঠে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ শিশু-কিশোরদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিনি কাজ করে চলেছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখেছেন গল্প উপন্যাস ছড়া। এদিকে ফারুক নওয়াজের নাম প্রকাশের পর শুরু হয়েছে তুমুল সমালোচনা। সব মিলিয়ে ৩৬৫টির অধিক বইয়ের লেখক ফারুক নওয়াজ এই প্রাপ্তি এবং সমালোচনাকে কীভাবে দেখছেন? সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্বরলিপি।

রাইজিংবিডি: আপনার শিশুসাহিত্যে, ছড়ায় দেশের কথা, মুক্তিযুদ্ধের কথা, বঙ্গবন্ধুর প্রসঙ্গ ঘুরেফিরে এসেছে। শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানের পর আপনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেলেন। এই প্রাপ্তিকে কীভাবে দেখছেন?


ফারুক নাওয়াজ: শুধু মুক্তিযুদ্ধের ওপর আমার  ২৮টা কিশোর উপন্যাস আছে। মুক্তিযুদ্ধ, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে লিখেছি। একটু ফিউশনের মতো করে লিখেছি। প্রচুর কবিতাও লিখেছি। আমি মনে করি, পুরস্কারপ্রাপ্তির কোনো সময়-অসময় নাই। বাংলা একাডেমি যখন মনে করেছে তখন দিচ্ছে। তবে এ কথা ঠিক, এই সময়টাতে আমি পুরস্কার আশা করি নাই। আমার কাছে অপ্রত্যাশিত মনে হয়েছে। তারা আমাকে পুরস্কার কেন দিলো জানি না!

রাইজিংবিডি: অনেকেই বলেন, অনেক আগেই এই পুরস্কার আপনার পাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। বাংলা একাডেমি হয়তো এই সমালোচনা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। অনেক পরে, এ সময়ে এসে বাংলা একাডেমি পুরস্কার গ্রহণে মানসিকভাবে আপনি কোন দ্বিধার মধ্যে আছেন কিনা?


ফারুক নওয়াজ: বাংলা একাডেমি বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে সরকার তো কিছুই না। যারা এখানে ‘জাজ’ হিসেবে থাকেন তারা তো কয়েকজন মানুষ। সেই বিচারে পুরস্কারটা আমি গ্রহণ করতে পারি বা প্রত্যাখ্যান করতে পারি। এই অধিকার সবার আছে। যে সরকারের কাছ থেকে আমার পুরস্কার পাওয়ার কথা, সে আমাকে দেয়নি। যার কাছ থেকে পাওয়ার কথা না, সে দিয়েছে। আমি মনে করি, আমার সাহিত্য মূল্যায়ন করেই পুরস্কারটা আমাকে দেওয়া হচ্ছে। লক্ষ্য করলে দেখবেন, এবার যারা পুরস্কার পাচ্ছেন তারা প্রত্যেকে যোগ্য। সেলিনা হোসেনরা রাম, সাম, যদু, মধু যাকে ইচ্ছে পুরস্কার দিয়েছেন। আমি যোগ্য মানুষদের সঙ্গে পুরস্কার পাচ্ছি, সেক্ষেত্রে আমি কি করবো? হ্যাঁ আমি জানি, অনেক বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকের চোখে এটা বিধবে, ইতোমধ্যে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন- ফারুক নাওয়াজকে কেন পুরস্কার দেওয়া হলো? এটা হবেই।

রাইজিংবিডি: হ্যাঁ এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা হচ্ছে। তবে আপনি কি মনে করেন, এই পুরস্কার অনেক আগেই আপনার পাওয়া উচিত ছিল? 

ফারুক নওয়াজ:  এই পুরস্কার কে পাবে তা নির্ধারণ করে কয়েকজন মানুষ। সেজন্য আমি মনে করি না আরও আগেই পাওয়া উচিত ছিল। কত মানুষই তো পায় না। 

রাইজিংবিডি: কখন জানতে পারলেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাচ্ছেন?

ফারুক নওয়াজ: বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমির একজন পরিচালক আমাকে ফোনে বিষয়টি জানিয়েছেন।

রাইজিংবিডি: সাড়ে তিনশোর অধিক বই কীভাবে লিখলেন? 

ফারুক নওয়াজ: আমার পরিবারে সাহিত্যচর্চা ছিল। শৈশব থেকেই লিখি। কবি কাদের নেওয়াজ আমার বড় চাচা। মা লিখতেন। আমার ভাইয়েরা লেখেন। আমি যখন স্কুলে পড়তাম তখন আমাদের বাসায় একটা দেয়াল পত্রিকা ছিল। বড় ভাই আমাকে লেখার উৎসাহ দিতেন। প্রতি মাসে দেয়াল পত্রিকায় বাসার সবাই লিখতাম। প্রাথমিক পর্যায়ে দাদা ভাইয়ের (রোকনুজ্জামান খান) পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছি। কবি আহসান হাবীবের সহযোগিতা পেয়েছি। তাদের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় আমি শৈশব- কৈশোর থেকেই লেখক হয়ে উঠেছি। ছাত্রজীবন থেকে লেখা নেশায় পরিণত হয়েছিল। এই নেশা আর ছাড়া যায়নি। যারা আমার  সমসাময়িক লেখক তারা মোটামুটি লেখা নিয়েই ছিলেন। 

রাইজিংবিডি: বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্তির জন্য আপনাকে অভিনন্দন।
ফারুক নওয়াজ: ধন্যবাদ।

//তারা

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ র ক নওয় জ এই প র এক ড ম

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, বন্ধ মানবিক সহায়তাও

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ঘরবাড়ি ও তাঁবুর মতো আশ্রয়কেন্দ্রও ইসরায়েলি বর্বরতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার দেশটি। পাশাপাশি আট সপ্তাহ ধরে উপত্যকায় খাদ্য, ওষুধ ও ত্রাণসামগ্রী প্রবেশ বন্ধ করে রেখেছে। এ পরিস্থিতিকে জাতিসংঘ সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট হিসেবে বর্ণনা করেছে। 

আলজাজিরার সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, বুধবার রাতভর এবং বৃহস্পতিবার ভোরে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মধ্য গাজার নুসেইরাতের কাছে একটি তাঁবুতে তিন শিশু এবং গাজা শহরের একটি বাড়িতে এক নারী ও চার শিশু নিহত হয়েছেন। সাম্প্রতিক এক হামলায় স্থানীয় সাংবাদিক সাঈদ আবু হাসানাইনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে কমপক্ষে ২৩২ সাংবাদিক নিহত হলেন।
 
গাজার দেইর এল-বালাহ থেকে আলজাজিরার তারেক আবু আযুম বলেন, অবরুদ্ধ উপত্যকা স্পষ্টতই ইসরায়েলি সেনা বৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকটের সাক্ষী হচ্ছে। এখানকার অক্ষত ও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোও গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকারীরাও অসহায় হয়ে পড়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়াদের কাছে পৌঁছানোর জন্য তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
 
অধিকৃত পশ্চিম তীর পরিচালনাকারী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘ইসরায়েলের আক্রমণের কোনো বিরতি নেই, কোনো করুণা নেই, কোনো মানবতা নেই।’
 
প্রায় দুই মাস ধরে ইসরায়েল ত্রাণ সহায়তা অবরোধ করে রাখায় গাজার মানবিক সংকট আরও তীব্র হয়েছে। এটিকে জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ‘ফিলিস্তিনি জীবনের ইচ্ছাকৃত ধ্বংসাবশেষ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, গাজা উপত্যকা এখন সম্ভবত ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামলা শুরুর পর ১৮ মাসের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।
 
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অপুষ্টির সম্মুখীন নারী ও শিশুদের বিপজ্জনক ও বিপর্যয়কর ক্ষতির কথা তুলে ধরেছে। তারা অনেকেই পর্যাপ্ত খাবার, পানীয় জল এবং শিশুর খাবারের অভাবের মুখোমুখি হয়েছে। ইসরায়েলের গাজায় সাহায্য পাঠাতে অব্যাহত অস্বীকৃতি ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক আদালতের একটি আদেশকে লঙ্ঘন করে। সেই আদেশে দুর্ভিক্ষ ও অনাহার রোধে জরুরি ভিত্তিতে উপত্যকায় সাহায্য পৌঁছানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
 
গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে রাখা নিয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে) আগামী সপ্তাহে হেগে অনুষ্ঠিত গণশুনানির একটি সূচি প্রকাশ করেছে। সেখানে গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে জাতিসংঘ, এনজিওর কার্যকলাপকে অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে ইসরায়েলের আইনি বাধ্যবাধকতা নিয়ে আলোচনা করা হবে। আগামী সোমবার শুরু হতে যাওয়া এ শুনানির আগে প্রায় ৪৫টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা লিখিত বিবৃতি জমা দিয়েছে।
 
হাসপাতাল সূত্র আলজাজিরাকে জানিয়েছে, বুধবার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ১৮ মাসে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫১ হাজার ৩০৫ জন নিহত এবং ১ লাখ ১৭ হাজার ৯৬ জন আহত হয়েছেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ