সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকের যাতায়াত ও রাত্রিযাপন আগামী ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত উন্মুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম মিলনায়তনে ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপ পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা-উন্নয়ন জোট’-এর ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, নভেম্বরে সেন্টমার্টিন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ডিসেম্বর যেতে পারলেও ট্রাভেল পাস নিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়ছেন অনেকেই। আগামী মার্চে রমজান শুরু হবে। ফেব্রুয়ারি ভ্রমণের শেষ সুযোগ। এই সময় পর্যটক যাওয়া বন্ধ থাকলে বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন দ্বীপবাসী।

সংগঠনের চেয়ারম্যান দাবি করে এ সময় পর্যটন শিল্পের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংগঠন টোয়াবের সাবেক সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশি বলেন, সেন্টমার্টিনের সঙ্গে বাংলাদেশের নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত। সেখানে সব সময় জাহাজ চলাচল করলে দেশের নিরাপত্তা বাড়বে। পর্যটক না গেলে ভূখণ্ড নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে। 

দ্বীপ রক্ষায় সোলার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ভূগর্ভস্থের পানি যাতে ব্যবহার করতে না হয়, সেজন্য সাগরের পানি পরিশোধনের মাধ্যমে পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। 

জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর ১৯৯৯ সালে সেন্টমার্টিনকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে। ২০২০ সালে সেন্টমার্টিন নিয়ে আন্তর্জাতিক ওশান সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়, পদক্ষেপ না নিলে ২০৪৫ সালের মধ্যে দ্বীপটি পুরোপুরি প্রবালশূন্য হতে পারে। মুমূর্ষু এই দ্বীপ বাঁচাতে গত আওয়ামী লীগ সরকার তিন বছরের জন্য পর্যটক বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলেও কার্যকর করতে পারেনি। অন্তর্বর্তী সরকার এসে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াত সীমিত করে। দ্বীপ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নে ফেব্রুয়ারিতে পর্যটক যাওয়া বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তও নিয়েছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন টম র ট ন ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

দিনে খাবারের দোকান বন্ধ রাখতে হুঁশিয়ারি, দুর্ভোগ

রমজানের ‘পবিত্রতা’ রক্ষায় দেশের বিভিন্ন স্থানে দিনে খাবারের দোকান খোলা রাখায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে কঠোর সমালোচনা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে প্রশাসনকে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। নিরাপত্তার কথা ভেবে এসব জায়গায় দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন অসুস্থ ব্যক্তি, শিশু ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা। ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন বিপাকে।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌর বাজারে রমজানে দিনে হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা রাখলেই ৩ হাজার টাকা জরিমানার ঘোষণা দিয়ে নোটিশ দিয়েছে স্থানীয় বণিক সমিতি। বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত  বাজারের হোটেল-রেস্তোরাঁ ও চায়ের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে ছেংগারচর পৌর সমবায় সমিতি। আদেশ অমান্যকারীদের জরিমানা করা হবে।

নোটিশে সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান লস্করের স্বাক্ষর রয়েছে। একই রকম আদেশ জারি করেছে উপজেলার সুজাতপুর বাজারের বণিক সমিতি। তবে এই বাজারে খাবারের দোকান খোলা রাখলে জরিমানা হবে ১ হাজার টাকা। 

ছেংগারচর  পৌর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, হোটেল, রেস্তোরাঁ ও চায়ের দোকানগুলো বন্ধ। চর অয়েস্টার থেকে ছেংগারচর বাজারে চিকিৎসা নিতে আসা রহমত মিয়া (৬৫) খাবার খেতে গিয়ে দেখেন, হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ। তিনি বলেন, রোগীর জন্য এটা খুব কষ্টকর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেস্তোরাঁ ও চা ব্যবসায়ীরা জানান, ব্যবসা বন্ধ থাকায় রোজগার বন্ধ। এবার ঈদ করা তাদের জন্য কষ্টকর হবে। ছেংগারচর পৌর বণিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুল মান্নান দোকান বন্ধের আদেশ এবং জরিমানার নির্দেশনা দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, ‘বিষয়টি জানি না। বণিক  সমিতির সঙ্গে কথা বলে জানাতে পারব।’

এদিকে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এতে দেখা যায়, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় হাজী শরীয়তুল্লাহ সমাজকল্যাণ পরিষদের প্রতিনিধি ও হাজী শরীয়তুল্লাহর বংশধর পীরজাদা হানজালা রমজান মাসে দিনে খাবারের দোকান খোলা রাখার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। রমজান শুরুর আগে তিনি এই ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।  ভিডিওতে হানজালাকে বলতে শোনা যায়, ‘রমজানের হেফাজত করা প্রতিটি মুসলমানের ইমানি দায়িত্ব। এ জন্য রমজান মাসকে কেন্দ্র করে শিবচরের ১৯টি ইউনিয়নে হাজী শরীয়তুল্লাহ সমাজকল্যাণের লোকজন কাজ করবে। এটা বাংলাদেশ, এটা ভারত নয়, মনে রাখতে হবে। রমজান মাসে সকালে চায়ের দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁ খোলা থাকবে– এটা হতে পারে না। তার সঙ্গে এটা হাজী শরীয়তুল্লাহর মাটি। এখানে এ কাজ হতে পারে না, হতে দেওয়া হবে না।’ ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি আপনাদের দোকান দিনে বন্ধ করতে ব্যর্থ হন, তাহলে আমাদের নেতৃবৃন্দ দোকান বন্ধ করতে বাধ্য হবে।’ তিনি নারীদের ‘বেপর্দায়’ বাজারে ঘোরাফেরা করতে নিষেধ করেন।

এ বিষয়ে হানজালা সমকালকে বলেন, ‘রমজান সিয়াম সাধনার মাস। এ মাসে যদি কেউ দিনে চা-সিগারেট বা অন্য কিছু খায়, বিষয়টা অনেক দুঃখজনক।’ এই ঘোষণায় অন্য ধর্মের মানুষরা বিপাকে পড়বেন কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অন্য ধর্মের যারা আছেন, তারা তাদের মতো করে চলবেন, তাদের মতো করে খাবেন। আমার বার্তা ছিল মুসলমানদের প্রতি। তারা যেন এ মাসে বেহায়াপনা না করেন।’ বেহায়াপনা বলতে কী বুঝিয়েছেন তা জানতে চাইলে বলেন, অন্যান্য মাসে চায়ের দোকানে আড্ডা কিংবা বেহায়াপনা চলে। এটা বন্ধে কথা বলেছি।

এ বিষয়ে শিবচরের ইউএনও পারভীন খানম বলেন, কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীর মাধ্যমে এ বিষয়ে জানতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবসায়ী অভিযোগ করেননি। কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন মতলব ও শিবচর প্রতিনিধি)

সম্পর্কিত নিবন্ধ