বাতিঘর একদিকে প্রকাশনী সংস্থা অন্যদিকে বাংলাদেশের বই রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান। দেশের চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেট এবং রাজশাহীতে একাধিক শাখা রয়েছে এই প্রকাশনী সংস্থার। প্রতিটি শাখা লেখক-পাঠকদের মিলনমেলা, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা, পাঠচক্র ও আড্ডার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাতিঘরের শাখা প্রতিষ্ঠা হয়েছে কলকাতাতেও। বাতিঘরের প্রকাশক দীপঙ্কর দাশ স্বপ্ন দেশের দেশের পাঠক সংখ্যা বাড়াতে কাজ করে যাবেন এবং বাতিঘর একটি মর্যাদা সম্পন্ন প্রকাশনী হিসেবে মান অক্ষুন্ন রাখবে। এই প্রকাশক মনে করেন পাঠক সংখ্যা বাড়ানো না গেলে বই সম্প্রসারণের কোনো উদ্যোগ সফল হবে না। ২০২৫ বইমেলায় সর্বপ্রথম প্যাভেলিয়ন পেয়েছে বাতিঘর। এই প্রকাশনী সংস্থার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়েছে। নতুন লেখকদের বই প্রকাশেও আন্তরিক ভূমিকা রাখতে চান দীপঙ্কর দাশ। বইয়ের প্রচার ও সম্প্রসারণে রয়েছে তার একান্ত ভাবনা।

দীপঙ্কর দাশ রাইজিংবিডিকে বলেন ‘‘আমাদের দেশে প্রায় ১৭ কোটি মানুষ। কিন্তু রিডারশীপ অনেক কম। পাঁচ, সাত কোটি মানুষ বই পড়ে বা আরও কম সংখ্যক মানুষ বই কেনে। পাঠকের এই সংখ্যা যদি আরও বাড়াতে চাই তাহলে তাদের বই প্রাপ্তি ও পাঠের সুযোগটা দিতে হবে। সুযোগটা একদিন তৈরি হবে না, আস্তে আস্তে  ‘রিডার্স সোসাইটি’ তৈরি করতে হবে। সেটা জরুরি। ‘আলটিমেটলি’ যদি আমরা পাঠক বাড়াতে না পারি তাহলে, বইয়ের চাহিদা বাড়াতে না পারি; তাহলে বই প্রসারের কোনো উদ্যোগ সফল হবে না।’’

একটা ভালো বইয়ের খবর পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রকাশনী সংস্থাগুলোর ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?— এই প্রশ্নের জবাবে দীপঙ্কর দাশ বলেন, ‘‘শুধুমাত্র প্রকাশনী সংস্থা এটা পারবে না। মিডিয়া আছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আছে, অনেক ‘রিভিউ গ্রুপ’ আছে—এই সবগুলো মাধ্যম বইয়ের প্রকাশে ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের এখানে যদি কেউ পড়ে রিভিউ দেয় তাহলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তৈরি হয়। কারণ আরেকজন পাঠক সেটা বিশ্বাস করে। এ ছাড়া একটি বই নিয়ে পাঠচক্র হতে পারে। বইয়ের প্রচার শুধুমাত্র ‘পেইড’ বিজ্ঞাপন দিয়ে হয় না। আর প্রকাশনীর প্রধানতম কাজ হচ্ছে মানসম্মত বই প্রকাশ করা। পাণ্ডুলিপির ম্যারিট বিবেচনা, রিভিউ করা, ভালো সম্পাদনা করা এবং একটি পাণ্ডুলিপির সম্ভাবনা যাচাই করে প্রকাশক বই প্রকাশ করবেন।’’ 

বাতিঘর এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০০-এর অধিক বই প্রকাশ করেছে। এই প্রকাশনী সংস্থার প্রকাশক বইয়ের প্রচারে ‘রিভিউ’ করাকে সবচেয়ে মানসম্মত উপায় হিসেবে দেখেন। তিনি মনে করেন, বই রিভিউ প্রকাশনী এবং পাঠক উভয় পক্ষ থেকে হলে ভালো। দীপঙ্কর দাশের ভাষ্য ‘‘ আমরা ‘জেনারেলি’ বই রিভিউ করি, বাতিঘর রিভিউ করা ছাড়া কোনো বই প্রকাশ করে না। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বাতিঘর অনেক সময় নেয়। আমরা প্রত্যেকটা কাজ সময় নিয়ে ভালোভাবে করার চেষ্টা করি। একটা পাণ্ডুলিপি পেলাম আর বই আকারে প্রকাশ করে ফেললাম—একটি মর্যাদাপূর্ণ প্রকাশনীর পক্ষে তা কখনো সম্ভব নয়। ’’

২০২৫ বইমেলায় বাতিঘর প্রথমবারের মতো প্যাভেলিয়ন পেয়েছে। এর ফলে বইমেলায় পাঠকেরা বাতিঘরের নতুন-পুরোন বইগুলো ভালোভাবে দেখার সুযোগ পাবেন বলে মনে করেন দীপঙ্কর দাশ। এই সময়ে থ্রিলার, অনুবাদ সাহিত্যের পাঠক চাহিদা সবচেয়ে বেশি বলে জানান এই প্রকাশক। তিনি বলেন, ‘‘এখানে অনুবাদ সাহিত্যের চাহিদা দীর্ঘদিন ধরেই বেশি। বর্তমানে থ্রিলারের পাঠক বেড়েছে। ট্রেন্ড সব সময় পরিবর্তন হয়। আগে নন ফিকশনের চাহিদা কম ছিল। লেখাও কম হতো। বর্তমানে নন ফিকশনের চাহিদা অনেক বেড়েছে। লেখাও অনেক বেশি হচ্ছে। ইতিহাস, দর্শনের চাহিদা বেশ ভালো। ’’

ভারতের অনেক বই বাংলাদেশে বিপণনের কাজ করছে বাতিঘর। বাংলাদেশের লেখকদের বই যাতে কলকাতায় বিক্রি হয় সেজন্যও একটি উদ্যোগ নিয়েছেন দীপঙ্কর দাশ। তিনি বলেন, ‘‘কলকাতায় গত মাসে (ডিসেম্বর, ২০২৪) একটি স্টোর চালু হয়েছে ‘বাতিঘর কলকাতা’ নামে। যেখানে এক্সক্লুসিভলি শুধুমাত্র বাংলাদেশের বই বিক্রি হচ্ছে। শুধুমাত্র বাতিঘরের বই নয় বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত ভালো বইগুলো আমরা কলকাতায় পৌঁছে দিচ্ছি।’’ 

নতুন লেখকদের মানসম্মন পাণ্ডুলিপি পেলে প্রকাশের উদ্যোগ নেন বলে জানান দীপঙ্কর দাশ। তিনি জানান, প্রতিবছরই বাতিঘর একেবারে নতুন লেখকের দুই, একটা বই প্রকাশ করে। বাতিঘরের সঙ্গে পাণ্ডুলিপি পাওয়ার পরে রিভিউ করা হয়। এরপর ভালো লাগলে তারাই যোগাযোগ করেন। সেক্ষেত্রে নতুন কোনো লেখক যদি বাতিঘর থেকে বই প্রকাশ করতে চান তার কাজ হচ্ছে গোছানো এবং মানসম্মত একটি পাণ্ডুলিপি পাঠানো।

দীপঙ্কর দাশ মনে করেন বইয়ের প্রচারে, প্রকাশনীর সংস্থার পাশাপাশি লেখকের ভূমিকা থাকা মোটেও দোষের কিছু না। একজন লেখক তার জায়গা থেকে বইয়ের প্রচারণা চালাতেই পারেন।

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ত ঘর র র ভ উ কর বই প র কলক ত ম নসম

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনে জেলেনস্কির বিকল্প নেতা খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র!

ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পদত্যাগ করা লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের একজন নেতা প্রয়োজন, তিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। তিনি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং এই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।’ খবর- সিএনএন

গণমাধ্যমের সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডার পর এ কথা বললেন তিনি। বাগবিতণ্ডার এ ঘটনাটি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিশ্বজুড়ে। ওই ঘটনার পর ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও বাতিল হয়ে যায়। আর এর পরই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কোন পথে, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।

এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শুক্রবারের ওই ঘটনায় সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গড়া ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। 

যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আবারও এক টেবিলে বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া-দুই পক্ষই আলোচনায় না বসলে যুদ্ধ থামবে না। হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতণ্ডার পর থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আর কথা হয়নি। যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। তবে তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব রাখলে, মস্কোকে আলোচনায় যুক্ত করা সম্ভব হবে না। কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মনোভাবই দেখিয়ে আসছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, সবকিছু আবার শুরু হতে পারে। আশা করি, তিনি (জেলেনস্কি) এটা বুঝতে পারবেন যে আমরা আসলে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর আগে, তাঁর দেশকে সাহায্যের চেষ্টা করছি।’
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ