বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার সীমান্তে অপরাধ দমনসহ সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আরাকান আর্মির সঙ্গে কাজ করতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান। তিনি বলেছেন, সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মি দখল নিয়েছে। সীমান্তে ওপারে যেই থাকুক না কেন, তাদের সঙ্গে আমাদের কাজ করতে হবে। কারণ রাখাইনে একটি সংকট পরিস্থিতি চলছে। মার্চ বা এপ্রিলে সেখানে একটি দুর্ভিক্ষ আসতে পারে। তখন সেখান থেকে আরও রাখাইন অধিবাসীদের বাংলাদেশে প্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর নিজস্ব ক্যাম্পাসে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস (সিপিজে) ‘ক্রাইম এগেইনস্ট হিউম্যানিটি ইন মিয়ানমার: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড ফর আইআইএমএম’ শীর্ষক লেকচারের আয়োজন করে। বাংলাদেশ সফররত মিয়ানমারের জন্য জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত ব্যবস্থা আইআইএমএমের প্রধান নিকোলাস কৌমজিয়ান তদন্তের বিষয়ে বক্তব্য দেন। সেই সঙ্গে সম্মানিত অতিথি হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড.

খলিলুর রহমানও বক্তব্য দেন। এ ছাড়া ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ডেভিড ডৌল্যান্ডের সভাপতিত্বে সিপিজের নির্বাহী পরিচালক মনজুর হাসান সমাপনী বক্তব্য দেন। এতে প্রশ্নোত্তর পর্ব সঞ্চালনা করেন সিপিজের উপনির্বাহী পরিচালক শাহরিয়ার সাদাত।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গার চেয়ে গাজা সংকট নিয়ে বেশি সচেতনতা রয়েছে জানিয়ে খলিলুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কার্যক্রম চলমান। রাখাইনে একটি পরিস্থিতি চলছে। আমরা সীমান্তে শান্তিপূর্ণ অবস্থান চাই। যেদিন সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মি দখলে নিয়েছে, তখন আমি কক্সবাজারে ছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষার বিষয়ে আমরা শক্ত অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সার্বভৌম দেশ হিসেবে সীমান্ত রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। এটিকে শান্তিপূর্ণ রাখা, প্রতিরক্ষা করা ও সুরক্ষিত করা আমাদের দায়িত্ব।

তিনি আরও বলেন, সীমান্তের অপর প্রান্তে যেই থাকুক না কেন, তাদের সঙ্গে আমাদের কাজ করতে হবে। মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সীমান্ত ২৭১ কিলোমিটার বিস্তৃত। এখান দিয়ে মানুষের যাতায়াত হয়। কখনও কখনও অস্ত্র ও মাদকও পাচার হয়ে থাকে। ওপারের সহযোগিতা না পেলে সীমান্ত সুরক্ষা করা কঠিন।

খলিলুর রমান বলেন, রাখাইনে বড় ধরনের মানবিক সংকট চলছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেখানে ওষুধ সরবরাহও কঠিন হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘ উন্নয়ন প্রকল্প (ইউএনডিপি) মনে করে, সংকটগুলো সমাধান করা না গেলে মার্চ অথবা এপ্রিলের মধ্যে রাখাইনে একটি দুর্ভিক্ষ আসবে। খালি পেট সীমান্ত বোঝে না। আমরা দেখেছি, ১২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আমরা আরও ১২ লাখ রাখাইন জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। এ কারণে সেখানে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো জরুরি।

রোহিঙ্গা দক্ষতা উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্প্রতি আমরা বিষয়গুলো নিয়ে বৈঠক করেছি। রোহিঙ্গাদের শিক্ষা, কারিগরি প্রশিক্ষণের বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় রয়েছে।

তদন্তে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে নিকোলাস কৌমজিয়ান বলেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যা হয়েছে তা আর কারও সঙ্গে হয়নি। আমরা তথ্য ও প্রমাণ সংগ্রহ করছি, যাতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি), আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত (আইসিজে) এবং আর্জেন্টিনার আদালতের কৌঁসুলিরা এগুলো ব্যবহার করে বিচার নিশ্চিত করতে পারে। আমাদের তদন্ত থেকে ভবিষ্যতে বিচার নিশ্চিত করা যাবে। এমনকি আমরা বর্তমানে চলা সংঘাতের তদন্তও করছি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আর ক ন আর ম ক জ করত তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্ঘটনায় আহত অভিনেত্রী খুশি, চোখের ওপর পড়েছে ১০ সেলাই

দুর্ঘটনার শিকার হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন ছোটপর্দার অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি। বুধবার সকালে রমনা পার্ক থেকে বাড়ি ফেরার সময় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় তিনি আহত হন। অভিনেত্রীর ছেলে সৌম্য জ্যোতি সমকালকে বিষয়টি জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, বুধবার সকালে আম্মু রমনা পার্কে হাটতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বাসায় ফেরার সময় গলির মধ্যে একটি অটোরিকশা তাকে ধাক্কা দিলে আম্মু ছিটকে পড়ে যায় এবং তার ঠিক চোখের ওপর জখম হয়। পরে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সিটি স্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন তিনি আপাতত ভালো আছেন।’

এদিকে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুর্ঘটনার বিষয়টি জানান শাহনাজ খুশি। সেখানে তিনি বলেন, ‘বেশি না, মাত্র ১০টা সেলাই পড়েছে। এ আর এমন কি বলেন? চোখটা অন্ধ হয় নাই, হয় নাই ব্রেইন হ্যামারেজের মত শেষ অবস্থা! সেটাই তো অনেক বেশি পাওয়া! এ তেমন কিছু না, চোখের উপরের সেনসেটিভ জায়গায় মাত্র ১০ টা সেলাই লেগেছে! আমি যে প্রাণে বেঁচে আছি এ জন্য মহান সৃষ্টিকর্তা কাছে শুকরিয়া আদায় করছি!’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘কিচ্ছু চাই না আমি, শুধু যে মায়েরা/বাবারা ছোট্ট বাচ্চাটার হাত ধরে রাস্তা পার হয়ে স্কুলে আসেন অথবা নানান প্রয়োজনে রাস্তায় যান, তাদের সতর্ক করতে পোস্টটা দিলাম। আমি হয়ত ভেঙেচুরে বেঁচে গেছি। কোন বাচ্চা এ আঘাত নিতে পারবে না! ব্যাটারি চালিত অসভ্য/বর্বর যানবাহনটি এবং তার অসভ্য চালক থেকে সর্বদা সতর্ক থাকবেন। যদিও আমি গলির ভেতরের রাস্তায়, প্রাতঃ ভ্রমণ শেষে অতি সর্তকতার সাথেই একেবারে কিনার দিয়ে হেঁটে ফিরছিলাম! ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বীরদর্পে চলে গেছে! ওরা মেধাবী যান চালক, কারো জীবনের ক্ষতির তোয়াক্কা করে না! আপনার এবং আপনার সন্তানের দায়িত্ব একান্তই আপনার। আজ চারদিন পরও মাথার অর্ধেকে কোন বোধশক্তি নাই!

সবশেষে তিনি লিখেছেন, ‘জানি না স্বাভাবিক চেহারায় ফিরবো কিনা, সেটা যদিও ফিরি রক্তাক্ত সেই পথে পড়ে থাকা সকালের ট্রমা অনেককাল ভুলবো না! কাতর অবস্থায় বিছানায় পরে থেকে বারবার একটা প্রশ্ন মনে আসছে, এই যে যত্রতত্র কুপিয়ে জখম, ট্রেন-বাস, রিকশা কিংবা প্রাইভেট গাড়িতে দিনেরাতে ছিনতাই। কার কাছে চাইব আমাদের সন্তানদের নিরাপদ পথচলা।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ