বোরোর চারা গজালেও বৈরী আবহাওয়ায় ক্ষতিতে উদ্বেগ
Published: 23rd, January 2025 GMT
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নন্দনগাছী এলাকার কৃষক মোহাম্মদ সানাউল্লাহ। নিজের সামান্য জমিতে বোরো ধান রোপণের প্রস্তুতি হিসেবে বীজ বপন করেছেন। কনকনে ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশায় ঠিকমতো গজায়নি চারা। যেগুলো গজিয়েছে, তাও বিবর্ণ হয়ে গেছে। চারা না হলে রোপণ করবেন কী আর খাবারই বা কীভাবে জুটবে, তা নিয়ে উদ্বেগে আছেন তিনি। বীজতলায় স্প্রেসহ নানাভাবে যত্ন নিয়ে চারা রোপণের উপযোগী করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন এ কৃষক।
দুর্গাপুর উপজেলার পাঁচুবাড়ী এলাকার কৃষক সোনার উদ্দিন কয়েক বিঘা জমিতে রোপণের জন্য বোরো ধানের চারা প্রস্তুত করতে বীজ বপন করছেন। তিনি বলেন, গতবারের চেয়ে এবার বেশি দামে বীজ কিনে বপন করেছি। অঙ্কুরিত হওয়ার সময় বেশি কুয়াশার কারণে অধিকাংশ চারা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ অবস্থায় কী করবেন, বুঝতে পারছেন না তিনি।
সানাউল্লাহ ও সোনার উদ্দিনের মতো বীজতলা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন রাজশাহীর কৃষক। কয়েক দিন ধরে ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চারা। তিন দিন সূর্যের আলো ঠিকমতো না পাওয়ায় বীজতলার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা। কিছু জায়গায় চারা হলুদ ও ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করেছে। এগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলে চারার জোগান কমার পাশাপাশি উৎপাদন খরচ নিয়ে সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পর্যাপ্ত বোরো চারার উৎপাদনের প্রস্তুতি রয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চারা সংকটের আশঙ্কা নেই। তাপমাত্রা ১০ সেন্টিমিটারের নিচে না নামলে ও অধিক কুয়াশা না পড়লে বীজতলার তেমন সমস্যা নেই। রোদ না উঠলে বীজতলা ঢেকে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন কর্মকর্তারা।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, এ বছর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে গত ১০ জানুয়ারি– ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া গত ২১ জানুয়ারি ১১ দশমিক ৪, ২২ জানুয়ারি ১২ দশমিক ৪ ও গতকাল বৃহস্পতিবার রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কয়েক দিন শীত এমনই থাকবে। তবে কুয়াশা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহী জেলা থেকে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার ৯ উপজেলায় ৭০ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জন্য ৩ হাজার ৬৯২ হেক্টরে বীজতলা তৈরি করা হচ্ছে। এতে উপজেলার চাহিদা মেটানোর পরও উদ্বৃত্ত থাকবে।
সরেজমিন চারঘাট, পুঠিয়া ও দুর্গাপুর উপজেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আগাম বীজতলার চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। ১৫-২০ দিন আগে যেসব বীজতলায় বীজ বপন করা হয়েছে, সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে তীব্র ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশায় চারা বের হয়ে পাতা ছাড়ার আগেই অনেকাংশই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যেগুলোর পাতা বের হয়েছে, সূর্যালোকের অভাবে তাও বিবর্ণ হয়ে গেছে।
কৃষক বলছেন, রাজশাহীর অধিকাংশ বোরো জমিতে সেচ দেয় বিএমডিএ। গত ডিসেম্বরে বিএমডিএ নিয়ম করেছে, বোরো মৌসুমে গভীর নলকূপ ৯৮০ ঘণ্টার বেশি চালাবে না। এতে পানি সংকট বাড়বে। সুস্থ-সবল চারা রোপণ না করা গেলে এবং পানি কম পেলে দুর্বল চারা বড় হবে না। তখন ফসল উৎপাদন কমবে। এ জন্য তারা বীজতলার বাড়তি যত্ন নিচ্ছেন।
পুঠিয়ার ধোপাপাড়া এলাকার কৃষক রুহুল আমিন বলেন, তিনি বিএডিসি থেকে বীজ নিয়ে বপন করেছিলেন। অঙ্কুরিত হওয়ার হার ঠিক থাকলেও গজানোর পর ঠান্ডা ও কুয়াশায় কিছু চারা নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে যে পরিমাণ জমিতে ধানের আবাদের জন্য তিনি বীজতলা প্রস্তুত করেছিলেন, সে চাহিদা পূরণ হবে না। এখন তাঁকে চারা কিনে রোপণ করতে হবে।
দু’দিন তীব্র শীত ও কুয়াশা থাকলেও সকালের পর রোদ এসেছে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহীর উপপরিচালক উম্মে ছালমা। তিনি বলেন, বীজতলার ক্ষতির আশঙ্কা নেই। যতক্ষণ রোদ উঠবে না, ততক্ষণ পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে পরামর্শ দিচ্ছেন। বীজতলা রক্ষায় উঠান বৈঠক ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে সচেতন করা হচ্ছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
চেহারা নিখুঁত করতে ১০০ বার অস্ত্রোপচার করিয়েছেন চীনা এই নারী
প্রথমবার যখন অ্যাবি উর অস্ত্রোপচার হয়, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর।
হরমোনজনিত অসুস্থতার জন্য চিকিৎসা নেওয়ার পর অ্যাবির ওজন দুই মাসে ৪২ কেজি থেকে বেড়ে ৬২ কেজি হয়ে গিয়েছিল। ওই সময় অ্যাবি তাঁর নাট্য ক্লাসের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার এই যে পরিবর্তন, সেটা তাঁর নাট্য শিক্ষকের চোখ এড়ায়নি।
তখনকার কথা মনে করে অ্যাবি বলেন, ‘আমার শিক্ষক বলেছিলেন, “তুমি তো আমাদের তারকা শিল্পী। কিন্তু এখন তুমি অনেক মোটা হয়ে গেছ। হয় ছেড়ে দাও, নয়তো দ্রুত ওজন কমাও।”’
অ্যাবির মা তখন তৎপর হলেন। তাঁকে পেট ও পা থেকে চর্বি অপসারণের জন্য লাইপোসাকশন করাতে নিয়ে গেলেন।
অ্যাবি যখন হাসপাতালের গাউন পরে অস্ত্রোপচারের জন্য বিচলিতভাবে অপেক্ষা করছিলেন, তখন তাঁর মা তাঁকে বলেছিলেন, ‘মনে সাহস রাখো এবং ভেতরে যাও। বের হওয়ার পর তোমাকে দারুণ দেখাবে।’
অস্ত্রোপচারটি ছিল যন্ত্রণাদায়ক। অ্যাবিকে কেবল আংশিক অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়েছিল এবং পুরো সময়টাতেই তাঁর জ্ঞান ছিল।
অ্যাবি বলেন, ‘আমার শরীর থেকে কতটা চর্বি বের করা হচ্ছে এবং আমি কতটা রক্ত হারাচ্ছি, তা আমি দেখতে পাচ্ছিলাম।’
এখন অ্যাবির বয়স ৩৫ বছর। এ সময়ের মধ্যে তিনি ১০০টির বেশি অস্ত্রোপচার করিয়েছেন, যার খরচ পাঁচ লাখ ডলার।
অ্যাবি এখন বেইজিংয়ের একটি বিউটি ক্লিনিকের অংশীদার। চীনে প্লাস্টিক সার্জারির উত্থানের ক্ষেত্রে অবদান রাখা উল্লেখযোগ্য মানুষের একজন হয়ে উঠেছেন তিনি।
তবে এতগুলো অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে তাঁর শরীরকে অনেক ধকল সইতে হয়েছে।
বেইজিংয়ে অ্যাবির বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরে গিয়ে দেখা গেল, তিনি একটি আয়নার সামনে বসে মুখে কনসিলার লাগাচ্ছেন। সম্প্রতি মুখ পাতলা করার ইনজেকশন নেওয়ার কারণে তৈরি হওয়া দাগ ঢাকার চেষ্টা করছেন তিনি।
এ ইনজেকশনটি অ্যাবি প্রতি মাসে নেন যেন মুখ আরও টানটান ও কম মোটা দেখায়। এর আগে অতিরিক্ত হাড় কমাতে চোয়ালে তিনটি অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে।
তবে এসব অস্ত্রোপচারের জন্য অ্যাবির মধ্যে কোনো ধরনের অনুশোচনা নেই। তিনি মনে করেন, সে সময় তাঁর মায়ের সিদ্ধান্তটিই সঠিক ছিল।
অ্যাবি বলেন, ‘অস্ত্রোপচারগুলো কাজে দিয়েছে। আমি দিন দিন আরও আত্মবিশ্বাসী ও সুখী হয়ে উঠেছি। আমি মনে করি, আমার মা সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন।’
অ্যাবি উর নাকজুড়ে পুরু করে বাদামি প্লাস্টার লাগানো এবং মুখের বড় একটা অংশ ঢেকে রাখা। তাঁর চিবুক পর্যন্ত সাদা ব্যান্ডেজ মোড়ানো আর মুখের কিছু অংশে ক্ষত ও রক্তের চিহ্ন।
ট্যাবু ভেঙে গত ২০ বছরে চীনে প্লাস্টিক সার্জারি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আয় বৃদ্ধি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বদৌলতে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বদল আসার কারণে এমনটা হয়েছে।
প্রতিবছর চীনের দুই কোটি মানুষ কসমেটিক সার্জারির জন্য অর্থ খরচ করেন।
চীনে প্লাস্টিক সার্জারির প্রতি আগ্রহ সবচেয়ে বেশি তরুণীদের মধ্যে। পরিসংখ্যান বলছে, যাঁরা এ ধরনের অস্ত্রোপচার করাচ্ছেন তাঁদের ৮০ শতাংশই নারী। তাঁদের গড় বয়স ২৫ বছর।
চীনা সংস্কৃতিতে সৌন্দর্যের গুরুত্ব বরাবরই ছিল, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটিতে সৌন্দর্য নির্ধারণের মানদণ্ডে পরিবর্তন আসছে।
বছরের পর বছর ধরে চীনে সৌন্দর্যের মানদণ্ডগুলো পশ্চিমা আদর্শ, অ্যানিমে কল্পনার সৌন্দর্য এবং কে-পপ তারকাদের অনুপ্রেরণার একটি মিশ্রণ ছিল। এই সৌন্দর্য ধারণার মূল বৈশিষ্ট্যগুলো ছিল—ডাবল আইলিড, ছাঁটা ও খাঁজকাটা চোয়াল, চোখে পড়ার মতো নাক এবং নিখুঁত মুখাকৃতি।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে কষ্টকর প্রক্রিয়াগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অবাস্তব ও অতিরিক্ত নারীসুলভ এবং বয়স কম দেখানোর মতো সৌন্দর্যের ধারণার পেছনে ছোটা হচ্ছে।
এখন কানের পেছনে বটক্স ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে, যেন কান সামনের দিকে কিছুটা ঝুঁকে পড়ে এবং মুখ ছোট ও কোমল দেখায়।
নিচের চোখের পাতায় অস্ত্রোপচারও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। চোখ বড় ও উজ্জ্বল দেখাতে এমনটা করা হয়। এটা একধরনের নিষ্পাপ ও শিশুসুলভ চেহারা তৈরি করে।
তবে এ সৌন্দর্যের অনেকটাই তৈরি করা হয় পর্দায় প্রদর্শনের জন্য। ফিল্টার ও রিং লাইটের আলোয় এসব রূপান্তরকে নিখুঁত ও দৃষ্টিনন্দন বলে মনে হয়। তবে বাস্তব জীবনে এই মুখগুলোকে অদ্ভুত মনে হয়। এমন এক মুখ, যা মানুষের মতো নয়, আবার শিশুর মতোও নয়।
প্রথমবারের মতো অ্যাবি উর যখন অস্ত্রোপচার হয়, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর