বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
Published: 24th, January 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করেছে এবং উন্নত বিনিয়োগ পরিবেশে আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়াতে প্রস্তুত। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম অধ্যাপক ইউনূসের বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। খবর বাসসের।
শফিকুল আলম বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে ড.
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, চীনসহ বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছেন এবং আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত। এ ছাড়া বিপুলসংখ্যক তরুণ জনগোষ্ঠীর কারণে বাংলাদেশ একটি রপ্তানি কেন্দ্র হয়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনের ফাঁকে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আন্না বিয়ার্দে। এ সময় তিনি বাংলাদেশ পুনর্গঠনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বৈশ্বিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটির সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ইউনূসকে উদ্দেশে করে বলেন, ‘আমি আমাদের সমর্থন প্রকাশ করতে চাই। আপনারা যে কোনো সহায়তার জন্য আমাদের ওপর নির্ভর করতে পারেন।’ বিশ্বের দুই বৃহত্তম বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ড ও এ পি মোলার-মেয়ার্স্ক বাংলাদেশের শিপিং শিল্পে বড় আকারের বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা বঙ্গোপসাগরের উপকূলজুড়ে নতুন বন্দর নির্মাণে সহায়তা করতে এবং বাংলাদেশকে একটি প্রধান বৈশ্বিক রপ্তানি কেন্দ্রে পরিণত করতে চায়।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, দাভোসে ডিপি ওয়ার্ল্ডের গ্রুপ চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ বিন সুলাইম এবং এ পি মোলার-মেয়ার্স্ক চেয়ারম্যান রবার্ট মোলার উগলা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠককালে এই প্রস্তাব দেন।
সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স প্রেসিডেন্ট নিক ক্লেগ। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে ফেসবুকের মাধ্যমে ভুয়া তথ্য ও গুজব ছড়ানো বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। এদিন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড সাক্ষাৎ করেন।
ড. ইউনূস বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার ব্যস্ত সময় পার করেন। তিনি মোট ১৪টি ইভেন্টে অংশ নেন। এর আগে গত বুধবার সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ডের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের সময় বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া বিলিয়ন ডলারের অর্থ ফিরিয়ে আনতে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সহায়তা চেয়েছেন। লাগার্ড অন্তর্বর্তী সরকারের পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধার উদ্যোগে সমর্থন জানান।
এদিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিখ্যাত ইতালীয় সংগীতশিল্পী আন্দ্রেয়া বোচেলি। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী অপেরা গায়ক বোচেলি অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে অভিনন্দন জানান। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো বলেছেন, তিনি আগামী দুই মাসের মধ্যে বাংলাদেশ সফর করতে চান এবং দেশের নারী ফুটবলের জন্য অর্থায়নের আশা করছেন।
সুইস ফেডারেল কাউন্সিলর ইগনাজিও ক্যাসিসের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে কার্বন ধরে রাখার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে সহায়তা করতে সুইজারল্যান্ডের প্রতি আহ্বান জানান। এদিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জার্মান ফেডারেল মন্ত্রী ওলফগ্যাং শ্মিটও বৈঠক করেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইউক্রেনে জেলেনস্কির বিকল্প নেতা খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র!
ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পদত্যাগ করা লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের একজন নেতা প্রয়োজন, তিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। তিনি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং এই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।’ খবর- সিএনএন
গণমাধ্যমের সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডার পর এ কথা বললেন তিনি। বাগবিতণ্ডার এ ঘটনাটি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিশ্বজুড়ে। ওই ঘটনার পর ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও বাতিল হয়ে যায়। আর এর পরই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কোন পথে, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।
এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শুক্রবারের ওই ঘটনায় সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গড়া ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আবারও এক টেবিলে বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া-দুই পক্ষই আলোচনায় না বসলে যুদ্ধ থামবে না। হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতণ্ডার পর থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আর কথা হয়নি। যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। তবে তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব রাখলে, মস্কোকে আলোচনায় যুক্ত করা সম্ভব হবে না। কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মনোভাবই দেখিয়ে আসছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, সবকিছু আবার শুরু হতে পারে। আশা করি, তিনি (জেলেনস্কি) এটা বুঝতে পারবেন যে আমরা আসলে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর আগে, তাঁর দেশকে সাহায্যের চেষ্টা করছি।’