বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশ্রেণি হিমালয়ের বেশির ভাগ অংশ জুড়ে রয়েছে নেপাল। চৌদ্দটি আট হাজারী পর্বতশৃঙ্গের মধ্যে আটটিই এদেশে। এর মধ্যে ল্যাংটাং উপত্যকা নেপালের বাগমতি প্রদেশের রাসুওয়া জেলায় অবস্থিত। এবার সেই ল্যাংটাংয়ের তিনটি চূড়া জয় করেছেন বাংলাদেশের পাঁচ নারী। 
এভারেস্টজয়ী নিশাত মজুমদারের নেতৃত্বে এই নারীরা গত ২১ ডিসেম্বর থেকে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত শীতকালীন এ অভিযানে অংশ নেন। অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘সুলতানাজ ড্রিম অনবাউন্ড’ বা ‘সুলতানার স্বপ্ন অবারিত।’ 

এ উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আয়োজন করা হয় ‘ফ্ল্যাগ ইন সেরিমনি: উইমেনস উইন্টার এক্সপিডিশন’ শীর্ষক প্রেস মিট। পর্বতারোহী সংগঠন অভিযাত্রী আয়োজিত এ বিশেষ পর্বত অভিযানে সার্বিক সহযোগিতা দিয়েছে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড মাস্টারকার্ড ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। ৫ হাজার ৫০০ মিটার উচ্চতার ইয়ালা শৃঙ্গ, ৫ হাজার ১৪৫ মিটার উচ্চতার সুরিয়া শৃঙ্গ এবং ৪ হাজার ৭৪৭ মিটার উঁচু গাঁসাইকুণ্ড শৃঙ্গ জয় করেন নারী অভিযাত্রীরা। 

নাট্যব্যক্তিত্ব ত্রপা মজুমদারের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক।
এর আগে সুলতানার স্বপ্ন শীর্ষক ‘পায়রাবন্দ থেকে উলানবাটোর’ ও সুলতানার স্বপ্ন শীর্ষক গ্রন্থপাঠ নিয়ে ভিডিও প্রদর্শনী হয়। পরে নিশাত মজুমদার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ইউনেস্কো ও মাস্টারকার্ড প্রতিনিধির হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন। এরপর পাঁচ নারীর দুর্গম পর্বতযাত্রার বিভিন্ন মুহূর্ত নিয়ে তৈরি ডকুমেন্টেরি প্রদর্শিত হয়। 
পর্বতারোহী অন্যরা হলেন অর্পিতা দেবনাথ, ইয়াসমিন লিসা, তহুরা সুলতানা রেখা ও মৌসুমি আক্তার এপি ওরফে এপি তালুকদার। 
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অপর ট্রাস্টি সারা যাকের। বক্তব্য দেন ইউনেস্কোর ঢাকার হেড অব কমিউনিকেশন অ্যান্ড পাললিক এনগেইজমেন্টের নুসরাত আমিন এবং মাস্টারকার্ডের বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ক ত য দ ধ জ দ ঘর

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, বন্ধ মানবিক সহায়তাও

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ঘরবাড়ি ও তাঁবুর মতো আশ্রয়কেন্দ্রও ইসরায়েলি বর্বরতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার দেশটি। পাশাপাশি আট সপ্তাহ ধরে উপত্যকায় খাদ্য, ওষুধ ও ত্রাণসামগ্রী প্রবেশ বন্ধ করে রেখেছে। এ পরিস্থিতিকে জাতিসংঘ সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট হিসেবে বর্ণনা করেছে। 

আলজাজিরার সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, বুধবার রাতভর এবং বৃহস্পতিবার ভোরে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মধ্য গাজার নুসেইরাতের কাছে একটি তাঁবুতে তিন শিশু এবং গাজা শহরের একটি বাড়িতে এক নারী ও চার শিশু নিহত হয়েছেন। সাম্প্রতিক এক হামলায় স্থানীয় সাংবাদিক সাঈদ আবু হাসানাইনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে কমপক্ষে ২৩২ সাংবাদিক নিহত হলেন।
 
গাজার দেইর এল-বালাহ থেকে আলজাজিরার তারেক আবু আযুম বলেন, অবরুদ্ধ উপত্যকা স্পষ্টতই ইসরায়েলি সেনা বৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকটের সাক্ষী হচ্ছে। এখানকার অক্ষত ও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোও গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকারীরাও অসহায় হয়ে পড়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়াদের কাছে পৌঁছানোর জন্য তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
 
অধিকৃত পশ্চিম তীর পরিচালনাকারী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘ইসরায়েলের আক্রমণের কোনো বিরতি নেই, কোনো করুণা নেই, কোনো মানবতা নেই।’
 
প্রায় দুই মাস ধরে ইসরায়েল ত্রাণ সহায়তা অবরোধ করে রাখায় গাজার মানবিক সংকট আরও তীব্র হয়েছে। এটিকে জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ‘ফিলিস্তিনি জীবনের ইচ্ছাকৃত ধ্বংসাবশেষ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, গাজা উপত্যকা এখন সম্ভবত ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামলা শুরুর পর ১৮ মাসের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।
 
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অপুষ্টির সম্মুখীন নারী ও শিশুদের বিপজ্জনক ও বিপর্যয়কর ক্ষতির কথা তুলে ধরেছে। তারা অনেকেই পর্যাপ্ত খাবার, পানীয় জল এবং শিশুর খাবারের অভাবের মুখোমুখি হয়েছে। ইসরায়েলের গাজায় সাহায্য পাঠাতে অব্যাহত অস্বীকৃতি ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক আদালতের একটি আদেশকে লঙ্ঘন করে। সেই আদেশে দুর্ভিক্ষ ও অনাহার রোধে জরুরি ভিত্তিতে উপত্যকায় সাহায্য পৌঁছানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
 
গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে রাখা নিয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে) আগামী সপ্তাহে হেগে অনুষ্ঠিত গণশুনানির একটি সূচি প্রকাশ করেছে। সেখানে গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে জাতিসংঘ, এনজিওর কার্যকলাপকে অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে ইসরায়েলের আইনি বাধ্যবাধকতা নিয়ে আলোচনা করা হবে। আগামী সোমবার শুরু হতে যাওয়া এ শুনানির আগে প্রায় ৪৫টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা লিখিত বিবৃতি জমা দিয়েছে।
 
হাসপাতাল সূত্র আলজাজিরাকে জানিয়েছে, বুধবার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ১৮ মাসে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫১ হাজার ৩০৫ জন নিহত এবং ১ লাখ ১৭ হাজার ৯৬ জন আহত হয়েছেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ