উন্নত জীবনের আসায় ইতালিতে পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন মাদারীপুর সদরের উপজেলার রাকিব মহাজন (২০)। দালালের খপ্পরে তিন বছর লিবিয়ার বন্দি শিবিরে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছেন তিনি বলে পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন। তারা জানান, গত মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) রাতে মারা গেছেন রাকিব। বুধবার (২২ জানুয়ারি) রাতে তার মৃত্যুর খবর পেয়েছেন তারা।

রাকিব মহাজন মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের পখিরা গ্রামের নাজিম উদ্দিন মহাজনের ছেলে। 

রাকিবের পরিবারের অভিযোগ, তিন বছর আগে উন্নত জীবনের আশায় মাদারীপুর সদর উপজেলার মৃত ফটিক মৃধার ছেলে জাহাঙ্গীর মৃধার প্রলোভনে পড়েন রাকিব মহাজন। জাহাঙ্গীর মৃধা তার ভায়রা শরীয়তপুরের পালং থানার ধানুকা ইউনিয়নের ছোট বিনোদপুর গ্রামের সোহাগ মাতুব্বরের মাধ্যমে ২৭ লাখ টাকায় রাকিবকে ইতালিতে পৌঁছে দেওয়ার চুক্তি করেন। সেই মোতাবেক ২৭ লাখ টাকা দিয়ে তিন বছর আগে রাকিব পাড়ি জমান লিবিয়া। সেখানে নেওয়ার পরে বন্দিশিবিরে আটকে রেখে আরো টাকার জন্যে রাকিবের ওপর নির্যাতন চালাতে থাকেন সোহাগ মাতুব্বর। পরে রাকিবের বাবা নাজিম উদ্দিন মহাজন ধারদেনা করে আরো ৫ লাখ টাকা দেন সোহাগকে। তাতেও কাজ হয়নি। 

আরো পড়ুন:

লিবিয়ায় ২ ভাইকে জি‌ম্মি, মুক্তিপণ নিতে এসে গ্রেপ্তার ২

নির্যাতন, হত্যার শিকার হচ্ছে লিবিয়ায় বন্দি অভিবাসীরা

তারা আরো জানান, দুই বছর চার মাস পর রাকিবকে ছেড়ে দেন সোহাগ মাতুব্বর। ছেলেকে ইতালিতে পৌঁছে দিতে আরেক দালাল সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের ব্রাক্ষ্মন্দী গ্রামের মাজেদ খলিফাকে ধরেন রাকিবের পরিবার। তাকেও ৮ মাস আগে ১৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। তিনিও টাকা নিয়ে নির্যাতন করেন রাকিবকে। গুরুতর অসুস্থ রাকিবকে লিবিয়ার একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই গত মঙ্গলবার রাকিবের মৃত্যু হয়। রাকিবের মৃত্যুর খবর পরিবারকে বুধবার রাতে জানান মাজেদ খলিফা। 

রাকিবের বাবা নাজিম উদ্দিন মহাজন বলেন, “দফায় দফায় টাকা দিয়ে আমি সর্বশান্ত হয়ে গেছি। এখন পর্যন্ত সোহাগ আর মাজেদকে ৪৫ লাখ টাকা দিয়েছি। এখন আমার ছেলের মৃত্যুর খবর শুনতে হল। আমার ছেলেরে না খাইয়ে মেরে ফেলছে। কয়েকদিন আগেও আমার ছেলে ভিডিওতে নির্যাতনের কথা বলেছে। বাঁচার জন্যে আকুতি করেছে সে। আমার ছেলেকে বাঁচাতে পারলাম না।”

মারা যাওয়া রাকিবের পরিবার

নিহতের ছোট চাচা শাহজালাল মহাজন বলেন, “নির্যাতন করে আমার ভাতিজাকে হত্যা করা হয়েছে। এখন দালালরা বলে অসুস্থ হয়ে রাকিব মারা গেছে। আমরা এ হত্যার বিচার চাই। এভাবে যেন আর কোনো মায়ের বুক খালি হতে না হয়।”

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় দালাল জাহাঙ্গীর মৃধা বলেন, “সোহাগ আমার ভায়রা, এ কারণে আমাকে জড়ানো হচ্ছে। কেউ বলতে পারবে না, আমি তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি। ওই ছেলে অসুস্থ হয়ে লিবিয়ায় মারা গেছে। আমার ভায়রা বরং সেখানে ট্রিটমেন্ট করিয়েছে। এর বেশি কিছু জানি না।’

অভিযুক্ত মাজেদ খলিফার বাড়িতে কাউকে পাওয়া যায়নি। 

মাদারীপুর জেলা পুলিশের তথ্য মতে, গেল বছর লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে জেলার অন্তত শতাধিক মানুষ মারা গেছে। এর মধ্যে প্রায় ৩৫০টি মামলা  হয়েছে পাঁচ শতাধিক দালালের বিরুদ্ধে। মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া দালালরা আদালত থেকে জামিন পেয়ে পুনরায় দালালিতে যুক্ত হন।  

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো.

সাইফুজ্জামান বলেন, “কিছু তথ্য পেয়েছি মাদারীপুরে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে। আমরা জেলা পুলিশ এবিষয়ে জিরো টলারেন্সে আছি।”

ঢাকা/বেলাল/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র উপজ ল র র পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে কেউ আহত হননি। 

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে হাসপাতালের চারতলা পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের পরিচালক ডা. এ বি এম নুরুজ্জামান বলেন, “সিগারেটের ফেলে দেওয়া আগুন বা শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। এটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আগুনে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ওষুধের কার্টুনের স্টোরে আগুন লেগেছিল। আগুন দেখার সঙ্গে সঙ্গে মেডিসিন পুরুষ ওয়ার্ডের রোগীদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নেভান।” 

আরো পড়ুন:

চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুপথযাত্রী সাংবাদিক এম সুলতান

বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে দুদকের অভিযান

তিনি আরো বলেন, “গত বছর একই দিনে (৩১ জানুয়ারি) দিনাজপুর মেডিকাল কলেজ হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিটে আগুন লেগেছিল।” 

ঢাকা/মোসলেম/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ