পাহাড়ি কাঁঠাল-কলা থেকে হচ্ছে চিপস
Published: 24th, January 2025 GMT
দেশের পার্বত্য অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ মৌসুমি ফল উৎপাদন হলেও সংরক্ষণে নেই কোনো ব্যবস্থা। দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে পাঠানো যায় না অন্য এলাকাতেও। এতে কৃষক যেমন পান না ন্যায্য দাম, আবার নষ্টও হয় অনেক ফল। তবে মৌসুমি ফল দিয়ে চিপস তৈরি শুরু করেছেন রাঙামাটির তিন তরুণ উদ্যোক্তা। তাদের তৈরি পাহাড়ি কাঁঠাল ও কলার চিপস ইতোমধ্যে সাড়া ফেলেছে বাজারে।
ওই তিন উদ্যোক্তা হলেন– সুবিমল চাকমা, প্রমথ চাকমা ও সৌদি আরবপ্রবাসী শান্তু চাকমা। তারা জানান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) পোস্ট হারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগ থেকে ২০২২ সালে তারা প্রশিক্ষণ নেন। এরপর ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে ২০২৪ সালের মে মাসে রাঙামাটি শহরের আসাম বস্তি এলাকায় বাঁশের বেড়ার ছোট্ট একটি ঘরে কাঁঠাল ও কলার চিপস তৈরি শুরু করেন। পাহাড়ি আনারসহ অন্যান্য ফলের চিপস উৎপাদনের পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।
তারা আরও জানান, ইতোমধ্যে বিভিন্ন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তাদের উৎপাদিত চিপস দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হচ্ছে। কলা ও কাঁঠালের এসব চিপসের একটি প্যাকেটের দাম ধরা হয়েছে ৩০ টাকা।
সরেজমিন দেখা যায়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ছোট একটি কক্ষে ভ্যাকুয়াম ফাইন প্রযুক্তির মাধ্যমে দু’জন কারিগর ফ্রিজিং করা কাঁঠাল ও কলা থেকে চিপস তৈরি করছেন। পাশেই একজন তা প্যাকেটজাত করছেন। এক কারিগর জানান, মৌসুমের সময় কাঁঠাল সংগ্রহ করে তা প্রক্রিয়াজাত করে ডিপ ফ্রিজে রেখেছিলেন। সেগুলো দিয়েই এখন চিপস তৈরি করছেন।
প্রধান কারিগর রিটন চাকমা জানান, কলা ও কাঁঠাল চিপসের আকারে কেটে ফ্রিজে রাখা হয়। এরপর তা একটি মেশিনের মাধ্যমে তেলে ভাজা হয়। ২৫ থেকে ৩০ প্যাকেট চিপস ভাজতে লাগে ২২ থেকে ২৪ মিনিট। পরে স্বাদের জন্য কিছু মসলা মিশিয়ে তারপর প্যাকেটজাত করা হয়। বর্তমানে দিনে দুই থেকে আড়াইশ প্যাকেট চিপস তৈরি করছেন।
উদ্যোক্তা প্রমথ চাকমা জানান, চিপস বাজারজাত করতে দুটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছেন। ওই কোম্পানিগুলো তাদের কাছ থেকে চিপসের প্যাকেট নিয়ে বিক্রি করছে।
কারখানাটি দেখতে যাওয়া পরিতোষ তালুকদার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে কলা, আনারসসহ বিপুল পরিমাণ ফল উৎপাদন হয়। এগুলো যদি প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করা যায় তাহলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বেকারত্ব দূর করতেও সহায়তা করবে। আরেক দর্শনার্থী শিমুল চক্রবর্তী বলেন, কাঁঠাল ও কলার এসব চিপস অত্যন্ত সুস্বাদু। আবার প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত ফল থেকে তৈরি হচ্ছে ভেজালমুক্ত খাবার। এটি খুবই ভালো উদ্যোগ।
প্রধান উদ্যোক্তা সুবিমল চাকমা বলেন, পাহাড়ে উৎপাদিত কলা ও কাঁঠালের দাম পাওয়া যায় না বললেই চলে। আবার সংরক্ষণের ব্যবস্থাও নেই। কৃষক যেন উৎপাদিত ফলের সঠিক দাম পান সে জন্যই এ উদ্যোগ। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই চিপস বিদেশে রপ্তানিও সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, এখন পাইলট প্রকল্প হিসেবে চিপস তৈরি করা হচ্ছে। খুব দ্রুত উন্নত মেশিনের মাধ্যমে কলা ও কাঁঠাল থেকে চিপস তৈরি শুরু করবেন।
রাঙামাটি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহনাজ পারভীন বলেন, তিন তরুণ যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা প্রশংসনীয়। কারণ পাহাড়ে ব্যাপকভাবে কাঁঠাল উৎপাদন হলেও খাওয়ার লোক পাওয়া যায় না। অপচয় না করে অতিরিক্ত কাঁঠাল আধাসিদ্ধ করে ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। কলাও একইভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) উদ্ভাবিত মেশিনের মাধ্যমে তা তেলে ভেজে এবং আর্দ্রতা পরিমাপের পর প্যাকেটজাত করে বিক্রি হচ্ছে।
যেসব যুবক পড়াশোনা শেষ করে বেকার অবস্থায় রয়েছেন, তারা এ ধরনের উদ্যোগ নিয়ে স্বাবলম্বী হতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঠ ল ও কল উৎপ দ ত জ ত কর করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
কিউইদের ২৫০ রানের লক্ষ্য দিল ভারত
গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে দাপটের সঙ্গে হারানোর পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ভারত। ৩০ রানে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটার রোহিত শর্মা, শুভমন গিল ও বিরাট কোহলিকে হারায় তারা। সেখান থেকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৯ উইকেটে ২৪৯ রানের পুঁজি পেয়েছে ভারত।
টস হেরে ব্যাট করতে নামা ভারতীয় ব্যাটিং অর্ডারে প্রথম ধাক্কা দেন কাইল জেমিনসন। দারুণ ছন্দে থাকা গিলকে (১৫) ফেরান তিনি। এরপর ম্যাট হেনরির বলে সাজঘরে ফেরেন রোহিত (২) ও বিরাট (১১)। পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করা বিরাট পয়েন্টে গ্লেন ফিলিপসের হাতে দুর্দুান্ত এক ম্যাচ হয়ে ফিরে যান।
এরপর চারে নামা শ্রেয়াস আইয়ার ও পাঁচে নামা অক্ষর প্যাটেল ৯৮ রানের জুটি গড়েন। অক্ষর ৬১ বলে ৪২ রান করে আউট হন। তিনটি চারের সঙ্গে একটা ছক্কা মারেন তিনি। কেএল রাহুলের সঙ্গে ৪৪ রানের জুটি দিয়ে আউট হন আইয়ার। তিনি দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৯ রানের ইনিংস খেলেন। ৯৮ বলের ইনিংস চারটি চার ও দুটি ছক্কায় সাজান।
রাহুল সেট হলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। তিনি ২৯ বলে ২৩ রান করে আউট হন। হার্ডিক পান্ডিয়া দলকে আড়াই’ ছোঁয়া পুঁজি এনে দেন। তার ব্যাট থেকে ৪৫ বলে ৪৫ রানের ইনিংস আসে। চারটি চারের সঙ্গে দুটি ছক্কা মারেন এই ব্যাটার।
ভারতের ব্যাটিং অর্ডার ধসিয়ে দেওয়ার কাজটা করেছেন হেনরি। টপ অর্ডারে ধস নামানো এই পেসার ৮ ওভারে ৪৫ রান দিয়ে ৫ উইকেট তুলে নেন। জেমিনসন, ওরর্কি, মিশেল স্যান্টনার ও রাচিন রবীন্দ্র একটি করে উইকেট নেন। গ্রুপের এই শেষ ম্যাচের ফলের ওপর নির্ভর করছে সেমিফাইনালে কে কার মুখোমুখি হবে। জিতলে ভারত ফাইনালের লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়াকে পাবে। হারলে খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।