ক্ষমতার অপব‌্যবহার ও দুর্নীতির মাধ‌্যমে বিপুল সম্পদ অর্জন এবং ব্যাংকে অস্বাভাবিক লেনদেনের সন্ধান পেয়ে চাকরিচ্যুত সাবেক সেনাকর্মকর্তা জিয়াউল আহসান ও তার স্ত্রী নুসরাত জাহানকে আসামি করে মামলা করেছে দুদক।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, তারা ২২ কো‌টি ২৭ লাখ ৭৮ হাজার ১৪২ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। জিয়াউল আহসানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৫৫ হাজার মার্কিন ডলারের হদিস মিলেছ। আর তাদের ব‌্যাংকিং চ্যানেলে ১২০ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

দুদকের ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপ-প‌রিচালক মো.

সালাহউদ্দিন বা‌দী হ‌য়ে দুর্নীতি ও অর্থপাচারের চারটি ধারায় বৃহস্পতিবার মামলাটি ক‌রেছেন।

২০২৪ সালের ৬ আগস্ট আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) তখনকার মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে বরখাস্তের তথ্য জানানো হয়েছিল। ১৬ আগস্ট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছিল, ১৫ আগস্ট তাকে ঢাকার খিলক্ষেত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর হওয়া অনেক মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে। এখন বিচার প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যেই দুদকও তার বিরুদ্ধে মামলা করল।

বাদীর বর্ণনা অনুযায়ী, উচ্চপদস্থ সেনাকর্মতার হয়েও এ ধরনের অপকর্ম করায় জিয়াউল আহসান ও নুসরাত জাহান দুদক আইন-২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, দণ্ডবিধির ১৮৬০ এর ১০৯ ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪(২), ৪(৩) ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন-১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ ক‌রে‌ছন।

উপ-প‌রিচালক মো. সালাহউদ্দিন বলেছেন, মামলার বিস্তারিত তদন্তের সময় অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাও খতিয়ে দেখা হবে।

এই মামলায় জিয়াউল আহসানকে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। বিস্তারিত পরিচয় তুলে ধরে অভিযোগে বলা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি নিজ নামে ২২ কোটি ২৭ লাখ ৭৮ হাজার ১৪২ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করেছেন। ২০০ সালের গাইডলাইন অব ফরেন এক্সচেঞ্জ ট্রান্সজেকশন-২০১৮ ও এফইপিডি সার্কুলার-৬ অনুযায়ী অনুমোদিত সীমালঙ্ঘন করে নিজ হিসাবে ৫৫ হাজার মার্কিন ডলার জমা করেছেন তিনি।

দুদকের এই মামলায় ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে নুসরাত জাহানকে, যার বিস্তারিত ঠিকানা তুলে ধরে এজাহারে বলা হয়েছে, তিনি তার স্বামীর অবৈধ সম্পদ ও অস্বাভাবিক ব্যাংক লেনদেনে পরস্পর যোগসাজস করেছেন। জিয়াউল আহসানের মতো নুসরাত জাহানের বিরুদ্ধেও চারটি একই ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে পাওয়া জিয়াউল আহসানের অবৈধ ধন-সম্পদের মধ্যে রয়েছে: ১৫ কোটি ৭৭ লাখ ৬৫ হাজার ৪৭৭ টাকার টাকার স্থাবর ও ১০ কোটি ৫২ লাখ ৩৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পদ, যা তিনি ভোগ দখলে রেখেছেন।

সেনাবাহিনী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুটি স্মারক ধরে পাওয়া রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দুদক জানতে পেরেছে, ১৯৯১-৯২ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বরখাস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত বেতন ও যাবতীয় ভাতাসহ (মিশনসহ) জিয়াউল আহসান মোট ২ কোটি ৪০ লাখ ২ হাজার ৩২৮ টাকা অর্জন করেছেন। যার মধ্যে বিভিন্ন তহবিলে ২৩ লাখ ৭৯ হাজার ৭৫৩ টাকা কেটে রাখা হয়েছে।  তাহলে জিয়াউল আহসানের নিট সম্পদ দাঁড়ায় ২ কোটি ১৬ লাখ ২২ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা।

জিয়াউল আহসান তার আয়ের পক্ষে কৃষি খামার ও প্রচুর কৃষি জমির কথা বলেছেন। তবে দুদকের অনুসন্ধানে সেসবের বাস্তব অস্তিত্ব মেলেনি। এজাহারে বলা হয়েছে, ফলে এসব খাত থেকে দেখান আয় বৈধ বলে গ্রহণের সুযোগ নেই।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

টাকা জমা রেখে ১৩% পর্যন্ত মুনাফা পাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা

সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সাধারণ ভবিষ্য তহবিল (জিপিএফ) ও প্রদেয় ভবিষ্য তহবিলে (সিপিএফ) টাকা জমা রাখার বিপরীতে মুনাফা হার গত অর্থবছরের মতই ১১ থেকে ১৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের জন্য এ হার নির্ধারণ করে আজ বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জমা রাখলে মুনাফা মিলবে ১৩ শতাংশ। ১৫ লাখ ১ টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত রাখলে মুনাফা পাওয়া যাবে ১২ শতাংশ এবং ৩০ লাখ ১ টাকার বেশি টাকা জমা রাখার বিপরীতে ১১ শতাংশ মুনাফা মিলবে।

জিপিএফ-সিপিএফে টাকা রাখলে সরকারি কর্মচারীরা একসময় ১৩–১৪ শতাংশ সুদ পেতেন। এই হারকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে কমিয়ে ১১ থেকে ১৩ শতাংশ করা হয়। গত ২০২৩–২৪ অর্থবছর এ হার অব্যাহত ছিল। বুধবার নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে একই সুদহার বহাল রাখা হয়। তবে সঞ্চয়পত্রের সুদও এত বেশি নয়—সর্বোচ্চ  ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

একসময় সরকারি কর্মচারীরা মূল বেতনের ৮০ শতাংশ পর্যন্ত জিপিএফে টাকা রাখতে পারতেন। তবে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ বিভাগ সুদের হার না কমিয়ে জিপিএফে টাকা রাখার সীমা কমিয়ে মূল বেতনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনে। যেসব কর্মকর্তা–কর্মচারী রাজস্ব খাত থেকে বেতন পান, তারা টাকা রাখেন জিপিএফে। আর যারা রাজস্ব খাতের বাইরে থেকে বেতন পান, তারা টাকা রাখেন সিপিএফে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনের মতো সিপিএফভুক্ত সব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সংগতি এক রকম না হওয়ায় তারা নিজস্ব আর্থিক বিধিবিধানের আলোকে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মচারীদের জন্য জিপিএফের স্লাবভিত্তিক মুনাফার হারকে সর্বোচ্চ ধরে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী মুনাফা হার নির্ধারণ করতে পারবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ২১ কোম্পানির অর্ধবার্ষিকে মুনাফা বেড়েছে
  • সরকারি ব্যয়ের ৬১ শতাংশই সুদ বেতন পেনশনে
  • আয়কর রিটার্ন জমার সময় আরও বাড়ল
  • আয়কর রিটার্ন জমার সময় বাড়তে পারে ১৫ দিন
  • ১১ বছরে কমেছে শিল্প খাতের অবদান: বিবিএস
  • টাকা জমা রেখে ১৩% পর্যন্ত মুনাফা পাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা
  • ৬ কোম্পানির অর্ধবার্ষিকে মুনাফা বেড়েছে
  • মুনাফায় বেক্সিমকো ফার্মা, লোকসানে বেক্সিমকো-শাইনপুকুর
  • ভিয়েতনাম থেকে এক লাখ টন চাল আনছে সরকার
  • অর্ধবার্ষিকে দুই কোম্পানির মুনাফা কমেছে