বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশ্রেণি হিমালয়ের ল্যাংটাং উপত্যকা জয় করেছে বাংলাদেশের পাঁচ নারী। আট হাজার মিটার উচু এ পর্বতশৃঙ্গ নেপালের বাগমতি প্রদেশের রাসুওয়া জেলায় অবস্থিত। ল্যাংটাংয়ের প্রতিটি চূড়ায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উড়িয়েছেন তারা।

এভারেস্টজয়ী নিশাত মজুমদারের নেতৃত্বে এই নারীরা গত ২১ ডিসেম্বর থেকে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত নেপালের লাংটাং হিমালয়ে শীতকালীন এ অভিযানে অংশ নেন। ১০৫ বছর আগে বাঙালি মুসলিম জাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেনের লেখা ‘সুলতানাজ ড্রিম’ গত বছরের মে মাসে স্থান পায় জাতিসংঘের ইউনেস্কোর বিশ্বস্মৃতি বা মোমোরির তালিকায়। সেই অনুপ্রেরণায় পর্বত অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘সুলতানাজ ড্রিম অনবাউন্ড’ বা ‘সুলতানার স্বপ্ন অবারিত।’ 

এ উপলক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আয়োজন করা হয় ‘ফ্ল্যাগ ইন সেরিমনি: উইমেনস উইন্টার এক্সপিডিশন’ শীর্ষক প্রেস মিট। পর্বতারোহী সংগঠন অভিযাত্রী আয়োজিত এই বিশেষ পর্বত অভিযানে সার্বিক সহযোগিতা দিয়েছে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড মাস্টারকার্ড ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। অভিযানে ৫ হাজার ৫০০ মিটার উচ্চতাসম্পন্ন ইয়ালা শৃঙ্গ, পাঁচ হাজার ১৪৫ মিটার উচ্চতাসম্পন্ন সুরিয়া শৃঙ্গ এবং চার হাজার ৭৪৭ মিটার উঁচু গাঁসাইকুণ্ড শৃঙ্গ জয় করেন নারী অভিযাত্রীরা। 

নাট্যব্যক্তিত্ব ত্রপা মজুমদারের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে সুলতানাজ ড্রিম অনবাউন্ডের স্বীকৃতি আমাদের বড় অনুপ্রেরণা। এখন পঞ্চকন্যা হিমালয় জয় করেছে, সুলতানার স্বপ্ন পল্লবিত হচ্ছে। বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে নানা কর্মসূচি বাংলাদেশ ও এর বাইরেও বিস্তৃত হয়েছে। প্রতি বছর নানা কর্মসূচির মাধ্যমে তার স্বপ্ন আরও প্রসারিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে শুরুতে সুলতানার স্বপ্ন শীর্ষক ‘পায়রাবন্দ থেকে উলানবাটোর’ ও সুলতানার স্বপ্ন শীর্ষক গ্রন্থপাঠ নিয়ে ভিডিও প্রদর্শনী হয়। পরে নিশাত মজুমদার মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর, ইউনেস্কো ও মাস্টারকার্ড প্রতিনিধির হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন। এরপর পাচ নারীর দূর্গম পর্বতযাত্রার বিভিন্ন মূহুর্ত নিয়ে তৈরি ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে পবর্তারোহী নারীরা শীতের সময়ে অভিযানে গিয়ে নানা ধরনের সঙ্কটে পরার বিষয়টিও তুলে ধরেন।

নিশাত মজুমদার বলেন, ‘ইয়ালাপিতে আমরা যেদিন গেলাম, আমাদের কাছে কোনো পানি ছিল না। চারদিকে পানি কিন্তু আমার কাছে খাওয়ার মত কোনো পানি নেই। সব বরফ হয়ে ছিল। আমাদের কাছে যত গ্যাস ছিল, সব গ্যাস দিয়ে চেষ্টা করেছিলাম বরফগুলোকে পানি করে খাওয়ার। অনেক মেয়ে আমাদেরকে বলছে, আমিওতো এখানে থাকতে পারতাম; আমিওতো একজন সুলতানা হতে পারতাম। এই মেসেজটাই জরুরি।’

দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য অর্পিতা দেবনাথ বলেন, ‘এই অভিযানের আগে তিনি তার সব লক্ষ্য একটা সীমানার মধ্যে ঠিক করতেন। আমি এটার বাইরে কোনোভাবে যেতে পারব না, এমন মনে হত। আমার মনে হয়েছে, এবার আমি আমার লিমিটেশনটা অতিক্রম করতে পারছি।’

পর্বতারোহী ইয়াসমিন লিসা বলেন, ‘আমরা যে বিমানে গিয়েছি, তার পাইলটও ছিলেন নারী। অর্থাৎ যাত্রার শুরুতে উপলব্ধি হয়, সুলতানা স্বপ্ন এভাবেই বাস্তবায়ন হচ্ছে। ইয়ালা পিকে উপলব্ধি হয় বাতাসে মানুষ উড়ে যেতে পারে। প্রচণ্ড বাতাস ছিল। কিন্তু আমরা সব প্রতিবন্ধকতা দূরে সরিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছেছি। এটাই সুলতারা স্বপ্ন।’

তহুরা সুলতানা রেখা বলেন, ‘প্রকৃতিগতভাবে নারীদের যে সমস্যা হয় সেই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় পবর্তযাত্রার শুরুতেই। পুরোটা পথ তলপেটের ব্যাথা নিয়ে পাড়ি দিতে হয়েছে। তবুও থেমে থাকিনি।’

দলের আরেক সদস্য মৌসুমি আক্তার এপি ওরফে এপি তালুকদার বলেন, ‘আজকে এখানে দাঁড়িয়ে আমি স্বপ্ন দেখছি; পাঁচজন সুলতানার জায়গায় একদিন ৫ হাজার বা ৫ লাখ এরকম সামিট করে আসবে এবং আমরা উল্লাস করব।’ 

স্বাগত বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অপর ট্রাস্টি সারা যাকের বলেন, ১০৫ বছর আগে বেগম রোকেয়া সুলতানার লেখাটি এ সময়েও অত্যন্ত জরুরি। কারণ, নারীরা এখনো পিছিয়ে আছে। তাই বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নও প্রাসঙ্গিক। তার লেখা আমাদের সাহস জোগায়। এটাকে মাথায় রেখে এই নারীদের পর্বতযাত্রা। এটি ভীষণভাবে সিম্বোলিক। নারীদের আলাদাভাবে উদ্যোগী হতে হবে যাতে পুরুষের সঙ্গে সমানভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়।

ইউনেস্কোর ঢাকার হেড অব কমিউসনিকেশন অ্যান্ড পাললিক এনগেইজমেন্টের নুসরাত আমিন বলেন, ‘পাঁচজন ‘সুলতানা’ পর্বত জয় করে দেশে ফিরেছেন। অর্থাৎ বেগম রোকেয়া সুলতানার স্বপ্ন এখনও অবারিত। সারাদেশে এই স্বপ্ন আরও ছড়িয়ে যাবে। ইউনেস্কো এ ধরনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সব সময় এ ধরনের উদ্যোগে ছিল এবং থাকবে।’

মাস্টারকার্ডের বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, ‘এই পাঁচ নারী অসাধারণ কাজ করে এসেছেন। মাস্টার কার্ড পৃথিবীর কোনো দেশে এবারই প্রথম এমন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে। আমরা এই কর্মসূচিতে যুক্ত হতে পেরে আনন্দিত। আগামীতে কর্মসূচি ধারাবাহিকতা অব্যহত রাখা থাকবে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ক ত য দ ধ জ দ ঘর ইউন স ক

এছাড়াও পড়ুন:

গৃহকর নিয়ে প্রশাসকের সঙ্গে বাসিন্দাদের হট্টগোল

গৃহকর (হোল্ডিং ট্যাক্স) ধার্যের বিষয়টি নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের সঙ্গে হট্টগোল করেছেন অঞ্চল-৭-এর আওতাধীন বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরে উত্তরা কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত গণশুনানির শেষের দিকে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গণশুনানি শেষ করে ওই অঞ্চলের চারটি ওয়ার্ডের প্রতিনিধিদের নিয়ে অঞ্চল-৭-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষে আলোচনায় বসেন প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। সেখানে গৃহকর কীভাবে আদায় হবে, কী ছাড় পাওয়া যাবে—এসব বিষয়ে বাসিন্দাদের বুঝিয়ে বলা হয়। হট্টগোলকারীরা বিষয়টি বুঝতে পেরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য প্রশাসকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।

গণশুনানিতে দেখা যায়, নাগরিক সেবা নিয়ে চারটি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা বিভিন্ন সংকট, সমস্যা ও অভিযোগ জানান। তাঁদের দাবি, তাঁরা ২০১৮ সাল থেকে নয়, ২০২৪ সাল থেকে গৃহকর পরিশোধ করবেন। প্রশাসক তাঁর বক্তব্যে বাসিন্দাদের বলা অভিযোগগুলোর সমাধান, পদক্ষেপ ও করপোরেশনের উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেন। বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে তিনি হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় নিয়ে বাসিন্দাদের দাবিদাওয়ার বিষয়ে কথা বলছিলেন।

প্রশাসকের বক্তব্য ছিল, আইন অনুযায়ী ২০১৮ সাল থেকেই গৃহকর পরিশোধ করতে হবে। তবে গৃহকরের সঙ্গে পরিচ্ছন্নতা ও সড়ক বাতি বাবদ যে কর আদায় করা হয়, সেই ৫ শতাংশ কর আপাতত আদায় বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া বিধিমালা অনুযায়ী গৃহকরে একজন গ্রাহক যেসব ছাড় পান, সেসব ছাড়ের ব্যবস্থাও করা হবে বলেও জানান। সেই হিসেবে ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে যে টাকা কর আসবে, ২০১৮ থেকে একই পরিমাণ কর দিতে হবে।

কিন্তু প্রশাসকের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত হননি শুনানিতে অংশ নেওয়া বাসিন্দারা। তাঁরা চিৎকার-চেঁচামেচি করে এর প্রতিবাদ করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে সামনের সারিতে বসা কিছু ব্যক্তি উত্তেজিত হয়ে মঞ্চে থাকা প্রশাসকের সামনে গিয়ে বলতে থাকেন, তাঁরা এই সিদ্ধান্ত মানেন না। তাঁরা ২০২৪ সাল থেকেই কর দেবেন।

মিনিট পাঁচেক এমন হট্টগোল আর চেঁচামেচি চলে। ঢাকা উত্তর সিটির ওই অঞ্চলের কর্মকর্তা ও স্থানীয় বিএনপির নেতারা উত্তেজিত হওয়া ব্যক্তিদের শান্ত করেন।

ঢাকা উত্তর সিটির ওই অঞ্চলের কর্মকর্তা ও স্থানীয় বিএনপির নেতারা উত্তেজিত ব্যক্তিদের শান্ত করার চেষ্টা করেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ