শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কেয়া কসমেটিকস কোম্পানির কারখানা আগামী ১ মে থেকে এবং ডাইং ও ইউটিলিটি বিভাগ আগামী ২৫ মে থেকে স্থায়ীভাবে বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কারখানা বন্ধের জন্য বাজার অস্থিতিশীল, ব্যাংকের সঙ্গে হিসাবের অমিল, কাঁচামালের অপর্যাপ্ততা এবং কারখানার অপ্রতুল উৎপাদন কার্যক্রমকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘোষণা প্রকাশ করা হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে।

কেয়া কসমেটিকসের কোম্পানি সচিব নূর হোসেন সমকালকে বলেন, সব কারখানা নয়, কোম্পানির গার্মেন্ট সম্পর্কিত বিভাগ ও কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেয়া কসমেটিকস, কেয়া ডিটারজেন্ট এবং কেয়া সোপ কারখানা সম্পূর্ণরূপে চালু থাকবে। তিনি জানান, আগেই চার কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। নতুন করে ডাইং বিভাগ বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। 
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কেয়া কসমেটিকস কোম্পানির চারটি বিভাগের অধীনে তাদের সব কারখানা পরিচালিত হয়। বিভাগগুলো হলো– কসমেটিকস, নিট কম্পোজিট, স্পিনিং এবং কটন বিভাগ। শ্রমিক অসন্তোষের পর ডিসেম্বর থেকে গার্মেন্ট সম্পর্কিত বিভাগের কারখানাগুলো বন্ধ আছে। এসব কারখানায় প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক ও কর্মচারী কর্মরত ছিলেন, যার উল্লেখযোগ্য অংশ শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী।
গতকাল ডিএসইতে কেয়া কসমেটিক্স কোম্পানির শেয়ার ৪ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ৫ টাকা ১০ পয়সার মধ্যে ৮ লাখ ৫৫ হাজার শেয়ার পৌনে ৪৩ লাখ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে।

কারখানা বন্ধের তথ্য গত ৮ জানুয়ারি ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশ হয়। তখন ডিএসইর একটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কেয়া কসমেটিকস ফিরতি চিঠিতে জানায়, রপ্তানি আয়ের অর্থ তিনটি ব্যাংক এ কোম্পানির বৈদেশিক মুদ্রা অ্যাকাউন্টে জমা না করায় কাঁচামাল আমদানিসহ সার্বিক পরিচালন ব্যয় মেটাতে পারছে না। এ কারণে কেয়া স্পিনিং, কটন, গার্মেন্ট ও নিটিং ডিভিশন এবং কেয়া ইয়ার্ন মিলস লিমিটেড বন্ধ করে দিতে হয়েছে। কেয়া কসমেটিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খালেদা পারভিন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, গত চার বছর ধরে তারা তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এর কারণ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলসহ (এফআরসি) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
চিঠিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, ২০০৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কোম্পানির রপ্তানি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এর উল্লেখযোগ্য হলো– ২০০৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সাউথইস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে খোলা এলসির বিপরীতে রপ্তানি আয় ছিল ১১১ কোটি ১৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার। তবে কোম্পানির বৈদেশিক মুদ্রা (এফসি) অ্যাকাউন্টে ২৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার জমা হয়নি। একইভাবে পূবালী ব্যাংকের মাধ্যমে খোলা এলসির মাধ্যমে ২০০৭ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে রপ্তানি আয় ১৬ কোটি ৭০ লাখ ডলারের কোনো অর্থ এফসি অ্যাকাউন্টে জমা হয়নি। এ ছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংকের সঙ্গে খোলা এলসির বিপরীতে ২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে রপ্তানি আয় ছিল ৫ কোটি ৮৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার, যার কোনো অর্থ এফসি অ্যাকাউন্টে জমা হয়নি। চিঠিতে কেয়া কসমেটিকসের এমডি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী, বৈদেশিক বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা ব্যবহারের ক্ষেত্রে এফসি ক্লিয়ারিং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিটিবি বা আমদানির অর্থ পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু উল্লেখিত ব্যাংকগুলো এ নিয়ম মানেনি।

তিনি আরও বলেন, এ সমস্যার কারণে ব্যাংকিং সুবিধা স্থগিত হওয়ায় কেয়া কসমেটিকসের কার্যক্রমে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। বেতন দিতে দেরি হওয়ায় গত ২৬ ডিসেম্বর শ্রমিকরা বিক্ষোভ এবং সড়ক অবরোধ করেন। ফলে তাদের কেয়া স্পিনিং ডিভিশন কটন, গার্মেন্ট ও নিটিং ডিভিশন এবং কেয়া ইয়ার্ন মিলস বন্ধ করে দিতে হয়েছে। তবে কেয়া কসমেটিকস এবং ডাইং সেকশন চালু রয়েছে। তিনি বলেন, সমস্যাগুলো জানানোর পর বিএসইসি একটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে। সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কোম্পানির আর্থিক হিসাব চূড়ান্ত করতে বা রপ্তানি কার্যক্রম পুরোপুরি চালু করতে পারছেন না।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কসম ট ক পর চ ল সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

বিদায়ী সপ্তাহে পুঁজিবাজারে সূচক-লেনদেন বেড়েছে

দেশের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (২৩ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি) সূচকের উত্থানের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এ সময়ে ডিএসই ও সিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন বেড়েছে। তবে বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মূলধন বাড়লেও সিএসইতে কমেছে।

শনিবার (১ মার্চ) ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনা সূত্রে এতথ্য জানা গেছে।

তথ্য মতে, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৬.৯৩ পয়েন্ট বা ০.৯০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৪৭ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৪.৩৪ পয়েন্ট বা ০.২৩ শতাংশ কমে ১ হাজার ৯০৫ পয়েন্টে, ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৪.০৮ পয়েন্ট বা ০.৬২ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ১৬৭ পয়েন্টে এবং ডিএসএমইএক্স সূচক (এসএমই ইনডেক্স) ১৮.৪৪ পয়েন্ট বা ১.৭৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৭ পয়েন্টে।

আরো পড়ুন:

ডিএসইতে সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষে ওরিয়ন ইনফিউশন

ডিএসইতে পিই রেশিও কমেছে ০.৫১ শতাংশ

বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯৫ হাজার ৩৬৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৯১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ১ হাজার ৭২৬ কোটি ২০ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৫৯০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৩৫১ কোটি ৭৩ লাখ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ২৩৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৮টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ২৬১টির, দর কমেছে ১৮০টির ও দর অপরিবর্তিত ২৯ রয়েছে টির। তবে লেনদেন হয়নি ১৫টির।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৩৪.৪০ পয়েন্ট বা ০.৯৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৬৩৩ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে সিএসই-৩০ সূচক ০.১৬ শতাংশ বেড়ে ১১ হাজার ৯২৫ পয়েন্টে, সিএসসিএক্স সূচক ০.৮৪ শতাংশ বেড়ে ৮ হাজার ৮৬৮ পয়েন্টে, সিএসআই সূচক ০.৫৩ শতাংশ বেড়ে ৯৪৬ পয়েন্টে এবং এসইএসএমইএক্স (এসএমই ইনডেক্স) শূন্য শতাংশ কমে ২ হাজার ১০৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৫ হাজার ২১৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৫ হাজার ৪৩৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ২২৩ কোটি ৭ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ১৭০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩৩ কোটি ৪৭ লাখ  টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ১৩৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইতে মোট ৩১২টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৮১টির, দর কমেছে ১০০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩১টির শেয়ার ও ইউনিট দর।

ঢাকা/এনটি/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ডিএসইতে সাপ্তাহিক দাম কমার শীর্ষে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স
  • ডিএসইতে সাপ্তাহিক দাম বাড়ার শীর্ষে এস আলম কোল্ড
  • বিদায়ী সপ্তাহে পুঁজিবাজারে সূচক-লেনদেন বেড়েছে
  • সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষে ওরিয়ন ইনফিউশন
  • ডিএসইতে সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষে ওরিয়ন ইনফিউশন
  • ডিএসইতে পিই রেশিও কমেছে ০.৫১ শতাংশ