শিক্ষা ব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ
Published: 23rd, January 2025 GMT
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী এক বিপ্লব ঘটিয়েছে। শিক্ষাও তার বাইরে নয়। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশেও এই প্রযুক্তি শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি, বিস্তার এবং শিক্ষার সামগ্রিক ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণে ব্যাপক সম্ভাবনার সুযোগ তৈরি করছে। আজ আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবসে প্রতিপাদ্য– ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও শিক্ষা: স্বয়ংক্রিয়তার যুগে মানবিক ক্ষমতা সংরক্ষণ’। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন নতুন সুযোগ ও সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে, এটি বর্তমানে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যক্তিকেন্দ্রিক শেখার অভাবনীয় সুযোগ প্রদান করছে, যা কিছুদিন আগেও আমাদের কল্পনায় ছিল না। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাডাপ্টিভ লার্নিং প্ল্যাটফর্মগুলো শিক্ষার্থীদের শেখার সক্ষমতা বিশ্লেষণ করে তাদের প্রয়োজন ও সক্ষমতা অনুযায়ী শেখার ক্ষেত্রকে সাজাতে এবং শেখার সুযোগ দিতে পারে।
একটি শ্রেণির প্রত্যেক শিক্ষার্থীর শেখার অগ্রগতি, পাঠে সম্পৃক্ততা এবং পারফরম্যান্সের তথ্য সংগ্রহ, পর্যবেক্ষণ করে এর আলোকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য আলাদা শেখার অভিজ্ঞতা প্রদান করতে পারে এআই; যার মাধ্যমে এ ধরনের প্রযুক্তি আমাদের শহর ও গ্রামের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য কমাতে সাহায্য করবে বলে আমরা আশাবাদী। এ ছাড়া শিক্ষকদের কাজকে সহজ করতে এআইর ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। শিক্ষকরা এখন এআইর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স পর্যবেক্ষণ; খুব সহজে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ প্রস্তুত করতে পারেন, যার ব্যবহার শিক্ষাদান পদ্ধতিকে আরও উন্নত করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।
বাংলাদেশের মতো দেশে, যেখানে জনসংখ্যার বড় অংশ এখনও মানসম্মত শিক্ষার আওতার বাইরে, সেখানে এআই শিক্ষার সামগ্রিক মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, যা সমতাভিত্তিক শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি ও বিস্তারে বিরাট অবদান রাখবে। এআইর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি। বাংলাদেশ এখন শিল্পবিপ্লব ৪.
যদিও এআই শিক্ষার মান উন্নয়নের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার, তবে এর বাস্তবায়নে বাংলাদেশে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত, দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনও পর্যাপ্ত প্রযুক্তিগত অবকাঠামোর অভাব রয়েছে। ইন্টারনেট সংযোগের সীমাবদ্ধতা, উন্নত কম্পিউটারের অভাবে এআইভিত্তিক সিস্টেমের ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে প্রযুক্তিগত সুবিধার ঘাটতি এআই বাস্তবায়নের পথে বড় বাধা। দ্বিতীয়ত, এআই ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তির অভাব রয়েছে। অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং শিক্ষা প্রশাসক আছেন, যারা এআই সম্পর্কে এখনও জানেন না। তাদের এআই ব্যবহারে প্রশিক্ষিত করতে সময় ও অর্থের প্রয়োজন। তৃতীয়ত, এআই বাস্তবায়নে বড় ধরনের আর্থিক বিনিয়োগ প্রয়োজন। বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে বাজেট সীমিত হওয়ায় এই বিনিয়োগকে কার্যকর করার জন্য পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদারিত্ব অপরিহার্য। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটি হলো শিক্ষার মানবিক দিক হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতি অতি নির্ভরশীলতা শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, মূল্যবোধ এবং সমালোচনামূলক চিন্তাধারার দক্ষতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
যদিও বর্তমানে এআই ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে সেগুলো মোকাবিলা করার জন্য সঠিক কৌশল গ্রহণ করলে এআই বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রকে অদূর ভবিষ্যতে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
এআইভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে আমরা শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের তরুণ প্রজন্মকে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত করতে পারি। বাংলাদেশ সরকার যদি এআইকে চলমান শিক্ষা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে, তাহলে পরবর্তীকালে শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হবে। এআই ব্যবহার করে ক্লাসরুমে শিক্ষাদান পদ্ধতিকে আরও আকর্ষণীয় ও কার্যকর করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের অভিজ্ঞতাকে বাস্তবধর্মী করা সম্ভব। তা ছাড়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের এসটিইএম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত) শিক্ষা উন্নত করা যাবে। এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আরও দক্ষ করে তোলার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ ব্যবস্থা আত্মস্থকরণেও এআই সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এক অপার সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ নিয়ে এসেছে। এটি সমভাবে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বৈষম্য দূর করতে অত্যন্ত কার্যকর একটি হাতিয়ার। তবে এ প্রযুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের জন্য যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তা মোকাবিলার জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ অত্যাবশ্যক। সঠিক পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিভিত্তিক অবকাঠামো গড়ে তোলা গেলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। এর মাধ্যমে আমরা এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারব, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিশ্বমানের দক্ষতায় উন্নীত করবে এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
মো. রমজান আলী: ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার ফর এডুকেশন, ইউনেস্কো, ঢাকা
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এআই ব যবহ র ব যবস থ র জন য ত করত
এছাড়াও পড়ুন:
ইউক্রেনে জেলেনস্কির বিকল্প নেতা খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র!
ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পদত্যাগ করা লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের একজন নেতা প্রয়োজন, তিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। তিনি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং এই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।’ খবর- সিএনএন
গণমাধ্যমের সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডার পর এ কথা বললেন তিনি। বাগবিতণ্ডার এ ঘটনাটি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিশ্বজুড়ে। ওই ঘটনার পর ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও বাতিল হয়ে যায়। আর এর পরই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কোন পথে, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।
এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শুক্রবারের ওই ঘটনায় সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গড়া ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আবারও এক টেবিলে বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া-দুই পক্ষই আলোচনায় না বসলে যুদ্ধ থামবে না। হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতণ্ডার পর থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আর কথা হয়নি। যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। তবে তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব রাখলে, মস্কোকে আলোচনায় যুক্ত করা সম্ভব হবে না। কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মনোভাবই দেখিয়ে আসছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, সবকিছু আবার শুরু হতে পারে। আশা করি, তিনি (জেলেনস্কি) এটা বুঝতে পারবেন যে আমরা আসলে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর আগে, তাঁর দেশকে সাহায্যের চেষ্টা করছি।’