আরো এক মামলা: জিয়াউলের দুর্নীতিতে ফেঁসে গেলেন স্ত্রী নুসরাত
Published: 23rd, January 2025 GMT
আলোচিত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের দুর্নীতির কারণে ফেঁসে গেলেন স্ত্রী নুসরাত জাহান। স্বামীর দুর্নীতির সহযোগিতায় স্ত্রীর হেফাজতে পাওয়া গেছে ১৮ কোটি ৫৯ লাখ ৩১ হাজার ৩৫৮ টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য।
শুধু তাই নয়, স্ত্রীর চার ব্যাংক হিসাবে মিলেছে প্রায় ২২২.৫০ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে তথ্য প্রমাণ উঠে আসায় নুসরাত জাহান ও তার স্বামী চাকরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে আরও একটা মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
এর আগে বিপুল অংকের অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে জিয়াউল আহসান ও স্ত্রী নুসরাতের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দুর্নীতি দমন কমিশন জেলা কার্যালয়য়ের (ঢাকা-১) কমিশনের সহকারী পরিচালক সৌরভ দাশ মামলা করেন। মামলা নম্বর ৭৭।
মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ১০৯ ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২), ৪(৩) ধারা আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, নুসরাত জাহান (স্বামী জিয়াউল আহসান) বিভিন্ন অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ নামে ১৮ কোটি ৫৯ লাখ ৩১ হাজার ৩৫৮ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন ও তার স্বামী জিয়াউল আহসানের মাধ্যমে অধৈভাবে অর্জিত অর্থ গোপন ও তার নামে ৪টি সক্রিয় ব্যাংক হিসাবে প্রায় ২২২.
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণে বলা হয়, নুসরাত জাহান তার নিজ নামে ১৪,০৭,৪১,৭৭০ টাকার স্থাবর সম্পদ ও ৩,৬৩,২০,৫৬৭ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট (১৪,০৭,৪১,৭৭০+ ৩,৬৩,২০,৫৬৭) ১৭,৭০,৬২,৩৩৭ টাকার সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখেছেন।
অনুসন্ধানে নুসরাত জাহানের ২০১৯-২০২০ করবর্ষ হতে ২০২৪-২০২৫ করবর্ষ পর্যন্ত আয়কর নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তার মোট আয়ের পরিমাণ ১৩,৩৭,১৯,৭২৪ টাকা, মোট ব্যয় ১,২৮,৮৫,০৩৫ টাকা, বিগত দিনের সঞ্চয় ৮,০০,০০০ টাকাসহ মোট বৈধ আয়ের উৎসের পরিমাণ ১২,১৬,৩৪,৬৮৯ টাকা। সর্বশেষ করবর্ষ শেষে ক্রমপুঞ্জি সঞ্চয় ১২,১৬,৩৪,৬৮৯ টাকা ও নীট সম্পদের পরিমাণ ১২,১৫,৩৫,৯৮৪ টাকা। নুসরাত জাহান ২০২৪-২০২৫ করবর্ষে সম্পত্তি অধিগ্রহণের ক্ষতি বাবদ প্রাপ্তি ১২,৩৯,৪৫,৩৫০ টাকা প্রদর্শন করলেও ভূমি অধিগ্রহণ শাখা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ঢাকা অধিগ্রণের ক্ষতিপূরণ বাবদ মোট ৯টি এল.এ চেকের মাধ্যমে ১৭,৬৫,৯৫,৫২৬ টাকা দেন বলে অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়।
সম্পত্তি অধিগ্রহণের ক্ষতি বাবদ প্রাপ্ত ও আয়কর রিটার্নে প্রদর্শিত ১২,৩৯,৪৫,৩৫০ টাকা নুসরাত জাহান কর্তৃক অর্জিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনে ব্যবহার হয়নি বিধায় এই আয়কে তার অর্জিত সম্পত্তির বিপরীতে বৈধ আয় হিসেবে মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। অনুসন্ধানে সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা ও সরেজমিনে প্রদর্শন করে নুসরাত জাহানের নামে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত কোন মৎস্য ও পোল্ট্রি খামারের বর্তমান অস্তিত্ব ও পূর্বে ছিল বলে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি বিধায় ২০১৯-২০২০ করবর্ষ হতে ২০২১-২০২২ করবর্ষ পর্যন্ত প্রদর্শিত ৬৫,৫৮,৩৬০ টাকা তার অর্জিত সম্পত্তির বিপরীতে বৈধ আয় হিসেবে মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই।
নুসরাত জাহানের বিগত বছরের সঞ্চয় বাবদ প্রদর্শিত ৮,০০,০০০ সঠিক আছে বলে অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়। নুসরাত জাহানের প্রকৃত আয়ের পরিমাণ ৩২,১৬,০১৪ টাকা বলে অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়। নুসরাত জাহানের বিগত বছরের সঞ্চয় ৮,০০,০০০ টাকাসহ নিট আয়ের পরিমাণ ৪০,১৬,০১৪টাকা। অনুসন্ধানকালে নুসরাত জাহানের অদ্যাবদি প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে ঋণ গ্রহণের সত্যতা পাওয়া না যাওয়ায় তা দায় হিসেবে গণ্য করা হয়নি। অনুসন্ধানকালে নুসরাত জাহান (৩,৬৩,২০,৫৬৭) = ১৭,৭০,৬২,৩৩৭ টাকার সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগ দখলে রেখেছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়।
অনুসন্ধানে সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নুসরাত জাহান ২০২০ হতে ৩১/১২/২৪ পর্যন্ত মোট ২৭,১০,৫৬,১৮৫ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেন, যার কোনো ধারা বৈধ উৎস অনুসন্ধানকালে পাওয়া যায়নি।
নুসরাত জাহানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৩৪.৬৭ কোটি টাকা জমা প্রদান করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে নুসরাত জাহানের নামে ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, বনানী শাখায় বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৪৪.০৪ কোটি টাকা উত্তোলনের প্রমাণ পাওয়া যায়। নুসরাত জাহানের নামে ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, বনানী শাখায় ৯১,৭২,৯১৫ টাকা ও আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর ব্যাংক হিসাবে ৩৭,৮৫,৮৪৫ টাকাসহ মোট ১,২৯৫৮,৭৬০ টাকা স্থানান্তরের প্রমাণ পাওয়া যায়। জলসিঁড়ি আবাসন প্রকল্পের ট্রাস্ট ব্যাংক নামে হিসাব ও আর্মি ওয়েল-ফেয়ার ট্রাস্ট এর ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরিত অর্থের প্রকৃত কারণ ও উৎস জানা যায়নি।
অনুসন্ধানকালে নুসরাত জাহান ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে স্থায়ী, চলতি ও সঞ্চয়ী হিসাবের সন্ধান পাওয়া যায়, যার মধ্যে বর্তমানে নুসরাত জাহানের নামে ৪টি ব্যাংক হিসাব সক্রিয় থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। সক্রিয় ব্যাংক হিসাবগুলোতে মোট উত্তোলনের পরিমাণ ১০৯,৬০,৬৭,৫১৪ টাকাসহ সর্বমোট প্রায় ২২২.৫০ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া যায়, যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২), ৪(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র পর ম ণ প রদর শ ট ক সহ গ রহণ দমন ক
এছাড়াও পড়ুন:
সাবেক আইনমন্ত্রীর সিটিজেনস ব্যাংককে ঢেলে সাজানো হচ্ছে
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মালিকানায় থাকা সিটিজেনস ব্যাংককে ঢেলে সাজানো শুরু করেছে নতুন পরিচালনা পর্ষদ। ইতিমধ্যে ব্যাংকটিতে দুজন নতুন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর আগে এই দুজন ব্যাংক এশিয়ার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
এ ছাড়া সিটিজেনস ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ মাসুমেরও মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাঁর স্থলে ব্যাংক এশিয়ার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমগীর হোসেনকে এমডি পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের পর এই নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে।
জানা যায়, সিটিজেনস ব্যাংকের বর্তমান পর্ষদ এটিকে ব্যাংক এশিয়ার আদলে করপোরেট মডেলে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে। সেই কারণে শীর্ষ পর্যায়ে ব্যাংক এশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি লোক নিয়োগের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের পঞ্চম প্রজন্মের ব্যাংকটি ২০২০ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পায়। তখন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মা জাহানারা হক। তিনি মারা যাওয়ার পর আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠ তৌফিকা আফতাবকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান করা হয়।
ব্যাংকটির নথিপত্র অনুযায়ী, সিটিজেনস ব্যাংকে আনিসুল হকের শেয়ার রয়েছে ১০ শতাংশ। এ ছাড়া পোশাক খাতের আরও সাত ব্যবসায়ীর রয়েছে ১০ শতাংশ করে শেয়ার। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৪ আগস্ট এক চিঠিতে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সিটিজেনস ব্যাংকের চেয়ারম্যান তৌফিকা আফতাবের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। তৌফিকা আফতাব আনিসুল হকের আইনি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও জড়িত।
সূত্র জানায়, গত ১৪ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের তৃতীয় বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএমে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন চৌধুরী মোহাম্মদ হানিফ শোয়েব। পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান সালমা গ্রুপের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী মোহাম্মদ হানিফ শোয়েব। নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংকটিকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত মাসে ব্যাংক এশিয়ার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তাফিজুর রহমানকে ডিএমডি হিসেবে সিটিজেনস ব্যাংকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি দীর্ঘদিন ব্যাংক এশিয়ার বনানী শাখার ব্যবস্থাপক ছিলেন। এর বাইরে ব্যাংক এশিয়ার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল লতিফকেও সিটিজেনস ব্যাংকের ডিএমডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি ব্যাংক এশিয়ার প্রধান শাখার ব্যবস্থাপক ছিলেন।
জানা যায়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সিটিজেনস ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ মাসুমের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাই নতুন এমডি হিসেবে ব্যাংক এশিয়ার ডিএমডি আলমগীর হোসেনকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয় ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায়। এখন এমডির এই নিয়োগ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান চৌধুরী মোহাম্মদ হানিফ শোয়েবকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। ব্যাংকটির কোম্পানি সচিব ওয়াহেদ ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, নতুন এমডি নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে ২০২০ সালে অনুমোদন পেলেও ব্যাংকটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয় ২০২২ সালের মাঝামাঝি। সারা দেশে ব্যাংকটির ১৫টি শাখা রয়েছে। ব্যাংকটির সর্বশেষ ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর শেষে ব্যাংকটির আমানত ছিল ১ হাজার ৫ কোটি টাকা। আর এ সময়ে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৩৮ কোটি টাকা।
বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটি ছিল লোকসানি ব্যাংক। ওই বছর ব্যাংকটি কর–পরবর্তী প্রায় দেড় কোটি টাকা লোকসান করেছে। ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন ৪০০ কোটি টাকা।