জিয়াউল ও তার স্ত্রীর বিপুল অবৈধ-অস্বাভাবিক অর্থকড়ি, দুদকের মামলা
Published: 23rd, January 2025 GMT
ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জন এবং ব্যাংকে অস্বাভাবিক লেনদেনের সন্ধান পেয়ে চাকরিচ্যুত সাবেক সেনাকর্মকর্তা জিয়াউল আহসান ও তার স্ত্রী নুসরাত জাহানকে আসামি করে মামলা করেছে দুদক।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, তারা ২২ কোটি ২৭ লাখ ৭৮ হাজার ১৪২ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। জিয়াউল আহসানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৫৫ হাজার মার্কিন ডলারের হদিস মিলেছ। আর তাদের ব্যাংকিং চ্যানেলে ১২০ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
দুদকের ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো.
২০২৪ সালের ৬ আগস্ট আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) তখনকার মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে বরখাস্তের তথ্য জানানো হয়েছিল। ১৬ আগস্ট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছিল, ১৫ আগস্ট তাকে ঢাকার খিলক্ষেত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর হওয়া অনেক মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে। এখন বিচার প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যেই দুদকও তার বিরুদ্ধে মামলা করল।
বাদীর বর্ণনা অনুযায়ী, উচ্চপদস্থ সেনাকর্মতার হয়েও এ ধরনের অপকর্ম করায় জিয়াউল আহসান ও নুসরাত জাহান দুদক আইন-২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, দণ্ডবিধির ১৮৬০ এর ১০৯ ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪(২), ৪(৩) ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন-১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছন।
উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন বলেছেন, মামলার বিস্তারিত তদন্তের সময় অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাও খতিয়ে দেখা হবে।
এই মামলায় জিয়াউল আহসানকে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। বিস্তারিত পরিচয় তুলে ধরে অভিযোগে বলা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি নিজ নামে ২২ কোটি ২৭ লাখ ৭৮ হাজার ১৪২ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করেছেন। ২০০ সালের গাইডলাইন অব ফরেন এক্সচেঞ্জ ট্রান্সজেকশন-২০১৮ ও এফইপিডি সার্কুলার-৬ অনুযায়ী অনুমোদিত সীমালঙ্ঘন করে নিজ হিসাবে ৫৫ হাজার মার্কিন ডলার জমা করেছেন তিনি।
দুদকের এই মামলায় ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে নুসরাত জাহানকে, যার বিস্তারিত ঠিকানা তুলে ধরে এজাহারে বলা হয়েছে, তিনি তার স্বামীর অবৈধ সম্পদ ও অস্বাভাবিক ব্যাংক লেনদেনে পরস্পর যোগসাজস করেছেন। জিয়াউল আহসানের মতো নুসরাত জাহানের বিরুদ্ধেও চারটি একই ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে পাওয়া জিয়াউল আহসানের অবৈধ ধন-সম্পদের মধ্যে রয়েছে: ১৫ কোটি ৭৭ লাখ ৬৫ হাজার ৪৭৭ টাকার টাকার স্থাবর ও ১০ কোটি ৫২ লাখ ৩৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পদ, যা তিনি ভোগ দখলে রেখেছেন।
সেনাবাহিনী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুটি স্মারক ধরে পাওয়া রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দুদক জানতে পেরেছে, ১৯৯১-৯২ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বরখাস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত বেতন ও যাবতীয় ভাতাসহ (মিশনসহ) জিয়াউল আহসান মোট ২ কোটি ৪০ লাখ ২ হাজার ৩২৮ টাকা অর্জন করেছেন। যার মধ্যে বিভিন্ন তহবিলে ২৩ লাখ ৭৯ হাজার ৭৫৩ টাকা কেটে রাখা হয়েছে। তাহলে জিয়াউল আহসানের নিট সম্পদ দাঁড়ায় ২ কোটি ১৬ লাখ ২২ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা।
জিয়াউল আহসান তার আয়ের পক্ষে কৃষি খামার ও প্রচুর কৃষি জমির কথা বলেছেন। তবে দুদকের অনুসন্ধানে সেসবের বাস্তব অস্তিত্ব মেলেনি। এজাহারে বলা হয়েছে, ফলে এসব খাত থেকে দেখান আয় বৈধ বলে গ্রহণের সুযোগ নেই।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সংশোধিত এডিপি ৪৯ হাজার কোটি টাকা কমল
অতীতের মতো এবারও সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) আকার কমানো হলো। এবার কমল ৪৯ হাজার কোটি টাকা। ফলে সংশোধিত এডিপির আকার দাঁড়াল ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। এর আগে কখনো এডিপি এতটা কাটছাঁট করা হয়নি।
আজ সোমবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় সংশোধিত এডিপি পাস হয়। ঢাকার শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলনকক্ষে এই সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্পের সংখ্যা ১ হাজার ৪৩৭।
এদিকে আজ এনইসি সভায় মূল এডিপির বাইরে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন খরচ বাবদ ১০ হাজার ১২৬ কোটি টাকা পাস করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এডিপির আকার দাঁড়াল ২ লাখ ২৬ হাজার ১২৬ কোটি টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত হারে বাস্তবায়ন না হওয়ায় এর আকার কমানো হয়। সংশোধিত এডিপি প্রণয়ন করতে গিয়ে দেশীয় উৎসের অর্থ কমেছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। বিদেশি সহায়তা কমেছে ১৯ হাজার কোটি টাকা। এখন সংশোধিত এডিপিতে দেশীয় উৎসের অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি সহায়তা ধরা হয়েছে ৮১ হাজার কোটি টাকা।
অন্যবারের মতো এবারও স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবায় বরাদ্দ কমানো প্রসঙ্গে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘শিক্ষার অনেক প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে, তাই বন্ধ করে দিয়েছি। স্বাস্থ্যসেবা খাতেও বরাদ্দ কমানো হয়েছে। এই দুই খাতেই দুর্নীতির প্রমাণ আমরা পেয়েছি। ফলে অনেক প্রকল্প আমরা বন্ধ করে দিয়েছি।’
এবার সংশোধিত এডিপিতে স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ কমানো হয়েছে। এ খাতে এখন বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ৫ হাজার ৬৬৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এডিপিতে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা।
কোন খাতে কত বরাদ্দ
সংশোধিত এডিপিতে মোটাদাগে শীর্ষ পাঁচটি খাত পেয়েছে ৬৩ শতাংশের বেশি অর্থ। এর মধ্যে বরাদ্দের দিক থেকে শীর্ষে আছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। এ খাতে বরাদ্দ ৪৮ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা, যা প্রস্তাবিত সংশোধিত এডিপির ২২ শতাংশের বেশি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। এই খাতে বরাদ্দ হয়েছে ৩১ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা, যা সংশোধিত এডিপির প্রায় ১৫ শতাংশের মতো। তৃতীয় সর্বোচ্চ ২০ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা বা সংশোধিত এডিপির সাড়ে ৯ শতাংশ বরাদ্দ মিলেছে শিক্ষা খাতে।
এ ছাড়া গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলি খাতে ১৯ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা এবং স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগ ১৬ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে।
জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এক টাকাও খরচ করতে পারেনি ৮৯ প্রকল্প। অন্যদিকে ১ শতাংশও কাজ হয়নি ১২১ প্রকল্পে।