আমি মায়ের লেভেলে পৌঁছানোর চেষ্টাও করব না: খুশি কাপুর
Published: 24th, January 2025 GMT
বলিউডের রুপালি দুনিয়া দাপিয়ে বেড়ানো অভিনেত্রী শ্রীদেবী। পর্দায় তার উপস্থিতি বিবর্ণ করে দিয়েছে বহু নায়ককে। শিফন শাড়িতে মুগ্ধতা ছড়ানো এই অভিনেত্রীর রূপের দ্যুতি ভোলার নয়। তবে মৃত্যু তার গতিশীল জীবনকে থামিয়ে দিয়েছে।
ব্যক্তিগত জীবনে শ্রীদেবী বিয়ে করেছিলেন নির্মাতা-অভিনেতা বনি কাপুরকে। এ সংসারে তাদের দুই মেয়ে— জাহ্নবী কাপুর ও খুশি কাপুর। বেশ আগে বলিউডে পা রেখে সুনাম কুড়িয়েছেন শ্রীদেবীর বড় মেয়ে জাহ্নবী। বছর দুয়েক আগে ছোট কন্যা খুশি কাপুরেরও চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়েছে। যদিও সিনেমাটি তাকে খ্যাতি এনে দিতে পারেনি।
খুশির নতুন সিনেমা ‘লাভইয়াপা’। আাগামী মাসে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। এ উপলক্ষে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন খুশি। এ আলাপচারিতায় উঠে আসে শ্রীদেবী, বনি ও জাহ্নবী কাপুরের প্রসঙ্গ। কথার ফাঁকে জানতে চাওয়া হয়, শ্রীদেবী মানে আপনার মায়ের উত্তরাধিকার সামনে এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটি কি ভারী মনে হয়?
আরো পড়ুন:
গায়িকা মোনালি ঠাকুর সত্যি হাসপাতালে?
পরিচালক রাম গোপাল ভার্মার কারাদণ্ড
এ প্রশ্নের জবাবে খুশি কাপুর বলেন, “আমি বুঝতে পারছি, মানুষ কেন আমাদের তুলনা করতে চায়। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, আমাকে আমার নিজের পথ তৈরি করতে হবে। আমাকে আমার পথ খুঁজে বের করতে হবে। আমার মায়ের উত্তরাধিকার তুলনাহীন। আমি সেই স্তরে পৌঁছানোর চেষ্টাও করব না। আমি যা করতে পারি, তা হলো আমার সেরাটা দিয়ে কাজ করতে পারি। আশা করি, মানুষ আমার কাজের প্রশংসা করবেন।”
মায়ের কোন সিনেমা আপনার হৃদয়ে গেঁথে আছে? জবাবে খুশি কাপুর বলেন, “সদমা’। এটি আমার হৃদয়ের বিশেষ স্থানে রাখা আছে।”
বাবা বনি কাপুর, বোন জাহ্নবী কাপুরের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করেন কিনা? উত্তরে খুশি কাপুর বলেন, “অবশ্যই! বাবা-জাহ্নবীর আশীর্বাদ ও অনুমতি ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবতেও পারি না। তার মানে এই নয় যে, আমার নিজের কোনো মতামত নেই। আমারও মতামত আছে। তবে এটা ভেবে শান্তি অনুভব করি যে, আমরা সবাই একই সঙ্গে আছি।”
জাহ্নবী কাপুর ও খুশি কাপুর প্রায় সময়ই একসঙ্গে চলাফেরা করেন। বোন জাহ্নবী কাপুরের সঙ্গে সম্পর্কের সমীকরণ জানতে চাইলে খুশি কাপুর বলেন, “সে আমার সবচেয়ে বড় সাপোর্টার এবং আমার চৌকস লিডার। আমি সবকিছুর জন্য তার কাছে যাই। আমার জীবনে সবচেয়ে ভালো বন্ধু সে। আমি সবসময়ই তার দিকে তাকিয়ে থাকি। সে সবসময় আমাকে পথ দেখায়। কারণ সে একইরকম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছে। সত্যিই সে আমার জন্য সেরাটা চায়।”
‘লাভইয়াপা’ সিনেমায় খুশি কাপুর তার নায়ক হিসেবে পেয়েছেন আমির খানের পুত্র জুনায়েদ খানকে। এটি পরিচালনা করেছেন ‘লাল সিং চাড্ডা’খ্যাত নির্মাতা অদ্বৈত চন্দন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে সিনেমাটি।
খুশি কাপুরের হাতে আরেকটি সিনেমার কাজ রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার হাতে আরেকটি প্রজেক্টের কাজ রয়েছে। এ বছরই এটি মুক্তি পাবে। এটি নিয়ে আমি খুবই উচ্ছ্বসিত। তা ছাড়াও পাইপলাইনে আরেকটি কাজ রয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনই বলতে চাই না।”
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলবেন কি এটা কোন ‘জাস্টিস’
২২ এপ্রিল যশোরে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ‘মব জাস্টিস আর অ্যালাউ (অনুমোদন) করা যাবে না’ বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। আমরা ভেবেছিলাম, দেরিতে হলেও সরকারের হুঁশ ফিরে এসেছে এবং মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে তারা কঠোর অবস্থান নেবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যাকে ‘মব জাস্টিস’ বলছেন, সেটা আসলে মব ভায়োলেন্স। রাস্তাঘাটে ঘরে বাইরে কোনো অজুহাত পেলেই একধরনের মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারী, দুর্বলের ওপর সবলের সহিংসতা। কবি যেমন বলেছেন, বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদে কিন্তু মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত মানুষগুলো এতটাই অসহায় যে থানা পুলিশ কিংবা আদালতেও যেতে ভয় পান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ওই ঘোষণার পরও মব ভায়োলেন্স বন্ধ হয়নি। বিভিন্ন স্থানে নারী ও সংখ্যালঘুরা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। সেদিন দেখলাম, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একদল লোক বিদ্যালয়ে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে হেনস্তা করছেন এবং তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তাঁরা আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারতেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেই সভায় যে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি বলেছেন, সেটি হলো ১৫ হাজার বোতল ফেনসিডিল ছেড়ে দিয়ে ৫০০ বোতল ‘রিকভার’ (উদ্ধার) দেখানো। কারা দেখাচ্ছেন? কারা মাদকদ্রব্য উদ্ধার করছেন? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কেউ পুলিশের লোক, কেউবা র্যাবের।
আওয়ামী লীগ সরকার মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা দেখিয়েছিল, মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বহু মানুষ হত্যা করেছিল। কিন্তু তারপরও দেশ মাদক ও সন্ত্রাসের নিরাপদ ভূমি হওয়ার কারণ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ওই বক্তব্য। তাঁরা ১৫ হাজার বোতল ফেনসিডিল ছেড়ে দিয়ে ৫০০ বোতল ধরেছেন। অর্থাৎ ৩০ ভাগের একভাগ ধরেছেন, ২৯ ভাগই বাজারজাত হয়েছে।
গত সোমবার বরিশালের আগৈলঝাড়ায় র্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানের সময় সিয়াম মোল্লা নামে কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়। তার আহত রাকিব মোল্লা এখন বরিশালে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। র্যাবের দাবি অনুযায়ী তাঁরা নাকি দুর্ধর্ষ মাদকব্যবসায়ী। র্যাব সদস্যরা যেই মাদকবিরোধী অভিযানে ঘটনাস্থলে গিয়েছেন, অমনি তাদের ওপর হামলা করেছেন ওই দুই শিশু কিশোর। তারা শিশু কিশোরই।
জন্মনিবন্ধনের তথ্য অনুযায়ী নিহত সিয়ামের জন্ম ২০০৮ সালের ২৪ জানুয়ারি। মৃত্যুর দিন ২১ এপ্রিল তার বয়স হয়েছিল ১৭ বছর ১ মাস ২৮ দিন। আর রাকিবের জন্ম ২০০৭ সালের ১ আগস্ট। সেই হিসাবে তার বয়স ১৭ বছর ৮ মাস ২০ দিন। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী দুজনই শিশু-কিশোর।
অবশ্য র্যাব অভিযানের ‘ন্যায্যতা’ প্রমাণ করতে নিহত সিয়াম মোল্লার বয়স ২২ ও আহত রাকিব মোল্লার বয়স ২১ বছর বলে উল্লেখ করেছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, ওই দুই শিক্ষার্থী মাদক ব্যবসায়ী কিংবা মাদকাসক্ত ছিল না।
হত্যার প্রতিবাদে উজিরপুরের সাহেবের হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা। নিহত সিয়াম এই বিদ্যালয় থেকে গতবার এসএসসি পাস করে একই এলাকার আইডিয়াল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। আর রাকিব মোল্লা এ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
সিয়াম মাদক ব্যবসা করত কি করত না, সেটি প্রমাণের পথ র্যাবই বন্ধ করে দিয়েছে। মৃত মানুষ তো আর সাক্ষ্য দিতে পারবে না। র্যাবের দাবি যদি সত্যও ধরে নেওয়া হয়, তাহলেও কি কলেজ পড়ুয়াকে এক কিশোরকে এভাবে গুলি করে হত্যা করা যায়? সিয়ামের মৃত্যুর পর তার বাবা রিপন মোল্লা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, ‘আপনারা কী করবেন? আমার পোলারে ফিরাইয়্যা দেতে পারবেন? লেইখ্যা কী অইবে, আমি আল্লার কাছে বিচার দিলাম।’র্যাবের দাবি, মাদক ব্যবসায়ীদের ধরার জন্য র্যাব সদস্যরা অভিযানে গেলে সেখানে মাদক ব্যবসায়ী ১০-১১ জন মিলে তাঁদের ওপর হামলা করেন। এরপর আত্মরক্ষার্থে র্যাব সদস্যরা গুলি করতে বাধ্য হন। তাদের এ সাফাই বক্তব্য আওয়ামী লীগ আমলে বন্দুকযুদ্ধে শত শত মানুষ নিহত হওয়ার কথাই মনে করিয়ে দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে র্যাব ও পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি করার কথা বলে বন্দুকযুদ্ধে মানুষ মারাকে জায়েজ করতে চায়।
গত বছর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নিলেও কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে মানুষ হত্যা বন্ধ হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সেই একই আত্মরক্ষার্থে গুলি কিংবা বন্দুকযুদ্ধের বয়ান দেওয়া হয়।
পুলিশের ভাষ্য, গত সোমবার সন্ধ্যায় আগৈলঝাড়ার রত্নপুর ইউনিয়নের মোল্লাপাড়ায় সাদাপোশাকে র্যাব-৮-এর মাদকবিরোধী অভিযানে গুলিবিদ্ধ হয়ে সিয়াম মোল্লা নিহত হয়। তাঁর খালাতো ভাই আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাই মারা গেছে। এতে যতটা না কষ্ট পাচ্ছি, তার চেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি, তাদের দুজনকে মাদক ব্যবসায়ী আখ্যা দেওয়ায়। দয়া করে এটি আপনারা গণমাধ্যমে তুলে ধরুন। তারা শিশু-কিশোর, মাদকাসক্ত ছিল না।’
র্যাবের অভিযানে গুলিতে এক শিক্ষার্থী নিহত ও এক শিক্ষার্থী আহতের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুরে উজিরপুর উপজেলার সাহেবেরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে