নতুন বছরের জানুয়ারি মাস শেষ হতে চলেছে। মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা যখন বই না পেয়ে পড়াশোনা করতে পারছে না। ঠিক সেই সময় শিক্ষা বিভাগের কিছু অসৎ কর্মকর্তা ও কর্মচারী অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যবই চড়া দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন। বিক্রি হওয়া সেই বই ধরা পড়েছে শেরপুরে।

বৃহস্পতিবার ভোরে ৯ হাজার বই জব্দ করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার মাইদুল হোসেন (৩৫) কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার কেরুয়ারচরের জনৈক হারেজ আলীর ছেলে। অনেক রাঘব-বোয়াল এ ঘটনায় জড়িত বলে সন্দেহ করছে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এনএসআই (জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা) জানতে পারে কুড়িগ্রাম থেকে  নতুন পাঠ্যবই ভর্তি একটি ট্রাক শেরপুর হয়ে রাজধানী ঢাকা যাচ্ছে। বিষয়টি তারা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেন।

বুধবার গভীর রাতে সদর থানার পুলিশ সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের শেরপুর-জামালপুর আঞ্চলিক সড়কের কুসুমহাটি এলাকায় অবস্থান নেয়। বৃহস্পতিবার ফজরের দিকে ধাতিয়াপাড়া এলাকায় ট্রাকটি আটক করে পুলিশ (ট্রাক নং- ঢাকা মেট্রো ড-১১-৮৩৯২)। ওই ট্রাকে তল্লাশি করে বিপুল পরিমাণ নতুন পাঠ্যবই উদ্ধার করা হয়। এ সময় চালকসহ দুইজনকে আটক করা হয়। পরে ট্রাকসহ বই শেরপুর সদর থানায় নিয়ে আসা হয়। ট্রাক থেকে বইগুলো নামিয়ে দেখা যায় সেখানে অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির গণিত, বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের ৯ হাজার বই রয়েছে। এ সময় আটককৃতরা স্থানীয়দের জানায়, ঢাকায় একটি বেসরকারি বিদ্যালয় বইগুলো ক্রয় করেছিল। সেখানেই তারা বই নিয়ে যাচ্ছিল।

এদিকে বই বহন করা ট্রাকের চালক সজল মিয়া দাবি করেন, রৌমারী উপজেলার বাজার এলাকায় পাঠ্যবই পাচারকারী দলের সদস্যরা তার ট্রাকে বই তুলে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য চুক্তি করেন। এ সময় চালানপত্র চাইলে তারা দিতে অস্বীকার করেন। এতে তার সন্দেহ হয়। বিষয়টি তিনি স্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তাকে জানান। পরে তারা সদর থানার পুলিশ নিয়ে ট্রাকসহ বই জব্দ করেন।

সকালে পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম থানায় আসেন। এ সময় তিনি বলেন, বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছে পুলিশ। সরকারের ভাবমূর্তি যারা নষ্ট করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাচারের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে তিনি সবাইকে আশ্বস্ত করেন।

তিনি আরও বলেন, ঢাকায় এক ব্যক্তির কাছে বইগুলো নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তদন্তের স্বার্থে তার নাম বলা যাচ্ছে না। এ ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প ঠ যবই আটক প ঠ যবই এ সময়

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭% শুল্ক আরোপ করল যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছেন, যাকে ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে অনেক দেশ। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়েছে। এতদিন দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ করে শুল্ক ছিল।

বাংলাদেশের প্রধান দুই রপ্তানি বাজারের একটি যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের একটি বড় অংশ রপ্তানি হয় দেশটিতে। যুক্তরাষ্ট্রে বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি হয় প্রায় ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন (৮৪০ কোটি) ডলার, যা প্রধানত তৈরি পোশাক। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তান ৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন (৭৩৪ কোটি) ডলারে।

নতুন করে উচ্চ মাত্রায় এই শুল্ক আরোপে বাংলাদেশের রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা।

ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল ৪টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত রাত ২টা) হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন করে শুল্ক ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে উপস্থিত সাংবাদিকসহ সমবেতদের উদ্দেশে বক্তব্যের শুরুতেই ট্রাম্প বলেন, ‘আজ খুব ভালো খবর’ থাকবে। এ সময় দর্শক সারি থেকে করতালি দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানানো হয়।

এই দিনকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিবস’ অভিহিত করেন ট্রাম্প। নতুন শুল্ক আরোপকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হিসেবে উল্লেখ করেন। ট্রাম্প বলেন, এই দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ দিন ধরে অপেক্ষা করছে।

ট্রাম্পের পাল্টা এই শুল্ক আরোপে ভারতের পণ্যের ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। পাকিস্তানের পণ্যের ওপর ২৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ৩৪ শতাংশ।

এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার পণ্যে ৪৪ শতাংশ, তাইওয়ানের পণ্যে ৩২ শতাংশ, জাপানের পণ্যে ২৪ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যে ২৫ শতাংশ, থাইল্যান্ডের পণ্যে ৩৬ শতাংশ, সুইজারল্যান্ডের পণ্যে ৩১ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ৩২ শতাংশ, মালয়েশিয়ার পণ্যে ২৪ শতাংশ, কম্বোডিয়ার পণ্যে ৪৯ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের পণ্যে ১০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার পণ্যে ৩০ শতাংশ, ব্রাজিলের পণ্যে ১০ শতাংশ, সিঙ্গাপুরের পণ্যে ১০ শতাংশ, ইসরায়েলের পণ্যে ১৭ শতাংশ, ফিলিপাইনের পণ্যে ১৭ শতাংশ, চিলির পণ্যে ১০ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ, তুরস্কের পণ্যে ১০ শতাংশ, কলম্বিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ আরোপ করা হয়েছে।

অন্যান্য যেসব দেশের পণ্যের ওপর বেশি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে মিয়ানমারের পণ্যে ৪৪ শতাংশ, লাওসের পণ্যে ৪৮ শতাংশ এবং মাদাগাস্কারের পণ্যের ওপর ৪৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

পাল্টা এই শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে থাকা ট্রাম্প বলেছেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কখনো কখনো ‘বন্ধু শত্রুর চেয়ে খারাপ হয়’।

যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের বিদেশি গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় যেসব গাড়ি উৎপাদন করা হয় তার ৮০ শতাংশের বেশি সেদেশে বিক্রি হয়। আর জাপানে যেসব গাড়ি বিক্রি হয় সেগুলোর ৯০ শতাংশের বেশি সেদেশে তৈরি হয়। এসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি বিক্রি হয় খুব সামান্য।

মার্কিন কোম্পানি ফোর্ড অন্যান্য দেশে খুব কম গাড়ি বিক্রি করে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, অন্য যে কোনো দেশে তৈরি মোটরযানের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে এবং এটা আজ মধ্যরাত থেকেই কার্যকর হবে।

শুল্ক আরোপের ঘোষণাকে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রতিফলন উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, আজকের দিনকে আমেরিকান শিল্পের ‘পুনর্জন্ম’ এবং আমেরিকাকে ‘আবার সম্পদশালী’ করার দিন হিসেবে স্মরণ করা হবে।

এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বাধার মুখে রয়েছে।

অন্যান্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধা আরও খারাপ অবস্থা তৈরি করেছে।

বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের মেধাসত্ত চুরিসহ অন্যান্য বিধিনিষেধ আরোপের অভিযোগ করেছেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ