যুক্তরাষ্ট্রে সাঁড়াশি অভিযানে আটক ৯১১
Published: 24th, January 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) দেশটির সাতটি অঙ্গরাজ্য থেকে তিন দিনে প্রায় ৫৩৮ অনথিভুক্ত অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া ৩৭৩ জনকে আটক করা হয়। তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে নিউইয়র্ক ও নিউ জার্সির শহরগুলোতে নানা অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
নিউইয়র্কে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে এল সালভাদরের একজন এমএস-১৩ গ্যাং সদস্য। তিনি জ্যামাইকার একজন নাগরিক। অপ্রাপ্তবয়স্ক একজনকে যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত তিনি। এছাড়া হন্ডুরাসের একজন নাগরিক রয়েছেন যিনি মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর দায়ে অভিযুক্ত। এ রকম অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বোস্টন, ডেনভার, ফিলাডেলফিয়া, আটলান্টা, সিয়াটল, মিয়ামি ও ওয়াশিংটন, ডিসিতে।
নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে অভিবাসীদের আটকে রাখা বা বিতাড়িত করতে বাধ্য করতে পারে না। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট সংবিধানকে একতরফাভাবে পরিবর্তন করতে পারেন না। আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অফিসের সঙ্গে কাজ করতে রাজি, তবে আমরা দুর্বল বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা করব, যার মধ্যে অভিবাসী সম্প্রদায়ও অন্তর্ভুক্ত।’
এদিকে নিউইয়র্ক সিটির স্কুলগুলো বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, কোনো পরিস্থিতিতেই আইসিই এজেন্টদের স্কুলে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া যাবে না। সোমবার শপথ নেওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ১০০টি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন তার মধ্যে কয়েকটি সরাসরি অভিবাসনবিরোধী ছিল। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণের পথ বন্ধ করে দেন। পাশাপাশি এমন একটি আদেশে সই করেন, যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শুরু হয় বিতর্ক। তা হলো– নথিপত্রহীন বাবা-মা যদি যুক্তরাষ্ট্রে সন্তান জন্ম দেন, তবে ওই সন্তান দেশটির নাগরিক হতে পারবে না। প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেওয়ার পরপরই ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ নির্বাহী আদেশ সাময়িক স্থগিত করেছেন আদালত। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের সিয়াটলে ফেডারেল বিচারক জন কুফনার এ আদেশ দেন। আদেশটি স্থগিত করতে ওয়াশিংটনের অ্যাটর্নি জেনারেল নিক ব্রাউন এ আবেদন করেছিলেন।
আদালত ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশকে ‘পুরোপুরি অসাংবিধানিক’ বলে বর্ণনা করেন। বিচারক জন কুফনার বলেন, ‘আমি চার দশক ধরে (আদালতের) এ বেঞ্চে আছি। আমি আর কোনো মামলা এত স্পষ্ট দেখিনি।’ ওয়াশিংটন ছাড়াও অ্যারিজোনা, ইলিনয় ও ওরেগন অঙ্গরাজ্যে এদিন এসব মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার বাতিল প্রসঙ্গে আইনজীবীদের দাবি, প্রেসিডেন্ট বা ফেডারেল এজেন্সি সংবিধান অনুসারে এ ধরনের শর্ত আরোপ করার অধিকার রাখে না।
এ বিষয়ে কুইন্সের একটি শহরের মেয়র অ্যাডামস বলেছেন, শিশুরা স্কুলে যাবে। যাদের স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজন, তারা হাসপাতালে যাবে। যারা অপরাধের শিকার, তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে কথা বলবে। আমরা সবার জন্য দাঁড়াবো, চিহ্নিত ও অনথিভুক্ত উভয়ের জন্য। নিউইয়র্কে বর্তমানে প্রায় ৪ লাখ অনথিভুক্ত অভিবাসী রয়েছে।
নিউ জার্সির নিউয়ার্ক শহরের মেয়র রাস বারাকা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার তার শহরে আইসিই এজেন্টরা একটি অভিযান চালিয়েছে। পরে ইউএস ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট এজেন্টরা নিউয়ার্কের একটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে অনথিভুক্ত বাসিন্দাদের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদেরও আটক করেছে, কিন্তু কোনো ওয়ারেন্ট দেখায়নি। আমাদের শহর মানুষের ওপর এভাবে অবৈধ সন্ত্রাস চালানো সহ্য করবে না।
প্রসঙ্গত, নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি ও কানেকটিকাটসহ ২২টি রাজ্য এবং ডিসি ও সান ফ্রান্সিসকো ট্রাম্পের আদেশের বিরুদ্ধে ফেডারেল কোর্টে মামলা করেছে, যেখানে অনথিভুক্ত অভিবাসী শিশুদের নাগরিকত্ব বাতিল করার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিএমডিএর আরো ২ প্রকৌশলী সাময়িক বরখাস্ত, ব্যাখ্যা তলব
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) নির্বাহী পরিচালক (ইডি) শফিকুল ইসলামকে জোরপূর্বক দপ্তর ছাড়তে বাধ্য করার ঘটনায় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর পর আরো দুই প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া, বিএমডিএ চেয়ারম্যান ড. এম আছাদুজ্জামানের কাছে ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান স্বাক্ষরিত পৃথক অফিস আদেশে তাদের বরখাস্ত করা হয়।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া প্রকৌশলীরা হলেন- নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম রেজা ও সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ।
গত ২৩ মার্চের ওই ঘটনার দুইদিন পর অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় মামলা করেন। মামলায় এই দুই প্রকৌশলীসহ আরো কয়েকজনকে আসামি করা হয়।
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খান, উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মেহেদী, সহকারী মেকানিক মো. আপেল ও মেহেদী হাসান, গুদামরক্ষক মো. নুরুজ্জামান, মজিবুর রহমান, আব্দুল কাইয়ুম খান, ক্যাশিয়ার শফিকুল ইসলাম, গাড়িচালক মো. শাহাবুল, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শমসের আলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী তারিকুল ইসলাম। মামলায় ৫০-৬০ জনকে নাম না জানা আসামি করা হয়েছে।
রাজপাড়া থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম জানান, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তারা আত্মগোপনে আছেন।
এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমাম। কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে আছেন উপসচিব মো. মনিরুজ্জামান। বিএমডিএ পরিচালনা বোর্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম হীরক ও মো. জাফরুল্লাহ, জেলা প্রশাসনের একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং জেলা পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার জন্য গত বৃহস্পতিবার বিএমডিএ চেয়ারম্যান ড. এম আছাদুজ্জামানের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কথা বলতে তাকে ফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম রেজা সিরাজগঞ্জ রিজিয়নের দায়িত্বে ছিলেন, কিন্তু তিনি অনুমতি ছাড়া রাজশাহীতে চলে আসেন এবং অতিরিক্ত সচিবকে হেনস্তার ঘটনায় তার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ইডি শফিকুল ইসলামকে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক হিসেবে বদলি করা হয়। তবে, রিলিজ অর্ডার না পাওয়ায় তিনি দপ্তর ছাড়তে পারেননি। ২৩ মার্চ দুপুরে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খান একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে তার দপ্তরে প্রবেশ করে তাকে জোরপূর্বক বের করে দেন। তখন একটি চিঠি প্রস্তুত করা হয়, যাতে লেখা ছিল- শফিকুল ইসলাম দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন এবং জাহাঙ্গীর আলম খান দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
শফিকুল ইসলাম মামলায় উল্লেখ করেছেন, তাকে এই চিঠিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়।
এই ঘটনার পরপরই অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম কৃষি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন এবং ২৫ মার্চ রাজপাড়া থানায় মামলা দায়ের করেন। তার অভিযোগ, মন্ত্রণালয়ের রিলিজ স্লিপ না পাওয়া পর্যন্ত তিনি বিএমডিএতে দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার নির্দেশনা পেয়েছিলেন। প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খানের নেতৃত্বে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী তাকে দপ্তর ছাড়তে বাধ্য করেন।
বিএমডিএ পরিচালনা বোর্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম হীরক বলেন, “বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালকের পদটি প্রশাসন ক্যাডারের একজন অতিরিক্ত সচিবের জন্য সংরক্ষিত। শফিকুল ইসলাম বদলি হওয়ার পরও যদি তিনি দায়িত্বে থাকেন, সেটি মন্ত্রণালয়ের বিষয়। তবে, একজন কর্মকর্তাকে জোরপূর্বক দপ্তর ছাড়তে বাধ্য করা এবং চেয়ার দখল করা গুরুতর অপরাধ।”
তিনি আরো বলেন, “মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। তদন্তের মাধ্যমে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আমরা আশা করছি।”
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ