বলিউডের ‘খিলাড়ি’খ্যাত তারকা অক্ষয় কুমার। বাবার পথ অনুসরণ করার আগ্রহ নেই তার দুই পুত্র-কন্যার। কিন্তু মামার মতো অভিনয়ে পা রাখতে যাচ্ছেন অক্ষয়ের ভাগ্নি সিমর ভাটিয়া।
পরিচালক শ্রীরাম রাঘবন নির্মাণ করছেন ‘ইক্কিস’ শিরোনামে সিনেমা। হিন্দি ভাষার এ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হতে যাচ্ছে সিমর ভাটিয়ার। এতে তার বিপরীতে দেখা যাবে অমিতাভ বচ্চনের নাতি অগস্ত্য নন্দাকে। এতে জয়দীপ, ধর্মেন্দ্রর মতো তারকারাও অভিনয় করবেন।
আরো পড়ুন:
আমি মায়ের লেভেলে পৌঁছানোর চেষ্টাও করব না: খুশি কাপুর
গায়িকা মোনালি ঠাকুর সত্যি হাসপাতালে?
সিমর ভাটিয়ার বলিউড যাত্রা নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে। খবরের পাতায় ভাগ্নির ছবি দেখে আপ্লুত অক্ষয় কুমার। তা নিয়ে আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। স্মৃতিচারণ করে অক্ষয় কুমার লেখেন, “খবরের কাগজের প্রচ্ছদে প্রথম যে দিন নিজের ছবি দেখেছিলাম, সেই স্মৃতি মনে পড়ছে। সেদিন মনে হয়েছিল— ‘জীবনে সবকিছু পেয়ে গিয়েছি।’ কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সন্তানের ছবি দেখার আনন্দের কাছে তা কিছুই না।”
অক্ষয়ের বোন অল্কা ভাটিয়া পেশায় একজন প্রযোজক। ১৯৯৭ সালে বৈভব কাপুরকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের পর কন্যাসন্তান সিমরের জন্ম হয়। কিন্তু অল্কা-বৈভবের সংসার বেশি দিন টিকেনি। আলাদা হয়ে যান এই যুগল।
মুম্বাইয়ের স্কুলে পড়াশোনা শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন সিমর ভাটিয়া। সেই স্বপ্নপূরণের উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি। ফ্লোরিডা, লস অ্যাঞ্জেলেসের কলেজে পড়াশোনা করেন। পড়াশোনার পাঠ সম্পন্ন করে মুম্বাইয়ে ফিরেন সিমর।
ছোটবেলায়ই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন সিমর ভাটিয়া। মা প্রযোজক, মামা অভিনেতা। পরে মামার পদাঙ্ক অনুসরণ করে অভিনয়ে ক্যারিয়ার গড়ার সিদ্ধান্ত নেন। মিডিয়ার আলো থেকে এতদিন দূরেই ছিলেন সিমর। সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকলেও নেটিজেনদের নজরে পড়েননি।
দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরেবেড়াতে ভালোবাসেন সিমর। সেসব মুহূর্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ারও করেন। তবে অক্ষয়ের ভাগ্নি বলিপাড়ায় পা রাখতে যাচ্ছেন, এই আলোচনা শুরু হতেই সিমরকে নিয়ে কৌতূহল বাড়ে নেটিজেনদের। দ্রুত বাড়তে থাকে তার অনুসারীর সংখ্যা। এরই মধ্যে তার ইনস্টাগ্রামে অনুসারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘সন্তানের উসিলায় আজীবন পহেলা বৈশাখ ভিন্নভাবে পালন করতে পারব’
বাড়ির পাশে মুরগির খামার। খামারে স্বামী মমিনুল ইসলামকে সহযোগিতা করেন স্ত্রী রত্না বেগম। দীর্ঘ কয়েক মাস তিনি একাই চালিয়ে যাচ্ছেন খামারের সব কাজ। কারণ, রত্না বেগম এখন হাসপাতালের বেডে। রোববার মধ্য রাতে হঠাৎ প্রসব বেদনার যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রত্না। স্বজনদের পরামর্শে বাধ্য হয়ে রাতেই তাঁকে রংপুর নগরীর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পহেলা বৈশাখ সকাল ৬টায় তাদের ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় পুত্রসন্তান। শিশুটির জন্মগ্রহণের খবরে চারদিক সরব হয়ে ওঠে। কিন্তু মমিনুলের মুখে হাসি নেই। কারণ তিনি ইতোমধ্যে জেনে গেছেন সন্তান সুস্থ থাকলেও প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাঁর স্ত্রী।
হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক ডা. ফারহানা ইসলাম জানান, অস্ত্রোপচার করতে হয়নি। স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে রত্নার। তিনি এখনও সম্পূর্ণ সুস্থ হননি। তাঁর শরীরে রক্ত দেওয়া হচ্ছে। সন্তান সুস্থ-স্বাভাবিক রয়েছে, মায়ের দুধ পান করছে।’
‘পর পর দুটি কন্যাসন্তানের পর ছেলে হইল, আল্লাহ আমাদের আশা পূরণ করেছে। পহেলা বৈশাখ সকালে সন্তানের জন্ম হওয়ায় আমরা খুবই খুশি। সন্তানের উসিলায় আজীবন আমরা পহেলা বৈশাখ ভিন্নভাবে পালন করতে পারব।’ সন্তান কোলে তুলে আনন্দের এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের বাবা মমিনুল ইসলাম।
রংপুর সদর উপজেলার খলেয়া গঞ্জিপুর গ্রামের বাসিন্দা মমিনুল ২০১২ সালে পার্শ্ববর্তী গ্রামের রত্না বেগমকে পরিবারের সিদ্ধান্তে বিয়ে করেন। খেটে খাওয়া দম্পতির পর পর তাদের দুটি কন্যাসন্তান হয়। তৃতীয় সন্তানের আশায় প্রহর গুনছিলেন পরিবারের সবাই। যদিও অন্তঃসত্ত্বাকালীন পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ নেননি তারা। জানতেন না সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য দিনক্ষণ। ভরসা করেন সৃষ্টিকর্তার ওপর। তবে তারা মনে করেন সন্তান নেওয়ার আগে থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। এতে অনেক জটিলতা কমে আসে।
বাড়ির খামারের আয় দিয়েই মূলত পাঁচ সদস্যের সংসার চলে। ধর্মভীরু মা-ই তাদের দুই কন্যাসন্তানের নাম রেখেছেন। বড় মেয়ে জান্নাতুল মুনতাহার বয়স ১১ বছর। স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। পাঁচ বছর বয়সের জান্নাতুল মাওয়া স্থানীয় মাদ্রাসায় আসা-যাওয়া করে মাত্র। তৃতীয় সন্তান এলো এবার। হিসাব অনুযায়ী এ মাসের যে কোনো সময় সন্তান প্রসব হতে পারে ধারণা ছিল এ দম্পতির। বাংলা নববর্ষের দিনই হবে এমন ধারণা ছিল না।
এটি শুভ লক্ষ্মণ উল্লেখ করে মমিনুল ইসলাম জানান, ভালো দিনেই ছেলের জন্ম হয়েছে। বাংলা বর্ষবরণে যেদিন বাঙালিরা তাদের প্রাণের উৎসবে মেতে ওঠে; এমন উৎসবের দিনে সন্তান জন্ম হওয়ায় তার জন্মদিন যেমন সহজে মনে থাকবে, তেমনি প্রতি বছর উৎসবের মধ্যেই জন্মদিন পালন হবে।
সন্তানকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান মমিনুল। তিনি বলেন, ছেলেকে কুরআনের হাফেজ বানিয়ে একজন মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সন্তানকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে জীবনে কত কষ্টই না করেন বাবা-মা। কিন্তু এক সময় বাবা-মায়ের খোঁজ নেওয়ার মতো সময় থাকে না ওই সন্তানের। সবকিছু থাকার পরও শেষ সময়ে বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে হয় অনেক বাবা-মাকে। তাই সন্তানকে মানবিক শিক্ষা দিয়ে মানুষ হিসেবে তৈরি করতে চাই।
তিনি আরও জানান, রোববার রাতে রত্না বেগমের প্রসব বেদনা উঠলে ভাড়া করা গাড়িতে ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানকার ডাক্তার-নার্সরা আন্তরিকতার সঙ্গে তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। প্রসবের ব্যবস্থা করেন। অবশেষে আসে সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। পহেলা বৈশাখ সকালে সন্তান জন্ম নিলেও কেউ আমাদের কোনো শুভেচ্ছা জানায়নি। দৈনিক সমকাল নবজাতকসহ আমাদের সন্তানকে ফুল দিয়ে বরণ করেছে, তা আজীবন মনে থাকবে।’
পহেলা বৈশাখ সকালে ওই হাসপাতালের ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, রত্না বেগম বেডে শুইয়ে থাকলেও মমিনুল ইসলাম ওয়ার্ডের মধ্যে সন্তানকে কোলে জড়িয়ে পায়চারি করছেন। নবজাতকের শরীরে তখন শুধুই টাওয়াল জড়ানো। তবে খবর পাওয়ার পর বাড়ি থেকে স্বজনরা এসে তাকে জামা পরিয়েছে। বাজার থেকে কিনে পহেলা বৈশাখের লাল টুকটুকে জামা পরাবেন বলে জানান মমিনুল। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তাঁর কোলেই প্রথম উঠেছে এই নবজাতক।
শিশুর নাম রেখেছেন মোহাম্মদ রাইয়ান। তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে আগেই নাম ঠিক করে রেখেছিলেন বলে জানান। মমিনুলের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল তখন কোনো কথা না বললেও হাসপাতালের বেডে শুইয়ে সন্তানের মা রত্না বেগম সবকিছু দেখছিলেন এবং শুনছিলেন। তাঁর কাঙ্ক্ষিত সন্তানকে বরণ করে নেওয়ায় যেন চোখের ভাষায় কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছিলেন তিনিও।
সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে সন্তান ও মায়ের সুস্থতার জন্য দোয়া কামনা করেন মমিনুল। আমার খামারের সঙ্গী এখন হাসপাতালে। তাকে সুস্থভাবে নিয়ে যেন দ্রুত হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরতে পারি এটাই এখন চাওয়া।