সিসি ক্যামেরায় অর্থ আত্মসাৎ, নিম্নমানের সড়ক বাতি
Published: 24th, January 2025 GMT
কক্সবাজার শহরে নিম্নমানের সড়ক বাতি ও সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজার পৌরসভায় অভিযান চালিয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের এসব তথ্য পায় দুদকের তদন্ত দল।
অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া দুদক কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক অনিক বড়ুয়া বলেন, স্থানীয় ও পর্যটকদের নিরাপত্তায় কক্সবাজার পৌরসভা ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন সময়ে সড়ক বাতি ও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছে। তবে নিম্নমানের বাতি ও ক্যামেরা লাগিয়ে বড় ধরনের দুর্নীতি করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের বাজেট বরাদ্দ, টেন্ডার প্রক্রিয়াও অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে। এ জন্য আরও অনুসন্ধানের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষকে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র আগামী রোববারের জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের কার কতটুকু দায়িত্ব তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী পরাক্রম চাকমা বলেন, দুদক তাদের কাছে জানতে চেয়েছে শহরের প্রধান সড়কগুলোতে সন্ধ্যার পর বাতি জ্বলে না কেন? এ ছাড়া কিছু কাগজপত্র চেয়েছে। তিনি আরও বলেন, শহরের উপসড়কগুলোতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ও এলজিইডির মাধ্যমে পৌরসভা যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে সেটি আমি যোগ দেওয়ার আগে। তাই বিস্তারিত বলতে পারব না।
দুদক কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, শুরুতেই ব্যাপক নিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পর কত টাকার দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে তা বলা যাবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পদ হারিয়ে দানের অ্যাম্বুলেন্স ফেরত নিলেন মেয়র
পদ হারানোর পর দানের অ্যাম্বুলেন্স ফেরত নিলেন জামালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ছানুয়ার হোসেন ছানু। শুধু ফেরত নিয়েই ক্ষান্ত হননি। অ্যাম্বুলেন্সটির নাম পরিবর্তন করে ‘হ্যালো মেয়র’ মুছে ফেলে এখন সেটি সিদ্দিক অ্যাম্বুলেন্স লিখে ভাড়া খাটানো হচ্ছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সমালোচনার ঝড় বইছে।
প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে মেয়র পদে থাকাকালীন আনুষ্ঠানিকভাবে পৌরসভায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি অ্যাম্বুলেন্স দান করেন জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছানোয়ার হোসেন ছানু। পৌর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে করোনাকালীন থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি পৌরবাসীকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছিল। পৌরসভার একজন গাড়িচালক অ্যাম্বুলেন্সটি চালাতেন। তার বেতন-ভাতা ও অ্যাম্বুলেন্স রক্ষণাবেক্ষণ খরচও বহন করত পৌর কর্তৃপক্ষ।
জামালপুর পৌরসভার তথ্যমতে, ২০২১ সালের ১৯ জুলাই অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। ‘হ্যালো মেয়র’ নামে অ্যাম্বুলেন্সটি ২৪ ঘণ্টা সেবা দিত। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আত্মগোপনে চলে যান ছানুয়ার হোসেন ছানু। সরকারি সিন্ধান্তে তাঁর পৌর মেয়রের পদও বাতিল হয়।
অ্যাম্বুলেন্সটি সম্প্রতি এক সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে পৌরসভার উদ্যোগে মেরামতের জন্য শহরের বাইপাস এলাকায় একটি ওয়ার্কশপে দেওয়া হয়। কিছুদিন আগে ছানোয়ার হোসেন ছানুর ব্যক্তিগত কর্মচারী মো. আশরাফ ওয়ার্কশপ থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি নিয়ে যান। অ্যাম্বুলেন্সের গায়ের লেখা হ্যালো মেয়র ও জামালপুর পৌরসভা মুছে সিদ্দিক অ্যাম্বুলেন্স লেখা হয়। এর পর থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি ভাড়ায় পরিচালিত হচ্ছে।
জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, জামালপুরের মানবিক মেয়রখ্যাত ছানুয়ার হোসেন অ্যাম্বুলেন্সটি চালু করেছিলেন, মানুষ সেটাই জানত। কিন্তু সেটা ফেরত নিয়ে মানবিক মেয়র অমানবিক কাজ করেছেন।
পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজুর রহমানের ভাষ্য, করোনা মহামারির সময় তৎকালীন মেয়র ছানোয়ার হোসেন পৌরবাসীকে বিশেষ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করেন। সাবেক মেয়র ছানোয়ার হোসেন অ্যাম্বুলেন্সটি পৌরসভার অর্থে ক্রয় করেননি। অ্যাম্বুলেন্সটি পৌরসভাকে দান কিংবা লিখিতভাবে দেননি। তাছাড়া অ্যাম্বুলেন্সটির যাবতীয় কাগজপত্র যেহেতু ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমানের নামে, সেহেতু পৌরসভার পক্ষ থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি ফেরত আনার কোনো উদ্যোগ নেওয়াও আইনসিদ্ধ নয়।
জামালপুর পৌরসভার প্রশাসক মৌসুমী খানম বলেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর অ্যাম্বুলেন্সটি পাননি। তৎকালীন মেয়র অ্যাম্বুলেন্সটি পৌরসভায় লিখিতভাবে দানও করেননি। অ্যাম্বুলেন্সের কোনো কাগজপত্র পৌরসভার নামে নেই। তাই অ্যাম্বুলেন্সটি পৌরসভার পক্ষে দাবি করা কিংবা উদ্ধারকল্পে ব্যবস্থা নেওয়াটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত বা আইনসিদ্ধ হবে, সেটা আপনারাই বলুন।