শিক্ষা বিষয়ক এক নাগরিক সংলাপে বক্তারা বলেছেন, শিক্ষায় এখন জাতীয় দুর্যোগ চলছে। দিন দিন শিক্ষায় বৈষম্য বাড়ছে। সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা সংকুচিত হচ্ছে, বাড়ছে ইংরেজি মাধ্যম ও মাদ্রাসা। দেখা যাচ্ছে, একটা গ্রামে একটা প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে, সেখানে আছে পাঁচটা মাদ্রাসা। আবার আর্থিক ও পারিবারিক নানা সংকটে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থী চলে যাচ্ছে মাদ্রাসায়। আরও বড় সমস্যা হলো, সরকার জানে না দেশে কী পরিমাণ ইংরেজি মাধ্যম স্কুল আছে, মাদ্রাসার সংখ্যা কত। এ অবস্থায় চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রস্তুতি অসম্ভব।
আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার সকালে ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এই নাগরিক সংলাপের আয়োজন করে ‘জাতীয় শিক্ষা-সংস্কৃতি আন্দোলন’। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক মাহমুদ সেলিম। সদস্য সচিব রুস্তম আলী খোকনের সঞ্চালনায় সংলাপে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও লেখক গবেষক অধ্যাপক ড.
সংলাপে বক্তারা বলেন, শিক্ষা হলো বাঁচতে শেখা, বাঁচাতে শেখা। জাতিকে একত্র করতে পারে শিক্ষা, সংস্কৃতি। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার বহুধা বিভক্তির দিকে আলোকপাত করে বক্তারা বলেন, একমুখী শিক্ষা কাঠামো নির্মাণ না করে একটি বিভাজিত জাতি আমরা গড়ে তুলেছি। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ না করলে বাংলাদেশ গোটা দুনিয়া হতে পিছিয়ে পড়বে।
বারবার পাঠ্যপুস্তকের পাঠ্যক্রম পরিবর্তনের সমালোচনা করে বক্তারা বলেন, ইতিহাস কখনও মুজিবময়, কখনও মুজিবশূন্য, কখনও জিয়াময়, কখনও জিয়াশূন্য হতে পারে না। ইতিহাস ইতিহাসই, সেটা বিকৃতি করার আজকের চেষ্টা আগামী দিনের ইতিহাস। সুতরাং এ সকল প্রবণতা হতে সংশ্লিষ্ট সকলকে সরে আসতে হবে। তারা বলেন, শিক্ষায় প্রতিবেশী দেশেও জিডিপির ৫ শতাংশ ব্যয় হয়, আমাদের এখানে ২ শতাংশের কম। ৪র্থ শিল্পবিপ্লবের প্রস্তুতির জন্য আগে মানসিক বিপ্লব দরকার। পরিবর্তন মনো ও সমাজ জীবনে জরুরি।
পরিস্থিতি বদলাতে জাতীয় আন্দোলন প্রয়োজন বলে মনে করেন বক্তারা। জাতীয় শিক্ষা সংস্কৃতি আন্দোলনের মতো নির্দলীয় দেশপ্রেমিক সংগঠনগুলোকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, মুখে নয় কাজের আন্দোলন চাই।
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষায় বৈষম্য খুব বেশি। ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা এখন মনোপলি হয়ে গেছে ধনিক শ্রেণির। সমাজে আর্থিক বিভাজনের তীব্র প্রভাব পড়ছে শিক্ষাতেও। বিদেশি পরামর্শকেরা আমাদের শিক্ষাখাতের নীতিনির্ধারক বনে যাচ্ছেন। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের হাতে আগে আসতে হবে। এটা আমাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে।
অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার পরিমাণগত কিছু পরিবর্তন বিগত দিনে ঘটেছে। তবে গুণগত পরিবর্তন ঘটেনি। বিজ্ঞানমনস্ক বৈশ্বিক মানের শিক্ষা ব্যবস্থা আমরা চাই। অথচ আমাদের এখন মানবিক শিক্ষার ভুরিভুরি গ্র্যাজুয়েট পাস করে বের হচ্ছে। তারা বেকার হচ্ছে, হতাশ হয়ে পড়ছে। নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডেও তাদের কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই শিক্ষা হতে হবে সার্বজনীন। আর এসবের পূর্বশর্ত শিক্ষার বাজেট বর্তমানের দ্বিগুণ হতে হবে।
সাংবাদিক আবু সাঈদ খান বলেন, শিক্ষায় এখন দুর্যোগ চলছে, বলা যায় জাতীয় দুর্যোগ। সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা সংকুচিত হচ্ছে, বাড়ছে ইংরেজি মাধ্যম ও মাদ্রাসা। একটা গ্রামে একটা প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে, সেখানে আছে পাঁচটা মাদ্রাসা। আবার আর্থিক ও পারিবারিক নানা সংকটে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থী চলে যাচ্ছে মাদ্রাসায়। আরও বড় সমস্যা হলো, সরকার জানে না দেশে কী পরিমাণ ইংরেজি মাধ্যম স্কুল আছে, মাদ্রাসার সংখ্যা কত। আমরা চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নয়, এখনও তৃতীয় শিল্প বিপ্লবই ধরতে পারিনি। পরিস্থিতি বদলাতে জাতীয় আন্দোলন প্রয়োজন। তবে মুখে নয় কাজের আন্দোলন চাই।
সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, শিক্ষার মূল অর্থ হলো- বাঁচতে শেখা ও বাঁচাতে শেখা। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কি তা পারছে? শিক্ষার বৈষম্য সমাজের বৈষম্য বাড়াচ্ছে নাকি সমাজের বৈষম্য শিক্ষার বৈষম্য বাড়াচ্ছে- এটি এখন গবেষণার বিষয়। তিনি বলেন, সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীনতার ইতিহাস বদলে যায় যে দেশে সেখানে প্রকৃত শিক্ষা নিশ্চিত করা কঠিন ব্যাপার। গত ৫৩ বছরে যারা ক্ষমতায় এসেছেন তারা শিক্ষাকে গুরুত্ব দেননি।
সংলাগে আরও বক্তব্য রাখেন পরিজা সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল, বাকশিস যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আকমল হোসেন, বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়নের সহসভাপতি আব্দুর রশিদ, গ্রীণ ভয়েস এর সহ-সমন্বয়ক হুমায়ুন কবির সুমন, বাংলাদেশ রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং মালিক শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন চন্দ্র দাস, টিটিসির শিক্ষার্থী ইকরাম হোসেন, ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আহমেদ, ক্লাইমেস নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ সিএনবি কোর্ডিনেটর মুনসাফা তৃপ্তিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র শ ক ষ ব যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
পদ্মা সেতুতে সর্বমোট টোল আদায় ২ হাজার ২৭৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর থেকে শনিবার পর্যন্ত উভয় প্রান্তের টোল প্লাজায় সর্বমোট টোল আদায় হয়েছে ২ হাজার ২৭৭ কোটি ৫৫ লাখ ৯১ হাজার ৪৫৯ টাকা। আর ঈদযাত্রার পাঁচ দিনে শনিবার পর্যন্ত পদ্মা সেতু হয়ে ১ লাখ ৫২ হাজার ৩২৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এ সময়ে ১৭ কোটি ৪২ লাখ ২১ হাজার ৭০০ টাকা টোল আদায় হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।
সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালক আলতাফ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, শেষ মুহূর্তের ঈদযাত্রায় পদ্মা সেতু অতিক্রম করে বাড়ি ফিরছেন দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার লাখ লাখ মানুষ। তবে মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় যানবাহন ও যাত্রীদের চাপ নেই। কখনও কখনও একেবারেই ফাঁকা থাকছে টোল প্লাজা।
শনিবার পদ্মা সেতু দিয়ে ৩৬ হাজার ৯২৪ যান পারাপার হয়। এর মধ্যে মোটরসাইকেল ছিল ৮ হাজার ৭৫০টি। টোল আদায় হয়েছে ৪ কোটি ৭ লাখ ৯২ হাজার ২০০ টাকা।
এছাড়া শনিবার পর্যন্ত ঈদযাত্রার পাঁচ দিনে পদ্মা সেতু হয়ে ১ লাখ ৫২ হাজার ৩২৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এ সময়ে টোল আদায় হয়েছে ১৭ কোটি ৪২ লাখ ২১ হাজার ৭০০ টাকা।
সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালক আলতাফ হোসেন আরও জানান, লম্বা ছুটির কারণে এবার ঈদযাত্রায় চাপ অপেক্ষাকৃত কম। রোববার ভোরেও টোল প্লাজা ঘিরে যানবাহনের লম্বা লাইন ছিল। কিন্তু বেলা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তা কমতে থাকে।
টোল আদায়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, রাত পোহালেই ঈদ, কর্মজীবী ও ব্যবসায়ী অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। তাই রোববারও অস্থায়ী টোল বুথটি চালু রাখা হয়। এখন ৯টি লেনে টোল আদায় করা হচ্ছে। তবে অনেকেই গরম এবং যানজট এড়াতে সেহেরির পরপরই বেরিয়ে পড়েন। তাই সকালে কিছুটা চাপ থাকলেও বেলা গড়ানোর পর চাপ কমতে থাকে।
একই চিত্র দেখা গেছে জেলার অপর মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রামের পথেও। রোববার সকাল থেকে এ মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ১৩ কিলোমিটারে ছিল না কোনো যানজট।