ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান দিবস আজ। বাঙালির দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। পাকিস্তানি সামরিক শাসনের উৎখাতে ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি সংগ্রামী জনতা শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়ন ও সান্ধ্য আইন উপেক্ষা করে মিছিল বের করে। এদেশের ছাত্র-জনতা অকাতরে বুকের রক্ত দিয়ে গণমানুষের স্বাধীকার আদায়ের সংগ্রামে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেন।
দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো.
বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পথ ধরে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার। জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানসহ দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান যুগিয়েছে অমিত প্রেরণা। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ ধরে অর্জিত এই স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’
বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়।’
তিনি বলেন, ‘বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাঙালির মুক্তিসনদ ৬ দফা, পরবর্তীকালে ১১ দফা ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি মহান স্বাধীনতা।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘১৯৬৯ সালের পুরো জানুয়ারি ছিল আন্দোলনে উত্তাল। পাকিস্তানি সামরিক শাসন উৎখাতের সংকল্প নিয়ে ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি সংগ্রামী জনতা শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়ন ও সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে মিছিল বের করেন। মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণে ঢাকার নবকুমার ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণির ছাত্র মতিউর রহমান মল্লিক এবং মকবুল, আনোয়ার, রুস্তম, মিলন, আলমগীরসহ অনেকে শহীদ হন। অপশাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে।’
এই মহান দিনটির স্মরণে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে অর্জিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারসহ সকলের দায়িত্ব হলো সেই মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা, যাতে আমরা একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি।’
প্রধান উপদেষ্টা এই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মতিউরসহ দেশের মুক্তি সংগ্রামের সকল শহীদের রূহের মাগফেরাত কামনা করেন।
ঢাকা/টিপু
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনসহ চার দফা দাবি গণঅধিকার পরিষদের
সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে ছাত্র উপদেষ্টাসহ সরকারে প্রতিনিধিত্বকারী জাতীয় নাগরিক পার্টি সংশ্লিষ্ট ছাত্র প্রতিনিধিদের পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে দেশের চলমান জাতীয় সংকট ও সামগ্রিক পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে গণঅভ্যুত্থানের অংশীজনের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনসহ চার দফা দাবি জানিয়েছে নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদ।
শনিবার (১ মার্চ) রাজধানীর বিজয়নগরে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে যেসব দাবি তুলে ধরা হয় তা হলো-জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে গণঅভ্যুত্থানের অংশীজনের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুর্নগঠন। আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন এবং শহীদ পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন। গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ এবং জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কার সম্পন্ন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করা।
আরো পড়ুন:
পাগলেও ‘মুজিব কোট’ নিতে চায় না: নুর
৫ মাসের কার্যক্রম নিয়ে অসন্তুষ্টি আছে: নুর
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।
তিনি বলেন, “ছাত্র-জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেড় দশকের ফ্যাসিবাদের পতনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও আগামীর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে গণঅভ্যুত্থানের অংশীজনদের নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকার গঠনের জনআকাঙ্ক্ষা তৈরি হলেও দেশি-বিদেশি অদৃশ্য ষড়যন্ত্রের কারণে সেটি হয়নি। একটি নির্দিষ্ট বলয়কেন্দ্রীক সরকার গঠিত হয়েছে। যার ফলে গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে যে জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়েছিলো আজ তাতে ফাটল ধরেছে, বিভাজনের সৃষ্টি হয়েছে। যা এই মুহূর্তে জাতির জন্য কোনভাবেই কাম্য ছিলো না। এমতাবস্থায় সরকারের থাকা ৩ ছাত্র উপদেষ্টাদের মধ্যে ১ জন পদত্যাগ করে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছে।”
তিনি বলেন, “তারুণ্যের রাজনৈতিক দল হিসেবে গণঅধিকার পরিষদ রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণকে সব সময় উৎসাহিত করে, নতুন দলকে স্বাগত জানায়। তবে গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে গুটিকয়েক ছাত্রনেতা সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় অযাচিত হস্তক্ষেপে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ জনগণের মধ্যে একটা অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। যেহেতু আন্দোলনের পরিচিত মুখ থেকে সরকারে প্রতিনিধিত্বকারী ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করেছে সেহেতু সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা ও জনগণসহ রাজনৈতিক নেতাদের আস্থা ধরে রাখতে সরকারে থাকা অন্য দুই ছাত্র উপদেষ্টাসহ সরকারে প্রতিনিধিত্বকারী সব ছাত্রদের পদত্যাগের আহ্বান জানাচ্ছি।”
“আমরা বার বার বলে আসছি ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা গণঅভ্যুত্থানের সরকারের ব্যর্থতা জাতিকে নতুন বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে গত ৬ মাসে গণহত্যার বিচার ও গণহত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের দুর্বলতায় গণহত্যাকারীদের পুনর্বাসন হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ জনগণের নিরাপত্তা ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়েও সংকট তৈরি হচ্ছে”।
গণঅভ্যুত্থানকেন্দ্রিক নতুন রাজনীতি ও নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে যে জনআকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে তার বাস্তবায়নে রাষ্ট্র ও রাজনীতির সংস্কার জরুরি মন্তব্য করে নুর বলেন, “আন্দোলনকেন্দ্রিক সেন্টিমিটারের জায়গায় থেকেও ছাত্রনেতারা যদিও পুরানো পথেই হাঁটে সেটি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য গত ৬ মাস সেটিই অবলোকন করা গেছে। আন্দোলনকেন্দ্রীক পরিচিত ছাত্রনেতাদের তদবির, নিয়োগ, টেন্ডার বাণিজ্যসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অসংখ্য ঘটনা ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।এমনকি গতকালকের নতুন আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানেও জেলা প্রশাসকের নোটিশে ঢাকার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের মতো বিষয় দেখা গেছে, গাড়ি সরবরাহে মালিক সমিতি ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য।”
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন বা জুলাই গণঅভ্যুত্থান কোনো একক সংগঠন বা নেতাদের দ্বারা সংগঠিত হয়নি দাবি করে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুর বলেন, “রাজনৈতিক নেতাদের সময়োপযোগী পদক্ষেপ, ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত ও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়। কাজেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে মুক্তিযুদ্ধের আওয়ামী চেতনার বয়ানের মতো কোনো অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক ন্যারেটিভ তৈরি না করতে সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ফারুক হাসান, শাকিল উজ্জামান, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, ফাতিমা তাসনীম, জসিম উদ্দিন আকাশ, মাহফুজুর রহমান খান, খালিদ হাসান, রবিউল হাসান, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা সম্পদ প্রমুখ।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ