আলোচিত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসা‌নের দুর্নী‌তির কার‌ণে ফেঁসে গে‌লেন স্ত্রী নুসরাত জাহান। স্বামীর দুর্নী‌তির সহ‌যো‌গিতায় স্ত্রীর হেফাজ‌তে পাওয়া গে‌ছে ১৮ কো‌টি ৫৯ লাখ ৩১ হাজার ৩৫৮ টাকার অবৈধ সম্পদের তথ‌্য।

শুধু তাই নয়, স্ত্রীর চার ব‌্যাংক হিসা‌বে মি‌লে‌ছে প্রায় ২২২.৫০ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন। দুর্নী‌তি দমন ক‌মিশ‌নের তদ‌ন্তে তথ‌্য প্রমাণ উঠে আসায় নুসরাত জাহান ও তার স্বামী চাক‌রিচ‌্যুত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসা‌নের বিরু‌দ্ধে আরও একটা মামলা ক‌রে‌ছে দুর্নী‌তি দমন ক‌মিশন।

এর আগে বিপুল অং‌কের অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ মা‌নিলন্ডা‌রিংয়ের অভিযোগে জিয়াউল আহসান ও স্ত্রী নুসরা‌তের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। বৃহস্প‌তিবার (২৩ জানুয়ারি) দুর্নীতি দমন কমিশন জেলা কার্যালয়য়ের (ঢাকা-১) ক‌মিশ‌নের সহকারী পরিচালক সৌরভ দাশ মামলা ক‌রেন। মামলা নম্বর ৭৭।

মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ১০৯ ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২), ৪(৩) ধারা আনা হ‌য়ে‌ছে।

মামলার এজাহা‌রে বলা হয়, নুসরাত জাহান (স্বামী জিয়াউল আহসান) বিভিন্ন অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ নামে ১৮ কোটি ৫৯ লাখ ৩১ হাজার ৩৫৮ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন ও তার স্বামী জিয়াউল আহসানের মাধ্যমে অধৈভাবে অর্জিত অর্থ গোপন ও তার নামে ৪টি সক্রিয় ব্যাংক হিসাবে প্রায় ২২২.

৫০ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন করে পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরপূর্বক দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ১০৯ ধারা ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২), ৪(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণে বলা হয়, নুসরাত জাহান তার নিজ নামে ১৪,০৭,৪১,৭৭০ টাকার স্থাবর সম্পদ ও ৩,৬৩,২০,৫৬৭ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট (১৪,০৭,৪১,৭৭০+ ৩,৬৩,২০,৫৬৭) ১৭,৭০,৬২,৩৩৭ টাকার সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখেছেন।

অনুসন্ধানে নুসরাত জাহানের ২০১৯-২০২০ করবর্ষ হতে ২০২৪-২০২৫ করবর্ষ পর্যন্ত আয়কর নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তার মোট আয়ের পরিমাণ ১৩,৩৭,১৯,৭২৪ টাকা, মোট ব্যয় ১,২৮,৮৫,০৩৫ টাকা, বিগত দিনের সঞ্চয় ৮,০০,০০০ টাকাসহ মোট বৈধ আয়ের উৎসের পরিমাণ ১২,১৬,৩৪,৬৮৯ টাকা। সর্বশেষ করবর্ষ শেষে ক্রমপুঞ্জি সঞ্চয় ১২,১৬,৩৪,৬৮৯ টাকা ও নীট সম্পদের পরিমাণ ১২,১৫,৩৫,৯৮৪ টাকা। নুসরাত জাহান ২০২৪-২০২৫ করবর্ষে সম্পত্তি অধিগ্রহণের ক্ষতি বাবদ প্রাপ্তি ১২,৩৯,৪৫,৩৫০ টাকা প্রদর্শন করলেও ভূমি অধিগ্রহণ শাখা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ঢাকা অধিগ্রণের ক্ষতিপূরণ বাবদ মোট ৯টি এল.এ চেকের মাধ্যমে ১৭,৬৫,৯৫,৫২৬ টাকা দেন বলে অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়।

সম্পত্তি অধিগ্রহণের ক্ষতি বাবদ প্রাপ্ত ও আয়কর রিটার্নে প্রদর্শিত ১২,৩৯,৪৫,৩৫০ টাকা নুসরাত জাহান কর্তৃক অর্জিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনে ব্যবহার হয়নি বিধায় এই আয়কে তার অর্জিত সম্পত্তির বিপরীতে বৈধ আয় হিসেবে মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। অনুসন্ধানে সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা ও সরেজমিনে প্রদর্শন করে নুসরাত জাহানের নামে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত কোন মৎস্য ও পোল্ট্রি খামারের বর্তমান অস্তিত্ব ও পূর্বে ছিল বলে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি বিধায় ২০১৯-২০২০ করবর্ষ হতে ২০২১-২০২২ করবর্ষ পর্যন্ত প্রদর্শিত ৬৫,৫৮,৩৬০ টাকা তার অর্জিত সম্পত্তির বিপরীতে বৈধ আয় হিসেবে মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই।

নুসরাত জাহানের বিগত বছরের সঞ্চয় বাবদ প্রদর্শিত ৮,০০,০০০ সঠিক আছে বলে অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়। নুসরাত জাহানের প্রকৃত আয়ের পরিমাণ ৩২,১৬,০১৪ টাকা বলে অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়। নুসরাত জাহানের বিগত বছরের সঞ্চয় ৮,০০,০০০ টাকাসহ নিট আয়ের পরিমাণ ৪০,১৬,০১৪টাকা। অনুসন্ধানকালে নুসরাত জাহানের অদ্যাবদি প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে ঋণ গ্রহণের সত্যতা পাওয়া না যাওয়ায় তা দায় হিসেবে গণ্য করা হয়নি। অনুসন্ধানকালে নুসরাত জাহান (৩,৬৩,২০,৫৬৭) = ১৭,৭০,৬২,৩৩৭ টাকার সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগ দখলে রেখেছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়।

অনুসন্ধানে সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নুসরাত জাহান ২০২০ হতে ৩১/১২/২৪ পর্যন্ত মোট ২৭,১০,৫৬,১৮৫ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেন, যার কোনো ধারা বৈধ উৎস অনুসন্ধানকালে পাওয়া যায়নি।

নুসরাত জাহানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৩৪.৬৭ কোটি টাকা জমা প্রদান করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে নুসরাত জাহানের নামে ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, বনানী শাখায় বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৪৪.০৪ কোটি টাকা উত্তোলনের প্রমাণ পাওয়া যায়। নুসরাত জাহানের নামে ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, বনানী শাখায় ৯১,৭২,৯১৫ টাকা ও আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর ব্যাংক হিসাবে ৩৭,৮৫,৮৪৫ টাকাসহ মোট ১,২৯৫৮,৭৬০ টাকা স্থানান্তরের প্রমাণ পাওয়া যায়। জলসিঁড়ি আবাসন প্রকল্পের ট্রাস্ট ব্যাংক নামে হিসাব ও আর্মি ওয়েল-ফেয়ার ট্রাস্ট এর ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরিত অর্থের প্রকৃত কারণ ও উৎস জানা যায়নি।

অনুসন্ধানকালে নুসরাত জাহান ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে স্থায়ী, চলতি ও সঞ্চয়ী হিসাবের সন্ধান পাওয়া যায়, যার মধ্যে বর্তমানে নুসরাত জাহানের নামে ৪টি ব্যাংক হিসাব সক্রিয় থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। সক্রিয় ব্যাংক হিসাবগুলোতে মোট উত্তোলনের পরিমাণ ১০৯,৬০,৬৭,৫১৪ টাকাসহ সর্বমোট প্রায় ২২২.৫০ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া যায়, যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২), ৪(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র পর ম ণ প রদর শ ট ক সহ গ রহণ দমন ক

এছাড়াও পড়ুন:

জবি শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রদল কর্মীর নেতৃত্বে হামলার অভিযোগ, প্রতিবাদে বিক্ষোভ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এ বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে দ্রুত বিচার দাবি করেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হলেন, জবির রসায়ন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আকাশ আলী, তামান্না তাবাসসুম ও আবুল বাসার। অপরদিকে, হামলার নেতৃত্ব দেওয়া অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী অনিক কুমার দাশ মার্কেটিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ।

এর আগে, গতকাল বুধবার (২৯ জানুয়ারি) জবির কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মার্কেটিং বিভাগের দুই শিক্ষার্থী জুতা পায়ে উঠলে রসায়ন বিভাগের দুই শিক্ষার্থী তার প্রতিবাদ করে। এতে তাদের ওপর হামলা চালায় মার্কেটিং বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী।

এ হামলার নেতৃত্ব দেন জবি ছাত্রদল কর্মী ও মার্কেটিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অনিক কুমার দাশ। এতে আরো যুক্ত ছিলেন, মাহফুজুর রহমান চৌধুরী মাহী, আয়ান, আরিফ, রাতুল, আসিফসহ আরো ১৫ জন।

এ হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, গত ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা আর কোন দমন-পীড়ন বরদাস্ত করব না। আর কাউকে ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠার সুযোগ দেওয়া হবে না। এর আগের হামলাগুলোর ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে আজ আমাদের এখানে দাঁড়াতে হত না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করুক। আমরা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

রসায়ন বিভাগের ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী ২০২০ -২০২১ সেশনের তামান্না তাবাসসুম বলেন, “আমরা প্রক্টরের কাছে গিয়েছিলাম। তারা আমাদের কোন সহযোগিতা করেনি। আমরা তাহলে কার কাছে যাব? আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।”

একই বিভাগের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন বলেন, “গতকালের ঘটনার পর আমরা প্রক্টরের কাছে যাওয়ার পর তিনি আমাদের বলেন, ২০০৫ সালের নীতিমালা পড়ার জন্য। এ বিষয়ে তারা কি পদক্ষেপ নেবে, সে ব্যাপারে তিনি আমাদের কিছু জানাতে পারেননি। বরং আমাদের বিভাগের শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। যদি এ ঘটনায় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আমরা প্রশাসন ও যে দলের  প্রশ্রয়ে এ ঘটনা ঘটেছে, তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন গড়ে তুলবে। সেই সঙ্গে আমরা ক্লাস বর্জনের ডাক দেব।”

আব্দুল কাহহার জামিল বলেন, “গতকালের ঘটনায় প্রক্টর স্যার আমাদের কোন খোঁজ নেননি। রাত ১০টার পর একজন সহকারী প্রক্টরকে পাঠান। তিনি চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা দেন। কিন্তু প্রক্টর স্যারের সঙ্গে আমরা কথা বলতে গেলে তিনি দুর্ব্যবহার করেন। গত ১ বছরে আামদের বিভাগের শিক্ষার্থীরা তিনটি হামলার অভিযোগ করলেও সুষ্ঠু বিচার পাননি। যদি ওই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হত, তাহলে আজ আমাদের এখানে দাঁড়াতে হত না। আমরা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”

তিনি বলেন, “বিচারের নামে টালবাহানা করা হয়। আমাদের প্রক্টর অফিস থেকে ভয় দেখিয়ে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। এছাড়া আমাদের নানা হুমকি দিয়ে ভয় দেখনো হয়। বলা হয়, যদি ক্যাম্পাসের বাইরে কেউ হামলা করে, তাহলে সে দায় প্রক্টর অফিস নেবে না।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, “সবকিছুর জন্য সময় দরকার। রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা যেভাবে বিচার চাচ্ছে, সেটা এত দ্রুত সম্ভব না। আগের একটা কমিটি আছে, সে কমিটির কাছেই আমি এটার তদন্ত হস্তান্তর করেছি।”

তিনি বলেন, “হ্যাঁ, আমি তাদের ২০০৫ সালের নীতিমালা পড়তে বলেছি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামীকাল ভর্তি পরীক্ষা আছে। সব মিলিয়ে ব্যস্ততার মধ্যে আছি।”

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জবি শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রদল কর্মীর নেতৃত্বে হামলার অভিযোগ, প্রতিবাদে বিক্ষোভ
  • ৮ ঘণ্টায়ও সড়ক ছাড়েনি তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা, দুর্ভোগ
  • অনশন: তিতুমীরের ৩ শিক্ষার্থী হাসপাতালে 
  • আবারো বাড়তে পারে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়