Samakal:
2025-03-03@20:03:31 GMT

নয়পৌরে কথা

Published: 23rd, January 2025 GMT

নয়পৌরে কথা

সুহান রিজওয়ানের ‘নয়পৌরে’ তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ। মনে হয়েছে গল্পগুলো এক বসায় পড়ে ওঠার মতো। অবশ্য এক বসায় আমার পড়া হয়নি। মেট্রোরেলে যেতে-আসতে বেশ ক’দিন সময় নিয়ে পড়েছি। আমার ধারণা যাদেরই রিডার্স ব্লক চলছে, এ বই তাদের ব্লক কাটাতে সহায়ক হতে পারে। 
প্রথম গল্প, ‘ডেড সোলস’ পড়তে গিয়ে সাই-ফাই সিরিজ ‘ব্ল্যাক মিরর’–এর কথা মনে পড়তে পারে। সোশ্যাল মিডিয়ার ভার্চুয়াল জীবন থেকে আয়-উন্নতির প্রলোভন কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে তার টানটান কাহিনি। শুরু থেকেই গল্পের মধ্যে ঢুকে যেতে হয়। সমাপ্তির টুইস্টটা পরিচিত। অনুমেয়ও লাগতে পারে। 
দ্বিতীয় গল্পটা, ‘জট’ আমার ব্যক্তিগত পছন্দের। অদ্ভুতুড়ে, অতিপ্রাকৃতিক গল্পের মধ্যে যদি একটা লুক্কায়িত বার্তা থাকে, একটা দ্বিতীয় গল্প থাকে, চমৎকার ব্যাপার হয়। এই শহরের ভয়াল, স্থবির জ্যাম গল্পের নায়িকাকে যে পরিণতির মুখে ঠেলে দিয়েছে, আদতে আমরা সবাই বোধহয় এমন পরিণতি বরণ করে নিচ্ছি। ভূত-প্রেত-দানব বা শয়তানের চেয়ে এইসব দৈনন্দিন জীবনের হরর আমাকে বেশি অস্বস্তি দেয়। যে কারণে এই গল্প আমার কাছে শুধু এই বইয়ের প্রিয় গল্প হয়ে থাকবে। সামগ্রিকভাবে নয়। মনে হয়েছে, শেষ দিকে এখানে এ গল্পের আবহ অনেক বেশি ব্যাখ্যা করে ফেলেছেন লেখক। পাঠকের হাতে ছেড়ে দিলেই হয়তো ভালো হতো। 
পরবর্তী গল্পে একটা উৎসবের দিন, স্বামী-স্ত্রীর প্রতিদিনের স্বাভাবিক আলাপ, শীতল বিতণ্ডা এবং এসব থেকে একটি অবশ্যম্ভাবী মোচড় এবং ভয়াল পরিণতি–একটি নিখুঁত ‘নিত্যদিনের হরর’। দেখা যায়, স্ত্রী স্বামীকে এটা-ওটা কাজ করতে বলছেন, অনীহা দেখলে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন, উৎসবের দিনে বিশেষ খাবার বেড়ে দিচ্ছেন, এর মধ্যে সন্তান কাঁদছে। এইসব স্বাভাবিক দৈনন্দিন ঘটনার মধ্যে যে লুকিয়ে থাকা অস্বস্তি, তা একসময় প্রকট হয়ে ওঠে ক্রমশ দানবীয় রূপ ধারণ করে। শিহরণ জাগানো ভয়ের গল্প। এটিও বইয়ের অন্যতম প্রিয় গল্প হয়ে থাকবে। এর পরেরগুলোয় ‘সমাপ্তি’ বিষয়টি উপস্থিত মনে হয়েছে। বিশেষ করে ‘স্বপ্ন’ পড়তে গিয়ে ‘ফাইনাল ডেস্টিনেশন’ সিরিজের কথা মনে না পড়ার কোনো কারণ নেই। ‘বাজি’র সমাপ্তিতে কিছুক্ষণ বিষণ্ন হয়ে না থাকার উপায় নেই। ‘দ্বিতীয়জন’ গল্পের মূল বিষয় বেশ আলাদা। এমন গল্প আরও অননুমেয় হোক, এমনটাই আশা রাখব। ‘সঙ্গী’ গল্পটার প্রেক্ষাপট পরিবর্তন ছিল বৈচিত্র্যময়। ‘মাছবাজার’ গল্পটা হঠাৎ করে যেদিকে মোড় নেয়, তা অপ্রত্যাশিত ছিল। একটি বিশেষ পর্যবেক্ষণ ভাগ করে নিলে ভাবি পাঠকদের অসুবিধা হবে না আশা করি। ব্যক্তিগত অভিমত, গল্পটির মূল অতিপ্রাকৃত উপাদান ‘লাল থকথকে জেলি’ জাতীয় পদার্থ না হয়ে যদি বিমূর্ত কিছু হতো, পাঠক হয়তো আরও আনন্দ পেত। এরপরও ব্যক্তিগত জীবনের ভয় থেকে বৈশ্বিক আতঙ্ক তৈরি হওয়ার গল্পটিকে আলাদা অবস্থান দিতে হবে। সর্বশেষ গল্পটা ‘সিডি সংক্রান্ত জটিলতা’–মানুষের আদিম প্রবৃত্তির সঙ্গে শয়তানের উপাসনার বিষয় মিলিয়ে বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে এর সমাপ্তিটা যে অস্বস্তি সৃষ্টি করবে, তা সহজে ঝেড়ে ফেলা সম্ভব হবে না। 
সুহান রিজওয়ানের গদ্য ভালো। বিভিন্ন ঘটনা ও চরিত্র নিয়ে তাঁর ছোট ছোট লেখা পাঠককে আকর্ষণ করে। তবে এই বইয়ে তাঁর গদ্যের সেই বিশেষ সৌন্দর্য কম খুঁজে পেয়েছি। ঘটনা ও চরিত্রগুলোর বর্ণনা অনেকটাই একরৈখিক; তবে সিংহভাগ পাঠকের কাছে লেখাগুলো ভণিতাহীন বা মেদহীন মনে হতে পারে। এই ধারার গল্পকে মনে রাখতে হলে গল্পে স্বকীয়তা ও চমকপ্রদ সমাপ্তি উপকারী। বৈশিষ্ট্য দুটোর অভাব উপলব্ধি করেছি। সুহান রিজওয়ান আধুনিক সময়ের নিবিড় পর্যবেক্ষক। তাঁর ছোটগল্পে উঠে এসেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, আইপিএল, পর্নো সিডি, ইন্টারনেটসহ নানা বিষয়। বিষয়গুলো আকর্ষণ করবে যে কোনো পাঠককে। আবারও বলছি, অনেকদিন ধরে যারা পড়াশোনার বাইরে, তারা বইটিকে বেছে নিতে পারেন, পাঠাভ্যাস নতুন করে আয়ত্ত করার জন্য। v

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

মুনীর চৌধুরী জাতীয় নাট্য উৎসবের মঞ্চে ‘ইংগিত’

মুনীর চৌধুরী জাতীয় নাট্য উৎসবে ৬৩ জেলা হতে নির্বাচিত ১৬ নাটক নিয়ে ঢাকায় জাতীয় নাট্যশালায় উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণ বিভাগের আয়োজনে উৎসবের শেষ দিনে (শুক্রবার) মঞ্চায়ন করা হয় নাটক ‘ইংগিত’।

‘ইংগিত’র নাট্য ভাবনা, পরিকল্পনা, আলো ও নির্দেশনায় ছিলেন সুবীর মহাজন। সহকারী নির্দেশনায় আছাদ বিন রহমান ও পরিবেশনায় ছিল বান্দরবান পার্বত্য জেলা শিল্পকলা একাডেমি। বান্দরবানের বসবাসরত বিভিন্ন ভাষার জনগোষ্ঠীর মানুষ এত অংশ নেন।

নাটকের গল্পে দেখা যায়, পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তরুণদের বড় একটি অংশ হতাশায় নিমজ্জিত। অথচ তারুণ্যই বারবার পথ খুঁজে দিয়েছে। বহুভাষার মানুষের জেলা বান্দরবানের এক তরুণ বর্তমানের নানা পারিপার্শ্বিকতায় ক্লান্ত হয়ে যখন ঘুমের রাজ্যে, ঠিক তখন তার চোখ জুড়ে ফিরে আসে শৈশব-কৈশোর। ক্লান্ত শরীর তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে বাস্তবে। স্বপ্নের ঘোরে সে ঘুরে বেড়ায় প্রকৃতির রাজ্য বান্দরবানে, যেখানে রয়েছে জীবন ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যময় বিশাল ভাণ্ডার। ঘুম তাকে ফিরিয়ে দেয় সোনালী সময়। যখন বর্তমানে ফিরে আসে নানা জটিলতায় আবদ্ধ হয়ে পড়ে। সিস্টেম নামে এক জগদ্দল পাথর সরাতে চায় সে। পাহাড় আর সমতলকে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যতার এক সুতায় মেলবন্ধন ঘটাতে যে বদ্ধ পরিকর।

১৫ দিনব্যাপী কর্মশালার মধ্যে দিয়ে নাটকটি নির্মাণ করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অস্কার: সেরা সিনেমা ‘আনোরা’
  • সেরা সিনেমা ‘আনোরা’
  • টিএসসিতে সংগীত উৎসব
  • রমজানে গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি নিয়ে মার্কিন প্রস্তাবে রাজি ইসরায়েল
  • মুনীর চৌধুরী জাতীয় নাট্য উৎসবের মঞ্চে ‘ইংগিত’