বেক্সিমকো গ্রুপের বন্ধ থাকা ১৬ কারখানা রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানায় চালুসহ অন্যান্য দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে উপদেষ্টা পরিষদে। আগামী মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় উপদেষ্টা পরিষদে দাবিগুলো তোলা হচ্ছে বলে শ্রম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলন থেকে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শ্রমিকরা। অবশ্য শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড.
বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কারখানাগুলোকে রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানায় নেওয়ার এবং ৪২ হাজার শ্রমিককে অন্য কোম্পানিতে কাজের ব্যবস্থা করার দাবি উপদেষ্টা পরিষদে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন শ্রম সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান। গতকাল বৃহস্পতিবার বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং বিদ্যমান শ্রম সংকট নিরসনে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় এসব কথা বলেন তিনি। এর মধ্যে যারা গাড়ি ভাঙচুর করেছে এবং আগুন দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম সবুজ, বেক্সিমকোর প্রশাসন বিভাগের প্রধান আব্দুল কাইয়ুম প্রমুখ। বৈঠকে মোশরেফা মিশু তিনটি দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হচ্ছে– শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করে কারখানা বন্ধ করা, কারখানাগুলোকে রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানায় নেওয়া এবং বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শ্রমিকদের কাজের ব্যবস্থা করা।
বৈঠকে শ্রম সচিব আরও বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এবং বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) অধীন কারখানায় অনেক শ্রমিকের প্রয়োজন হবে। বেক্সিমকোর শ্রমিকদের সেখানে কাজের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবেন তারা। পাশাপাশি বিদেশি ক্রেতাদের কাছে কারখানাগুলো বেচা যায় কিনা, সে চেষ্টা করছেন তারা। এ বিষয়ে আগামী মঙ্গলবার উপদেষ্টা পরিষদের এ বিষয়ে সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। শ্রম সচিব বলেন, বেক্সিমকোর শ্রমিকদের পাঁচ মাস ধরে বেতন দিয়ে আসছে সরকার। এতে এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩৬৮ কোটি টাকা।
বন্ধ কারখানা পুনরায় চালু সম্ভব নয়: শ্রম উপদেষ্টা
এদিকে শ্রমিকদের দাবি অযৌক্তিক জানিয়ে বেক্সিমকো গ্রুপের বন্ধ কারখানা পুনরায় চালু করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. সাখাওয়াত হোসেন। গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসা পরিস্থিতি পর্যালোচনা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির আহ্বায়ক।
তিনি বলেন, ‘বেশ কিছুদিন আমরা একটা শান্ত পরিবেশে ছিলাম। হঠাৎ বেক্সিমকোর শ্রমিকরা সমাবেশ করে তিনটা দাবি তোলে। আমার মনে হয়, কোনো সরকারের পক্ষে দাবিগুলো পূরণ করা সম্ভব নয়। এগুলো অযৌক্তিক।’ হঠাৎ সড়কে হামলা-ভাঙচুর প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘গত বুধবার ১০০টির বেশি বাস জ্বালানো হয়েছে, বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করা হয়েছে। শ্রমিকদের যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা ভুল কাজ করেছে। তারা দেশবাসীর জন্য বড় সংকট তৈরি করতে যাচ্ছিল। হঠাৎ করে এটি কেন হলো, তা খতিয়ে দেখা হবে।’
মানবিক কারণে কারখানা খোলার দাবি
এদিকে অবিলম্বে লে-অফ প্রত্যাহার করে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বেক্সিমকোর শ্রমিক-কর্মচারীরা। গতকাল রাজধানীর পল্টনে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন বেক্সিমকো গ্রুপের কিছু কর্মী। রপ্তানি আদেশ পেতে ব্যাংকের ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলার অনুমতি এবং ব্যবসা চলমান রেখে সব বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে বেক্সিমকো গ্রুপের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক সৈয়দ মো. এনাম উল্লাহ বলেন, ‘আমরা শ্রমিক-কর্মকর্তারা পেটের দায়ে আপনাদের কাছে এসেছি। বিনয় করে বলতে চাই, সরকার বেক্সিমকোতে হস্তক্ষেপ করুক। কারখানা খুলে দিয়ে আমাদের চাকরি বাঁচাক।’
আরও ৪০০ কোটি টাকা ঋণ চায় বেক্সিমকো
এদিকে বস্ত্র ও পোশাক কারখানার পরিচালন ব্যয় মেটাতে আরও ৪০০ কোটি টাকা ক্যাশ ক্রেডিট (সিসি) ঋণ চেয়েছে বেক্সিমকো। গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী ১৬ জানুয়ারি জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর ঋণ আবেদনটি করেন। আবেদনে একই সঙ্গে গত ডিসেম্বরভিত্তিক সব দেনা দুই বছরের জন্য মোরাটোরিয়াম (আইন করে সব ধরনের দেনা স্থগিত রাখা) সুবিধাসহ ৫ শতাংশ সুদে আগামী ১৫ বছর মেয়াদে পুনঃতপশিলিকরণ সুবিধা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। গত নভেম্বরে অর্থ মন্ত্রণালয়কে লেখা জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকটি পাওনা ২৩ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। যার মধ্যে ১৯ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা ক্ষতিজনক মানে শ্রেণীকৃত এবং বাকি ৩ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা মেয়াদোত্তীর্ণ।
বেক্সিমকো গ্রুপের আবেদনে জানানো হয়, জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে ২০১৯ সালে ২ হাজার ৩১২ কোটি, ২০২০ সালে ২ হাজার ৯৪ কোটি, ২০২১ সালে ৪ হাজার ৬৭ কোটি, ২০২২ সালে ৬ হাজার ৭১১ কোটি, ২০২৩ সালে ৩ হাজার ৭৪৬ কোটি এবং ২০২৪ সালে ৩ হাজার ৫২ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করেছে গ্রুপটি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ব যবস থ উপদ ষ ট গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্ঘটনায় আহত অভিনেত্রী খুশি, চোখের ওপর পড়েছে ১০ সেলাই
দুর্ঘটনার শিকার হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন ছোটপর্দার অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি। বুধবার সকালে রমনা পার্ক থেকে বাড়ি ফেরার সময় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় তিনি আহত হন। অভিনেত্রীর ছেলে সৌম্য জ্যোতি সমকালকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বুধবার সকালে আম্মু রমনা পার্কে হাটতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বাসায় ফেরার সময় গলির মধ্যে একটি অটোরিকশা তাকে ধাক্কা দিলে আম্মু ছিটকে পড়ে যায় এবং তার ঠিক চোখের ওপর জখম হয়। পরে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সিটি স্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন তিনি আপাতত ভালো আছেন।’
এদিকে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুর্ঘটনার বিষয়টি জানান শাহনাজ খুশি। সেখানে তিনি বলেন, ‘বেশি না, মাত্র ১০টা সেলাই পড়েছে। এ আর এমন কি বলেন? চোখটা অন্ধ হয় নাই, হয় নাই ব্রেইন হ্যামারেজের মত শেষ অবস্থা! সেটাই তো অনেক বেশি পাওয়া! এ তেমন কিছু না, চোখের উপরের সেনসেটিভ জায়গায় মাত্র ১০ টা সেলাই লেগেছে! আমি যে প্রাণে বেঁচে আছি এ জন্য মহান সৃষ্টিকর্তা কাছে শুকরিয়া আদায় করছি!’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘কিচ্ছু চাই না আমি, শুধু যে মায়েরা/বাবারা ছোট্ট বাচ্চাটার হাত ধরে রাস্তা পার হয়ে স্কুলে আসেন অথবা নানান প্রয়োজনে রাস্তায় যান, তাদের সতর্ক করতে পোস্টটা দিলাম। আমি হয়ত ভেঙেচুরে বেঁচে গেছি। কোন বাচ্চা এ আঘাত নিতে পারবে না! ব্যাটারি চালিত অসভ্য/বর্বর যানবাহনটি এবং তার অসভ্য চালক থেকে সর্বদা সতর্ক থাকবেন। যদিও আমি গলির ভেতরের রাস্তায়, প্রাতঃ ভ্রমণ শেষে অতি সর্তকতার সাথেই একেবারে কিনার দিয়ে হেঁটে ফিরছিলাম! ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বীরদর্পে চলে গেছে! ওরা মেধাবী যান চালক, কারো জীবনের ক্ষতির তোয়াক্কা করে না! আপনার এবং আপনার সন্তানের দায়িত্ব একান্তই আপনার। আজ চারদিন পরও মাথার অর্ধেকে কোন বোধশক্তি নাই!
সবশেষে তিনি লিখেছেন, ‘জানি না স্বাভাবিক চেহারায় ফিরবো কিনা, সেটা যদিও ফিরি রক্তাক্ত সেই পথে পড়ে থাকা সকালের ট্রমা অনেককাল ভুলবো না! কাতর অবস্থায় বিছানায় পরে থেকে বারবার একটা প্রশ্ন মনে আসছে, এই যে যত্রতত্র কুপিয়ে জখম, ট্রেন-বাস, রিকশা কিংবা প্রাইভেট গাড়িতে দিনেরাতে ছিনতাই। কার কাছে চাইব আমাদের সন্তানদের নিরাপদ পথচলা।’