স্বামীর ‘দুর্নীতি’ আড়াল করতে ফাঁসলেন স্ত্রী
Published: 24th, January 2025 GMT
চট্টগ্রাম ওয়াসার গাড়িচালক স্বামী তাজুল ইসলামের ‘দুর্নীতির’ ৩২ লাখ টাকার সম্পদ আড়াল করতে গিয়ে ফাঁসলেন স্ত্রী খায়রুন নেছা। কাগজে-কলমে দুদক ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ পেলেও বাস্তবে ওই সম্পদের বর্তমান বাজারমূল্য পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা। ১৯৮৯ সালে মাত্র দুই হাজার টাকা বেতনে ওয়াসায় চালকের সহকারী (হেলপার) হিসেবে চাকরি শুরু করেছিলেন তাজুল। পদোন্নতি পেয়ে গাড়িচালক হলেও এখন বেতন পান ৩৫ হাজার টাকা। ওয়াসায় নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, চোরাই পানি বিক্রিসহ অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে কোটিপতি বনে গেছেন তিনি। দুর্নীতির অর্থ বৈধ করতে স্ত্রীকে কখনও পোলট্রি ব্যবসায়ী, কখনও কমিশন ব্যবসায়ী সাজিয়েছেন।
দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এর উপপরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, চালক তাজুল তাঁর অবৈধ অর্থ বৈধ করতে গৃহিণী স্ত্রীকে ব্যবসায়ী সাজালেও কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তদন্ত করে তাঁর স্ত্রীর নামে প্রায় ৩২ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। গত বুধবার চার্জশিট গ্রহণ করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালত।
খায়রুন নেছা বলেন, অনেক দিন ধরে আমরা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আসছি। মানবিক মানুষ হিসেবে আমার স্বামী আত্মীয়স্বজনের পাশাপাশি অনেককেই বিনা পয়সায় চাকরি দিয়েছেন। আমাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আমি ব্যবসা করে কোটিপতি হয়েছি।
ওয়াসার এই গাড়িচালক ও তাঁর স্ত্রীর নামে নগরীর পশ্চিম শহীদনগরের ৬৪৭/আই/১২১৪ নম্বর হোল্ডিংয়ে পাঁচতলা নিজস্ব বাড়ি রয়েছে। এ দম্পতি স্থাবর ও অস্থাবর ১ কোটি ৭২ হাজার টাকার সম্পদ অর্জন করে।
দুদক চার্জশিটে উল্লেখ করে, পেশায় গৃহিণী খায়রুন নেছা জমি, বাড়ি ও গাড়ির মালিক বনে যাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে তাঁর স্বামীর দুর্নীতি। খায়রুন নেছা তাঁর আয়কর নথিতে ২০০২-০৩ থেকে ২০২১-২২ করবর্ষ পর্যন্ত পোলট্রি ফার্মিং থেকে ২ লাখ ৮৯ হাজার টাকা, অন্য উৎস থেকে ১৪ লাখ, কমিশন ব্যবসা থেকে প্রায় পাঁচ লাখ, বাসা ভাড়া থেকে আট লাখ টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে আট লাখ, কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত আয় সাড়ে পাঁচ লাখ এবং মেয়ের বিয়ে বিচ্ছেদ বাবদ ১১ লাখসহ ৫৫ লাখ টাকা আয় প্রদর্শন করেছেন। দুদকের তদন্তে উঠে আসে, খায়রুন নেছার নিজস্ব কোনো আয়ের উৎস নেই। পৈতৃক জমি বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ, স্বামীর উপার্জনের টাকা এবং ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে জমি ক্রয় ও ভবন নির্মাণ করেছেন। তাঁর বৈধ আয় সাড়ে ৩৩ লাখ টাকা।
অন্যদিকে পোলট্রি ফার্ম থেকে, অন্য উৎস, কর অব্যাহতি ও কমিশন ব্যবসা থেকে আয়ের সপক্ষে তদন্তকালে তিনি কোনো দালিলিক প্রমাণ ও রেকর্ডপত্র দুদকের কাছে উপস্থাপন করতে পারেননি। খায়রুন নেছা তাঁর চাকরিজীবী স্বামীর অসাধু উপায়ে অর্জিত অর্থকে বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্যে আয়কর নথিতে ভুয়া আয়ের উৎস মিথ্যাভাবে প্রদর্শন করেছেন। গত ২০ বছরে তাঁর পারিবারিক ও অন্য খরচ সাড়ে ১০ লাখ টাকার তথ্য পাওয়া যায়। সে হিসাবে তাঁর বৈধ আয়ের উৎস সাড়ে ৩৩ লাখ টাকা থেকে কমে দাঁড়ায় ২৩ লাখ টাকা। তাঁর নামে স্থাবর ৩৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকা এবং অস্থাবর ২১ লাখ ৩০ হাজারসহ ৬০ লাখ টাকার সম্পদের মালিক খায়রুন নেছা। এখানে তিনি ১০ লাখ ১১ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করেছেন ৩১ লাখ ৩৮ হাজার টাকার।
দুদক হিসাবে ৩১ লাখ টাকার সম্পদ পেলেও বাস্তবে তাদের সম্পদের পরিমাণ পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকার বেশি। তাঁর পাঁচতলা বাড়িতে ১৭টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এখানে একটি ফ্ল্যাট সোয়া চার কোটি টাকা। জায়গার দাম কোটি টাকারও বেশি।
চালক তাজুল ইসলাম বলেন, আমি কোনো দুর্নীতি করিনি। বৈধভাবে স্ত্রী ব্যবসা করেই সম্পদের মালিক হয়েছেন। আদালতে সব প্রমাণ দিয়ে আইনি লড়াই করব।
.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কখনও বলিনি আমি আর অভিনয় করব না: নাঈম
নব্বই দশকের জনপ্রিয় নায়ক নাঈম। তবে এখন অভিনয়ে নেই। নানা ইস্যুতে আছেন আলোচনায়। ১৯৯৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘প্রেমের সমাধি’ সিনেমায় ‘চাচা, হেনা কোথায়?’ সংলাপটি কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। এ সংলাপকে কেন্দ্র করে আলোচনায় উঠে এসেছেন তিনি। সংলাপ ও সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
কেমন আছেন?
আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। নিজের মানসম্মান নিয়ে বেঁচে আছি। সবাই আমাকে এবং আমার পরিবারকে ভালোবাসে। এ ভালোবাসা নিয়েই জীবন চলে যাচ্ছে।
হঠাৎ করে ভাইরাল হলো ‘‘চাচা, হেনা কোথায়?’ সংলাপটি, এটার সঙ্গে তো আপনিও আলোচনায় এলেন...
দেখুন, ফিল্ম অনেক বড় বিষয়। প্রায় তিন দশক আগেও একটি সিনেমার ডায়ালগ নিয়ে মানুষ এখনও আলোচনা করছে। ‘চাচা, হেনা কোথায়? তার একটি দৃষ্টান্ত। গত এক মাস হলো আমি শুধু দেখছি, কীভাবে এটা পুরো দেশের মানুষের কাছে ছড়িয়ে পড়েছে। এটার দ্বারা প্রমাণ হয়, ভালো সিনেমা, ভালো সংলাপ ও ভালো শিল্পী কতটা দর্শকের মাঝে বেঁচে থাকেন। বিশেষ করে ‘প্রেমের সমাধি’ সিনেমার নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী বাপ্পারাজ-শাবনাজসহ পুরো টিমকে ধন্যবাদ জানাই। শাবনাজ যেহেতু এখন আমার জীবনসঙ্গী। সেই সূত্র ধরেই হয়তো আলোচনায়।
বাপ্পারাজ-শাবনাজ জুটি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
এটা তো পুরো দেশের মানুষের জানা। বাপ্পারাজের মতো অভিনেতা পাওয়া কঠিন। আমার স্ত্রী হিসেবে বলব না, ‘প্রেমের সমাধি’ সিনেমাসহ সব সময়ই ও ভালো অভিনয় করেছে। জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। তারা দু’জনই এককথায় অসাধারণ অভিনয়শিল্পী।
দর্শক তো এখনও আপনাকে অভিনয়ে চায়। অভিনয়ে ফেরার কোনো পরিকল্পনা আছে?
সেটা নির্ভর করবে নির্মাতা ও প্রযোজকের ওপর। তারা যদি আমার ইমেজ, স্টাইল ও প্রেজেন্টেশন নিয়ে ভেবে গল্প বানান আর আমার যদি ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই করব। একটা সময় আমি সিনেমা থেকে অনেক দূরে চলে গেছি। তবে আমি কখনও বলিনি যে, আমি অভিনয় করব না কিংবা সিনেমা নির্মাণ করব না। এখনও আমার ইচ্ছে করে ভালো গল্প নিয়ে একটা সিনেমা বানাব। সিনেমা তো আমার ভেতরে। আমি তো কাজ করতে চাই। ক্যামেরার পেছনে বা সামনে; একটা সময় অবশ্যই আমি করব। তবে সময়টা বলতে পারছি না।
আমাদের সিনেমা শিল্পকে এগিয়ে আপনার কোনো পরামর্শ আছে কী?
অনেক ধরনের মানুষ নিয়ে একটা সিনেমা বানাতে হয়। এখানে নির্মাতা, শিল্পী, টেকনিশিয়ানসহ অনেক বিষয় মাথায় রেখে চিন্তা করতে হয়। একটা ইন্ডাস্ট্রি দাঁড়াবে কীভাবে; এটা নিয়ে আমার একটা চিন্তা থাকতে পারে। আমার একার উদ্যোগ বা চিন্তা দিয়ে হবে না। এ ক্ষেত্রে সবার সমান প্রচেষ্টা থাকতে হবে। তা হলে একটা ইন্ডাস্ট্রি আপনা আপনিই এগিয়ে যাবে।
আপনি তো সাংস্কৃতিক পরিবারের ছেলে...
হ্যাঁ, আমি নবাব স্যার সলিমুল্লাহর প্রপৌত্র। এজন্য আমি গর্ববোধ করি। উপমহাদেশে ১৯৩৮ সালে কিন্তু ঢাকার নবাব পরিবার থেকেই প্রথম সবাক চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়। তখন আমাদের পরিবার থেকেই ছিল নির্মাতা, নায়ক ও ক্যামেরাম্যান। অর্থাৎ আমি যে পরিবারে বড় হয়েছি, এটা ছিল একটা সাংস্কৃতিকমনা পরিবার।
সিনেমা হল সংকট নিয়ে কী বলবেন?
আমাদের ভালো সিনেমা বানাতে হবে। তাহলে তো দর্শক সিনেমা হলে আসবে। ভালো সিনেমা না বানিয়ে দর্শকদের বলব আপনারা হলে আসছেন না কেন? এটা তো ঠিক না। আগে আমাদের ভালো সিনেমা বানাতে হবে। তাহলে দর্শক সিনেমা হলে আসবে। হল এমনিতে বাড়বে। এখানে সবার প্রচেষ্টা থাকতে হবে। কারও একার প্রচেষ্টায় হবে না।
সিনেমার স্বর্ণযুগ কি ফিরিয়ে আনা সম্ভব?
অবশ্যই সম্ভব। ‘না’ বলে আমার কাছে কথা নেই। তবে টাইম লাগে। সবাই মিলে একযোগ হয়ে যদি একটা প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করাতে পারি, তাহলে সব সম্ভব।
ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র অনেকেই বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন কিন্তু আপনি গ্রামে চলে গেলেন কেন?
ঢাকায় আমার দাদার বাড়ি আর টাঙ্গাইল নানার বাড়ি। ছোটবেলা থেকে নানার বাড়িতেই আমি বড় হয়েছি। গ্রামের মাটির সঙ্গে তো প্রতিটা মানুষ জড়িত। আমরা বিভিন্ন বিভাগের মানুষ। কর্মজীবনে আমাদের ঢাকায় থাকতে হয়। ঈদের ছুটিতে আমরা কীভাবে বাড়ি চলে যায়! তো কোনো সময় আমি চিন্তাও করিনি যে বিদেশে স্থায়ী হবো। সব সময় ভেবেছি, এ দেশেতে আমার জন্ম, এ দেশের মাটিতে যেন আমার মৃত্যু হয়।