ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা চার একর পাহাড়ি খাসজমি দখল করে গড়ে তুলেছেন পর্যটন কেন্দ্র। আর বরখাস্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান ও তাঁর স্ত্রীর ১২টি ব্যাংক হিসাবে মিলেছে ৩৪২ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য। এ দম্পতির নামে ৪০ কোটি ৮৭ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদও পাওয়া গেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।  

ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, দুর্নীতি, দখল ও জালিয়াতির মাধ্যমে এসব অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে কুজেন্দ্র, জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করেছে দুদক। গতকাল বৃহস্পতিবার অনুসন্ধান কর্মকর্তারা কমিশনের ঢাকা-১ কার্যালয়ে মামলাগুলো করেন। দুদক মহাপরিচালক ও মুখপাত্র আক্তার হোসেন এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। 

কুজেন্দ্র লালের বিরুদ্ধে মামলায় বলা হয়েছে, তিনি প্রভাব খাটিয়ে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের পাশে ২৬২ নম্বর গোলাবাড়ী মৌজায় ৪৮৫৭ (আং) খাস দাগে চার একর জমি দখল করেন। সেখানে বাণিজ্যিকভাবে নির্মাণ করেছেন ‌‘খাস্রাং রিসোর্ট’। তৃতীয় শ্রেণির এ জমির প্রতি শতকের মৌজা রেট ২৫ হাজার ৫১৫ টাকা। সেই হিসাবে সাবেক এ প্রতিমন্ত্রীর দখল করা জমির দাম ১ কোটি ২ লাখ টাকা। বাজারমূল্যে যা আরও বেশি। সরকারি সম্পত্তি এভাবে আত্মসাৎ করে তিনি দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৪০৯, ৪২০-সহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। 
সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের নামে মামলার এজাহারে বলা হয়, তিনি নিজ নামে ২২ কোটি ২৭ লাখ ৭৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। গাইডলাইন অব ফরেন এক্সচেঞ্জ ট্রান্সজেকশন অনুযায়ী, বর্তমান অনুমোদিত সীমা লঙ্ঘন করে নিজ হিসাবে জমা করেন ৫৫ হাজার মার্কিন ডলার। এ ছাড়া তাঁর নামীয় আটটি সক্রিয় ব্যাংক হিসাবে প্রায় ১২০ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে। 

আরও বলা হয়, জিয়াউল আহসান আয়কর রিটার্নে মৎস্য ও পোলট্রি খামারের আয় দেখালেও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা ও সরেজমিন তাঁর নামে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত এমন খামারের অস্তিত্ব পায়নি দুদক। আগে ছিল, এমন বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণও মেলেনি। সেই হিসাবে ২০২১-২০২২ করবর্ষ থেকে ২০২৩-২০২৪ করবর্ষ পর্যন্ত আয়কর রিটার্নে তাঁর দেখানো অর্জিত আয় বৈধ হিসেবে মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া জিয়াউল আহসানের নামে প্রচুর কৃষিজমি থাকলেও কৃষি আয়ের সপক্ষে কোনো বৈধ রেকর্ডপত্র পাওয়া যায়নি। একজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে এই কাজে নিজ পদ ও অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি দুদক, দণ্ডবিধি এবং মানি লন্ডারিং আইনের একাধিক ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। 

জিয়ার স্ত্রী নুসরাত জাহানের বিরুদ্ধে ১৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। দুদকের এজাহারে বলা হয়েছে, নুসরাতের নামে চারটি সক্রিয় ব্যাংক হিসাবে ২২২ কোটি ৫০ লাখ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন পাওয়া গেছে। স্বামী জিয়াউল আহসানের সহযোগিতা ও পরস্পর যোগসাজশে ওই পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। 
সাবেক এমপি হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে ২ কোটি ৮১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অপর মামলাটি করেছে দুদক। এ ছাড়া তাঁর ১০টি ব্যাংক হিসাবে সঞ্চয়ী, চলতি, এফডিআর হিসাবে ১৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য মিলেছে। 

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর ছ ন ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ, ভাইরালের হুমকি ছাত্রলীগ নেতার 

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় রকিউজ্জামান রকি নামে ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই ঘটনার ধারণ করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে একাধিকবার ধর্ষণেরও অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাতে পুলিশ মামলার আসামি ছাত্রলীগ নেতা রকিকে নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে।

রকি দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাংগা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। মামলায় রকির বন্ধু মামুনসহ কয়েকজন বন্ধুকেও আসামি করা হয়েছে। 

মামলার বিবরণ ও পুলিশ সূত্র জানায়, রকির সঙ্গে ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীর বন্ধুত্ব থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। গত বছরের ২৩ অক্টোবর কম্পিউটার শেখানোর কথা বলে কৌশলে তাকে দেবীগঞ্জ উপজেলা সদরের একটি ভবনের কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করে রকি। একই সঙ্গে তার বন্ধু মামুন গোপনে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে। পরে সেই ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে একাধিক ধর্ষণসহ টাকা দাবি করা হয়। এছাড়াও ওই ছাত্রীর নামে একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি খোলা হয়। সেই আইডিতে ভুক্তভোগী ছাত্রীর আপত্তিকর ছবি আপলোড করা হয়। এরপর গত ১০ এপ্রিল রকি তাকে আবারও শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেয়। এতে রাজি না হওয়ায় রকি তার কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে ধর্ষণের ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি দেওয়া হয়। বিষয়টি ওই ছাত্রী পরিবারকে জানায়। প্রথমে তার পরিবার ঘটনাটি শালডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা ফরিদুল ইসলামকে জানায়। চেয়ারম্যান রকির বাবাকে বিষয়টি জানিয়ে ছেলেকে সতর্ক করার কথা বললে সে ক্ষিপ্ত হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্ষণের ভিডিও ও ছবি পোস্ট করে।

দেবীগঞ্জ থানার (ওসি) সোয়েল রানা বলেন, মেয়ের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে রকিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মোবাইল ফোনে ধর্ষণের ভিডিওসহ ছবি পাওয়া গেছে। তাকে জেলহাজতে পাঠানোসহ রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার রিমান্ড আবেদনের শুনানির হওয়ার কথা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ