ফারিন খান যে সুযোগ হাতছাড়া করেন না
Published: 23rd, January 2025 GMT
‘এই মুহূর্তে এমন দাবি করব না যে, অভিনয়ে আমি খুব পারদর্শী। কিন্তু এও সত্যি, যে অভিনয়ের জন্য আমি তৃষিত; সেই তৃষ্ণা পরিণত শিল্পী হয়ে ওঠার। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে আমার উপলব্ধি এটাই, অভিনয় হলো জীবনের প্রতিচ্ছবি। ঘটনাবহুল নানা অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে যে কাহিনির বিন্যাস, তা সুনিপুণ অভিনয় দিয়েই বাস্তব করে তুলতে হয়। তাই প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু শেখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কখনও অগ্রজ শিল্পী ও নির্মাতাদের কাছে, কখনও আশপাশের মানুষ ও তাদের যাপিত জীবনকে দেখে। যখন ঘর ছেড়ে বাইরে পা রাখি, চেনা-অচেনা মানুষের ভিড়ে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করি। জানতে চাই, জীবন চাকা সচল রাখতে কে কীভাবে দিনমান লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের ভাবনার জগৎ, পৃথিবীকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি, আশা-আকাঙ্ক্ষা থেকে শুরু করে যা কিছু জানা ও বুঝে নেওয়ার সুযোগ পাই, তা হাতছাড়া করি না।’
ফারিন খানের মুখে এ কথাগুলো শুনে বোঝা গেল, অভিনয়ের নেশা তাঁকে দারুণভাবে পেয়ে বসেছে। তাই পরিণত শিল্পী হয়ে ওঠার বাসনায় যতভাবে যতকিছু শিখে নেওয়া যায়, তা শেখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অভিনয়ে খুব একটা পারদর্শী না ফারিন– এ কথা যদি আমরা মেনেও নেই, তবু বলতেই হবে, তিনি এ সময়ের সম্ভাবনাময়ী তারকাদের একজন। কেন এ কথা বলছি, তার অন্যতম উদাহরণ নির্মাতা কাজল আরেফিন অমির ‘ফিমেল-থ্রি’। এই নাটকের শেষ দৃশ্যে কিছু সময়ের জন্য ফারিন খানকে দেখা গিয়েছিল। যেখানে তার আগমন ব্যাটারি গলির নতুন ভাড়াটে হিসেবে।
সহ-অভিনেতাদের সঙ্গে ছিল না কোনো সংলাপ। তবু এক্সপ্রেশনের মধ্য দিয়ে দর্শক নজর কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, ‘ফিমেল-থ্রি’ মুক্তির পর অনেকে তাকে ‘ব্যাটারি গলির আগুন’ বলাও শুরু করেছিলেন; যা আভাস দেয়, আগামী সময়টা হতে চলেছে ফারিন খানের।
কোনো নাটকের একটি দৃশ্যে অভিনয় করেই রাতারাতি তারকা বনে যাবেন, সে কথা বিশ্বাস করেন না ফারিন খান নিজেও। তবে কিছু কাজ থাকে যা, ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে ধরা দেয়। ‘ফিমেল-থ্রি’ হলো সেই নাটক, যাকে ক্যারিয়ারে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবেই উল্লেখ করতে চান এই অভিনেত্রী।
তার কথায়, ‘আমরা যা কিছুই করি না কেন, তার জন্য চাই একটা ব্রেক থ্রু। ‘ফিমেল-থ্রি’ হলো সেই নাটক, যা আমাকে আলাদাভাবে দর্শকের কাছে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। এও প্রমাণ করেছে, চরিত্রের ব্যাপ্তি ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়; যতটা গুরুত্বপূর্ণ তার উপস্থাপন। সে কারণে অভিনয়ে গল্প, চরিত্র ও নির্মাতাকে প্রাধান্য দিয়ে আসছি।’
ফারিনের এ কথা জানা গেল, কাজের বিষয়ে তার বাছ-বিচারটা কেমন। এখন প্রশ্ন হলো, সিনেমার মাধ্যমে যার অভিনয়ে অভিষেক, সে এখন ছোটপর্দার দিকে ঝুঁকে পড়েছে কেন? এর উত্তরে ফারিন বলেন, সিনেমায় আর কখনও অভিনয় করব না– এমন কথা জোর দিয়ে বলতে চাই না। ২০১৭ সালে আমি যখন ‘ধ্যাত্তেরিকি’ সিনেমায় অভিনয় করি, তখন বয়স অনেক কম ছিল। অভিনয়ের অনেক কিছুই আত্মস্থ করা হয়ে উঠেনি। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয় করতে গিয়েই এই উপলব্ধি হয়েছে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, অভিনয় যতটা শেখা যায়, তা শিখেই বড়পর্দার জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়ব।’
এ ভাবনা থেকেই কি থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হওয়া? ‘আসলেই তাই। যদিও এখন প্রাচ্যনাটের হয়ে মঞ্চে কাজ করা হয়ে উঠছে না, তবে নাট্যদলের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ ধরে রেখেছি। তাদের কাছে কিছু না কিছু শেখার সুযোগ হচ্ছে।’
কিন্তু অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার আগেই দর্শক আপনাকে মডেল হিসেবে চিনেছে, এটা কীভাবে সম্ভব হলো? এর জবাবে ফারিন বলেন, ‘এটা সম্ভব হয়েছে বন্ধুদের মাধ্যমেই। আমার উচ্চতা ৫ ফিট ৮ ইঞ্চি। এ জন্য বন্ধুরা প্রায়ই বলত, তোর উচিত র্যাম্প মডেল হিসেবে কাজ করা। শুধু মুখে এ কথা বলেই ক্ষান্ত থাকেনি বন্ধুরা। ওরা জোর করে ফটোশুটও করিয়েছে। দেখিয়ে দিয়েছে মডেলিংয়ের জন্য যোগাযোগের রাস্তা। তাই অল্প-স্বল্প চেষ্টা থেকেই সুযোগ পেয়ে গেছি মডেল হিসেবে কাজ করার। কিন্তু ছয় মাসের মধ্যে রেকর্ডসংখ্যক কাজ করা হয়ে যাবে– তা কল্পনাও করিনি। বলা যায়, মডেলিং শুরুর ছয় মাসেই শীর্ষ ব্র্যান্ডগুলোর বিজ্ঞাপন মডেল হওয়া থেকে শুরু করে শুভেচ্ছা দূত হওয়ার অভিজ্ঞতাও হয়ে গেছে।’
ফারিনের মুখে এ কথা শুনে যে বিষয়ে কৌতূহল জাগে, তা হলো তাঁর অভিনয়ে আসা। মডেল হিসেবে যখন অনেকের নজর কেড়ে ফেলেছেন, তখন পথ বদলে ছোটপর্দায় অভিনয় করতে আসার কারণ?
এ প্রশ্নে ফারিন বলেন, ‘মডেল হিসেবে অনেকের নজরে পড়েছি ঠিকই, কিন্তু অভিনয়ের তৃষ্ণা তো থেকেই গেছে। ঠিক যেমন নাচের দুর্বলতা তেমনি অভিনয়ের প্রতি। দেশ-বিদেশের অনেক মঞ্চে পারফর্ম করেছি। সেই সুবাদে যে আনন্দ ও মানসিক শান্তি পেয়েছি, তা কখনও ভুলে যাওয়ার নয়। যদিও নাচের আগের মতো সময় দিতে পারছি না, তারপরও নাচ থেকে দূরে সরে যাওয়ার আদৌ কোনো ইচ্ছা নেই। একইভাবে অভিনয় ধরে রাখতে চাই। মানছি, আমার অভিনীত কাজের তালিকাটা ছোট। তারপরও ‘মনের মাঝে তুমি’, ‘ঠিকানা’, ‘পাবো কি তারে’, ‘ফিমেল-৩’, ‘প্রথম প্রেমের গল্প’, ‘কালো ছেলে’ নাটকগুলোর পাশাপাশি ওয়েব সিনেমা ‘ত্রিভুজ’সহ যে ক’টি কাজ করেছি, সেগুলো আমার লালিত স্বপ্ন পূরণের ভিত গড়ে দিয়েছে। তাই খ্যাতির মোহে নয়, শিল্পী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে একটু একটু করে পথ পাড়ি দিচ্ছি।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কখনও বলিনি আমি আর অভিনয় করব না: নাঈম
নব্বই দশকের জনপ্রিয় নায়ক নাঈম। তবে এখন অভিনয়ে নেই। নানা ইস্যুতে আছেন আলোচনায়। ১৯৯৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘প্রেমের সমাধি’ সিনেমায় ‘চাচা, হেনা কোথায়?’ সংলাপটি কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। এ সংলাপকে কেন্দ্র করে আলোচনায় উঠে এসেছেন তিনি। সংলাপ ও সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
কেমন আছেন?
আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। নিজের মানসম্মান নিয়ে বেঁচে আছি। সবাই আমাকে এবং আমার পরিবারকে ভালোবাসে। এ ভালোবাসা নিয়েই জীবন চলে যাচ্ছে।
হঠাৎ করে ভাইরাল হলো ‘‘চাচা, হেনা কোথায়?’ সংলাপটি, এটার সঙ্গে তো আপনিও আলোচনায় এলেন...
দেখুন, ফিল্ম অনেক বড় বিষয়। প্রায় তিন দশক আগেও একটি সিনেমার ডায়ালগ নিয়ে মানুষ এখনও আলোচনা করছে। ‘চাচা, হেনা কোথায়? তার একটি দৃষ্টান্ত। গত এক মাস হলো আমি শুধু দেখছি, কীভাবে এটা পুরো দেশের মানুষের কাছে ছড়িয়ে পড়েছে। এটার দ্বারা প্রমাণ হয়, ভালো সিনেমা, ভালো সংলাপ ও ভালো শিল্পী কতটা দর্শকের মাঝে বেঁচে থাকেন। বিশেষ করে ‘প্রেমের সমাধি’ সিনেমার নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী বাপ্পারাজ-শাবনাজসহ পুরো টিমকে ধন্যবাদ জানাই। শাবনাজ যেহেতু এখন আমার জীবনসঙ্গী। সেই সূত্র ধরেই হয়তো আলোচনায়।
বাপ্পারাজ-শাবনাজ জুটি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
এটা তো পুরো দেশের মানুষের জানা। বাপ্পারাজের মতো অভিনেতা পাওয়া কঠিন। আমার স্ত্রী হিসেবে বলব না, ‘প্রেমের সমাধি’ সিনেমাসহ সব সময়ই ও ভালো অভিনয় করেছে। জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। তারা দু’জনই এককথায় অসাধারণ অভিনয়শিল্পী।
দর্শক তো এখনও আপনাকে অভিনয়ে চায়। অভিনয়ে ফেরার কোনো পরিকল্পনা আছে?
সেটা নির্ভর করবে নির্মাতা ও প্রযোজকের ওপর। তারা যদি আমার ইমেজ, স্টাইল ও প্রেজেন্টেশন নিয়ে ভেবে গল্প বানান আর আমার যদি ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই করব। একটা সময় আমি সিনেমা থেকে অনেক দূরে চলে গেছি। তবে আমি কখনও বলিনি যে, আমি অভিনয় করব না কিংবা সিনেমা নির্মাণ করব না। এখনও আমার ইচ্ছে করে ভালো গল্প নিয়ে একটা সিনেমা বানাব। সিনেমা তো আমার ভেতরে। আমি তো কাজ করতে চাই। ক্যামেরার পেছনে বা সামনে; একটা সময় অবশ্যই আমি করব। তবে সময়টা বলতে পারছি না।
আমাদের সিনেমা শিল্পকে এগিয়ে আপনার কোনো পরামর্শ আছে কী?
অনেক ধরনের মানুষ নিয়ে একটা সিনেমা বানাতে হয়। এখানে নির্মাতা, শিল্পী, টেকনিশিয়ানসহ অনেক বিষয় মাথায় রেখে চিন্তা করতে হয়। একটা ইন্ডাস্ট্রি দাঁড়াবে কীভাবে; এটা নিয়ে আমার একটা চিন্তা থাকতে পারে। আমার একার উদ্যোগ বা চিন্তা দিয়ে হবে না। এ ক্ষেত্রে সবার সমান প্রচেষ্টা থাকতে হবে। তা হলে একটা ইন্ডাস্ট্রি আপনা আপনিই এগিয়ে যাবে।
আপনি তো সাংস্কৃতিক পরিবারের ছেলে...
হ্যাঁ, আমি নবাব স্যার সলিমুল্লাহর প্রপৌত্র। এজন্য আমি গর্ববোধ করি। উপমহাদেশে ১৯৩৮ সালে কিন্তু ঢাকার নবাব পরিবার থেকেই প্রথম সবাক চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়। তখন আমাদের পরিবার থেকেই ছিল নির্মাতা, নায়ক ও ক্যামেরাম্যান। অর্থাৎ আমি যে পরিবারে বড় হয়েছি, এটা ছিল একটা সাংস্কৃতিকমনা পরিবার।
সিনেমা হল সংকট নিয়ে কী বলবেন?
আমাদের ভালো সিনেমা বানাতে হবে। তাহলে তো দর্শক সিনেমা হলে আসবে। ভালো সিনেমা না বানিয়ে দর্শকদের বলব আপনারা হলে আসছেন না কেন? এটা তো ঠিক না। আগে আমাদের ভালো সিনেমা বানাতে হবে। তাহলে দর্শক সিনেমা হলে আসবে। হল এমনিতে বাড়বে। এখানে সবার প্রচেষ্টা থাকতে হবে। কারও একার প্রচেষ্টায় হবে না।
সিনেমার স্বর্ণযুগ কি ফিরিয়ে আনা সম্ভব?
অবশ্যই সম্ভব। ‘না’ বলে আমার কাছে কথা নেই। তবে টাইম লাগে। সবাই মিলে একযোগ হয়ে যদি একটা প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করাতে পারি, তাহলে সব সম্ভব।
ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র অনেকেই বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন কিন্তু আপনি গ্রামে চলে গেলেন কেন?
ঢাকায় আমার দাদার বাড়ি আর টাঙ্গাইল নানার বাড়ি। ছোটবেলা থেকে নানার বাড়িতেই আমি বড় হয়েছি। গ্রামের মাটির সঙ্গে তো প্রতিটা মানুষ জড়িত। আমরা বিভিন্ন বিভাগের মানুষ। কর্মজীবনে আমাদের ঢাকায় থাকতে হয়। ঈদের ছুটিতে আমরা কীভাবে বাড়ি চলে যায়! তো কোনো সময় আমি চিন্তাও করিনি যে বিদেশে স্থায়ী হবো। সব সময় ভেবেছি, এ দেশেতে আমার জন্ম, এ দেশের মাটিতে যেন আমার মৃত্যু হয়।