অবশেষে খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) অপসারিত মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেকের দুর্নীতি ও অনিয়ম অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ২১ জানুয়ারি খালেকের দুর্নীতি অনুসন্ধানে তিন সদস্যের টিম গঠন করা হয়। ২৩ জানুয়ারি থেকে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, মেয়র হয়েও আইন লঙ্ঘন করে সহযোগীদের বেনামে কোটি কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ করার অভিযোগ রয়েছে তালুকদার খালেকের বিরুদ্ধে। তিনজন ঠিকাদারের লাইসেন্সে এসব কাজ করতেন তিনি। এজন্য খালেকের অন্যতম সহযোগী মেসার্স হোসেন ট্রেডার্স, তাজুল এন্টারপ্রাইজ ও আজাদ ইঞ্জিনিয়ার্সের ঠিকাদারি কাজের সব ধরনের তথ্য চাওয়া হয়েছে। বিশেষ করে মেয়রের ব্যবসায়ীক অংশীদার হিসেবে পরিচিত এইচ এম সেলিম ওরফে সেলিম হুজুরের যাবতীয় ঠিকাদারি কাজের তথ্য সরবরাহ করতে কেসিসিকে চিঠি দিয়েছে দুদক।

পাশাপাশি মেয়র হিসেবে তালুকদার খালেকের দায়িত্বকালীন ব্যবহৃত সকল গাড়ির লগ বইও সরবরাহ করতে কেসিসির প্রশাসককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। 

কেসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, সভা-সমাবেশে বক্তৃতায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঝড় তুলতেন তালুকদার খালেক। কিন্তু সততার এই মুখোশের আড়ালে গত ১৫ বছরে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। এর বড় অংশই করেছেন মেয়র পদকে কাজে লাগিয়ে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আইন লঙ্ঘন করে অন্যের লাইসেন্সে নিজেই ঠিকাদারি করতেন তালুকদার আবদুল খালেক। মেসার্স হোসেন ট্রেডার্স, আজাদ ইঞ্জিনিয়ার্স ও মেসার্স তাজুল ইসলাম নামের তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় ৬০ কোটি টাকার কাজ করেছেন গত কয়েক বছরে। ঠিকাদার এইচ এম সেলিম (সেলিম হুজুর) এসব কাজ দেখাশোনা করতেন। এর বাইরে ৫ শতাংশ কমিশনের ভিত্তিতে আরও প্রায় শত কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ বড় ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করেছেন।

বাগেরহাট-৩ আসনে ৪ বার সংসদ সদস্য ছিলেন তালুকদার খালেক। কেসিসি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর আসনটিতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তার স্ত্রী হাবিবুন নাহার। তিনিও উপমন্ত্রী হন। কিন্তু খালেকই রামপাল ও মোংলা উপজেলার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। সভা-সমাবেশে অংশ নিতে রামপালে গেলে ব্যবহার করতেন কেসিসির গাড়ি ও তেল। উপমন্ত্রী স্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদার মেয়র হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস করেননি কেউই।

এসব নিয়ে গত ২৭ আগস্ট ‘সামনে সততার মুখোশ, পেছনে খালেকের বিপুল লুটপাট’ শিরোনামে দৈনিক সমকালে বিস্তারিত সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপরই বিষয়টি দুদকের নজরে আসে।

দুদক থেকে জানা গেছে, গত ২৪ ডিসেম্বর তালুকদার খালেকের দুর্নীতি তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত ২১ জানুয়ারি দুদকের খুলনার উপ-পরিচালক আবদুল ওয়াদুদকে প্রধান করে অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। গত বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) থেকে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছে। সমকালে প্রকাশিত প্রতিটি বিষয় নিয়ে পৃথক তদন্ত করা হচ্ছে।

দুদকের উপ-পরিচালক আবদুল ওয়াদুদ জানান, প্রধান কার্যালয় থেকে বৃহস্পতিবার আমরা চিঠি পেয়েছি এবং বৃহস্পতিবারই অনুসন্ধান শুরু করেছি। প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সাবেক মেয়রের দুর্নীতি অনুসন্ধানের জন্য তার সহযোগীদের তথ্যও প্রয়োজন। এজন্য তার সহযোগীদেরও তথ্য চাওয়া হয়েছে। এছাড়া মেয়র হয়ে রামপাল-মোংলার জন্য কেসিসির গাড়ি ব্যবহার, নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি খুঁজে বের করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

দুদক থেকে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার তালুকদার খালেক ও তার স্ত্রী হাবিবুন নাহারের আয়কর রিটার্ন, কর নির্ধারণী আদেশসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রে ছাপালিপি চেয়ে খুলনা কর অঞ্চলের উপ-কর কমিশনার সার্কেল-৩ এর কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কেসিসির প্রশাসকের কাছে চিঠি দিয়ে মেসার্স হোসেন ট্রেডার্স, তাজুল এন্টারপ্রাইজ ও আজাদ ইঞ্জিনিয়ার্সের ঠিকাদারি কাজের যাবতীয় তথ্য, এইচ এম সেলিমের প্রতিটি কাজ ও পরিশোধিত বিলের পরিমাণ, খালিশপুর ১৮ নম্বর রোড উন্নয়ন সংক্রান্ত কাজের দরপত্র সংক্রান্ত সব রেকর্ড এবং মেয়র হিসেবে দায়িত্বকালীন গাড়ির লগ বই চাওয়া হয়েছে।

সূত্রটি জানায়, তালুকদার আবদুল খালেক বেসরকারি নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে কী পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন, তা তদন্ত করতে অস্থায়ী ক্যাম্পাসের জমির দলিল, ট্রাস্টি বোর্ডের সভার কার্যবিবরণী, প্রদত্ত সম্মানী ভাতা, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ক্যাশবই, সকল ব্যাংক হিসাবের হালনাগাদ যাবতীয় তথ্য চাওয়া হয়েছে।

দুদকের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা রকিবুল ইসলাম বলেন, নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতেও বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে বলে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। বিস্তারিত অনুসন্ধান চলছে।

গত ৫ আগস্টের পর থেকে তালুকদার আবদুল খালেক আত্মগোপনে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ এক ডজন মামলা হয়েছে নগরী ও জেলার বিভিন্ন থানায়। তিনি বর্তমানে পার্শ্ববর্তী একটি দেশে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। বিষয়গুলো নিয়ে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর ছ ন করত ন তদন ত সহয গ

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনে জেলেনস্কির বিকল্প নেতা খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র!

ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পদত্যাগ করা লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের একজন নেতা প্রয়োজন, তিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। তিনি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং এই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।’ খবর- সিএনএন

গণমাধ্যমের সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডার পর এ কথা বললেন তিনি। বাগবিতণ্ডার এ ঘটনাটি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিশ্বজুড়ে। ওই ঘটনার পর ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও বাতিল হয়ে যায়। আর এর পরই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কোন পথে, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।

এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শুক্রবারের ওই ঘটনায় সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গড়া ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। 

যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আবারও এক টেবিলে বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া-দুই পক্ষই আলোচনায় না বসলে যুদ্ধ থামবে না। হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতণ্ডার পর থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আর কথা হয়নি। যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। তবে তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব রাখলে, মস্কোকে আলোচনায় যুক্ত করা সম্ভব হবে না। কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মনোভাবই দেখিয়ে আসছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, সবকিছু আবার শুরু হতে পারে। আশা করি, তিনি (জেলেনস্কি) এটা বুঝতে পারবেন যে আমরা আসলে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর আগে, তাঁর দেশকে সাহায্যের চেষ্টা করছি।’
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ