রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নন্দনগাছী এলাকার কৃষক মোহাম্মদ সানাউল্লাহ। নিজের সামান্য জমিতে বোরো ধান রোপণের প্রস্তুতি হিসেবে বীজ বপন করেছেন। কনকনে ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশায় ঠিকমতো গজায়নি চারা। যেগুলো গজিয়েছে, তাও বিবর্ণ হয়ে গেছে। চারা না হলে রোপণ করবেন কী আর খাবারই বা কীভাবে জুটবে, তা নিয়ে উদ্বেগে আছেন তিনি। বীজতলায় স্প্রেসহ নানাভাবে যত্ন নিয়ে চারা রোপণের উপযোগী করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন এ কৃষক।
দুর্গাপুর উপজেলার পাঁচুবাড়ী এলাকার কৃষক সোনার উদ্দিন কয়েক বিঘা জমিতে রোপণের জন্য বোরো ধানের চারা প্রস্তুত করতে বীজ বপন করছেন। তিনি বলেন, গতবারের চেয়ে এবার বেশি দামে বীজ কিনে বপন করেছি। অঙ্কুরিত হওয়ার সময় বেশি কুয়াশার কারণে অধিকাংশ চারা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ অবস্থায় কী করবেন, বুঝতে পারছেন না তিনি।
সানাউল্লাহ ও সোনার উদ্দিনের মতো বীজতলা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন রাজশাহীর কৃষক। কয়েক দিন ধরে ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চারা। তিন দিন সূর্যের আলো ঠিকমতো না পাওয়ায় বীজতলার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা। কিছু জায়গায় চারা হলুদ ও ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করেছে। এগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলে চারার জোগান কমার পাশাপাশি উৎপাদন খরচ নিয়ে সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পর্যাপ্ত বোরো চারার উৎপাদনের প্রস্তুতি রয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চারা সংকটের আশঙ্কা নেই। তাপমাত্রা ১০ সেন্টিমিটারের নিচে না নামলে ও অধিক কুয়াশা না পড়লে বীজতলার তেমন সমস্যা নেই। রোদ না উঠলে বীজতলা ঢেকে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন কর্মকর্তারা।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, এ বছর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে গত ১০ জানুয়ারি– ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া গত ২১ জানুয়ারি ১১ দশমিক ৪, ২২ জানুয়ারি ১২ দশমিক ৪ ও গতকাল বৃহস্পতিবার রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কয়েক দিন শীত এমনই থাকবে। তবে কুয়াশা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহী জেলা থেকে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার ৯ উপজেলায় ৭০ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জন্য ৩ হাজার ৬৯২ হেক্টরে বীজতলা তৈরি করা হচ্ছে। এতে উপজেলার চাহিদা মেটানোর পরও উদ্বৃত্ত থাকবে।
সরেজমিন চারঘাট, পুঠিয়া ও দুর্গাপুর উপজেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আগাম বীজতলার চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। ১৫-২০ দিন আগে যেসব বীজতলায় বীজ বপন করা হয়েছে, সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে তীব্র ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশায় চারা বের হয়ে পাতা ছাড়ার আগেই অনেকাংশই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যেগুলোর পাতা বের হয়েছে, সূর্যালোকের অভাবে তাও বিবর্ণ হয়ে গেছে।
কৃষক বলছেন, রাজশাহীর অধিকাংশ বোরো জমিতে সেচ দেয় বিএমডিএ। গত ডিসেম্বরে বিএমডিএ নিয়ম করেছে, বোরো মৌসুমে গভীর নলকূপ ৯৮০ ঘণ্টার বেশি চালাবে না। এতে পানি সংকট বাড়বে। সুস্থ-সবল চারা রোপণ না করা গেলে এবং পানি কম পেলে দুর্বল চারা বড় হবে না। তখন ফসল উৎপাদন কমবে। এ জন্য তারা বীজতলার বাড়তি যত্ন নিচ্ছেন।
পুঠিয়ার ধোপাপাড়া এলাকার কৃষক রুহুল আমিন বলেন, তিনি বিএডিসি থেকে বীজ নিয়ে বপন করেছিলেন। অঙ্কুরিত হওয়ার হার ঠিক থাকলেও গজানোর পর ঠান্ডা ও কুয়াশায় কিছু চারা নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে যে পরিমাণ জমিতে ধানের আবাদের জন্য তিনি বীজতলা প্রস্তুত করেছিলেন, সে চাহিদা পূরণ হবে না। এখন তাঁকে চারা কিনে রোপণ করতে হবে।
দু’দিন তীব্র শীত ও কুয়াশা থাকলেও সকালের পর রোদ এসেছে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহীর উপপরিচালক উম্মে ছালমা। তিনি বলেন, বীজতলার ক্ষতির আশঙ্কা নেই। যতক্ষণ রোদ উঠবে না, ততক্ষণ পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে পরামর্শ দিচ্ছেন। বীজতলা রক্ষায় উঠান বৈঠক ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে সচেতন করা হচ্ছে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র আশঙ ক উপজ ল র

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনে জেলেনস্কির বিকল্প নেতা খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র!

ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পদত্যাগ করা লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের একজন নেতা প্রয়োজন, তিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। তিনি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং এই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।’ খবর- সিএনএন

গণমাধ্যমের সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডার পর এ কথা বললেন তিনি। বাগবিতণ্ডার এ ঘটনাটি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিশ্বজুড়ে। ওই ঘটনার পর ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও বাতিল হয়ে যায়। আর এর পরই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কোন পথে, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।

এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শুক্রবারের ওই ঘটনায় সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গড়া ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। 

যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আবারও এক টেবিলে বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া-দুই পক্ষই আলোচনায় না বসলে যুদ্ধ থামবে না। হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতণ্ডার পর থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আর কথা হয়নি। যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। তবে তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব রাখলে, মস্কোকে আলোচনায় যুক্ত করা সম্ভব হবে না। কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মনোভাবই দেখিয়ে আসছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, সবকিছু আবার শুরু হতে পারে। আশা করি, তিনি (জেলেনস্কি) এটা বুঝতে পারবেন যে আমরা আসলে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর আগে, তাঁর দেশকে সাহায্যের চেষ্টা করছি।’
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ