বাস্কেটবল খেলা নিয়ে দ্বন্দ্বে হাতাহাতি-হামলা, আহত ৩
Published: 23rd, January 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বাস্কেটবল খেলা নিয়ে দ্বন্দ্বে হাতাহাতি ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে তিন প্রাক্তন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে গত বুধবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। আহত এক শিক্ষার্থীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি দু’জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
আহত তিন শিক্ষার্থী হলেন– ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মো.
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরা জানান, আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগ এবং গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগ বুধবার সন্ধ্যায় আন্তঃবিভাগ বাস্কেটবল টুর্নামেন্টে মুখোমুখি হয়। এতে গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগ জয়ী হয়েছে।
খেলার শেষ পর্যায়ে বিজয়ী দলের সমর্থকরা মাঠে ঢুকে উল্লাস করেন। এ নিয়ে দলের জ্যেষ্ঠ খেলোয়াড় পুলক আহমেদের সঙ্গে আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীদের বাগ্বিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। পরে পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় শেষ হয় ম্যাচ।
এর জেরে রাত ১০টার দিকে আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের ২০-৩০ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে লাঠিসোটা নিয়ে এসে পুলকের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। এতে তাঁর সঙ্গে থাকা হৃদয়, রিমন আহম্মেদ ও মেহেদী হাসান আহত হন। পরে ভুক্তভোগীদের বন্ধু ও বিভাগের শিক্ষার্থীরা লাঠিসোটা নিয়ে ক্যাম্পাসে মহড়া দেন।
এ সময় তাদের সঙ্গে শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল মিঠু, কর্মী ফয়জুল ইসলাম অমিসহ কয়েকজন নেতাকর্মীকে দেখা গেছে। এক পর্যায়ে তারা আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জাহিদুর রাজ্জাক সৈকতকে মারধর করে আটকে রাখেন। পরে প্রক্টর, উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার এবং আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যানসহ কর্তাব্যক্তিরা ঘটনাস্থলে এসে তাঁকে উদ্ধার করেন।
শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল মিঠু বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলের পাশে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হট্টগোল শুনে সেখানে যাই। আহত হৃদয় আমার বন্ধু। তাকে দেখে ঘটনা মিটমাট করতে সেখানে ছিলাম।’
প্রক্টর দপ্তরে ভুক্তভোগীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আটক শিক্ষার্থী ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে হামলায় জড়িতদের কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। আহত রিমন আহম্মেদ বলেন, ‘কয়েকজন শিক্ষার্থী বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ জানতে পারি, পুলককে মারা হবে। এরই মধ্যে অন্তত ২০ জন এসে অতর্কিত হামলা চালায়। তারা লাঠিসোটা ও রড দিয়ে আঘাত করতে থাকে। আমাকেসহ পাঁচ-ছয়জনকে মেরে তারা পালিয়ে যায়।’
এ বিষয়ে হামলায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান মো. সাহাল উদ্দিন বলেন, বিষয়টি ফৌজদারি অপরাধ। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তিনি অনুতপ্ত। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে শাস্তির সুপারিশ করবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, আর যেন ঝামেলা না হয়, সে জন্য আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যানকে দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে তারা হামলা চালায়। জড়িত কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করতে বিভাগটির একাডেমিক কমিটির জরুরি সভা হবে। পরে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মাইক্রোবাসে গান বাজাতে বাজাতে প্রকৌশলীকে হত্যা
হা-মীম গ্রুপের ‘দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়্যার’ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আহসান উল্লাহকে হত্যার লোমহর্ষক তথ্য উঠে আসছে। ব্যক্তিগত মাইক্রোবাসে উচ্চ শব্দে গান শুনতে শুনতে প্রথমে তাঁর ওপর নির্যাতন চালানো হয়। হাত-পা বাধা বেঁধে আহসানকে গাড়ির পেছনের অংশে নিয়ে শুইয়ে রাখা হয়েছিল। এরপর পা দিয়ে বুক ও শরীরের নানা অংশে আঘাত করা হয়। একপর্যায়ে গলায় গামছা পেঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে খুনিরা। পরে টেনেহিঁচড়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে লাশ গুম করে। নিহতের পিঠ ছিল ক্ষতবিক্ষত। মাইক্রোবাসের ভেতরকার চিৎকার ও গোঙানির শব্দ যাতে বাইরে না পৌঁছে এ জন্য চার ঘণ্টা উচ্চ শব্দে গান ছেড়ে রাখা হয়। আদালতে আসামির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
২৩ মার্চ হত্যার শিকার হন হা-মীমের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার আহসান। আশুলিয়ার কর্মস্থল থেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে ঢাকার বাসায় ফিরছিলেন তিনি। এই ঘটনায় জড়িত চারজনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাদের মধ্যে আহসানের গাড়ি চালক সাইফুল ইসলাম ও তার বন্ধু নুরুন্নবীও রয়েছেন। তারা এরই মধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া ইসরাফিল ও সুজন ইসলাম আরও দু’জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তুরাগ থানা পুলিশ। জড়িতদের জবানবন্দি ও জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও টার্গেট করার কারণ উঠে এসেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদে চালক সাইফুল দাবি করেন- ১২ মার্চ হত্যার ছক চূড়ান্ত করা হয়। এটি বাস্তবায়নের পূর্ব পরিচিতি নুরুন্নবীকে ভাড়া করেন তিনি। এক সময় নুরুন্নবী ও সাইফুল একসঙ্গে গার্মেন্টেসে চাকরি করতেন। পুরো মিশন সফল করতে ইসরাফিল ও সুজনকে ম্যানেজ করেন নুরুন্নবী। ঘটনার দু’দিন আগে তুরাগ এলাকা রেকি করেন তারা। আহসানকে নিয়ে অফিস থেকে ফেরার পথে কোথায় প্রস্রাব করার নাম করে গাড়ি থামাবেন তা দেখিয়ে দেন। সাইফুল অন্যদের টোপ দেন- গাড়িতে আহসানকে জিম্মি করা গেলে অনেক টাকা আদায় করা সম্ভব হবে।
ছক মোতাবেক তুরাগ এলাকার পূর্ব নির্ধারিত স্পটে বিকেল ৪টার দিকে গাড়ি থেকে নেমে পড়েন চালক। এরপর তার তিন সহযোগী মাইক্রোবাসে উঠে পড়েন। যাদের আগে থেকে ভাড়া করেন সাইফুল। তাদের মধ্যে দু’জন গাড়ির পেছনের আসনে আহসান উল্লাহ’র পাশে, অন্যজন বসেন চালকের বাম পাশের আসনে। প্রশ্রাব করার নাম করে মাইক্রোবাস থেকে নেমে যাওয়ার পর সাইফুল ফের গাড়িতে ফিরে নতুন নাটক সাজান। তিনি সহযোগীকে দেখে না চেনার ভান করে বলে উঠেন- ‘আপনারা কারা আমার গাড়িতে উঠেছেন।’ তারা কোনো উত্তর দেননি। এরপরই আহসানের হাত-পা বেঁধে ফেলা হয়। চোখ বাঁধা হয়নি। বাজানো হয় উচ্চ শব্দে গান। চারজনের কথোপকথন ও কর্মকাণ্ড দেখে অল্প সময়ের মধ্যে আহসান বুঝতে পারেন তারা সবাই একে অপরের পরিচিত। প্রাণে বাঁচতে আহসান তাদের ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার কথা জানান। তবে তারা সাড়া দেননি।
বেড়িবাঁধ, গাবতলী, দিয়াবাড়ি রেলস্টেশন, ১৬ নম্বর সেক্টরে ঘুরাতে থাকেন। খুনের আগে গাবতলী এলাকায় আহসানকে ইফতার করান তারা। এরই মধ্যে তার ব্যাংকের কার্ড থেকে দু’টি মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে ৫০ হাজার টাকা ট্রান্সফার করেন জড়িতরা। এরই মধ্যে একটি নম্বর সাইফুলের স্ত্রীর নামে নিবন্ধন করা। আরেকটি নম্বর তার বোনের। আরও ১০ হাজার টাকা কার্ড থেকে তুলে নেয় তারা। এছাড়া নগদ ২৫ হাজার টাকা লুট করে। সব মিলিয়ে ৮৫ হাজার হাতিয়ে নেওয়া হয়। তার মধ্যে নুরুন্নবীকে মাত্র এক হাজার ও ইসরাফিলকে দুই হাজার টাকা দেওয়া হয়। সুজন কোনো টাকা পায়নি। ভাগের টাকা সবাইকে পরবর্তীতে দেওয়া হবে জানান সাইফুল। নির্যাতনের এক পর্যায়ে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলেন নুরুন্নবী। তখন সাইফুল সহযোগীদের বলেন- হত্যা না করলে একজনও বাঁচব না। এরপর অন্যরা তাদের হত্যা মিশনে সহযোগিতা করেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট আরেক কর্মকর্তা জানান, আহসানকে হত্যার কারণ হিসেবে দু’টি বিষয়ের কথা এখন পর্যন্ত দাবি করছেন চালক সাইফুল। প্রথমত- গত আগস্টে সামান্য দুর্ঘটনায় সাইফুলের মাইক্রোবাসের কিছু ক্ষতি হয়েছিল। এরপর সাইফুল নিজ উদ্যোগে ইন্সুরেন্স থেকে মেরামত বাবদ টাকা আদায় করতে সহায়তা করেন। তার ধারণা ছিল ওই টাকা থেকে একটি ভাগ আহসান তাকে দেবেন। তবে সেটা না দেওয়ায় ক্ষোভ ছিল তার। আবার মাসে ১৯ হাজার টাকা বেতনের বাইরে কোনো সুযোগ-সুবিধা না দেওয়ার মনক্ষুন্ন ছিলেন তিনি। সাইফুলের ভাষ্য- এ ক্ষোভ থেকে মালিককে জিম্মি করে অর্থ আদায়ের ফন্দি আঁটেন।
র্যাব-১ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মুহাম্মদ আহনাফ রাসিক বিন হালিম সমকালকে বলেন, অফিস থেকে বাসায় না ফেরায় তুরাগ থানায় জিডি করেছিল পরিবার। এরপর শুরু হয় তদন্ত। একে একে জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে। তুচ্ছ কারণে নৃশংসভাবে প্রকৌশলীকে হত্যা করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২৫ মার্চ দিয়াবাড়ির ১৬ নমম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর সড়কের রাস্তার পাশ থেকে আহসানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর র্যাব ছায়াতদন্ত করে হত্যাকাণ্ডের জড়িত থাকার অভিযোগে গাইবান্ধা থেকে মূল পরিকল্পনাকারী সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। ২৬ মার্চ লালমনিরহাট থেকে নূরন্নবী ও গাজীপুরের কাশিমপুর থেকে ইসরাফিলকে গ্রেপ্তার করে র্যব। সবশেষে ধরা হয় সুজনকে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ফরহাদুজ্জামান নবীন বলেন, ছুরি, স্ট্যাম্প, ব্যাংকের চেক, ভিকটিমের মোবাইল ফোনসহ বেশকিছু আলামত জব্দ করা হয়েছে। ভয় দেখানোর জন্য ছুরি রাখা হয়।