কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে পিলখানা হত্যা মামলায় বন্দি সাবেক সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিডিআরের ১৬৭ জওয়ান মুক্তি পেয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ৪১ জন ও কাশিমপুর থেকে মুক্তি পেয়েছেন ১২৬ জন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে তারা মুক্তি পেয়ে যার যার বাড়ি চলে যান। এ সময় উভয় কারাফটকে আবেগঘন দৃশ্যের অবতারণা হয়। দীর্ঘদিন পর স্বজনকে কাছে পেয়ে মুক্তিপ্রাপ্ত বিডিআর জওয়ান অনেকেই কেঁদে ফেলেন।       
কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের বাইরে এদিন সকাল থেকে জওয়ানদের অপেক্ষায় ছিলেন স্বজন। তাদের হাতে দেখা গেছে ফুলের তোড়া। দুপুরে মুক্তিপ্রাপ্তরা একে একে বের হয়ে আসেন। এ সময় স্বজনকে কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তারা।  

কেরানীগঞ্জ কারাগারের বাইরে এদিন সকাল ৮টা থেকে মা-খালা, আত্মীয়স্বজন নিয়ে বাবা মনসুর আলীর অপেক্ষায় ছিল মেয়ে মালিহা জান্নাতুন। দুপুরে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুরের বাসিন্দা মনসুর আলী। মালিহা বলে, বাবা যখন জেলে যান তখন আমার বয়স ছিল তিন মাস। এখন আমি রণহাট্টা চৌরংগী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আমার মা জামনুর নাহারসহ খালাদের নিয়ে সকাল থেকে জেলখানার সামনে অপেক্ষায় আছি। আমার বাবা ১৬ বছর পর জেল থেকে মুক্তি পাওয়ায় আমরা অনেক আনন্দিত। আমার বাবা এখন মুক্ত বাতাসে বসবাস করবেন। আমরা বাবাকে নিয়ে ঘুরতে যাব। 
মুক্তি পাওয়া মনসুর আলী বলেন, ‘আমার মেয়েকে তিন মাস বয়সে রেখে গিয়েছিলাম। স্ত্রীকে বলেছিলাম, আমি যদি বের হতে না পারি তুমি আমাকে মাফ করে দিও। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, আমি নির্দোষ বলে ১৬ বছর পরে মুক্তি পেয়েছি। এখন মুক্ত বাতাসে থাকতে পারব।’
মুক্তিপ্রাপ্ত আরেক বিডিআর জওয়ান সুবেদার মুজাফফর হোসেন বলেন, আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া। সবার চেষ্টা ও সহযোগিতায় আজ মুক্ত। আমি ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে ছিলাম। নির্দোষ বলেই মুক্তি পেয়েছি।

জওয়ান মো.

শামসুদ্দিনের বোন মনোয়ারা বেগম ভাইয়ের জন্য কারাগারের মূল ফটকে ফুল নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন। মনোয়ারা বেগম বলেন, ১৬ বছর পর ভাই মুক্তি পাওয়ায় আমরা অনেক খুশি। আমাদের বাড়ি ভোলা জেলায়।
জওয়ান শামসুদ্দিন বলেন, ‘সবকিছুই আল্লাহর ইচ্ছা। কেউ পালিয়ে যায়, কেউ মুক্ত হচ্ছে। 
আমরা কোনো অপরাধ করিনি। অপরাধ করলে বেঁচে থাকতে পারতাম না। জীবন থেকে অনেক বছর ঝরে গেছে। এটা কেউ ফেরত দিতে পারবে না। বাকি জীবনটা যেন ভালোভাবে কাটিয়ে দিতে পারি।’
একই পরিবেশ দেখা গেছে কাশিমপুর কারাগারের বাইরেও। গতকাল বেলা ১১টার পর থেকে মুক্তি পাওয়া জওয়ানরা একে একে বের হতে থাকেন। দুপুর হওয়ার আগেই সবাই মুক্তি পেয়ে স্বজনের সঙ্গে যার যার বাড়ি চলে যান। কাশিমপুর কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আদালতের সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর বিডিআর জওয়ানদের মুক্তি দেওয়া হয়। ঢাকার বিশেষ ট্রাইবুনাল-২-এর বিচারক ইব্রাহিম মিয়া গত রোববার বিস্ফোরক আইনের মামলায় তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ড আর জওয় ন

এছাড়াও পড়ুন:

টেকনাফে মুরগির টাকা নিয়ে বিরোধ, হামলায় ক্রেতা নিহত

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার মুরগি বিক্রির বকেয়া টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় এক ক্রেতা নিহত হয়েছেন।

সোমবার (৩ মার্চ) দুপুরে উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের মনিরঘোনা মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন।

নিহত দিলদার মিয়া (৪৮) টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের মনিরঘোনা এলাকার আব্দুস সোবহানের ছেলে। তিনি মনিরঘোনা স্টেশনে মুরগির ব্যবসা করতেন।

আরো পড়ুন:

খাগড়াছড়িতে আঞ্চলিক দলের মধ্যে গোলাগুলি, গৃহবধূ নিহত

গাইবান্ধায় ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত নারীর পরিচয় মিলেছে 

নিহতের স্বজন ও স্থানীয়দের বরাতে ওসি গিয়াস উদ্দিন জানান, কিছুদিন আগে একই এলাকার আবুল হাশেমের ছেলে আব্দুল হাকিম দিলদার মিয়ার দোকান থেকে বাকিতে মুরগি কেনেন। দিলদার মিয়া পাওনা টাকা আদায়ের জন্য কয়েকবার তাগাদা দিলেও আব্দুল হাকিম টাকা পরিশোধ করেননি।

সোমবার দুপুরে মনিরঘোনা মসজিদের সামনে আবারো পাওনা চাওয়াকে কেন্দ্র করে দিলদার মিয়া ও আব্দুল হাকিমের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আব্দুল হাকিম ও তার সঙ্গে থাকা লোকজন মিলে দিলদার মিয়াকে মারধর শুরু করেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উখিয়ার পালংখালী স্টেশনের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন আরো জানান, ঘটনার পর থেকে আব্দুল হাকিমসহ অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

ঢাকা/তারেকুর/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ